আমার দেশ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

সুফিয়া কামালের ‘আমার দেশ’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের প্রকৃতি, ইতিহাস ও মানুষের গৌরবগাথাকে উপস্থাপন করেছেন। পাঠকের মনে দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। এই পোস্টে আমার দেশ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

আমার দেশ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘আমার দেশ’ কবিতাটি কে লিখেছেন?
উত্তর: সুফিয়া কামাল।

২। ‘আমার দেশ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: উদাত্ত পৃথিবী।

৩। সুফিয়া কামাল কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৯১১ সালের ২০শে জুন।

৪। সুফিয়া কামালের জন্ম কোথায়?
উত্তর: বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে।

৫। সুফিয়া কামাল কোন আন্দোলন থেকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন?
উত্তর: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে।

৬। সুফিয়া কামাল কোন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে।

৭। সুফিয়া কামাল কোথায় শিক্ষকতা করেছিলেন?
উত্তর: কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে।

৮। জনগণ সুফিয়া কামালকে কী অভিধায় ভূষিত করেছে?
উত্তর: জননী সাহসিকা।

৯। সুফিয়া কামালের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: একাত্তরের ডাইরী।

১০। সুফিয়া কামালের শিশুতোষ গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: ইতল বিতল ও নওল কিশোরের দরবারে।

১১। সুফিয়া কামাল কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯৯৯ সালের ২০শে নভেম্বর।

১২। কবিতায় কোন ঋতুর কথা উল্লেখ আছে?
উত্তর: শরৎ ঋতুর।

১৩। ‘স্নিগ্ধ শরৎ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শরৎকালের উজ্জ্বলতা।

১৪। কবিতায় কোন ফুলের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মৌসুমী ফুলের।

১৫। কিসের ছায়া লুটে পড়ে?
উত্তর: স্নিগ্ধ শরৎ আকাশের।

১৬। কোথায় ছায়া লুটে পড়ে?
উত্তর: মাঠভরা ধানের শীর্ষে।

১৭। কোথায় মানুষের ঘর ঘর বলা হয়েছে?
উত্তর: দেশের মাটিতে।

১৮। আমার দেশের মাটি কী দেয়?
উত্তর: নতুন জীবনের সন্ধান।

১৯। কিসের কিস্তি ভাসে প্লাবনে?
উত্তর: নূহের কিস্তি।

২০। ‘নুহের কিস্তি’ কী?
উত্তর: সেমিটিক পুরাণ অনুসারে মহাপ্লাবনের সময় এক নবির বড় নৌকা যা মানুষকে রক্ষা করেছিল।

২১। শান্তি-কপোত কী নিয়ে আসে?
উত্তর: বারতা।

২২। কবুতর কীসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: শান্তির প্রতীক।

২৩। নতুন চর জেগে উঠলে কী হয়?
উত্তর: মানুষেরা পাশাপাশি ঘর বাঁধে।

২৪। নব অঙ্কুর কোথায় জাগে?
উত্তর: নতুন চরে।

২৫। প্রতি দিনের সূর্য আলো কী জাগায়?
উত্তর: অন্তরের অনুরাগ।

২৬। ‘সূর্য-ঝলকে’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত, উদ্ভাসিত।

২৭। আমার দেশের মাটিতে কী মেশানো আছে?
উত্তর: কবির প্রাণের ঘ্রাণ।

২৮। কিসের সম্মান কবিতায় উল্লেখ আছে?
উত্তর: জীবনের সম্মান।

২৯। প্রাণ-স্পন্দন কোথায় লক্ষ করা যায়?
উত্তর: লক্ষ তরুর মধ্যে।

৩০। কিসের প্রবাহ মর্মরে সঞ্চারিত হয়?
উত্তর: জীবনপ্রবাহ।

৩১। আমার দেশের মাটি কেমন?
উত্তর: মধুর।

৩২। আমার দেশের ভাষা কেমন?
উত্তর: মধুর।

৩৩। নদীগুলো কোথায় গিয়ে মিশে?
উত্তর: সাগরে।

৩৪। মানুষ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়?
উত্তর: প্রাণে প্রাণে।

৩৫। সূর্য ও চন্দ্র কী নিয়ে অঞ্জলি ভরে?
উত্তর: মৌসুমী ফুলে।

৩৬। কবিতায় সূর্যের আলো কী প্রকাশ করে?
উত্তর: জীবনের ডাক।

৩৭। মানুষ কিসে সাড়া দেয়?
উত্তর: জীবনের ডাকের।

৩৮। লক্ষ প্রাণ কোথায় আসে?
উত্তর: নদী-প্রান্তর পার হয়ে।

৩৯। সেবার পাশাপাশি কী বিনিময় হয়?
উত্তর: সাম্য ও প্রীতি।

৪০। কবিতায় সুধী কারা?
উত্তর: গুণীজন।

৪১। আমার দেশের মানুষ কোথায় দাঁড়িয়ে হাসে?
উত্তর: আপন দেশের মাটিতে।

৪২। আমার দেশের মানুষের চরিত্র কেমন?
উত্তর: মুক্ত-উদার।

৪৩। “সূর্য-ঝলকে” কী ফুটে উঠেছে?
উত্তর: মৌসুমী ফুল

৪৪। শরৎ আকাশ কেমন?
উত্তর: স্নিগ্ধ

৪৫। দেশের মাটি কোথায় ছড়িয়েছে?
উত্তর: মানুষের ঘরে ঘরে

৪৬। কবিতার প্রথম চরণ কী?
উত্তর: “সূর্য-ঝলকে! মৌসুমী ফুল ফুটে”

৪৭। কবির প্রাণ কী লাভ করে?
উত্তর: নব জীবনের সন্ধান

৪৮। “মর্মরে” কী সঞ্চারিত হয়?
উত্তর: জীবনপ্রবাহ

৪৯। সূর্য-চন্দ্র কী করে?
উত্তর: অঞ্জলি ভরে

৫০। কবিতায় কোন পাখির উল্লেখ আছে?
উত্তর: শান্তি-কপোত (পায়রা)

৫১। ‘শান্তি কপোত’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শান্তির প্রতীক কবুতর।

৫২। ‘ধান্য শীর্ষ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ধানের ওপর ভাগ।

৫৩। ‘বারতা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সংবাদ বা বার্তা।

আমার দেশ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। কবি কেন কবিতার শুরুতে সূর্য ও ফুলের কথা বলেছেন?

উত্তর: কবি সুফিয়া কামাল খুব চিন্তা করে সূর্য আর ফুল দিয়ে তাঁর কবিতা শুরু করেছেন। সূর্যের আলো আমাদের দেশকে কেমন উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত করে তোলে, সেটা বোঝানোর জন্য তিনি ‘সূর্য-ঝলকে’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। আর ‘মৌসুমী ফুল’ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যে আমাদের দেশে প্রতিটি ঋতুতে নতুন নতুন ফুল ফোটে, এটা আমাদের দেশের প্রকৃতির একটা বিশেষ দিক। এই দুটো জিনিস দিয়ে তিনি আমাদের দেশের সৌন্দর্য আর প্রাণশক্তিকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।


২। ধানের শীষ দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তর: কবি যখন ‘ধান্য শীর্ষ’ বা ধানের শীষের কথা বলেছেন, তখন তিনি আমাদের দেশের কৃষিকাজের গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ একটা কৃষিপ্রধান দেশ, আর ধান আমাদের প্রধান ফসল। মাঠে মাঠে সোনালি ধান দেখতে কেমন সুন্দর লাগে, সেটা তিনি বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ধানের শীষ আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আর অর্থনৈতিক শক্তিরও প্রতীক। কবি চেয়েছেন আমরা যেন আমাদের কৃষির এই সম্পদকে গুরুত্ব দিই।


৩। “আমার দেশের মানুষেরা সবে মুক্ত-উদার মনে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “আমার দেশের মানুষেরা সবে মুক্ত-উদার মনে” এই বাক্যটি দিয়ে কবি বাংলাদেশের মানুষের উদারতা, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব এবং স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। কবি বলতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ একে অপরকে সম্মান করে এবং তাদের হৃদয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ বা শত্রুতা না রেখে, সবার সঙ্গেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়। এইভাবে, তাদের মনোভাব একটি সৎ, সহানুভূতিশীল, এবং মহৎ সমাজ গড়ার দিকে নিয়ে যায়।


৪। নুহের কিস্তি বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: এখানে কবি একটা ধর্মীয় কাহিনীর উদাহরণ দিয়েছেন। নুহ নবীর কিস্তি বা নৌকা ছিল একটা বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। ঠিক তেমনি আমাদের দেশও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় সংকট অতিক্রম করেছে। কবি এই উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে আমাদের দেশ যেকোনো দুঃখ-দুর্দশা থেকে আবার নতুন করে উঠে দাঁড়াতে পারে। এটা আমাদের জাতীয় জীবনের একটা বড় শিক্ষা।


৫। “জীবনপ্রবাহ সঞ্চারি মর্মরে” এ বাক্যে কিভাবে জীবনের রূপ ফুটে ওঠে?

উত্তর: “জীবনপ্রবাহ সঞ্চারি মর্মরে” এই বাক্যটি দিয়ে কবি জীবনকে একটি অবিরাম চলমান প্রবাহের মতো দেখাচ্ছেন। জীবন যেন একটি নদী, যা সবসময় চলে, কখনো শান্ত, কখনো (আন্দোলিত), কিন্তু কখনো থেমে যায় না। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, জীবন কখনো থেমে থাকে না, চ্যালেঞ্জ আসে, কিন্তু মানুষ তাদের পথে চলতে থাকে। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখে, নতুনভাবে জীবন শুরু হয়। এটি জীবনের সুষম এবং চলমান প্রকৃতি বোঝায়।


৬। নতুন চরে ঘর বাঁধার অর্থ কী?ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: আমাদের দেশে নদী প্রায়ই নতুন চর তৈরি করে। মানুষ সেখানে গিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধে। কবি এই উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে আমাদের দেশের মানুষ কোনো বিপদেই হার মানে না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা যুদ্ধের পরেও আমরা নতুন করে ঘর বাঁধি, জীবন গড়ি। ‘পাশাপাশি ঘর বাঁধা’ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে আমরা একসাথে মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যাই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এটা আমাদের জাতীয় চরিত্রের একটা বড় গুণ।


৭। প্রাণের ঘ্রাণ আর মাটির মধ্যে সম্পর্ক কোথায়?

উত্তর: কবি বলেছেন, “আমার দেশের মাটিতে আমার প্রাণের ঘ্রাণ”। এর মানে হল আমাদের দেশের মাটির সাথে আমাদের আত্মার একটা গভীর সম্পর্ক আছে। আমরা যখন দেশের মাটিতে পা রাখি, তখন আমাদের মনে হয় এটা আমাদের নিজের অংশ। এই মাটিতে আমাদের শৈশব কেটেছে, এখানে আমাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কবির কাছে দেশের মাটি শুধু মাটি নয়, এটা তাঁর জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। এই অনুভূতি প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষেরই থাকে।


৮। সূর্য-চন্দ্র আর ফুল দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তর: সূর্য আর চন্দ্র আমাদের মহাবিশ্বের চিরস্থায়ী বস্তু। কবি এগুলো দিয়ে বুঝিয়েছেন যে আমাদের দেশের সৌন্দর্য চিরন্তন। আর ‘মৌসুমী ফুল’ দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আমাদের দেশের প্রকৃতি প্রতিদিন নতুন রূপ ধারণ করে। সকালে সূর্য উঠে, রাতে চাঁদ ওঠে – এগুলো নিয়মিত ঘটে, ঠিক যেমন আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিত সংগ্রাম করে জীবনে এগিয়ে যায়। ফুলের সৌন্দর্য আমাদের দেশের মানুষের হৃদয়ের সৌন্দর্যের প্রতীক।


৯। “নদীতে নদীতে মিলে হেথা গিয়ে ধায় সাগরের পানে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “নদীতে নদীতে মিলে হেথা গিয়ে ধায় সাগরের পানে” এই বাক্যটি দিয়ে কবি মানুষের একতা এবং মিলনের শক্তি দেখাতে চেয়েছেন। যেমন নদী-নদী মিলিত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়, তেমনই মানুষেরা এক হয়ে নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করে। এখানে মিলনের শক্তি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশ সমৃদ্ধ হতে পারে, সবার মিলিত উদ্যোগে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।


১০। মধুর ভাষা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘মধুর ভাষা’ বলতে কবি আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে বুঝিয়েছেন। বাংলা ভাষা কেমন মিষ্টি, কেমন সুরেলা – সেটা তিনি বলতে চেয়েছেন। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়ে এই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। কবির কাছে এই ভাষা শুধু কথা বলার মাধ্যম নয়, এটা আমাদের আবেগ, আমাদের সংস্কৃতির বাহন। তিনি চেয়েছেন আমরা যেন আমাদের এই সুন্দর ভাষাকে ভালোবাসি, এটা যেন কখনো হারিয়ে না যায়। এই ভাষায় তিনি নিজেও কবিতা লিখেছেন, গান গেয়েছেন।


১১। কবি সেবা-সাম্য-প্রীতি দিয়ে কী ধরনের সমাজ চেয়েছেন?

উত্তর: কবি সুফিয়া কামাল একজন প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি চেয়েছেন আমাদের সমাজে সেবার মনোভাব থাকুক, সাম্য বা সমানাধিকার থাকুক, আর মানুষের মধ্যে প্রীতি বা ভালোবাসা থাকুক। ‘সেবা’ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে সাহায্য করা। ‘সাম্য’ বলতে নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব সবাইকে সমান মনে করা। আর ‘প্রীতি’ হল পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা। এই তিনটা জিনিস থাকলে আমাদের সমাজ সুন্দর হবে, এটাই কবির স্বপ্ন ছিল।


১২। ‘নিতি নবরূপে ভরে ওঠে’ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কবিতার শেষে কবি বলেছেন যে আমাদের দেশ ‘নিতি নবরূপে ভরে ওঠে’। এর মানে হল আমাদের দেশ প্রতিদিন নতুন রূপ নিচ্ছে, নতুনভাবে সাজছে। গতকালের চেয়ে আজকে আমরা একটু বেশি উন্নত হচ্ছি। আগামীকাল আরও ভালো হবে। এটা একটা আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। কবি চেয়েছেন আমরা যেন আমাদের দেশের এই উন্নতিকে ধরে রাখি, আরও এগিয়ে নিয়ে যাই। আমাদের দেশের মানুষ প্রতিদিন নতুন আশা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে – এটাই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।


১৩। শান্তির কবুতর বলতে কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: কবুতর সবসময় শান্তির প্রতীক। কবি যখন ‘শান্তি-কপোত’ বা শান্তির কবুতরের কথা বলেছেন, তখন তিনি আমাদের দেশে শান্তি বজায় রাখার গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা খুব জরুরি ছিল। কবি চেয়েছেন আমাদের দেশের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। এই কবুতরটা যেন একটা বার্তা নিয়ে আসে যে আমাদের মধ্যে কোনো হানাহানি থাকবে না, সবাই মিলেমিশে থাকবে।


১৪। “আমার দেশের মাটিতে মেশানো আমার প্রাণের ঘ্রাণ”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “আমার দেশের মাটিতে মেশানো আমার প্রাণের ঘ্রাণ” এই বাক্যটি দিয়ে কবি তার দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, দেশের মাটি তার আত্মার অংশ, তার প্রাণের সঙ্গে মিশে গেছে। এটা বোঝায় যে, কবি নিজেকে তার দেশের মাটির সঙ্গে একাকার মনে করেন। তার দেশ এবং তার আত্মা অবিচ্ছেদ্য, দেশের প্রতি তার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা কখনো শেষ হবে না। মাটির ঘ্রাণ তার কাছে আত্মিক সংযোগের প্রতীক।


১৫। কবিতায় “সূর্য-ঝলকে” শব্দটির তাৎপর্য কি?

উত্তর: কবি “সূর্য-ঝলকে” শব্দটি ব্যবহার করেছেন কারণ সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করে, যেমন সূর্যের আলো নতুন দিনের শুরু এবং জীবনের শক্তির উৎস। কবি সূর্যকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন যা উজ্জ্বল আলো ছড়ায় এবং নতুন দিনের শুরু হতে নির্দেশ করে। এটি দেশের নতুন জীবনের সূচনা, আশা, এবং শক্তির প্রতীক। যখন সূর্য ওঠে, তখন পৃথিবী আলোতে ভরে যায় এবং পৃথিবী তার জীবনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই ভাবনাটিই কবি দেশের মানুষ এবং প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত করতে চেয়েছেন।


১৬। কবিতায় মৌসুমী ফুলের উল্লেখ করা হয়েছে কেন?

উত্তর: “মৌসুমী ফুল” শব্দটির মাধ্যমে কবি দেশের প্রকৃতির পরিবর্তন এবং ঋতুর আবহ তুলে ধরেছেন। মৌসুমী ফুল সেই ফুলকে বলা হয় যা বিশেষ ঋতুতে ফুটে, যেমন শীতকালে কিছু ফুল ফুটে, বা গ্রীষ্মকালে অন্য কিছু। কবি এই শব্দ ব্যবহার করেছেন যাতে বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং ঋতুর পরিবর্তন বোঝানো যায়। মৌসুমী ফুলের মতো প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়, কিন্তু তার সৌন্দর্য চিরকাল থাকে। এইভাবেই, কবি বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং সময়ের সাথে পরিবর্তনের কথা ব্যক্ত করেছেন।


১৭। “ধান্য শীর্ষ” শব্দটি দিয়ে কি বুঝিয়েছেন??

উত্তর: “ধান্য শীর্ষ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ধানের শীর্ষ বা শীষের ছবি হিসেবে, যা বাংলার কৃষির গুরুত্ব এবং দেশের সমৃদ্ধির প্রতীক। ধানের শীর্ষ ধান উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলার কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায়, এবং সেই ফসল দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতির ভিত্তি তৈরি করে। কবি এই শব্দ ব্যবহার করে দেশের কৃষিকাজের গুরুত্ব এবং মানুষের জীবনযাত্রার সাথে কৃষির সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।


১৮। “নুহের কিস্তি” কবিতায় কি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে?

উত্তর: “নুহের কিস্তি” শব্দটি কবিতায় একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। এটি সেই নৌকা বোঝায়, যেটি পৃথিবীজুড়ে মহাপ্লাবন হয়েছিল এবং নুহ নবী তার নৌকায় প্রাণীদের নিয়ে তাদের রক্ষা করেছিলেন। কবি এখানে এই প্রতীক ব্যবহার করেছেন দেশের মানুষদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার শক্তি ও সাহস দেখাতে। যখন দুর্যোগ বা বিপদ আসে, তখন বাংলার মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ঐক্য এবং শক্তি দিয়ে এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠে এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করে। তাই “নুহের কিস্তি” একটি রক্ষাকারী শক্তি এবং নতুন জীবনের প্রতীক।


১৯। “শান্তি কপোত” কি?ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “শান্তি কপোত” শব্দটি কবি শান্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কবুতর সাধারণত শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কবি এখানে শান্তি ও মিলনের বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি এই শব্দ ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলার মানুষের মধ্যে মৈত্রী, ভালোবাসা, সহনশীলতা এবং শান্তির চেতনা রয়েছে। একে অপরকে সম্মান জানিয়ে এবং মিলেমিশে জীবন যাপন করা, এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে ওঠে।


২০। “নব অঙ্কুর জাগে” বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: “নব অঙ্কুর জাগে” শব্দটি দিয়ে কবি নতুন সূচনা এবং নতুন জীবনের আশা ব্যক্ত করেছেন। এটি একটি উদ্দীপনা, যা জীবনের নতুন সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে। যেমন একটি নতুন অঙ্কুর মাটির মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠে, তেমনি মানুষের জীবনেও নতুন দিন, নতুন শক্তি, নতুন সম্ভাবনা আসে। কবি এখানে দেখাচ্ছেন যে, দেশ ও সমাজে কোনো দুর্যোগ বা চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা কাটিয়ে উঠে নতুন করে শুরু করা যায়, এবং প্রতিদিন নতুন আশা, নতুন সংগ্রাম এবং নতুন জীবন আসে।


আরও পড়ুনঃ যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment