মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব – ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা

মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত মানুষ মুহাম্মদ সাঃ প্রবন্ধ। হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন কেবল একজন মহানবি নন, বরং একজন অসাধারণ মানুষ। তাঁর জীবনভর ত্যাগ, দয়া, এবং ক্ষমার দৃষ্টান্ত মানুষকে চিরকাল অনুপ্রাণিত করে যাবে। এই পোস্টে মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব – ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব সংক্ষেপে

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মৃত্যুর সংবাদে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ওমর (রা.) রেগে গিয়ে বলেন, কেউ যদি রাসুলুল্লাহ (স.) মারা গেছেন বলে, তার শিরশ্ছেদ করা হবে। কিন্তু হযরত আবুবকর (রা.) দৃঢ়তার সাথে জনতাকে জানান যে, রাসুলুল্লাহ (স.) একজন রাসুল ছিলেন এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা আল্লাহকে পূজা করেন, তাদের জানা উচিত আল্লাহ অমর। তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেন যা মানুষকে চেতনায় ফিরিয়ে আনে। ওমরের (রা.) মনে হলো, রাসুল (সা.) তো একজন মানুষ ছিলেন। তবে তাঁর মহান চরিত্র ও অসাধারণ ব্যবহার সকলের মন জয় করেছিল। তিনি ছিলেন মমতাময়ী, এমনকি শত্রুকেও ক্ষমা করতে জানতেন। হযরত মোস্তফা (স.) কেবল নিজের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েও তিনি কখনো শত্রুকে অভিশাপ দেননি, বরং তাদের ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনা করেছেন। তাঁর জীবনে দারিদ্র্য, শত্রুতা ও নির্যাতন থাকা সত্ত্বেও, তিনি সত্যের পথে অবিচল ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মক্কা বিজয়ের পরও তিনি প্রতিশোধ নেননি, বরং সবাইকে মুক্তি দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে আয়েশা (রা.) সহ সবাই গভীর শোকে আচ্ছন্ন হন। জীবনের প্রতিটি ধাপে দয়া, ত্যাগ, এবং ক্ষমার মূর্ত প্রতীক এই মহানবি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।

মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব বড় করে

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর খবর মদিনায় ছড়িয়ে পড়তেই পুরো শহর শোকের সাগরে ডুবে গেল। চারদিকে নেমে এলো নিস্তব্ধতা। কেউ কথা বলতে পারছিল না, কেউ আবার দিশেহারা হয়ে পড়ল। ওমর (রা.) মর্মাহত হয়ে তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, “যে বলবে রাসুল মারা গেছেন, তার শিরশ্ছেদ করা হবে!” এই সময় আবুবকর (রা.) দৃঢ় কণ্ঠে জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “যারা মুহাম্মদকে (সা.) পূজা করত, তারা জেনে রাখুক তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর যারা আল্লাহর উপাসক, তারা জানুক, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মারা যাবেন না।”

আবুবকরের এই ঘোষণা সবার মনে বাস্তবতা ফিরিয়ে আনল। ওমরের (রা.) হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল, তাঁর মনে পড়ল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা: “আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ।” কুরআনের আয়াতও তাঁর মনে উদয় হলো, যেখানে বলা হয়েছে, “মুহাম্মদ (সা.) একজন রাসুল, যিনি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবেন।” এই কথাগুলো মুসলিমদের মনে নতুনভাবে রাসুলের সত্য ও আল্লাহর প্রতি আস্থা জাগিয়ে তুলল—”মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর দাস এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল।”

হযরতের পুরো জীবনটাই ছিল মানবীয় গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। তিনি মক্কার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কখনো বংশের অহংকারে ডুবে যাননি। তিনি মানুষের কষ্টকে বুঝতেন এবং দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর সৌন্দর্য এবং চরিত্রের মাধুর্য মানুষকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করত। খাদিজা (রা.) প্রথম থেকেই তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং নরম হৃদয়ে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

মানুষের প্রতি হযরতের ভালোবাসা ও সহানুভূতি ছিল অতুলনীয়। শত্রুরা তাঁকে যতই কষ্ট দিক না কেন, তিনি কখনো প্রতিশোধ নিতে চাননি। বরং তিনি তাদের জন্য দোয়া করতেন। তায়েফের সেই ঘটনা, যখন তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখনও তিনি শত্রুদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। এমনকি মক্কা বিজয়ের পরও তিনি তাঁদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন, যারা তাঁকে অত্যাচার করেছিল।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন একজন মহান নেতা, কিন্তু তাঁর মানবিক গুণাবলির জন্যই তিনি ছিলেন সকলের হৃদয়ের কাছের। তাঁর জীবনভর ত্যাগ, দয়া, সহমর্মিতা এবং ক্ষমা মানুষের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Related Posts

Leave a Comment