মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি পিসি’ গল্পটিতে আহ্লাদি নামের এক তরুণীর জীবনের দুঃখের কাহিনী নিয়ে রচিত। আহ্লাদি, যিনি পিতৃমাতৃহীন ও নিঃস্ব, তার জীবন হয়ে ওঠে নির্মম অত্যাচারের শিকার। এই পোস্টে মাসি পিসি গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
মাসি পিসি গল্পের মূল কথা সংক্ষেপে
স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে “মাসি-পিসি” গল্প। আহ্লাদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্বরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
গল্পের কাহিনীঃ সন্ধে নেমে আসছে। খালের ধারে মাটি ভিজে কাদায় ভরে গেছে, স্রোতও থেমে গিয়েছে। একটা বড় নৌকা পাড়ের ধারে ভেড়ানো, আর খালের পাশেই তিনটে লোক খড়ের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠছে। নিচে দুজন লোক তাদের খড় তোলায় সাহায্য করছে। এক বৃদ্ধ রোগা, আরেকজন শক্তসমর্থ মাঝবয়সী। একটু পরেই, একটা সরু নৌকো আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে। নৌকোটা ঠেলে দুজন বৃদ্ধা মহিলা নিয়ে আসছে, হয়তো দুজনেই বিধবা। তাদের পেছনে একটা মেয়েও বসে আছে, সাদার উপর নকশা পাড়ের শাড়ি পরে। মেয়েটি মুখে চিন্তার ছাপ, কিছু একটা ভাবছে। বৃদ্ধ লোকটি তরুণীকে দেখে বলে উঠল, “মাসি-পিসি ফিরছে কৈলাশ।” কৈলাশ তখন খড় তুলতে ব্যস্ত ছিল। সে শোনামাত্রই নেমে এসে ডাক দেয়, “ও মাসি, ওগো পিসি, শুনছো! তোমাদের জন্য খবর আছে।” দুজন বয়স্কা মহিলা ক্লান্ত দেহে তার দিকে এগিয়ে আসেন। একজন বলে, “বেলা পড়ে গেছে, তাড়াতাড়ি খবর বলো।”
কৈলাশ জানায়, সে জগুর সঙ্গে দেখা করেছে। জগু বলছে যে এবার সে আদালতে মামলা করবে, আহ্লাদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। জগুর দাবি, তার স্ত্রীকে আটকে রাখা অন্যায়। মাসি আর পিসি চুপ করে শোনে, যেন এ কথাগুলো তারা বহুদিন ধরেই জানে। আহ্লাদি মৃদু স্বরে কিছু বলতে চেষ্টা করে। মাসি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে কৈলাশকে জিজ্ঞাসা করে, “মেয়েটা কি নিরাপদ থাকবে? সে যে ভয়ে কাঁপছে!” তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে, তারপর মাসি আর পিসি আবার নৌকো ঠেলে ভাটার দিকে এগিয়ে যায়। চারপাশে অন্ধকার জমাট বাঁধছে, আহ্লাদি মনে মনে আশ্রয়ের সন্ধানে চুপচাপ বসে থাকে। রাত গভীর হলে কানাই চৌকিদার এসে জানায়, তাদের দুজনকে দারোগার কাছে যেতে হবে। মাসি পিসির মুখে চিন্তার ছাপ। তারা জানে যে সামনে একটা বড় বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু তবু আহ্লাদির পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত।
মাসি পিসি গল্পের মূল কথা বড় করে
“মাসি-পিসি” গল্পটি আহ্লাদি নামের এক তরুণীর জীবনের দুঃখের কাহিনী নিয়ে রচিত। আহ্লাদি, যিনি পিতৃমাতৃহীন ও নিঃস্ব, তার জীবন হয়ে ওঠে নির্মম অত্যাচারের শিকার। অত্যাচারী স্বামীর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও সমাজের নিপীড়ন আর দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এই গল্পে আহ্লাদির পাশে তার দুই বিধবা মাসি ও পিসি দাঁড়ায়। তাদের জীবনও সহজ নয়—তারা নিজেরাও বিধবা, নিঃস্ব এবং সমাজের লাঞ্ছনা সয়ে এগিয়ে চলছে। কিন্তু এ কঠিন জীবন সংগ্রামেও তারা আহ্লাদির জন্য সবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত। দুজনেই নীরবে তার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে।
গল্পের কাহিনীঃ সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আকাশে ম্লান আলো, যেন রাতের অন্ধকার আসার আগে শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নিতে চায়। খালের ধারে মাটি পুরো ভিজে কাদা হয়ে গেছে। চারপাশটা স্যাঁতস্যাঁতে, পানির ওপর কিছু শ্যাওলা জমেছে। ঠিক সেই সময়, একটা বড় নৌকা এসে খালের পাড়ে ভিড়ল। নৌকায় লোকজন আছে, তিনজন মানুষ নৌকার পাটাতনে উঠে এসেছে, মাথায় বড় বড় খড়ের বোঝা নিয়ে। খালের পাশে দাঁড়িয়ে দু’জন তাদের সাহায্য করছে—একজন বেশ বয়স্ক, আরেকজন শক্তপোক্ত মাঝবয়সী।
এদিকে, হঠাৎ করে একটা সরু নৌকো খালের অন্য দিক থেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে। নৌকোটায় দু’জন বৃদ্ধা মহিলা আছেন, সম্ভবত দু’জনেই বিধবা। তাদের সঙ্গে আরেকটা মেয়ে বসে আছে, পরনে সাদা শাড়ি আর তার ওপর নকশা করা পাড়। মেয়েটির মুখে একটা চিন্তার ছাপ, যেন কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে। এমন সময় খালের ধারের এক বৃদ্ধ বলে ওঠে, “ও মাসি-পিসি ফিরছে কৈলাশ।”
কৈলাশ তখন খড়ের বোঝা তুলতে তুলতে ওই মহিলাদের দিকে তাকায়। সে দেখতে পায়, মহিলারা তাকে ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করছে। কৈলাশ একটু এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে, “ও মাসি, ও পিসি! শোনো, তোমাদের জন্য একটা খবর আছে!” মহিলা দু’জন ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে আসে, যেন শোনার জন্য অধীর হয়ে আছে।
কৈলাশ বলতে শুরু করে, সে জগুর সঙ্গে দেখা করেছে। জগু একটা মামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আদালতে যাবে বলে ঠিক করেছে। জগু বলছে, তার স্ত্রীকে এভাবে আটকে রাখা অন্যায়। মেয়েটির নাম আহ্লাদি। সে চুপচাপ শুনছে, চোখে এক অদ্ভুত ভাব।
মাসি চুপ করে শোনে। তার মুখে একটা বিষণ্ণতার ছাপ ফুটে ওঠে। সে কৈলাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “মেয়েটা কি সত্যিই ভালো থাকবে? সে যে ভয়ে কাঁপছে!” সবাই চুপ হয়ে যায়। আহ্লাদি তখন মাথা নিচু করে বসে থাকে, তার চোখের মণিতে একটা গভীর চিন্তার ছাপ।
রাত গভীর হচ্ছে। কানাই চৌকিদার এসে উপস্থিত হয়। তার মুখে চিন্তার ছাপ। সে জানায়, তাদের দু’জনকে দারোগার কাছে যেতে হবে। মাসি আর পিসির চোখে তখন আরও বেশি চিন্তা আর আতঙ্কের ছাপ। তারা জানে, কিছু একটা বড় বিপদ আসছে। তবে তারা ঠিক করেছে, আহ্লাদির পাশে দাঁড়াবে, যে কোনো বিপদের মুখে।
মাসি আর পিসির মনে হচ্ছে, যেন তারা অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলেছে, যেখানে আহ্লাদিকে রক্ষা করা তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তারা নৌকোর পাটাতনে উঠল। নৌকো আস্তে আস্তে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলল, আর তারা জানে সামনে আরও বড় অন্ধকার অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে এক ধরনের স্থিরতা, একটা প্রবল সংকল্প। আহ্লাদি তাদের পাশে বসে চুপচাপ সবকিছু দেখছে। সে বুঝতে পারছে, এই লোকগুলো তার জন্য কিছু একটা করবে, তার পাশে দাঁড়াবে, বিপদ সয়ে নেবে।
এভাবে তারা চলতে থাকল, আর আহ্লাদি জানে, তাদের ভালোবাসা আর সাহসই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।
Related Posts
- বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার MCQ PDF সহ প্রশ্ন ও উত্তর
- প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সাম্যবাদী কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি (MCQ)
- লালসালু উপন্যাসের মূলভাব PDF সহ সংক্ষেপে ও সহজ ভাষায়
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- রেইনকোট গল্পের মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা