জান্নাত কয়টি ও জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাত সৎকর্মশীলদের জন্য আখিরাতে নির্ধারিত শান্তির আবাস। ইসলামী বিশ্বাসে, জান্নাত হল সেই স্থান যেখানে ঈমানদার ও নেককার মানুষরা চিরকাল বসবাস করবেন, এবং সেখানে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো অভাব থাকবে না। এই পোস্টে জান্নাত কয়টি ও জান্নাতের বর্ণনা দিলাম।

জান্নাত কয়টি ও কি কি

কুরআনে জান্নাতের আটটি নাম উল্লেখ করা হয়েছে:

  • ১. জান্নাতুল ফিরদাউস
  • ২. দারুল মাকাম
  • ৩. দারুল কারার
  • ৪. দারুস সালাম
  • ৫. জান্নাতুল মাওয়া
  • ৬. জান্নাতুন নাঈম
  • ৭. দারুল খুলদ
  • ৮. জান্নাতু আদন

জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাত শব্দটি আরবি এবং এর শাব্দিক অর্থ বাগান বা উদ্যান, যা সৎকর্মশীলদের জন্য আখিরাতে নির্ধারিত শান্তির আবাস। ইসলামী ধারণায়, জান্নাত হল সেই স্থান যেখানে ঈমানদার ও নেককার মানুষরা চিরকাল বাস করবেন, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো অভাব থাকবে না। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন:

وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِيَ أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُونَ نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَّحِيم

অর্থ: “সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর। এটি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।” (সূরা হা-মীম আস-সাজদা, আয়াত: ৩১-৩২)

জান্নাতুল ফিরদাউস সর্বশ্রেষ্ঠ। জান্নাত হলো চিরন্তন শান্তির আবাসস্থল, যেখানে জান্নাতিরা কোনো দুঃখ-কষ্ট ও ক্লান্তির সম্মুখীন হবে না। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে এবং মৃত্যুর কোন অনুভূতি তাদের স্পর্শ করবে না। তাদের পোশাক কখনো পুরাতন হবে না এবং তারুণ্যও কখনো শেষ হবে না। তারা চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির মাঝে থাকবে। জান্নাতের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়; ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র সবই স্বর্ণ, রৌপ্য, মণি ও মুক্তায় সজ্জিত।

জান্নাতে চার ধরনের নদী প্রবাহিত: ১. নির্মল পানির নহর ২. দুধের নহর ৩. পবিত্র পানীয়র নহর ৪. মধুর নহর

এছাড়া, তিন ধরনের ঝরনা রয়েছে: ক. ‘কাফুর’ ঝরনা খ. ‘সালসাবিল’ ঝরনা গ. ‘তাসনিম’ ঝরনা

আল্লাহ বলেছেন, “মুত্তাকিদের জন্য যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা হলো নির্মল পানির নহর, দুধের নহর, সুস্বাদু পানীয়র নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর।” (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৫)

জান্নাতিরা ডান দিকের লোক এবং অগ্রবর্তী লোকদের মধ্যে বিভক্ত হবে। অগ্রবর্তী লোকেরা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আল্লাহ জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন; দুটি স্তরের ব্যবধান আসমান ও জমিনের মতো। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফিরদাউস চাইবে, কারণ এটি সর্বোচ্চ জান্নাত।”

যখন মুত্তাকিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদেরকে জান্নাতের দরজায় স্বাগত জানানো হবে। তারা বলবেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের জন্য তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন।” জান্নাতে তাদের জন্য রয়েছে চিরকালীন সুখের নিদর্শন।

জান্নাতিরা স্বর্ণের সিংহাসনে বসবেন, যেখানে রোদের তাপ বা শীত অনুভব করবেন না। সেখানে থাকবে গাছের ছায়া এবং ফলের সারি। পানীয় হবে স্বচ্ছ স্ফটিকের পাত্রে এবং তাদের জন্য থাকবে চমৎকার খাদ্য। তারা অবিরাম নেয়ামতের মাঝে থাকবেন এবং তাদের মুখে থাকবে প্রশান্তির উজ্জ্বলতা।

এভাবেই জান্নাতিরা আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত নিয়ামতের মধ্যে বসবাস করবেন, যেখানে তাদের জন্য সবকিছু থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন:

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُمْ مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُوْنَ

অর্থ: “কেউ জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!” (সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৭)

Related Posts