৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদ-বুঝে পড়ি লিখতে শিখি

সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের সবচেয়ে বড় অধ্যায় হচ্ছে ৫ম অধ্যায়। এখানে প্রয়োগিক লেখা, বিশ্লেষণমূলক লেখা, কল্পকাহিনীমূলক লেখা ইত্যাদি সহ পাঁচটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। আমরা আজকের পোস্টে ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায়ের ‘বুঝে পড়ি ও লিখতে শিখি’ শিরোনামের ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান করে দেখাবো।

৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায়-বুঝে পড়ি লিখতে শিখি

৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ

প্রায়োগিক লেখা

পড়ে কী বুঝলাম

ক. এই চিঠির প্রেরক ও প্রাপক কে?

এই চিঠিটির প্রেরক একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর নাম ফেরদৌস কামাল উদ্দীন মাহমুদ এবং প্রাপক হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার মা হাসিনা মাহমুদ।

খ. চিঠিটি বাংলাদেশের ইতিহাসের কোন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেখা?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চিঠিটি লেখা হয়।

গ. প্রেরক কেন চিঠিটি লিখেছেন?

প্রেরক মাকে চিঠি লিখেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি কেমন আছেন এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি কেমন তা জানানোর জন্য।

ঘ. একটি চিঠির কোন অংশে কী লিখতে হয়?

চিঠির প্রধান অংশ চারটি। এগুলো হচ্ছে— ১। ঠিকানা ও তারিখ,২। সম্ভাষণ,৩। মূল বিষয় ও ৪। লেখকের নাম বা স্বাক্ষর। এছাড়া খামের উপর প্রেরক ও প্রাপকের নাম লিখে চিঠি খামের ভেতর পুরে দিতে হয়।

ঙ. চিঠি কেন লেখা হয়?

চিঠি হচ্ছে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই মাধ্যমে খবরাখবর জানানো হয়। সাধারণত মানুষ যখন দূরে অবস্থান করে তখন কুশলাদি ও অন্যান্য প্রয়োজনে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। চিঠি নানা রকম হতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত চিঠি, আনুষ্ঠানিক চিঠি ইত্যাদি। উপরের চিঠিটি একটি ব্যক্তিগত চিঠি।

বলি ও লিখি

আগের চিঠিতে প্রেরক প্রাপককে যা যা জানাতে চেয়েছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

চিঠির মাধ্যমে প্রেরক ফেরদৌস তাঁর মাকে একাত্তরের রণাঙ্গনের জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর যাত্রা, অভিজ্ঞতা, তাঁর মনে লালিত প্রতিশোধের কথা এবং পরিশেষে তাঁর ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছানোর কথা। তিনি তাঁর মাকে জানিয়েছেন যে তাকে দেখতে এখন আগের মত মনে হবে না, মুখভরা দাড়ি, গোঁফ আর বড়ো বাবরি চুল। তাঁর বন্ধু মাহিম বলে তাঁকে দেখতে আফ্রিকান জংলিদের মতো লাগে। যদিও তিনি তাঁর নিজের চেহারা বহুদিন দেখেননি আয়না না থাকার কারণে। তবে তাঁর মাঝে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর মাকে আক্ষেপ করে বলেন যে তার মনে অনেক ঘটনা জমা হয়ে আছে। কিন্তু সময়ের অভাবে তিনি ঘটনা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অনেকদিন যে ভালো কিছু খাননি বিধায় তাঁর মায়ের কাছে একটু ভালো কিছু খাবার চেয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে চিঠির ইতি টেনেছেন।

নিজের অভিজ্ঞতা

চিঠি পড়া, লেখা বা এ সংক্রান্ত তোমার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তা লেখো।

চিঠি পড়া বা লেখা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা একটু ভিন্নরকম। চিঠি আগের যুগের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলেও বর্তমান যুগের কল্যাণে এখন হাতে লেখা চিঠির চলন নেই বললেই চলে। তাই নিতান্ত পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আমার চিঠির হাতেখড়ি। পরীক্ষার খাতা ছাড়া হাতে চিঠি লেখা হয় না বললেই চলে। এখন কি আর অপেক্ষা করে চিঠি গ্রহণের ও প্রদানের সময় আছে কারো? তবে অনলাইনে ইলেকট্রনিক চিঠি বা ই-মেইল পাঠানো তো আমার নিত্যদিনের কাজ। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় যোগাযোগ স্থাপনে এই চিঠি বা ই-মেইলই ব্যবহার করি। তাই চিঠি পড়া বা লেখা সংক্রান্ত বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা কিছুটা অন্যরকম।

চিঠি লিখি

মিরপুর ১০, ঢাকা

১৩/০২/২০২৪

সুপ্রিয় ‘ক’

আমার শুভেচ্ছা নিও। গত সপ্তাহেই তোমার চিঠি পেয়েছি। কিন্তু উত্তর লিখতে বিলম্ব হয়ে গেল বলে দুঃখিত। চিঠিতে তুমি জানতে চেয়েছ, আমি আমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে কেন একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। তা জানাতেই তোমাকে এ চিঠি লিখছি ৷ তুমি তো জানো, মাত্র কয়েকদিন হলো আমার বাবা একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তাঁর আদর্শেই আমি বড়ো হচ্ছি। তাঁর আদর্শকে আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। সেসব কথা লিখে শেষ করা যাবে না। আমি মনে করি দেশসেবার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো শিক্ষকতা। আমি নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলব। আমাদের দেশ শিক্ষায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। আমি নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ধারায় অগ্রসর করার জন্য নিজেকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই এবং আমার আদর্শ ও উদ্দেশ্য সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিফলন ঘটাতে চাই। 

আজ আর নয়। সাক্ষাতে আরো বিস্তৃত আলাপ হবে। তোমার অভিমত জানাবে, ভালো থেকো।

ইতি

 প্রীতিমুগ্ধ

‘ খ ’

৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ

বিবরণমূলক লেখা

পড়ে কী বুঝলাম

ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?

লেখক এখানে মিশরের পিরামিডের বর্ণনা দিয়েছেন।

খ. পিরামিডগুলো কারা তৈরি করেছিলেন এবং কখন তৈরি করেছিলেন?

পিরামিডগুলো মিশরের সম্রাট ফারাওরা তৈরি করেছিলেন। তারা এগুলো প্রায় সাড়ে ছ’হাজার বছর আগে তৈরি করেছিলেন।

গ. পিরামিডগুলো কেন তৈরি করা হয়েছিল?

ফারাওদের শরীর যাতে মৃত্যুর পর পরলোকে অনন্ত জীবন ও যৌবন লাভ করে সেই বিশ্বাসে পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এজন্য ফারাওদের দেহ মমি করে পিরামিডের ভেতরে যত্নে রাখা হয়েছিল।

ঘ. পিরামিডগুলো কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল?

তেইশ লাখ পাথরের টুকরা পর পর উপরের দিকে বিশাল এলাকাজুড়ে সাজিয়ে পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ লোক বিশ বছরে এই পিরামিডগুলো তৈরি করেছিল।

ঙ. পিরামিড একটি পুরাকীর্তি। বাংলাদেশের যে কোনো পুরাকীর্তির সাথে এর মিল-অমিল খুুঁজে বের করো।

বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত সোমপুর বিহারের সাথে পিরামিডের কিছুটা মিল আছে। রাজা মহীপাল হাজার বছর আগে এই বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেছিলেন। পড়াশুনা ,গবেষণা ও প্রার্থনার জন্য এটি বহু কাল ব্যবহৃত হয়েছে। পিরামিডের মতো এটিও প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি। তবে ফারাওদের বিশ্বাস ও উদ্দেশ্যের সাথে সোমপুর বিহারের মিল নেই। পিরামিডের মতো এই বিহার উচ্চতা সম্পন্ন নয়।

বলি ও লিখি

‘পিরামিড’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা তোমার নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কীর্তিস্তম্ভ এবং সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম উদাহরণ হলো পিরামিড। মিশরের প্রাচীন ফারাওরা পরজীবনে অনন্ত জীবন লাভের আশায় এগুলো নির্মাণ করেছিলেন। পিরামিড গুলো এতটাই মজবুত শক্তিশালী যে হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সকল ঝড়-ঝাপটা, ভূমিকম্প সহ্য করে এখনও অক্ষত অবস্থায় আছে। ফারাও মিস্ত্রিরা কুঠুরি বানানো শেষে বের হওয়ার সময় মস্ত পাথর দিয়ে এত মজবুত পালিশ পলেস্তারা লাগিয়ে ছিল যে পিরামিডের ভিতরে প্রবেশ করার পথ খুঁজে বের করতে পৃথিবীবাসীকে সাড়ে ছয় হাজার বছর চেষ্টা করতে হয়েছিল। মিশরের বাইরেও পিরামিড আছে, তবে গিজে অঞ্চলের বিদ্যমান তিনটি পিরামিডই ভূবন-বিখ্যাত। প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু পিরামিডকে কাছে থেকে দেখে উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না। এই পিরামিড নির্মাণে ২৩ লক্ষ বিরাট আকৃতির পাথরের প্রয়োজন হয়েছিল। সবচেয়ে বড়ো পিরামিডটি নির্মাণে এক লক্ষ লোকের ২০ বছর সময় লেগেছিল। পিরামিড দেখে অনুমান করা যায় ফারাওরা কতটা ঐশ্বর্যবান এবং প্রভাবশালী ছিলেন। অতি উঁচু স্তরের সভ্যতার অধিকারী না হলে এমন কীর্তিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

লেখা নিয়ে মতামত

পিরামিড’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। বোঝার সুবিধার জন্যে দুটি নমুনা দেওয়া হলো।

পিরামিড রচনায় যা আছেআমার মতামত ও জিজ্ঞাসা
১. বইয়ে আছে।বইয়ে দেয়া আছে।
২. বইয়ে দেয়া আছে।বইয়ে দেয়া আছে।
৩. পিরামিডের ঠিক মাঝখানের একটা কুঠরিতে বিস্তর ধনদৌলত জড়ো করা আছে। পৃথিবীর মানুষের সাড়ে ছ’হাজার বছর লাগল ভিতরে যাওয়ার রাস্তা বের করতে।বন্ধ পিরামিডের ভিতরে ধন-দৌলত জড়ো করা আছে—- কথাটা কি আদৌ সত্য, নাকি গুজব। রাস্তা বের করে আবার কেউ বন্ধ করে দিয়েছে কি-না কেউ কি তার খোঁজ করেছে?
৪. পিরামিড তৈরি করতে তেইশ লক্ষ টুকরা পাথরের প্রয়োজন হয়েছিল। তেইশ লক্ষ পাথর দিয়ে দেওয়াল বানালে তা লম্বায় ছয়শ পঞ্চাশ মাইল হবে। বড়ো পিরামিডটা বানাতে নাকি এক লক্ষ লোকের বিশ বছর লেগেছিল।প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে পিরামিড তৈরি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ফারাওরা দাস হিসেবে ধরে আনা এত লোকের আশ্রয়, খাদ্য ঠিকমতো দিয়েছে তো? নাকি খাটিয়ে মেরেছে ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে?

বিবরণ লিখি

তোমার এলাকার অন্তত পঞ্চাশ বছরের পুরানো কোনো স্থাপত্য সম্পর্কে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লেখো।

নরসিংদী জেলার অন্তর্গত বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত দুটি গ্রামের নাম উয়ারী এবং বটেশ্বর। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৪৫০ বছর পূর্বের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে এখানে। ধারণা করা হয় , এটি মাটির নিচে অবস্থিত একটি দুর্গ-নগরী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী এটি প্রায় ২৫০০ বছরের পুরোনো। উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নবন্তু খননে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা ,পোড়া মাটির ফলক, স্বল্প-মূল্যবান পাথর, কাচের পুঁতি, মুদ্রা, উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। উল্টো-পিরামিড আকৃতির স্থাপত্যটি নিয়েও বিশেষজ্ঞ স্থপতিরা গবেষণা করেছেন। এখানে চারটি পাথরের নিদর্শন পাওয়া গেছে। যা প্রত্নপ্রস্তর যুগের দিককে ইঙ্গিত করে। বিপুল পরিমাণ লৌহকুঠার এবং কর্মফল আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর সময়কাল জানা যায়নি। উয়ারী গ্রামের মাটির নিচে দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট বর্গাকৃতির গড় ও পরিখা পাওয়া গেছে। গড় ও পরিখা আঁড়িয়াল খাঁ নদের প্রান্তসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উৎখননে উয়ারী গ্রাম আবিষ্কৃত হয়। ২০১০ সালের উৎখননে বেরিয়ে আসে প্রায় ১৪০০ বছরের প্রাচীন ইট নির্মিত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। এসব নব আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে।

Related Posts

Leave a Comment