গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটিতে বাদশাহ বাবরের পুত্র হুমায়ুন প্রাণঘাতী অসুখে দিশেহারা। দেশ-বিদেশের হেকিম, কবিরাজ, দরবেশ কেউই সফল নয়। তখন এক দরবেশ বলেন, সবচেয়ে প্রিয় ধন কোরবানি দিলে আল্লাহ খুশি হয়ে পুত্রকে বাঁচাবেন। এই পোস্টে জীবন বিনিময় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
জীবন বিনিময় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। বাবার সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে এসে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে উৎপল ও তার বাবা। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা উৎপলকে আঘাত করতে এলে বাবা তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে ছিনতাইকারীর ছুরিতে রক্তাক্ত হন। হাসপাতালে ডাক্তার সাহেব যখন উৎপলকে জানান যে, এই মুহূর্তে রক্ত না হলে রোগী বাঁচানো যাবে না, সঙ্গে সঙ্গে উৎপল তার শরীর থেকে প্রয়োজনীয় রক্ত দিয়ে বাবাকে আশঙ্কামুক্ত করেন। ক. ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় কোনটিকে ‘সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন’ বলা হয়েছে? খ. কবি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় নীরবতাকে নিষ্ঠুর বলেছেন কেন? গ. উৎপলকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকের পিতার মাঝে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবরের যে পরিচয় মেলে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. “ভাবগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার ঘটনাপ্রবাহের সমার্থক নয়”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
উত্তরঃ
ক. ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন বলা হয়েছে প্রত্যেক মানুষের নিজের জীবনকে।
খ. কবি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় নীরবতাকে নিষ্ঠুর বলেছেন কারণ, যখন বাদশা বাবর তার পুত্রের জীবন বাঁচানোর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ধন হিসেবে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন, তখন সকল চিকিৎসকরা নীরব থাকেন এবং তাদের মুখে কোনো কথা বের হয় না। এই নীরবতা বাবরের মনে অজানা ভয় সৃষ্টি করে, যার ফলে তাকে অল্প সময়ের জন্য আরও সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয়। কবি এখানে নীরবতার মাধ্যমে চিকিৎসকদের অক্ষমতা ও অমনোযোগিতা বোঝাতে চেয়েছেন, যা বাবরের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং মানসিক যন্ত্রণা তৈরির কারণ হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের পিতা, যিনি ছিনতাইকারীর আক্রমণে নিজের জীবন বিপন্ন হতে দেখে উৎপলকে সরিয়ে দেন, তার মধ্যে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবরের একটি পরিচয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ঠিক যেমন বাদশা বাবর নিজের প্রাণকে অগ্রাধিকার দেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন পুত্রের জীবন বাঁচানোর জন্য, তেমনি এই পিতা নিজের জীবন বিপন্ন করতে প্রস্তুত হন যেন তার পুত্রের কিছু না হয়। বাবরের মতোই, তিনি জীবনের মূল্য বুঝতে পারেন এবং একমাত্র সন্তানের জন্য তার সর্বশ্রেষ্ঠ ধন—নিজের জীবন—দানের প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে, এখানে পিতার মধ্যে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার পিতৃস্নেহ, আত্মত্যাগ এবং অপরিসীম ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে, যা বাবরের চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই স্নেহ এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পিতা প্রকৃত অর্থে তার সন্তানের জীবন রক্ষা করতে নিজের জীবন প্রদান করতে প্রস্তুত হন।
ঘ. উদ্দীপক এবং ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার মধ্যে ভাবগত ঐক্য থাকলেও, তাদের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। উদ্দীপকে, পিতা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সন্তানকে রক্ষা করতে নিজের জীবন বিপন্ন করেন, এবং পরে সেই পুত্র তার পিতার জীবন রক্ষার্থে রক্ত দেন। যদিও এখানে পিতৃস্নেহ এবং আত্মত্যাগের বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তবে কবিতায় বাদশা বাবরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কবিতায় বাবর তাঁর পুত্রের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন, তবে এই আত্মত্যাগ একটি ধর্মীয় প্রার্থনার মাধ্যমে ঘটে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। উদ্দীপকে, পিতা নিজের জীবন বিপন্ন করার মাধ্যমে সন্তানের জীবন রক্ষা করেন, কিন্তু কবিতায় বাবরের চরিত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে মানবিক সম্পর্কের উর্ধ্বে উঠে যায়। এতে কবিতার প্রেক্ষাপট একটি প্রার্থনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে মানবিক আবেগের গভীরতাকে তুলে ধরে, যেখানে আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়। এই দুই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, উদ্দীপকে পিতা মানবিকভাবে আত্মত্যাগ করেন, তবে কবিতায় বাদশা বাবরের প্রার্থনা এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এটির উপর প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে, যদিও ভাবগত ঐক্য রয়েছে, কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ ভিন্ন।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। ছয় মাসের শিশু কন্যা পাইল্যা করলাম বড়। কি লইয়া ফিরবাম দেশে আর না যাইবাম ঘর। শুন শুন কন্যা আরে একবার আঁখি মেইলা চাও। একটি বার কহিয়া কথা পরাণ জুড়াও। ক. বাদশা বাবরের পুত্রের নাম কী? খ. “নিদ নাহি চোখে তাঁর।” ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের পালিত পিতার সঙ্গে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার কার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয়ের প্রকাশ ঘটেনি।”- মন্তব্যটির সত্যতা বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। পূজা করে বংশীবদন শঙ্করে ভাবিয়া। চিন্তা করে মনে মনে নিজ কন্যার বিয়া। সম্মুখে সুন্দরী কন্যা আমি যে কাঙ্গাল। সহায়-সঙ্গতি নাই দরিদ্রের হাল। বর মাগে বংশীদাস ভূমিতে পড়িয়া। “ভাল ঘরে ভাল বরে কন্যার হউক বিয়া। ক. বাদশা বাবর ব্যগ্রকণ্ঠে কাদের ডাকলেন? খ. রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ কেন ব্যতিব্যস্ত ছিলেন? গ. উদ্দীপকের পিতা বংশীবদন ও ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় পিতা বাদশা বাবর দুজনের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার মূলভাবকে প্রকাশ করে না।”- মন্তব্যটি আলোচনা কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। আমি দেবী অন্নপূর্ণা প্রকাশ কাশীতে। চৈত্র মাসে মোর পূজা শুক্ল অষ্টমীতে। বর মাগ মনোনীত যাহা চাহ দিব প্রণমিয়া পাটুনী কহিছে জোড় হাতে। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। ক. তিমির রাতের তোরণে তোরণে কী? খ. বাদশা বাবর পুত্রের চারপাশে ঘুরতে লাগলেন কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের পাটুনীর সঙ্গে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবরের সাদৃশ্য কীসে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “নিজ স্বার্থ উপেক্ষা করে সন্তানের কল্যাণ কামনাই মুখ্য হয়ে উঠেছে উদ্দীপক ও ‘জীবন-বিনিময়’ কবিতায়।”-মন্তব্যটি বিচার কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। পল্লিজননী সুফিয়ার একমাত্র ছেলে কঠিন রোগে আক্রান্ত। সন্তান হারানোর ভয়ে, শোকে তিনি চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলেন। পরিচিত যত ডাক্তার-কবিরাজ সবাইকে দিয়ে তিনি সন্তানের চিকিৎসা করিয়েছেন। সবার কাছে সুফিয়া জিজ্ঞাসা করেন সন্তান সুস্থ হবে কি না? কিন্তু, কেউ কোনো ভরসা দিতে পারেনি। ক. হুমায়ুনের রোগ কেমন? খ. বাদশা বাবর চোখে অন্ধকার দেখছিলেন কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের পল্লিজননী সুফিয়া এবং ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবর একই ব্যথায় ব্যথিত।”- মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। গ্রামের হতদরিদ্র জাহানারার এক সন্তানকে নিয়েই জগৎ-সংসার। হঠাৎ তার সংসারে একদিন ভাঙন দেখা দেয়। তাঁর সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার কোনো উপায় না থাকায় দরবেশের কাছে যান পানিপড়া আনতে। দরবেশ তাঁর সব ঘটনা শুনে তাঁকে বলেন, সে চাইলে তাঁর প্রাণের বিনিময়ে সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে পারে। জাহানারা হাসিমুখে প্রাণ ত্যাগ করে সন্তানের প্রাণ বাঁচান। আর সেই থেকে জাহানারা মাতৃমেহের কারণে অমর হয়ে আছেন। ক. হুমায়ুনের পিতার নাম কী? খ. বাদশা ব্যবরের ছেলে কীভাবে সুস্থ হয়? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার কোন দিকটি নির্দেশ করে?- ব্যাখ্যা কর। ঘ. “সন্তানের প্রতি ভালোবাসা সম্রাট বাবরকে ও জাহানারাকে অমর করে রেখেছে।”- মন্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। রহমত মাস্টারের ছোট ছেলে প্রতিদিন তার জন্য জকালে ঘেরা পথ পাড়ি দিয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে আসত। দুদিন আগে জঙ্গল দিয়ে আসার সময় তাকে সাপে দংশন করে। হাসপাতাল অনেক দূর যেখানে নিতে নিতে ছেলেটি মারা যাবে। একথা ভেবে হঠাৎই রহমত মাস্টার সাপে কাটা জায়গাটায় কামড় দিয়ে চুষে চুষে বিষ তুলতে শুরু করেন। ছেলেটি সুস্থ হলেও রহমত মাস্টার বাঁচেননি। বিষ পাকস্থলীতে যাওয়ায় দ্রুত তার মৃত্যু হয়। ক. ‘শেলসম’ অর্থ কী? খ. বাদশা বাবর কী কোরবানি দিতে প্রস্তুত? ব্যাখ্যা কর ৷ গ. উদ্দীপকে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকে রহমত মাস্টার ও ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবর পিতৃস্নেহের দিক থেকে সমান্তরাল।”-বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। মমতা ও শিউলি দুই বান্ধবী। তারা কেরানীগঞ্জে থাকে। রোজ 8 নৌকা করে পার হয়ে কলেজিয়েট স্কুলে আসে। একদিন তাদের নৌকা ডুবে গেলে মমতা সাঁতার কাটতে থাকে। কিন্তু শিউলি সাঁতার না জানায় ডুবতে থাকে। এ সময় মমতা তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যায়। শিউলি মমতাকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যে মমতাও ডুবতে থাকে। মমতা তখন শিউলিকে ছেড়ে নিজের প্রাণ বাঁচায়। মমতা আর তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে না। ক. ‘ফুকারি’ শব্দের অর্থ কী? খ. ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় মরণের পরাজয় ঘটেছে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের মমতার আচরণে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার কোন সত্যের প্রকাশ ঘটে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের মমতা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবরের সম্পূর্ণ বিপরীত মানসিকতা প্রকাশ করে।”-মন্তব্যটি আলোচনা কর ৷ |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৯। মোহসিনের একমাত্র পুত্র ইরাফের বয়স পাঁচ বছর। সাত দিন যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছেন কিছুই করার নেই। মোহসিনের স্ত্রী দিন-রাত পাগলের মতো আগে হঠাৎ করে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে বিলাপ করছে। মোহসিন মনে মনে ভাবে সবই তার দুর্ভাগ্য। ক. স্তব্ধ – নীরব কী? খ. “গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল”- কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের মোহসিনের সঙ্গে ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বাদশা বাবরের কোন বৈশিষ্ট্যের বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার সম্পূর্ণ বিপরীত ভাব প্রকাশ করে।”- মন্তব্যটি প্রমাণ কর। |
আরও পড়ুনঃ উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর