ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘প্রত্যুপকার’ গল্পে মানবতা, কৃতজ্ঞতা, এবং পরোপকার–এই তিনটি গুণ খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। একজন একসময় অপরকে রক্ষা করেছিলেন, এবং পরে সেই উপকারি ব্যক্তি আবার তার উপকারে এগিয়ে আসেন। এই পোস্টে প্রত্যুপকার গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
প্রত্যুপকার গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
১। ‘প্রত্যুপকার’ গল্পটির লেখক কে?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
২। ‘প্রত্যুপকার’ রচনাটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ) থেকে।
৩। আখ্যানমঞ্জরী গ্রন্থটি কবে রচিত হয়?
উত্তর: ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে।
৪। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম কোথায় হয়?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে।
৫। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে।
৬। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম কী ছিল?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
৭। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন কলেজের ছাত্র ছিলেন?
উত্তর: কলকাতা সংস্কৃত কলেজের।
৮। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথমে কোন ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন?
উত্তর: সংস্কৃত ভাষায়।
৯। দানশীলতার জন্য বিদ্যাসাগরকে কী বলা হতো?
উত্তর: দয়ার সাগর।
১০। বাংলা গদ্যের জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।
১১। বিদ্যাসাগর কোন বইতে বাংলা বর্ণমালাকে নতুন করে বিন্যস্ত করেন?
উত্তর: বর্ণপরিচয়।
১২। বর্ণপরিচয় কবে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ১৮৫৫ সালে।
১৩। বর্ণপরিচয় বইটি কাদের জন্য রচিত?
উত্তর: শিশুদের জন্য।
১৪। ভাষা শিক্ষাদানে কোন বইটি পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত?
উত্তর: বর্ণপরিচয়।
১৫। ‘সীতার বনবাস’ রচনাটি কার লেখা?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের।
১৬। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ২৯শে জুলাই ১৮৯১ সালে।
১৭। আলী ইবনে আব্বাস কে ছিলেন?
উত্তর: তিনি খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্র ছিলেন।
১৮। ‘প্রত্যুপকার’ গল্পটি কোন ধরনের রচনা?
উত্তর: নীতিকথা বা নীতিশিক্ষামূলক গল্প।
১৯। বন্দী কোন শহরের লোক ছিলেন?
উত্তর: ডেমাস্কাস শহরের।
২০। বন্দীকে কোথায় বন্দি করে আনা হয়েছিল?
উত্তর: বাগদাদে।
২১। বাগদাদের খলিফার নাম কী ছিল?
উত্তর: মামুন আল রশিদ।
২২। খলিফা বন্দীকে কার হাতে তুলে দেন?
উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসের হাতে।
২৩। আলী ইবনে আব্বাস কে ছিলেন?
উত্তর: খলিফার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী।
২৪। ‘অভিরুচি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ইচ্ছা।
২৫। বন্দী কী দোষে অভিযুক্ত ছিলেন?
উত্তর: খলিফার শাসনবিরোধী কাজের অভিযোগে।
২৬। আলী বন্দীকে কী করতে বলেন?
উত্তর: পালিয়ে যেতে বলেন।
২৭। বন্দী পালিয়ে যেতে অস্বীকার করেন কেন?
উত্তর: আলীকে বিপদে ফেলতে চান না বলে।
২৮। বন্দী কেমন চরিত্রের মানুষ ছিলেন?
উত্তর: কৃতজ্ঞ ও ন্যায়পরায়ণ।
২৯। ‘প্রত্যাগমন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ফিরে আসা।
৩০। আলী কেমন চরিত্রের মানুষ ছিলেন?
উত্তর: কৃতজ্ঞ, সৎ ও সহৃদয়।
৩১। খলিফা প্রথমে আলীর কথা শুনে কী করেন?
উত্তর: রেগে যান।
৩২। আলী বন্দীকে সাহায্য করার পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল?
উত্তর: পূর্বের উপকারের প্রতিদান দেওয়া।
৩৩। বন্দী পালালে আলীর কী হতো?
উত্তর: আলী মৃত্যুদণ্ড পেতে পারতেন।
৩৪। আলী বন্দীকে কেন পালাতে বলেন?
উত্তর: কারণ বন্দী একসময় আলীকে আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
৩৫। খলিফা মামুন আল রশিদ কেমন শাসক ছিলেন?
উত্তর: ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক।
৩৬। গল্পে কতজন প্রধান চরিত্র আছে?
উত্তর: তিনজন—খলিফা, আলী ও বন্দী।
৩৭। ‘প্রত্যুপকার’ গল্পটি কোন সভ্যতার প্রেক্ষাপটে রচিত?
উত্তর: ইসলামি সভ্যতার।
৩৮। আলী ইবনে আব্বাসকে খলিফা কী আদেশ দেন?
উত্তর: একজন বন্দিকে রুদ্ধ করে রাখতে ও কলা খলিফার কাছে পৌঁছাতে।
৩৯। আলী ইবনে আব্বাস কেন ডেমাস্কাস গিয়েছিলেন?
উত্তর: নতুন শাসনকর্তার সঙ্গে সমভিব্যাহারে।
৪০। ‘রোষারক্ত নয়নে’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: রাগে লাল চোখে।
৪১। কে আলী ইবনে আব্বাসকে আশ্রয় দিয়েছিলেন?
উত্তর: ডেমাস্কাসের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।
৪২। আলী ইবনে আব্বাস কতদিন আশ্রয় পেয়েছিলেন?
উত্তর: এক মাস।
৪৩। আশ্রয়দাতা আলী ইবনে আব্বাসের জন্য কী কী ব্যবস্থা করেছিলেন?
উত্তর: অশ্ব, খাদ্য, ভৃত্য ও স্বর্ণমুদ্রা।
৪৪। ‘অবলোকনমাত্র’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: দেখামাত্র।
৪৫। আলী ইবনে আব্বাসের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় স্থান কোনটি?
উত্তর: ডেমাস্কাসের সেই স্থান যেখানে তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন।
৪৬। আলী ইবনে আব্বাস বন্দির পরিচয় জানতে পেরে কী করলেন?
উত্তর: তাঁকে চিনে আনন্দে আলিঙ্গন করেন ও মুক্ত করেন।
৪৭। বন্দি কেন বন্দি হয়েছিলেন?
উত্তর: কিছু কুচক্রী লোকের মিথ্যা অভিযোগে।
৪৮। বন্দি কী প্রার্থনা করেছিলেন?
উত্তর: পরিবারের কাছে সংবাদ পাঠাতে।
৪৯।’লোচন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: চোখ।
৫০। আলী ইবনে আব্বাস তাঁকে কি পরামর্শ দিলেন?
উত্তর: অবিলম্বে পালিয়ে যেতে ও পরিবারে মিলিত হতে।
৫১। খলিফা কোন শহরের শাসক ছিলেন?
উত্তর: বাগদাদের।
৫২। ‘সম্ভাষণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সম্বোধন।
৫৩। খলিফা আলী ইবনে আব্বাসকে কী শাস্তির হুমকি দেন?
উত্তর: বন্দিকে ছেড়ে দিলে প্রাণদণ্ড।
৫৪। আলী খলিফার কাছে কী প্রার্থনা করেন?
উত্তর: বন্দির বিষয়ে কিছু বলার অনুমতি।
৫৫। খলিফা প্রথমে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান?
উত্তর: রোষে ফেটে পড়েন।
৫৬। ‘কোপানল’ শব্দটি দ্বারা কী বোঝায়?
উত্তর: রাগ বা ক্রোধের আগুন।
৫৭। খলিফা অবশেষে কী সিদ্ধান্ত নেন?
উত্তর: বন্দিকে মুক্তি দেন।
৫৮। বন্দিকে খলিফা কী উপহার দেন?
উত্তর: পরিচ্ছদ, দশ খচ্চর, দশ অশ্ব, দশ উষ্ট্র ও অর্থ।
৫৯। বন্দিকে কোথায় পাঠানো হয়?
উত্তর: ডেমাস্কাসে।
৬০। ডেমাস্কাসে কে বন্দির সুপারিশপত্র পান?
উত্তর: রাজপ্রতিনিধি।
৬১। ‘প্রীতিপ্রফুল্ললোচনে’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বন্ধুত্বপূর্ণ আনন্দিত চোখে।
৬২। ‘প্রত্যুপকার’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: উপকারের প্রতিদান।
৬৩। আলী বন্দিকে পালাতে বলার সময় কী দেন?
উত্তর: সহস্র স্বর্ণমুদ্রা।
৬৪। খলিফা কেমন শাসক ছিলেন?
উত্তর: ন্যায়বান ও বিবেচক শাসক হিসেবে।
৬৫। ‘সমভিব্যাহারে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সঙ্গে বা সাহচর্যে।
৬৬। বন্দী লোকটি কোথা থেকে এসেছিলেন?
উত্তর: ডেমাস্কাস শহর থেকে।
৬৭। বন্দী লোকটির বাস কোথায় ছিল?
উত্তর: ডেমাস্কাস শহরের বড় মসজিদের আশেপাশে।
৬৮। ‘মৌনাবলম্বন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নিরবতা পালন।
৬৯। আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাসে কেন গিয়েছিলেন?
উত্তর: নতুন শাসকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।
৭০। সেই গৃহস্বামী আলীকে কতদিন আশ্রয় দেন?
উত্তর: প্রায় এক মাস।
৭১। ‘নিষ্কৃতি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মুক্তি।
৭২। ‘প্রতীতি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বিশ্বাস বা ধারণা।
৭৩। খলিফা তাকে কী উপহার দেন?
উত্তর: সুসজ্জিত ১০ খচ্চর, ১০ অশ্ব, ১০ উষ্ট্র ও অর্থসাহায্য।
৭৪। ‘পরিচ্ছদ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পোশাক।
৭৫। খলিফা ডেমাস্কাসের শাসকের কাছে কী পাঠান?
উত্তর: বন্দীর পক্ষে একটি অনুরোধপত্র।
৭৬। ‘অবরুদ্ধ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বন্দি।
৭৭। ‘খলিফা’ কাকে বলা হয়?
উত্তর: মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান শাসক ও ধর্মনেতা।
৭৮। ‘ডেমাস্কাস’ কী?
উত্তর: সিরিয়ার রাজধানী, প্রাচীন শহর দামেস্ক।
৭৯। বাগদাদ নগরী কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: আব্বাসীয় খলিফা মনসুর।
৮০। ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: প্রতিনিধি।
৮১। মুসলিম রাষ্ট্রে ‘খলিফা’ কাকে বলা হতো?
উত্তর: হজরত মুহম্মদ (স.)-এর পরে মুসলিম রাষ্ট্রের সর্বপ্রধান শাসনকর্তাকে।
৮২। আল মামুনের পূর্ণ নাম কী?
উত্তর: আবুল আব্বাস আবদুল্লাহ আল মামুন।
৮৩। আল মামুন কোন খলিফা ছিলেন?
উত্তর: সপ্তম আব্বাসীয় খলিফা।
৮৪। ‘উৎকট’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: অত্যন্ত তীব্র বা প্রবল।
৮৫। আল মামুন কার পুত্র ছিলেন?
উত্তর: খলিফা হারুনর রশীদের দ্বিতীয় পুত্র।
৮৬। বাগদাদ বর্তমানে কোন দেশের রাজধানী?
উত্তর: ইরাক।
৮৭। বাগদাদ কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
উত্তর: টাইগ্রিস নদীর উভয় তীরে।
৮৮। টাইগ্রিস নদীর পাশে আর কোন নদী রয়েছে?
উত্তর: ফুরাত বা ইউফ্রেটিস নদী।
৮৯। ফুরাত নদীর বাগদাদ থেকে দূরত্ব কত?
উত্তর: প্রায় পঁচিশ মাইল দক্ষিণে।
প্রত্যুপকার গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১। খলিফা মামুন কিছুক্ষণ মৌন হয়ে ছিলেন কেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যখন খলিফার কাছে বন্দি ব্যক্তির ব্যাপারে সুপারিশ করেন, তখন তিনি বলেন যে ঐ ব্যক্তি একসময় তার প্রাণরক্ষা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, আজ তার সেই উপকারীর প্রতি উপকার করার সুযোগ এসেছে। এই কথা শুনে খলিফা মামুন গভীর চিন্তায় ডুবে যান। তিনি আলীর কৃতজ্ঞতা ও মানবিকতার পরিচয়ে মুগ্ধ হন। তাই তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন এবং কোনো কথা বলেন না। এরপর তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্দিকে মুক্তির আদেশ দেন। খলিফার এই মৌনতা তার মহত্বের পরিচয় বহন করে।
২। আলী ইবনে আব্বাস হাত-পা বাঁধা ব্যক্তিকে অতি সাবধানে রুদ্ধ করে রেখেছিলেন কেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যখন বন্দি ব্যক্তির মুখ দেখেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি একদিন তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। এই উপলব্ধি তার মনে গভীর কৃতজ্ঞতার সৃষ্টি করে। তিনি জানতেন, খলিফার আদেশ অনুযায়ী তাকে বন্দি রাখতে হবে। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন যাতে সেই ব্যক্তি কোনো কষ্ট না পান। তাই তিনি অত্যন্ত সাবধানে, যত্নসহকারে তাকে রুদ্ধ করে রাখেন। যেন তিনি পালিয়ে গিয়ে বিপদে না পড়েন আবার অপমানিতও না হন। এইভাবে তিনি উপকারীর প্রতি সম্মান বজায় রাখেন।
৩। আলী ইবনে আব্বাস জনৈক ব্যক্তির কাছে প্রাণরক্ষার প্রার্থনা করেছিলেন কেন?
উত্তরঃ যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে আলী ইবনে আব্বাস জীবন নিয়ে বিপদে পড়ে যান। শত্রুরা তাকে খুঁজছিল এবং প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল প্রবল। সে সময় তিনি দামেস্ক শহরের এক সম্ভ্রান্ত ও দয়ালু ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রাণ ভিক্ষা করেন। তিনি সেই ব্যক্তিকে জানান যে, আশ্রয় না পেলে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। সেই ব্যক্তি তার অনুরোধে সাড়া দেন। তিনি আলীকে নিজের ঘরের গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখেন। এক মাসের মতো তিনি আলীকে নিরাপদে আশ্রয় দেন। এই উপকারে আলী ইবনে আব্বাস নতুন জীবন পান।
৪। কীভাবে আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণ রক্ষা পায়?
উত্তরঃ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আলী ইবনে আব্বাস চরম বিপদে পড়েন। শত্রুরা তাকে ধরার জন্য চারিদিকে খোঁজ শুরু করে। তখন তিনি দামেস্কের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কাছে আশ্রয় চান। তিনি প্রাণভিক্ষা করে বলেন, যদি আশ্রয় না পান তবে তিনি মারা যাবেন। সেই ব্যক্তির মন দয়ায় ভরে ওঠে। তিনি আলীকে নিজের গৃহে গোপনে আশ্রয় দেন। সেখানে এক মাস পর্যন্ত আলী নিরাপদে ছিলেন। কেউ তার অবস্থান জানতে পারেনি, ফলে শত্রুরা তাকে ধরতে পারেনি। এভাবেই তার প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়।
৫। আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাসে কেন এক মাস অবস্থান করেছিলেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যুদ্ধের সময় পরাজিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ডেমাস্কাসে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি এক সম্ভ্রান্ত ও সদয় ব্যক্তির কাছে আশ্রয় চান। সেই ব্যক্তি তার প্রাণ রক্ষায় সাহায্য করেন এবং গোপনে নিজের ঘরে আশ্রয় দেন। শত্রুরা তাকে খুঁজছিল, তাই তাকে বাইরে বের হওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে তিনি এক মাস সেখানে লুকিয়ে অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় এবং তিনি নিরাপদে থাকতে পারেন।
৬। ডেমাস্কাসের বৃহৎ মসজিদ এলাকায় জগদীশ্বরের শুভদৃষ্টি থাকার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস সেই স্থানটিকে অত্যন্ত পবিত্র ও প্রিয় মনে করতেন। কারণ, সেখানকার একজন ব্যক্তিই একসময় তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। তার মতে, যেখানে এমন মহৎ কর্ম ঘটে, সেখানে নিশ্চয়ই ঈশ্বরের দৃষ্টি থাকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া এমন মহানুভবতা সম্ভব নয়। সেইজন্য ডেমাস্কাসের বৃহৎ মসজিদ এলাকা ঈশ্বরের কৃপাপ্রাপ্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই তিনি ওই স্থানকে জগদীশ্বরের শুভদৃষ্টিসম্পন্ন বলে বর্ণনা করেন।
৭। আশ্রয়দাতার কথা আলী ইবনে আব্বাস ভুলতে পারেননি কেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যখন চরম বিপদের মধ্যে পড়েছিলেন, তখন সেই ব্যক্তি নিঃস্বার্থভাবে তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এমন দয়া ও সহানুভূতির প্রতিদান চিরকাল মনে রাখার মতো। এই উপকার তাকে এক নতুন জীবন দিয়েছিল। কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে তিনি কখনও সেই আশ্রয়দাতার কথা ভুলতে পারেননি। মানুষের মন ভালোবাসা ও উপকার সহজে ভোলে না, তাই তিনিও তা স্মরণে রেখেছেন।
৮। “এ জন্য পৃথিবীতে যত স্থান আছে ঐ স্থান আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয়”- উক্তিটি আলী ইবনে আব্বাস কেন করেছিলেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যখন বিপদে ছিলেন, তখন ডেমাস্কাস শহরের একজন মহৎ ব্যক্তি তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। সেই মহান কর্ম এই স্থানকে তার কাছে পবিত্র ও স্মরণীয় করে তোলে। তিনি মনে করেন, যেখানে তার জীবন রক্ষা হয়েছিল, সেই স্থান তার জন্য সবচেয়ে প্রিয় হওয়াই স্বাভাবিক। কৃতজ্ঞতার অনুভূতিতে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব স্থানের চেয়ে ঐ স্থান তার কাছে বেশি প্রিয়। সেই অভিজ্ঞতা তার হৃদয়ে গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল। তাই তিনি এমন আবেগপূর্ণ উক্তি করেছিলেন।
৯। ‘প্রত্যুপকার’ গল্পের সেই ব্যক্তি প্রাণদণ্ড থেকে অব্যাহতি পেলেন কেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তিকে দেখে চিনতে পারেন যে তিনিই তার জীবনরক্ষাকারী। তিনি খলিফা মামুনের কাছে গিয়ে সেই ব্যক্তির জন্য প্রাণভিক্ষা করেন। তিনি খলিফাকে বলেন, “তিনি একদিন আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, আজ তার প্রতি উপকার করার সময় এসেছে।” খলিফা মামুন আলীর কৃতজ্ঞতাভাব ও মানবিকতা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বন্দিকে প্রাণদণ্ড থেকে মুক্তি দেন। একজন উপকারী মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন হিসেবেই তিনি মুক্তি পান।
১০। আব্বাস কেন ডেমাস্কাসে নির্দিষ্ট অঞ্চলের মঙ্গল কামনা করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস ডেমাস্কাসে যে অঞ্চলে আশ্রয় পেয়েছিলেন, সেই স্থানটি তার জীবনের এক কঠিন সময়ের স্মৃতি বহন করে। ওই জায়গায় এক সদয় ব্যক্তি তাকে প্রাণনাশ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই সেই অঞ্চলের প্রতি আব্বাসের কৃতজ্ঞতা ছিল গভীর। তিনি মনে করেছিলেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ না থাকলে তিনি সেখানে এমন উপকারী ব্যক্তিকে পেতেন না। সেই ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার অনুভব থেকেই তিনি সেই অঞ্চলের মঙ্গল কামনা করেন। এটি ছিল তার হৃদয়ের গভীর থেকে আসা প্রার্থনা।
১১। ডেমাস্কাস থেকে আব্বাসকে তার আশ্রয়দাতা কীভাবে ফেরত পাঠান?
উত্তরঃ আশ্রয়দাতা বুঝতে পেরেছিলেন যে, আব্বাসের দেশে ফেরার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তাই তিনি নিজ দায়িত্বে গোপনে ব্যবস্থাপনা করেন। এক বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমে নিরাপদ পথে তাকে পাঠিয়ে দেন। কোনো বিপদ যাতে না ঘটে, সেজন্য সাবধানে সব কিছু গোপন রাখা হয়। তিনি আব্বাসকে শুভ কামনা জানান এবং বিদায় দেন। তার এই সহানুভূতি ও সহায়তা আব্বাস চিরকাল মনে রেখেছেন।
১২। পৃথিবীর সব জায়গার চেয়ে ডেমাস্কাসের বৃহৎ মসজিদের স্থান কেন আব্বাসের সবচেয়ে প্রিয়?
উত্তরঃ ডেমাস্কাসের বৃহৎ মসজিদের কাছেই সেই বাড়ি ছিল, যেখানে আব্বাস আশ্রয় পেয়েছিলেন। জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে তিনি এখানে বাঁচার সুযোগ পান। তাই সেই স্থানটি তার কাছে শুধুই একটি জায়গা নয়, বরং একটি জীবনদানের স্মৃতি। এর সঙ্গে তার ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও আবেগ জড়িয়ে আছে। এজন্য তিনি বলেন, পৃথিবীর সব জায়গার চেয়ে ওই স্থান তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এটি তার হৃদয়ের গভীর অনুভূতির প্রকাশ।
১৩। “আপনার মনস্কাম পূর্ণ হইয়াছে।” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এই বাক্যটি বলা হয়েছিল তখন, যখন আব্বাস তার জীবনদাতা ব্যক্তিকে বন্দি অবস্থায় চিনে ফেলেন এবং তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি চেয়েছিলেন, সেই উপকারীর কোনো ক্ষতি না হোক। খলিফার কাছ থেকে সেই ব্যক্তির মুক্তির আদেশ পাওয়ার পর এই কথা বলা হয়। অর্থাৎ আব্বাস যে ইচ্ছা বা মনোবাসনা নিয়ে খলিফার কাছে গিয়েছিলেন, তা সফল হয়েছে। তার মনে যে কৃতজ্ঞতা ছিল, তা প্রকাশ করতে পেরে তিনি শান্তি পান। এই বাক্য তার সেই শান্তির প্রতিচ্ছবি।
১৪। আশ্রয়দাতাকে চিনতে পেরে আলী ইবনে আব্বাস কী করলেন?
উত্তরঃ আলী ইবনে আব্বাস যখন বন্দি ব্যক্তিকে চিনে ফেলেন, তখন তিনি অবাক ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন, এ মানুষটিই একসময় তাকে জীবন রক্ষা করেছিলেন। তখন তিনি আর অপেক্ষা না করে খলিফার কাছে গিয়ে তার মুক্তির জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, এ ব্যক্তি তার উপকার করেছেন, তাই তার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তাকে মুক্ত করতে হবে। তিনি খলিফার সামনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য কথা বলেন। এতে তার কৃতজ্ঞতা ও সাহস দুটোই প্রকাশ পায়।
১৫। খলিফা বন্দি লোকটি সম্পর্কে সব জেনে কী বললেন?
উত্তরঃ খলিফা মামুন সব কথা শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর তিনি আব্বাসের উপকারীর মহত্ব ও আব্বাসের কৃতজ্ঞতায় খুশি হন। তিনি বলেন, “আপনার মনস্কাম পূর্ণ হইয়াছে।” অর্থাৎ যাকে রক্ষা করতে এসেছেন, তিনি এখন মুক্ত। এরপর তিনি বন্দিকে ক্ষমা করে দেন ও মুক্ত করার নির্দেশ দেন। খলিফাও একজন মহৎ ও বিচক্ষণ শাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন।