‘একদিন ভোরবেলা’ গল্পটি আনয়ারা সৈয়দ হকের একটি কাল্পনিক কিশোর গল্প, যা প্রকৃতি, পরিবেশ এবং গাছপালার সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। এতে শিউলির সাথে একটি জীবন্ত গাছের শিকড়ের কথোপকথনের মাধ্যমে, গাছের দুঃখ ও মানবিক কার্যকলাপের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। নিচে একদিন ভোরবেলা গল্পের মূলভাব (সহজ ভাষায়) দেয়া হল।
একদিন ভোরবেলা গল্পের মূলভাব
ফাল্গুন মাস। বাতাসে একটা আনন্দের ঝোঁক বইছে। শিউলি সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে করল, আজ তো তার ফুল কুড়ানোর দিন! মুখ ধোয়ারও সময় নেই, দৌড়ে বাগানে চলে গেল। বাগানে তার প্রিয় ফুলের সারি—কদম, শেফালি, রক্তকরবী, টগর, গন্ধরাজ, সব কিছু আছে।
শিউলির ভাই-বোন নেই, তাই সে একা একাই ফুল কুড়িয়ে আনন্দ করে। নতুন ক্লাসে উঠেছে, পড়াশুনার চাপও তেমন নেই। ভোরের শীতল বাতাস তাকে খুব ভালো লাগে; তখন চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু পাখিদের কূজন শোনা যায়।
আজ সে পশ্চিম দিকে হাঁটতে হাঁটতে এক বুনো গাছের ঝোপে ঢুকল। সেখানে গন্ধরাজ গাছটি ফুলে ভরা। মনে মনে ভাবল, আজ গন্ধরাজের মালা গাঁথবে। কিন্তু হঠাৎ এক চিৎকার শুনে সে থমকে গেল। “মরে গেলাম রে! আমাকে বাঁচাও!” ভয় পেয়ে সে পিছন ফিরে যেতে যাবে, কিন্তু আবার শুনতে পেল, “ও মেয়ে, চলে যেও না!”
শিউলি ভয়ে থেমে গেল। জানতে চাইল, “তুমি কে?” তখন শুনল, “আমি তো তোমার পায়ের কাছে, ইটের নিচে চাপা পড়েছি।” শিউলি অবাক হয়ে দেখল, তার পায়ের কাছে সত্যিই ইটের স্তূপ। ইট সরাতেই বেরিয়ে এল হলুদ পাতা আর মোটা শিকড়।
শিকড়টা বলল, “বাঁচালে! তিন মাস ধরে এই ইটের নিচে। তোমার মতো কেউ আমাকে দেখতে আসে না।” শিউলি অবাক হয়ে বলল, “তুমি কে?” শিকড়টা বলল, “আমি একটা গাছের চারা, বটগাছ।”
শিউলি ভাবল, গাছের শিকড় কথা বলছে! একটু ভয় পেলেও সে জিজ্ঞেস করল, “তুমি তো খুব ছোট!” শিকড় বলল, “আমার বয়স পঞ্চাশ বছর তিন দিন।”
শিউলি হতভম্ব হয়ে বলল, “এটা কী আশ্চর্য!” শিকড়টা বলল, “বড় হতে গেলে অনেক বাধা আছে।”
শিউলি বলল, “তুমি বড় হবে, কেন না? গাছ বড় হলে অনেক কিছুই পাবে।” শিকড় বলল, “বড় হওয়ার পথে বাধা তো আছে। গাছেরা নিধন হচ্ছে।”
শিউলি বলল, “আচ্ছা, তবে আমাদের দেশে তো গাছ আছে!” শিকড় বলল, “গাছ কেটে, কলকারখানা তৈরি হচ্ছে।”
শিউলি বলল, “কিন্তু আমরা তো গাছ লাগাচ্ছি!” শিকড় বলল, “তোমরা যখন দুর্ভোগে পড়বে, তখন আমরা হাসব।”
শিউলি রাগ হয়ে বলল, “আমি আবার গাছ লাগাব!” শিকড় বলল, “বড় হতে কত বছর লাগবে! তখন তো তোমার নাতি হবে।”
শিউলি ভাবতে লাগল, হঠাৎ মায়ের ডাক শুনে চমকে গেল। বুঝতে পারল, সে কোথায় হারিয়ে গেছে। ঝোপের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে, সত্যিই তার পায়ের কাছে ছিল গাছের এক চারা। গা শিরশির করে উঠল। দ্রুত ঘরে ফিরে এল।
আরও পড়ুনঃ জোঁক গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
আরও পড়ুনঃ একদিন ভোরবেলা গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ) – ৮ম শ্রেণির বাংলা
আরও পড়ুনঃ জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে গল্পের মূলভাব
Related Posts
- ৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ১ম অধ্যায় (কাজের মাঝে আনন্দ)
- জোঁক গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় (সবগুলো ছকের সমাধান)
- মাঝি কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৭ম শ্রেণির বাংলা
- ডিজিটাল প্রযুক্তি ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান (সবগুলো ছক)
- তোমরা যেখানে সাধ কবিতার মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ) – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- আমাদের লোকশিল্প মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- ৭ম শ্রেণির গণিত ২য় অধ্যায় সমাধান (অজানা রাশির সূচক, গুণ ও তাদের প্রয়োগ)
- যোগাযোগে নিয়ম মানি প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- আমার বাড়ি কবিতার মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা