বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা

প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে সাহিত্য মানুষের মন ও বুদ্ধিবৃত্তিকে সঞ্জীবিত করে। তাই আমাদের দেশের প্রতিটি নগর ও গ্রামে লাইব্রেরির প্রয়োজন। লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টে বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব সংক্ষেপে

বই পড়া নিঃসন্দেহে মানুষের অন্যতম সেরা শখ, তবে আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়ার পরামর্শ দিতে চাই না। কারণ, আমরা সমাজ হিসেবে শৌখিন নই, এবং বর্তমান জীবনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে অনেকের কাছে বই পড়া বিলাসিতা মনে হতে পারে। আমাদের দারিদ্র্য, রোগ, এবং অন্যান্য সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই প্রধান চ্যালেঞ্জ, তাই অনেকের কাছে সাহিত্যের উপভোগের পরিবর্তে শিক্ষার তাৎক্ষণিক ফলাফলই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাৎক্ষণিক ফলাফল চোখে দেখা যায় না, তবে সাহিত্যের চর্চা আমাদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে আমাদের মন প্রসারিত হয়, চিন্তা সমৃদ্ধ হয়, এবং জাতির মানসিক শক্তি তৈরি হয়। অথচ আমাদের সমাজে সাহিত্য ও জ্ঞানের মূল্যায়ন এখন অর্থের সঙ্গে মাপা হয়। মানুষ অর্থনৈতিক উন্নতি চায়, কিন্তু সাহিত্য বা জ্ঞানের গভীরতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত পরীক্ষা পাশের দিকে ধাবিত, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানচর্চা ও মননের বিকাশের সুযোগ সেখানে অনেক কম। লাইব্রেরির গুরুত্ব এখানেই। লাইব্রেরি হলো সেই জায়গা, যেখানে মানুষ নিজের মতো করে জ্ঞান আহরণ করতে পারে, নিজের রুচি অনুযায়ী বই পড়তে পারে এবং মননশীলতা গড়ে তুলতে পারে। লাইব্রেরি মানসিক বিকাশের জন্য স্কুল-কলেজের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাশ করানোর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যেখানে লাইব্রেরি জ্ঞান চর্চার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। আজকের দিনে আমাদের মন ও সমাজের বিকাশের জন্য, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা এবং সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

বই পড়া প্রবন্ধের মূলভাব বড় করে

বই পড়া নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হতে পারে, কিন্তু আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়ার পরামর্শ দিতে চাই না। কারণ আমাদের সমাজে শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মতো মনোভাব নেই। আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই—জীবনের এত চ্যালেঞ্জ, কষ্ট, দারিদ্র্যের মধ্যে অনেকের কাছে শখ বলতে কিছু নেই। তাছাড়া, অনেকের কাছে বই পড়াকে বিলাসিতা মনে হতে পারে, কারণ আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিভাবে একটু ভালোভাবে বাঁচা যায়। যখন মানুষ বেঁচে থাকার জন্যই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে, তখন বই পড়ার পরামর্শ হয়তো তাদের কাছে মূর্খতা বা সময়ের অপচয় বলে মনে হবে।

আমরা আজও সাহিত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত নই। আমরা শিক্ষার ফল দ্রুত পেতে চাই। অনেকেই মনে করেন, শিক্ষা আমাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা দূর করে দেবে। যদিও এটি হয়তো আমাদের জন্য কিছুটা অতিরঞ্জিত আশা, তবুও আমরা এর বাইরে আর কোনো উপায় খুঁজে পাই না। শিক্ষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শুধু শিক্ষাই নয়, সাহিত্যের চর্চাও শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু সমাজের অনেকেই সাহিত্য পড়ার তাৎক্ষণিক ফল দেখতে না পেয়ে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেন না।

আমাদের সমাজ আজ অর্থের সাফল্যের ওপর বেশি জোর দেয়। সাহিত্যের সরাসরি কোনো বাজার মূল্য নেই, তাই অনেকের কাছে এর গুরুত্ব কম। আমাদের শিক্ষিত সমাজের বড় অংশ অর্থের পেছনে ছুটছে, সাহিত্য বা জ্ঞানচর্চার প্রতি তাদের মনোযোগ নেই। যারা হাজার হাজার টাকার আইনি বই কেনে, তারা একখানা কবিতার বই কিনতে চায় না, কারণ তা সরাসরি আয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়। অথচ, জাতির উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন তারা জ্ঞানে এবং মানসে উন্নত হবে। আর সেই মানসিক বিকাশের জন্য সাহিত্যের কোনো বিকল্প নেই।

সাহিত্য আমাদের মনকে প্রভাবিত করে, আমাদের চিন্তা ও মননের বিকাশ ঘটায়। তাই আমি বিশ্বাস করি, বই পড়া শুধু শখ নয়, এটি জাতি গঠনের একটি প্রধান উপায়। আমাদের প্রত্যেককে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হতে হবে, কারণ সাহিত্য মানুষকে নিজের মন, চিন্তা এবং উপলব্ধিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

Related Posts

Leave a Comment