নিরীহ বাঙালি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৯ম ও ১০ম শ্রেণি

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধটিতে বাঙালি জাতির কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও তার দুর্বলতা নিয়ে ব্যঙ্গ এবং বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বাঙালি সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দৃষ্টিকোণ, এবং মানসিকতার প্রতি তীব্র সমালোচনা করেছেন, তবে এভাবে তিনি চূড়ান্ত ধরণের আত্মপ্রশংসাও করেছেন। এই পোস্টে নিরীহ বাঙালি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৯ম ও ১০ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

নিরীহ বাঙালি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [পাঠ্যবইয়ের সৃজনশীল]
নন্দ বাড়ির হত না বাহির, কোথা কী ঘটে কি জানি,
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি।
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে কলিশন হয়,
হাঁটিলে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়।
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল।
সকলে বলিল, ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক চিরকাল।’

ক. কোন জাতীয় পোশাককে ইংরেজ ললনাদের নির্লজ্জ পরিচ্ছদ বলা হয়েছে?

খ. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালিকে ‘মূর্তিমান কাব্য’ বলেছেন কেন?

গ. নন্দলালের বৈশিষ্ট্য ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধে যাদের কার্যক্রমকে ইঙ্গিত করে তাদের স্বরূপ তুলে ধর।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের উপেক্ষিত দিকটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. কোন জাতীয় পোশাককে ইংরেজ ললনাদের নির্লজ্জ পরিচ্ছদ বলা হয়েছে।

খ. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালিকে ‘মূর্তিমান কাব্য’ বলেছেন কারণ তিনি বাঙালির আচরণ, ভাষা এবং স্বভাবকে একেবারে কাব্যিক, সৌন্দর্যপূর্ণ এবং মধুর বলে মনে করেছেন। তিনি বাঙালির কোমলতা, সরলতা, সৌন্দর্য এবং ভদ্রতাকে বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন। বাঙালির কথায় যেমন সুমধুরতা রয়েছে, তেমনি তাদের কার্যক্রমও অনেক সময় সহজ এবং সরল হয়। রোকেয়া মনে করেন, বাঙালি সবার কাছে অমিয়সিক্ত এবং মাধুর্যপূর্ণ এক অসামান্য জাতি, যা যেন জীবন্ত কাব্য।

গ. ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নন্দলালের চরিত্রের মাধ্যমে বাঙালির স্বভাব এবং সমাজের কিছু দিক তুলে ধরেছেন। নন্দলাল একটি শান্ত, অসহায়, এবং নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করে, যার সব কর্মকাণ্ডে এক ধরনের ভীরুতা এবং অনীহা ফুটে ওঠে। তিনি কোনো ঝুঁকি নিতে চান না, সে কারণে নৌকা বা গাড়ি চলাচলের সময়েও সে কোনো বাধা গ্রহণ করতে চায় না। এভাবে, নন্দলালের চরিত্রের মাধ্যমে রোকেয়া বাঙালির প্যাসিভ, অলস, এবং কিছুটা ভয়প্রবণ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সমাজে এরকমই কিছু মানুষের মতো বাঙালি জাতি, যারা কঠোর পরিশ্রম বা নতুন কিছু করার চেয়ে নিরাপদ এবং সহজ পথ বেছে নেয়। এই বৈশিষ্ট্যই রোকেয়া ‘নিরীহ বাঙালি’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন, যারা নিজের সুরক্ষার জন্য কাজ না করে কেবল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলে।

ঘ. ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যে দিকটি উপেক্ষিত করেছেন, তা হলো—বাঙালির মানসিক অবস্থা এবং জাতীয় উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা। উদ্দীপকে নন্দলালের চরিত্রের মাধ্যমে বাঙালির অলসতা, ভয় এবং অপ্রতিরোধ্য প্যাসিভিটির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তিনি এই পরিস্থিতির জন্য শুধু ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে দায়ী করেননি। এখানে সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং শাসন ব্যবস্থা, যা বাঙালিকে নির্বিকার ও নির্জীব করে রেখেছে, সেটিও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রবন্ধে বাঙালির এই নিষ্ক্রিয়তাকে শুধুমাত্র ভীতু মনোভাব হিসেবে চিত্রিত করা হলেও, এর পিছনে বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে, যা রোকেয়া খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেননি। বরং তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাঙালির আচরণের ব্যাখ্যায়, যা উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, রোকেয়ার এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমাজের প্রকৃত পরিস্থিতি এবং পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা এবং সচেতনতা একেবারে উপেক্ষিত হয়ে গেছে।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। [ঢাকা বোর্ড ২০১৫]
স্তবক-১:
পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিও না ভালো ছেলে করে।

স্তবক-২:
শাবাশ, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।

ক. ধনবৃদ্ধির কয়টি উপায়?

খ. ‘পাশ বিক্রয়’ বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকের স্তবক-১ ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “বেগম রোকেয়ার প্রত্যাশাই স্তবক-২-এ প্রতিফলিত হয়েছে”- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। [দিনাজপুর বোর্ড ২০১৫]
দেখা হলে মিষ্ট অতি
মুখের ভাব শিষ্ট অতি অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি
গৃহের প্রতিটান-
মাথায় ছোট বহরে বড় বাঙালি সন্তান।

ক. কৃষি কাজে পারদর্শিতা অপেক্ষা কী পাশ করা সহজ?

খ. ‘পাশ বিক্রয় করা’ বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের উক্ত দিক পরিবর্তনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। [রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ]
ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি-গৃহের প্রতি টান।

ক. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতে আমাদের অন্যতম ব্যাবসা কী?

খ. যারা স্ত্রীদের রান্না করতে বলে তাদের দন্ড হওয়া উচিত কেন?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাঙালির এই বৈশিষ্ট্য কেন হলো তা ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘উদ্দীপকটি প্রবন্ধের খণ্ডিত চিত্রমাত্র।’ – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। [বরিশাল ক্যাডেট কলেজ]
আত্মোন্নতির জন্য পরিশ্রম এবং উদ্যম অপরিহার্য। সততার ভেতর দিয়ে যেমন সত্তার মহিমা উদ্ভাসিত হয়, কাজের মাধ্যমেও তেমনি সমাজে স্বনির্ভর মানুষের অফুরন্ত শক্তির প্রকাশ ঘটে। দুঃখ হয় তখন, যখন দেখি, উদীয়মান যুবকের মধ্যে সম্ভাবনাময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা পরানুগ্রহের মোহে দুয়ারে দুয়ারে চাকরির জন্য মাথা কুটে মরছে।

ক. শরীরের পুষ্টি হয় কীভাবে?

খ. ভারতবর্ষ ও বাঙালিকে রোকেয়া কীভাবে তুলনা করেছেন?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্যগুলো ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের মূল সুর এক ও অভিন্ন।”- মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালির মতো জ্ঞান-শক্তি ও প্রেম-শক্তি (ব্রেন সেন্টার ও হার্ট সেন্টার) এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতে কোনো জাতির নেই। কিন্তু কর্মশক্তি একেবারে নেই বলেই তাদের এই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাদের কর্মবিমুখতা, জড়ত্ব, মৃত্যুভয়, আলস্য, তন্দ্রা, নিদ্রা, ব্যাবসা-বাণিজ্যে অনিচ্ছার কারণ তারা তামসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে চেতনাশক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে।

ক. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কাদেরকে ‘মূর্তিমতী কবিতা’ বলেছেন?

খ. “আমরা কোমলাঙ্গ- তাঁহারা কোমলাঙ্গী।”- বুঝিয়ে দাও।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য তুলে ধর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের মূলভাব একসূত্রে গাঁথা।” সত্যতা যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন,
মানুষ হইতে হবে এই যার পণ।
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
নাই কি শরীরে তব রক্তমাংস প্রাণ?

ক. ‘কুন্তলীনের’ সঙ্গে কী বিক্রি হয়?

খ. আমাদের দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিস নেই কেন?

গ. ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের কোন দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকের প্রত্যাশাই যেন ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের অন্তর্নিহিত ভাব।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮।
এসো, ছেড়ে এসো, সখী, কুসুমশয়ন-বাজুক কঠিন মাটি চরণের তলে।
কত আর করিবে গো বসিয়া বিরলে আকাশকুসুমবনে স্বপন চয়ন! দেখো, ওই দূর হতে আসিছে ঝটিকা-
স্বপ্নরাজ্য ভেসে যাবে খর অশ্রুজলে।

ক. ভারতবর্ষ সরোবর হলে বাঙালি তাতে কী?

খ. ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের আলোকে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ব্যাখ্যা কর।

গ. ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের কোন দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের প্রত্যাশা একই ধারায় প্রবাহিত।” মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৯।
পুরুষগণ আমাদিগকে সুশিক্ষা হইতে পশ্চাৎপদ রাখিয়াছেন বলিয়া আমরা অকর্মণ্য হইয়া গিয়াছি। ভারতে ভিক্ষু ও ধনবান এই দুই দল লোক অলস; এবং ভদ্রমহিলার দল কর্তব্য অপেক্ষা অল্প কাজ করে। আমাদের আরামপ্রিয়তা খুব বাড়িয়াছে। আমাদের হস্ত, পদ, মন, চক্ষু ইত্যাদির সদ্ব্যবহার করা হয় না। দশজন রমণীরত্ন একত্র হইলে ইহার উহার- বিশেষত আপন আপন অর্ধাঙ্গের নিন্দা কিংবা প্রশংসা করিয়া বাকপটুতা দেখায়। আবশ্যক হইলে কোন্দলও চলে।

ক. আমাদের দেশের রমণীরা কোন ধরনের শাড়ি পরেন?

খ. বাঙালি পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে লেখকের মত ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকটি ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকটিতে যদি রমণীদের পাশাপাশি বাঙালি পুরুষদের অলসতার দিকটি উঠে আসত তাহলে ‘নিরীহ বাঙালি’ প্রবন্ধের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করত।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

নিচে উত্তরসহ নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নের পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের সৃজনশীল উত্তর পিডিএফ

আরও পড়ুনঃ পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর – ৯ম ও ১০ম শ্রেণি

Related Posts

Leave a Comment