৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ (কল্পনানির্ভর লেখা)

সপ্তম শ্রেণির বাংলা পঞ্চম অধ্যায়ে কল্পনানির্ভর লেখা রয়েছে। কাল্পনিক লেখা বলতে বুঝায় আপনি আপনার মন থেকে কল্পনা করে যেকোনো ধরনের লেখা বানিয়ে লিখতে পারবেন। আজকের পোস্টে আমি ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান করে দেখাবো।

৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান

চারপাশের যে জগৎ আমরা দেখতে পাই, তাকে বলে বাস্তব জগৎ। অনেক গল্পে বাস্তব জীবনের ঘটনার বর্ণনা থাকে। আবার এমন কিছু গল্প আছে যেগুলো বাস্তবের ঘটনার সাথে মেলে না। এগুলোকে কাল্পনিক গল্প বা কল্পকাহিনি বলে। রূপকথাও এক ধরনের কল্পভনির্ভর লেখা। তবে এর সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল যেমন আছে, তেমনি অমিলও আছে। রূপকথার ঘটনা ও চরিত্র অতীতের-আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগেকার।

কল্পনানির্ভর লেখা

পড়ে কী বুঝলাম

ক. ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি’ বলতে কী বোঝ?

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ও ধারণাকে অবলম্বন করে যেসব কাল্পনিক কাহিনী লেখা হয় সেগুলো বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী।

খ. আগে আর কোন ধরনের কল্পকাহিনি তুমি পড়েছ?

এর আগে আমি পাতালপুরীর রাজকন্যার ও দৈত্যদানবের কাহিনী পড়েছি। ইদানীং পড়ছি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।

গ. ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পের কোন কোন ঘটনা কাল্পনিক?

আলোচ্য গল্পের ফ্লাইং সসার থেকে অদ্ভুত প্রাণীর গুলি করার ঘটনা,কাঠির মতো মানুষের ঘটনা, রোবটের ঘটনা, ভালুক ও ময়ূরের ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও বেশ রোমাঞ্চকর।

ঘ. এই গল্পের কোন কোন ঘটনা বাস্তব?

রঞ্জুর আব্বা, আম্মা ও বোন শিউলির সাথে যা কিছু ঘটেছে ,সবই বাস্তব। রঞ্জুর সুন্দর সুন্দর গল্প বলা,কালির দোয়াত ভেঙে যাওয়া, শিউলিকে দেওয়া আমড়া, বাবা-মায়ের সাথে ঘুমানো সবই বাস্তব ঘটনা।

ঙ. রূপকথার সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল-অমিল কোথায়?

রূপকথার কাহিনী অতীতের লোকমুখে প্রচলিত নানা রকম চরিত্র ও ঘটনার কল্পিত গল্প। অন্যদিকে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা রকম ধারণাকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী ও চরিত্রের গল্পই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। রূপকথা অনেকের সৃষ্টি ,কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ব্যক্তি বিশেষের সৃষ্টি।

বলি ও লিখি

‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

চার বছর বয়সের রঞ্জু বানিয়ে বানিয়ে অদ্ভুত সব গল্প বলে। এমনভাবে বলে , মনে হয় সত্যিই ঘটনাটা ঘটেছে। মহাকাশের কোনো এক আগন্তুক তাকে ব্ল্যাকহোলের গোপন রহস্যের কথা বলে গেছে। ফ্লাইং সসার থেকে বিদঘুটে কোনো প্রাণী লেজারগান দিয়ে তাকে গুলি করার চেষ্টা করেছে। জারুল গাছের নিচে চতুষ্কোণ একটা উজ্জ্বল আলো দেখে উঁকি দিতেই ভিন্ন এক বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ডের এক ঝলক দৃশ্য দেখেছে ৷ শর্টকাট রাস্তায় আস্তে আস্তে হঠাৎ একটা রোবট বের হয়ে  নাকি -সুরে তার কুশল জিজ্ঞাসা করল। এমন ধরনের বিচিত্র আজগুবি সব গল্প সে বড় বোনের কাছে অবলীলায় বলে চলে। কিন্তু একদিন রঞ্জুকে বকার পর বকা শুনতে হলো মায়ের কাছে ৷

বকা খেয়ে মনের দুঃখে সে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল ৷ কিন্তু হঠাৎ হালকা শোঁ শোঁ আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখল গোলমতন একটা মহাকাশযান ভাসছে। একটু পরে নীল আলোয় একটা আবছা ছায়াকে কিলবিল করতে দেখল। সেটি স্পষ্ট হলে শুকনো কাঠির মতো মানুষ তার সাথে বাংলায় এমনকি চাঁটগাঁয়ের ভাষায় কথা বলল। তারপর তাদের ক্র্যাব নেবুলার ফুয়েল ট্যাংকের ফুটো সারানোর জন্য তার কাছে থাকা চুইংগামটা একটু চিবিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করল। ফুটোটা বন্ধ করে মানুষটা ক্র্যাব নেবুলার একটা ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দিয়ে চলে গেল। সিঁড়ির আলোতে রঞ্জু আবিষ্কার করল উপহারটা একটা আমড়া। শিউলি আপার জেরার এক পর্যায়ে সে আমড়াটা তাকে দিল ৷ তারপর তার প্রশ্নের উত্তরে বলল, সবাই যেখানে পায় সেখানেই সে আমড়াটা পেয়েছে।

লেখা নিয়ে মতামত

‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।

আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ রচনায় যা আছেআমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
১. গভীর রাতে আম্মা দেখেন রঞ্জু ঘুম থেকে উঠে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে এসেছে ৷ রঞ্জু তার আব্বা আর আম্মার মাঝখানে শুতে শুতে বলল, ভালুকটা ঘুমাতে দেয় না ৷মাত্র চার বছরের ছেলে মা-বাবাকে ছেড়ে একা থাকতে পারে কি ? তাই কল্পিত অজুহাতের আশ্রয় নিয়েছে ৷
২. ব্যাপারটা এইভাবে শুরু হয়েছে—- প্রয়োজনে রঞ্জু চমৎকার গল্প ফেঁদে বসে ৷ আব্বা বললেন , ছোটো মানুষ সত্যি-মিথ্যে গুলিয়ে ফেলে ৷ বড়ো হলে ঠিক হয়ে যাবে ৷বাবা কি রঞ্জুকে সমর্থন করে উৎসাহিত করলেন? নাকি তার মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার অভিনয় করলেন? নাকি ব্যাপারটাকে গুরুত্বই দিলেন না? মনে হয় শেষেরটাই ঠিক ৷
৩. বছরখানেক পরে রঞ্জুকে নিয়ে সমস্যা আরও বেড়ে গেল—- কারণ তখন হঠাৎ করে সে সায়েন্স ফিকশন পড়তে আরম্ভ করেছে ৷ সায়েন্স ফিকশনের উদ্ভট কাহিনী পড়ে তার মাথাটা পুরোপুরি বিগড়ে গেল ৷রঞ্জুর কল্পনার জগৎটা এখন বিজ্ঞানমনস্ক জগতে পরিণত হয়েছে ৷
৪. রঞ্জুকে বকতে বকতে আম্মা তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লেন—- এমন এমন কথা বললেন যে রঞ্জুর মনে হতে লাগল যে, বেঁচে থাকার বুঝি কোনো অর্থই হয় না ৷আহা বেচারা রঞ্জু ! কিন্তু কোনো  কারণ নেই , কিছু নেই ,হঠাৎ সে হোঁচট খেল কেন ?বিষয়টা রহস্যময় ৷

কল্পনানির্ভর রচনা লিখি

এবার একটি কল্পনানির্ভর গল্প লেখা হল। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দিলাম।

 সাদাঘোড়া

শরতের মেঘমুক্ত নীল আকাশ ৷ চাঁদের জ্যোৎস্না খেলছে গাছের পাতায়, নদীর বুকে, কাশবনে, ঘরের ছাদে ৷ আমাদের বাড়িটা নদীর পাড়েই ৷ নদীর পাড়ে কাশবনে  সাদা ফুলের মেলা ৷ জানালা দিয়ে দেখছিলাম এতক্ষণ ৷ বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে ৷ পাশের বাড়িটির পরেই কাঁচা রাস্তা ৷ রাস্তার দুদিকে ধানখেত ৷ দুই খেতের মাঝখান দিয়ে আলপথ ৷ সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ ৷ রাত কত হলো কে জানে ! এখন ফের দরকার ৷

হঠাৎ তাকাতে মনে হলো  নদীর পাড়ে এসে গেছি ৷ সাঁকোর কাছে ৷ বাম দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে থমকে গেলাম ৷ খোলা জায়গায় ঘাসের উপর একটা গোল ঘরের মতো ৷ সামনের অংশে উপরের দিকে একটা বড় নীল আলো ৷ আলোটা  ঘুরছে ৷ একটা দরজা খুলে গেল ৷ বেরিয়ে এলো সাদা ঘোড়া ৷ ঘোড়াটা নদীর পাড় ধরে ছুটে গেল কিছু দূর , তারপর আবার ফিরে এলো আমার কাছে ৷ প্রশ্ন করল, কী  রে, আমাকে লাথি মারলি কেন ?

ভয় ভয় বললাম , লাথি মারিনি তো, ভাবছিলাম ৷ তুমি কী করে জানলে ? প্রশ্নটা করেই মনে হলো,  আমি একটা ঘোড়ার সাথে কথা বলছি ৷ ঘোড়া  কথা বলে ? তা-ও আবার বাংলায় ? কোথাকার ঘোড়া এটা ? আর ওই গোলাকার ঘরটাই বা এলো কোথা থেকে ?

কিন্তু………

কোনো  কিন্তু নয় ৷ আমার পিঠে ওঠ ৷ তুই একা সাঁকো পার হতে পারবি না ৷ পড়ে যাবি নদীতে ৷ আয়——

আমি ঘোড়াটার পিঠে চড়ে বসলাম ৷ বেশ নরম ফোমের মতো মনে হলো ৷ ঘোড়াটা হেলেদুলে চলতে চলতে সাঁকোর উপর দিয়ে নদী পার হলো ৷ তারপর সাদা কাশবনের পাশ দিয়ে চলে এলো আমার বাড়ির গেটে ৷ ঘোড়াটা নিচু হলে আমি নামলাম ৷ বললাম, অনেক ধন্যবাদ, আমাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৷

আমার গলা শুনে বাবা-মা, ভাইয়া-আপু সবাই নাম ধরে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে এলো ৷ একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল ৷

 আমি বললাম , তোমরা চিন্তা করো না ৷ আমি একদম ঠিক আছি ৷ আমার বন্ধু আমাকে নিরাপদে পৌঁছে দিল ৷

পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ,সাদা ঘোড়াটা নেই ৷

Related Posts

Leave a Comment