জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারা জীবনই মানুষ রোগমুক্ত থাকতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হই। আজকের পোস্টে তোমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায়ের সবগুলো ছকের সমাধান করে দিলাম।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায় সমাধান
কিছু রোগব্যাধি ঋতু পরিবর্তন বা পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত যখন আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় সে সময়ে পরিবেশে থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু, যেমন : ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এর দ্বারা আমরা কম বেশি আক্রান্ত হই।
রোগ মোকাবিলায়, খুঁজে পাই সুস্থ থাকার উপায়
Table of Contents
রোগব্যাধি সম্পর্কে আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশীরা কী বলেন শোনা যাক
এবার এই তালিকা নিয়ে পরিবারে বাবা-মা ও অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলি। এই ধরনের রোগের লক্ষণগুলো কী সে ব্যাপারে তাদের মতামত নিই। এই রোগব্যাধি থেকে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য তারা কী কী কাজ করে থাকে তা জানতে চাই এবং নিচের ছকে উল্লেখ করি।
ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগব্যাধি | সাধারণ লক্ষণসমূহ | প্রতিরোধ ও প্রতিকারের প্রচলিত উপায় |
১। জ্বর | শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শরীর ব্যথা, বমি হওয়া ,মাথা ব্যথা ,শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া। | ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়া। উষ্ণ পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা। কপালে ভেজা কাপড় দেওয়া, ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া। |
২। সর্দি-কাশি | নাক বন্ধ হয়ে থাকে ,সর্দির পাশাপাশি কাশি হয়, হালকা জ্বর থাকে, গলা ব্যথা দেখা যায় ,কফ বের হয়। | পানি কম পান করা ৷ ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা ৷ কুসুম গরম পানি পান করে শরীরকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করা। |
৩। ডায়রিয়া | পাতলা পায়খানা হয়, বমি হয়, পেট ব্যথা করতে পারে , জ্বর থাকে । | খাবার স্যালাইন খাওয়া। বাইরের খোলা, বাসি খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা। নিরাপদ পানি পান করা। |
৪। টাইফয়েড | দীর্ঘদিন জ্বর থাকে, মাথা ব্যথা ও পেট ব্যথা হয় , ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ক্লান্তিভাব থাকতে পারে। | খাবার স্যালাইন খাওয়া। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ ও নিরাপদ পানি পান করা। |
৫। ডেঙ্গু | তীব্র জ্বর হয়, শরীরে প্রচন্ড ব্যথা থাকে, মাথা ব্যথা করে। | চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। মশারি টানিয়ে ঘুমানো। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখা। |
তথ্যগুলো যাচাই করি
পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করে আমরা ঋতু পরিবর্তন জনিত সাধারণ রোগব্যাধিতে রোগ প্রতিকারের প্রচলিত উপায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। শ্রেণি আলোচনার ভিত্তিতে নিচের ছকে আমাদের মতে কোন উপায়গুলো সঠিক আর কোনগুলো সঠিক নয় তা উল্লেখ করি।
কোন প্রচলিত উপায়টি সঠিক | কোন প্রচলিত উপায়টি সঠিক নয় | কেন সঠিক বা কেন সঠিক নয় |
কপালে ভেজা কাপড় দেওয়া | জ্বর হলে কপালে ভেজা কাপড় দিলে এটি দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে । তাই এই প্রচলিত উপায়টি সঠিক | |
খাবার স্যালাইন খাওয়া | ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর পানি ও লবণ হারায়। খাবার স্যালাইন খেলে লবণ ও পানির ঘাটতি পূরণ হয়। | |
তরল খাবার কম খাওয়া | ডায়রিয়া ও টাইফয়েড হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এজন্য তরল খাবার বেশি খেতে হয়। তাই তরল খাবার কম খাওয়া সঠিক নয়। | |
কুসুম গরম পানি পান করা | কুসুম গরম পানি খুসখুসে কাশি, বুকে কফ জমা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্যা রোধ করে। তাই কুসুম গরম পানি পান করা সঠিক। | |
প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া | প্যাকেটজাত খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে অনেক ধরনের ক্যামিকেল ও ক্ষতিকর পদার্থ প্রয়োগ করা হয় যেগুলো ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। | |
পানি কম পান করা | সর্দি হলে বেশি বেশি পানি পান করলে পানি শুন্যতা রোধ ও দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে। কম পানি পান করলে তা সম্ভব নয়। তাই প্রচলিত এই উপায়টি সঠিক নয়। |
ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগ প্রতিরোধে আমার পরিকল্পনা ও চর্চা
রোগগুলো সম্পর্কে তো জানলাম। এবার আমাদের নিজেদের পরিকল্পনার সময়। নিচের ছকে ঋতু পরিবর্তন জনিত সাধারণ রোগব্যাধির প্রতিরোধে আমি নিয়মিত কী কী কাজ করব তার একটি তালিকা তৈরি করি।
ঋতু পরিবর্তনজনিত সাধারণ রোগব্যাধি প্রতিরোধে আমার পরিকল্পনা |
১। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করব এবং বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব। |
২। ভাইরাসজনিত রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করব। |
৩। প্রচুর পানি পান করব এবং ধুলাবালি থেকে দূরে থাকব। |
৪। শীতকালে কাপড়-চোপড় পরে শরীরকে গরম রাখার চেষ্টা করব। |
৫। বাইরের খোলা বা বাসি খাবার খাব না। |
৬। খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে বাসায় ফিরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিব। |
৭। গ্রীষ্মকালে দীর্ঘসময় রোদে কাজ করা বা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকব। |
৮। গ্রীষ্মকালে রোদের সময় বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করব। |
৯। দিনে ও রাতে যেকোনো সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাব। |
১০। সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করব। |
রোগ প্রতিরোধে আমার চর্চা
এ কাজগুলো করার জন্য আমার পরিবার বা প্রতিবেশীদের মধ্যে থেকে এমন দুজনকে চিহ্নিত করি, যাদের আমি উদ্বুদ্ধ করব। সারা বছর নিজে এই কাজগুলো আমি করব এবং ওই দুজনকে করার জন্য উৎসাহ দেব। বছর শেষে আমার অভিজ্ঞতা নিচে লিখব।
আমার নিজের চর্চার অভিজ্ঞতা | পরিবারের দুজনকে উদ্বুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা |
ঋতু পরিবর্তনজনিত সাধারণ রোগব্যাধি প্রতিরোধে আমার পরিকল্পনাগুলো চর্চা করার মাধ্যমে আমি রোগমুক্ত থাকতে পেরেছি। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় যেসব ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি শক্তিশালী হয় সেগুলোকে আমি প্রতিহত করতে পেরেছি। তাই পূর্বের বছরের চেয়ে আমি এই বছর সুস্থ ও ভালো ছিলাম। | পরিবারে আমার ছোট ভাই এবং দাদিকে আমার পরিকল্পনাগুলো চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। তারা দুজনেই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় ঋতু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে তারাও নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। |
আমার অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে করা কাজ
অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরণ | অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্কের প্রতি সচেতনতা ও গুরুত্ব | বইয়ে করা কাজের মান | |
নিজের মন্তব্য | কাজে অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরণ করেছি। আমার ব্যবহারে তারা কষ্ট পায়নি। | স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের কাজে অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে মিলে মিশে সম্পন্ন করেছি। তাদের মতামতের গুরুত্ব দিয়েছি। | স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের সবগুলো কাজ মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করেছি। স্বাস্থ্য বিষয়ের পরিকল্পনা ও চর্চা নিয়মিত করেছি এবং বইয়ে লিখে রেখেছি। এ কাজে বইয়ে করা কাজের মান সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে। |
শিক্ষকের মন্তব্য | শিক্ষক লিখবেন | শিক্ষক লিখবেন | শিক্ষক লিখবেন |
রোগ মোকাবিলায় আমার চর্চা
রোগ প্রতিরোধসংক্রান্ত পরিকল্পনার যথার্থতা | রোগ প্রতিরোধে নিজের চর্চা ও অভিজ্ঞতা বইয়ে/জার্নালে লিপিবদ্ধকরণ | অন্যদের সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করা ও এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বইয়ে/জার্নালে লিপিবদ্ধকরণ | |
নিজের মন্তব্য | রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে আমি যে পরিকল্পনা করেছি তা যথার্থভাবে পালন করেছি। নিরাপদ খাদ্য ও রোগব্যাধি সম্পর্কে পরিকল্পনা করে বাস্তব প্রয়োগ করেছি। | রোগ প্রতিরোধে নিজের চর্চা ও অভিজ্ঞতা বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছি। রোগ প্রতিরোধের যে বিষয় মেনে চলতে হয় সেগুলো বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছি। | অন্যদের সঠিকভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা এবং এ সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছি । রোগ প্রতিরোধে আমাদের কী করতে হবে সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছি। |
শিক্ষকের মন্তব্য | শিক্ষক লিখবেন | শিক্ষক লিখবেন | শিক্ষক লিখবেন |
Related Posts
- আল মাহমুদের নোলক কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা
- ৭ম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় সমাধান-অর্থ বুঝে বাক্য লিখি
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৭ম শ্রেণি ৪র্থ অধ্যায় (সব ছকের সমাধান)
- একদিন ভোরবেলা গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ) – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদ-বুঝে পড়ি লিখতে শিখি
- বাঁচতে দাও কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যবহার প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণি ডিজিটাল প্রযুক্তি
- আমি সাগর পাড়ি দেবো কবিতার মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৪র্থ অধ্যায় (আর্থিক ভাবনা সব ছক সমাধান)
- নোলক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – ৭ম শ্রেণি