কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে মানবিক সম্পর্কের সৌন্দর্য দেখানো হয়েছে—এক আফগানি লোক আর এক বাঙালি ছোট মেয়ের বন্ধুত্ব কতটা বিশুদ্ধ হতে পারে। রহমতের নিজের মেয়ের প্রতি ভালোবাসা, আর মিনির প্রতি স্নেহ দুটোই খুব মানবিকভাবে দেখানো হয়েছে। এই পোস্টে কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

কাবুলিওয়ালা গল্পের মূলভাব

‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটি এক আফগান বিক্রেতা রহমত আর ছোট্ট মেয়ে মিনির বন্ধুত্বের কাহিনি। রহমত কাবুল থেকে কলকাতায় আসে শুকনো ফল বিক্রি করতে। সে রোজ মিনির বাড়িতে আসে, গল্প করে, আর তাকে বাদাম-কিশমিশ দেয়। মিনিও খুব মিষ্টি ভাবে তার সঙ্গে কথা বলে, যেন তারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রহমতের নিজের দেশেও মিনির মতো একটি মেয়ে আছে, যাকে বহু বছর ধরে সে দেখে না। মিনির মধ্যে সে নিজের মেয়েকে খুঁজে পায়। একদিন এক ঝগড়ার ঘটনায় রহমত জেল খাটে অনেক বছর। এদিকে মিনি বড় হয়ে যায় এবং তার বিয়ের দিন ঠিক হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রহমত মিনিকে দেখতে আসে, কিন্তু মিনি তাকে আর চিনতে পারে না। রহমতের চোখে জল আসে, তার মনে পড়ে নিজের মেয়ের কথা। মিনির বাবা রহমতের এই কষ্ট বুঝে তাকে কাবুল ফিরে যাওয়ার জন্য টাকা দেন।

কাবুলিওয়ালা গল্পের বিষয়বস্তু

গল্পের চরিত্র:

রহমত (কাবুলিওয়ালা):
রহমত একজন আফগান ফল বিক্রেতা, যে নিজের ছোট মেয়েকে মনে করে কলকাতার মিনি নামের একটি শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সে শক্তসমর্থ হলেও হৃদয়ে খুব কোমল ও আবেগপ্রবণ।
মিনি:
মিনি একটি চঞ্চল, কথা-প্রিয় ও কৌতূহলী ছোট মেয়ে, যে কাবুলিওয়ালার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। বড় হয়ে গেলে সে আর রহমতকে চিনতে পারে না।
মিনির বাবা:
তিনি একজন সংবেদনশীল ও মানবিক মনোভাবের মানুষ, যিনি রহমতের কষ্ট বুঝে তাকে নিজের দেশে ফেরার জন্য সাহায্য করেন।
মিনির মা:
তিনি রহমতের প্রতি শুরুতে সন্দেহ ও ভয় দেখান, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে সে আসলে এক স্নেহভাজন মানুষ।

কাবুলিওয়ালা গল্পের কাহিনী:

গল্পটা শুরু হয় কলকাতার এক পরিবারকে নিয়ে। ছোট্ট মেয়ে মিনির বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। মিনি খুব চঞ্চল, দুষ্টু আর অনেক কথা বলে। সারাদিন নানা রকম প্রশ্ন করে, কারও কথা থামতেই দেয় না। এই দুষ্টু, মিষ্টি মেয়েটার সঙ্গে লেখকের খুবই ভালো সম্পর্ক। এই মেয়েটার জীবনেই একদিন প্রবেশ করে একজন বিদেশি লোক—এক কাবুলিওয়ালা, নাম তার রহমত। সে এসেছে অনেক দূর আফগানিস্তান থেকে। পিঠে একটা বড় কাপড়ের ব্যাগ, ভেতরে কিসমিস, বাদাম, আর নানা রকম শুকনো ফল। সে রোজ শহরে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে।

একদিন মিনি রাস্তার ধারে রহমতকে দেখে। প্রথমে একটু ভয় পায়, কারণ সে অচেনা লোক। কিন্তু রহমত খুব হাসিমুখে কথা বলে, আর নিজের ভাষায় ‘খোকা হইছো না?’ বলে জিজ্ঞেস করে। এরপর ধীরে ধীরে তাদের মাঝে একটা মিষ্টি বন্ধুত্ব তৈরি হয়।

রহমত রোজ মিনির বাড়ির সামনে আসে। তারা গল্প করে, হাসে, দুষ্টুমি করে। রহমত মাঝে মাঝে মিনিকে কিশমিশ বা বাদাম দেয়। কখনো কিছু নেয় না, শুধু ভালোবাসা দিয়ে যায়। এই বন্ধুত্বটা ছিল একদম নিষ্পাপ, নির্ভেজাল—এক পিতা আর কন্যার মতো সম্পর্ক, যদিও তারা একে অপরের আত্মীয় না।

রহমতের মনেও একটা কষ্ট লুকানো থাকে। সে বলে, তার নিজের দেশ কাবুলে একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। বয়স মিনির মতোই। অনেক বছর ধরে সে মেয়েটিকে দেখে না। কাজের জন্য কলকাতায় এসে গেছে। মেয়ে কেমন আছে, কি করে—তা জানে না। এই জন্য তার মন ভীষণ কাঁদে।

মিনি যেন তার নিজের মেয়েরই প্রতিচ্ছবি। সে যখন মিনির সঙ্গে কথা বলে, হাসে, তখন সে যেন নিজের মেয়েকে ফিরে পায়। এই ভালোবাসাটাই তাকে প্রতিদিন মিনির কাছে টেনে আনে।

একদিন রহমতের সঙ্গে এক খরিদ্দারের ঝগড়া হয়। সেই লোক তাকে টাকা না দিয়ে ঝামেলা করে। রাগের মাথায় রহমত তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে ফেলে। পুলিশ আসে, আর রহমতকে জেলে নিয়ে যায়। তার কয়েক বছরের সাজা হয়। এরপর কেটে যায় অনেক বছর।

এই সময়ের মধ্যে মিনিও বড় হয়ে যায়। সে আর আগের সেই ছোট্ট, দুষ্টু, কথা বলা মেয়ে নেই। সে এখন এক তরুণী। সেই সময়ই মিনির বিয়ের আয়োজন চলছে—বাড়িতে সাজসজ্জা, আনন্দ, ব্যস্ততা। ঠিক তখনই রহমত জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মিনির বাড়িতে আসে, তাকে একবার দেখবে বলে। কিন্তু বাড়ির চেহারা বদলে গেছে। মানুষগুলোও বদলে গেছে। মিনি তাকে চিনতে পারে না। রহমতের চোখে জল এসে যায়। সে বুঝতে পারে, সময় তাকে সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এই মিনি আর তার সেই ছোট্ট বন্ধু নয়।

রহমতের এই কষ্ট দেখে লেখক নিজেও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যান। তিনি অনুভব করেন, আজ যাকে নিয়ে তাঁদের বাড়িতে এত আয়োজন—তার শৈশবের এক প্রিয় মানুষ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই মানুষটির বুকের ভেতর জ্বলে কষ্টের আগুন, যে অনেক বছর ধরে নিজের মেয়েকেও দেখতে পায়নি। তাই মিনির বাবা রহমতকে কিছু টাকা দেন, যেন সে কাবুল ফিরে গিয়ে নিজের মেয়েকে দেখতে পারে। যেন তার এই ভাঙা মনটা একটু জোড়া পায়।

কাবুলিওয়ালা গল্পের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর (MCQ)

১। কাবুলিওয়ালা গল্পের লেখক কে?
ক) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
খ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘ) জসীমউদ্দীন
উত্তরঃ গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


২। কাবুলিওয়ালা গল্পের মেয়েটির নাম কী?
ক) মিনু
খ) মায়া
গ) মিনি
ঘ) মিঠু
উত্তরঃ গ) মিনি


৩। কাবুলিওয়ালা কোথা থেকে এসেছে?
ক) আফগানিস্তান
খ) কাবুল
গ) ভারত
ঘ) পাকিস্তান
উত্তরঃ খ) কাবুল


৪। কাবুলিওয়ালার নাম কী ছিল?
ক) সামাদ
খ) হাশেম
গ) রহমত
ঘ) রহমান
উত্তরঃ গ) রহমত


৫। কাবুলিওয়ালা কী বিক্রি করত?
ক) জামাকাপড়
খ) খেলনা
গ) বাদাম ও কিশমিশ
ঘ) বই
উত্তরঃ গ) বাদাম ও কিশমিশ


৬। কাবুলিওয়ালার পোশাক কেমন ছিল?
ক) পাঞ্জাবি
খ) আফগানি পোশাক
গ) ধুতি
ঘ) লুঙ্গি
উত্তরঃ খ) আফগানি পোশাক


৭। কাবুলিওয়ালা কয় বছর জেলে ছিল?
ক) ৫ বছর
খ) ৬ বছর
গ) ৮ বছর
ঘ) কয়েক বছর
উত্তরঃ ঘ) কয়েক বছর


৮। কাবুলিওয়ালার মেয়ের নাম কী ছিল?
ক) সুলতানা
খ) নাসিমা
গ) জোহরা
ঘ) উল্লেখ নেই
উত্তরঃ ঘ) উল্লেখ নেই


৯। কাবুলিওয়ালার হাতে ধরা কাগজে কী ছিল?
ক) মেয়ের হাতের ছাপ
খ) আদালতের চিঠি
গ) ছবি
ঘ) বন্ধুর চিঠি
উত্তরঃ ক) মেয়ের হাতের ছাপ


১০। গল্পে মিনি কী করছিল যখন কাবুলিওয়ালা ফিরে আসে?
ক) স্কুলে যাচ্ছিল
খ) খেলা করছিল
গ) বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল
ঘ) ঘুমাচ্ছিল
উত্তরঃ গ) বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল


১১। কাবুলিওয়ালা মিনি’র কাছে কী নিয়ে আসত?
ক) জামা
খ) ফল
গ) বাদাম ও কিশমিশ
ঘ) পুতুল
উত্তরঃ গ) বাদাম ও কিশমিশ


১২। কাবুলিওয়ালা জেলে কেন গিয়েছিল?
ক) মেয়েকে খুঁজতে
খ) টাকা চুরি করায়
গ) এক লোককে খুন করায়
ঘ) মিথ্যা বলায়
উত্তরঃ গ) এক লোককে খুন করায়


১৩। মিনি যখন বড় হয়ে যায়, কাবুলিওয়ালা তাকে কেমন লাগে?
ক) অচেনা
খ) বন্ধুর মতো
গ) নিজের মেয়ে
ঘ) প্রতিবেশী
উত্তরঃ ক) অচেনা


১৪। কাবুলিওয়ালার চরিত্র কেমন ছিল?
ক) নিষ্ঠুর
খ) রাগী
গ) কোমল হৃদয়ের
ঘ) অভিমানী
উত্তরঃ গ) কোমল হৃদয়ের


১৫। মিনি ও রেহমতের সম্পর্ক কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
ক) ব্যবসার মাধ্যমে
খ) গল্প ও খুনসুটি দিয়ে
গ) ভয় দেখিয়ে
ঘ) চিঠি লেখার মাধ্যমে
উত্তরঃ খ) গল্প ও খুনসুটি দিয়ে


১৬। গল্পে কোন সম্পর্কটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে?
ক) মা-মেয়ে
খ) বাবা-মেয়ে
গ) বন্ধু
ঘ) কাবুলিওয়ালা ও মিনি
উত্তরঃ ঘ) কাবুলিওয়ালা ও মিনি


১৭। রহমত মিনি’র বাবার কাছে কী চায়?
ক) টাকা
খ) মেয়েকে ফিরে পেতে
গ) মিনি’কে একবার দেখতে
ঘ) জেলের ক্ষতিপূরণ
উত্তরঃ গ) মিনি’কে একবার দেখতে


১৮। রহমতের কাগজে মেয়ের হাতের ছাপ দেখে সে কী বুঝাতে চায়?
ক) সে বড় শিল্পী
খ) মেয়েকে ভুলে যায়নি
গ) মিনি’র সঙ্গে তুলনা
ঘ) কষ্ট ভুলে গেছে
উত্তরঃ খ) মেয়েকে ভুলে যায়নি


১৯। কাবুলিওয়ালা কেন কেঁদে ফেলে?
ক) মিনি তাকে চিনতে পারেনি
খ) সে দেশে যেতে পারছে না
গ) মেয়েকে মনে পড়ে
ঘ) বিয়ে দেখতে পারে না
উত্তরঃ ক) মিনি তাকে চিনতে পারেনি


২০। কাবুলিওয়ালার গল্প কোন রচনার ধরনে লেখা?
ক) নাটক
খ) প্রবন্ধ
গ) ছোটগল্প
ঘ) কবিতা
উত্তরঃ গ) ছোটগল্প


২১। কাবুলিওয়ালা যে দেশে ফিরতে চায় তা হলো—
ক) ভারত
খ) পাকিস্তান
গ) কাবুল
ঘ) তুরস্ক
উত্তরঃ গ) কাবুল


২২। মিনি কাবুলিওয়ালাকে প্রথম কী প্রশ্ন করে?
ক) তোমার নাম কী?
খ) তোমার ব্যাগে কী আছে?
গ) তুমি কোথা থেকে আসছো?
ঘ) তুমি ভয়ংকর না?
উত্তরঃ খ) তোমার ব্যাগে কী আছে?


২৩। গল্পের শেষে মিনি’র বাবা কী উপলব্ধি করেন?
ক) রহমতের প্রতি করুণা
খ) মেয়ের দায়িত্ব
গ) জীবন বাস্তবতা
ঘ) বিদেশীদের প্রতি ভয়
উত্তরঃ ক) রহমতের প্রতি করুণা


আরও পড়ুনঃ লখার একুশে গল্পের মূলভাব ও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment