বিশ্লেষণমূলক লেখা বলতে কোন একটি বিষয়কে ছোট ছোট করে ভেঙে বুঝিয়ে বলা। সপ্তম শ্রেণির বাংলা পঞ্চম অধ্যায় বিশ্লেষণ মূলক লেখা রয়েছে। আজকের পোস্টে আমি তোমাদেরকে ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদের সমাধান করে দেখাবো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ
‘কত কাল ধরে’ লেখাটির প্রায় পুরো অংশে লেখক এ অঞ্চলের প্রাচীন যুগের সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। নারী
ও পুরুষ কোন ধরনের পোশাক ও অলংকার পরতো, এখানকার মানুষ কোন ধরনের খাবার খেতো, তাদের
পছন্দ-অপছন্দের বিষয় কী ছিল, এগুলোর বিবরণ লেখক দিয়েছেন।
Table of Contents
বিশ্লেষণমূলক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?
রচনাটি বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য , সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে লেখা।
খ. এই লেখা থেকে কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক বাক্য খুুঁজে বের করো।
ইতিহাসের সবটা আজও ভালো করে জানা নেই আমাদের। আলো-আঁধারের খেলায় অনেক পুরনো কথা ঢাকা পড়েছে।
এককালে এ দেশে রাজ-রাজড়া ছিল না, তখন মানুষের দাম ছিল বেশি। নিজেরাই যুক্তি পরামর্শ করে কাজ করত, চাষ করত, ঘর বাঁধত এবং দেশ চালাত।
বড়ো বড়ো অক্ষরে রাজাদের নাম লেখা হয়ে গেল, আর প্রজারা রইল পেছনে পড়ে।
মৌর্য-গুপ্ত, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি রানি এদের কাল শেষ হয়েছে।
গ. বিবরণমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
বিবরণমূলক লেখায় যে রকম বর্ণনা থাকে এ লেখায় সেরকম বর্ণনা আছে। বিবরণমূলক লেখার মতো এখানেও নানা তথ্যের সমাবেশ আছে। কিন্তু বিবরণমূলক লেখায় বিশ্লেষণ থাকে না, এই লেখাটায় বিশ্লেষণ আছে।
ঘ. তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
মিল হলো, দুই ধরনের লেখাই বিবরণের মাধ্যমে লিখিত। তথ্যমূলক লেখায় তথ্যই প্রধান, এ লেখাটাতেও অনেক তথ্য সংযোজিত হয়েছে। আর অমিল হলো এই লেখাটায় তথ্যের বিশ্লেষণ আছে, ওটাতে নেই।
ঙ. এই লেখার উপর তোমার মতামত দাও।
এই লেখাটি বিশ্লেষণমূলক। বিশ্লেষণের ভাবটা বজায় রেখেই এ লেখাটিতে বাঙালি জাতির ইতিহাসের ধারা পরিবর্তন,সমাজের বিকাশ ও সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারা উপস্থাপন করা হয়েছে।
বলি ও লিখি
‘কত কাল ধরে’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
(সম্পূর্ণ লেখা বইয়ে না ধরলে মাঝ থেকে কিছু বাদ দিবে)
প্রাচীন বাঙ্গালি জাতির সংস্কৃতির পুরো পরিচয় লেখনে তুলে ধরেছেন ‘কতকাল ধরে’ এই রচনায় ৷ ফুটিয়ে তুলেছেন প্রাচীন যুগের মানুষের জীবন যাত্রার পরিচয়।লেখক ‘কতকাল ধরে’ রচনাটি তিন ভাগে সাজিয়েছেন। প্রথম ভাগে বাঙালির ইতিহাস, দ্বিতীয়ভাগে জীবনযাত্রার কথা আর শেষভাগে বিশ্লেষণমূলক তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
লেখক এই বিশ্লেষণ মূলক রচনা বাঙালির ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করেন ৷ আমাদের ইতিহাসের সবটা জানা নেই ৷ লেখক আমার বাঙালির সংস্কৃতির ইতিহাস তুলে ধরেছেন , ইতিহাস বলতে শুধু রাজা-রাজড়াদের ইতিহাস বুঝায় না বরং সব মানুষের কথা বোঝায়।
এককালে এদেশে রাজ-রাজরা ছিল না ৷ তখন মানুষের দাম ছিল বেশি ৷ লোকজন নিজেরাই যুক্তি-পরামর্শ করে কাজ করত, চাষ করত, ঘর বাঁধত এবং দেশ চালাত।তেইশ-চব্বিশশো বছর আগে রাজা এলেন এদেশে। সেই সঙ্গে মন্ত্রী ,সামন্ত মহাসামন্তদের দল এলো, লোক লস্কর বহাল করা হলো, কত ব্যবস্থা, কত নিয়মকানুন দেখা দিলো। মানুষের দাম কমে গেল। রাজার এক কথায় কারো গর্দান, কারো খুশিতে কেউ বড়লোক হয়ে যেত। প্রজারা রইল পেছনে পড়ে ৷ রাজাদের নাম লেখা হলো বড় অক্ষরে।
লেখক ‘কতকাল ধরে’ রচনায় বাঙ্গালির ইতিহাস ও জীবনযাত্রার পরিচয় তুলে ধরেছে। প্রাচীন বাঙালিদের পরিধেয় বস্ত্র ছিল, ধুতি ও শাড়ি, তবে বড়লোকদের ছেলেরা তার সাথে চাদর পরত। মেয়েরা শাড়ি, বড়লোকদের মেয়েরা শাড়ির সাথে ওড়না পরত। নানারকম সূক্ষ্ম পাটের ও সুতি কাপড়ের ও মখমল কাপড়ের চল ছিল। সাধারণ লোকে কাঠের খড়ম পরত। যোদ্ধা বা পাহারাদাররা জুতো পরত। সেকালের বাঙালির প্রিয় খাবার ছিল ভাত। যাতায়াত মাধ্যম ছিল নৌকা ,হাতি, ঘোড়া-গাড়ি, গরুর গাড়ি ,পালকি। ঘরবাড়ি ছিল খড়-মাটি বাঁশের ও ইট কাঠের।
লেখক তার রচনার শেষাংশে প্রাচীন মানুষের জীবন যাত্রার বিশ্লেষণ করেছেন ৷ দু’জন সংস্কৃত প্রাচীন কবির বর্ণনা তাদের একজন লিখেছেন মেয়েদের সাজ-সজ্জার বর্ণনা আরেকজন লিখেছেন তাদের সীমাহীন দরিদ্রতার কথা।
লেখা নিয়ে মতামত
‘কত কাল ধরে’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
১. বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস। | বিষয়টা গর্বের। কিন্তু আরও আগে হওয়াটা অসম্ভব নয়। |
২. একজন লিখেছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা। আরেকজন ছবি আঁকছেন নিদারুণ অভাবের জালাময় দারিদ্র্যের, অপরিসীম বেদনার। | কী সাংঘাতিক ব্যবধান? ভাবতে খুব কষ্ট হয় । পৃথিবীর মানুষ কবে মানবিক হয়ে উঠবে? |
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। ছকে উপাত্ত হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থীর সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। এই ছকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কয়েকটি বাক্য রচনা করা হল।
১. ভারতের ৭টি প্রদেশে বাংলাদেশের শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিল।
২. সবচেয়ে বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থী ছিল পশ্চিমবঙ্গে।
৩. তারপর ত্রিপুরার স্থান। আশ্রয়কেন্দ্র ছিল ২৭৬টি ও শরণার্থী ১৩,৮১,৬৪৯ জন।
৪. তারপরের স্থান মেঘালয় ও আসামের। এখানে আশ্রয়কেন্দ্র যথাক্রমে ১৭ ও ২৮।
৫. বিহার ও মধ্যপ্রদেশে আশ্রয়কেন্দ্র যথাক্রমে ৮ ও ৩ এবং আশ্রিত ৩৬,৭৩২ এবং ২,১৯,২৯৮ জন।
৬. সবচেয়ে কম আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থী উত্তর প্রদেশে ৷ মাত্র ১টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ১০,১৬৯ জন।
৭. আসামে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিহারের ৩ গুণ।
৮. আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিবেচনায় বিহারে শরণার্থী অনেক কম।
৯. ত্রিপুরার আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি হলেও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ ভাগের ১ ভাগ ৷
১০. মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারত শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ।
উপরে লেখা বিশ্লেষণমূলক বাক্যগুলোর ভিত্তিতে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।
বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ছিল অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও ভয়াবহ অত্যাচারে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। বন্ধুপ্রতিম ভারত সরকার বাংলাদেশ সংলগ্ন বিভিন্ন সীমান্তে শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় ,আসাম, বিহার ,মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ— এই ৭টি প্রদেশে সর্বমোট ৮২৫ টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। প্রধান প্রধান আশ্রয়কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ,আসাম ও মেঘালয়। সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে—৭২,৩৫,৯১৬ জন।
তারপরেই ত্রিপুরা , এখানে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭৬ এবং শরণার্থীর সংখ্যা ১৩,৮১,৬৪৯ জন। মধ্যপ্রদেশের মাত্র ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে শরণার্থী ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি— ২,১৯,২৯৮ জন। অথচ বিহারের ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৬,৭৩২ জন। সবচেয়ে কম আশ্রয় কেন্দ্র ছিল উত্তর প্রদেশে , মাত্র ১টি এবং আশ্রয় নেয় ১০,১৬৯ জন। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত প্রায় ১ কোটি অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক মানবিক দায়িত্ব পালন করেছিল, যা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে অনুপম সহায়ক হয়েছিল।
Related Posts
- জোঁক গল্পের mcq প্রশ্ন উত্তর – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- মেট্রোরেল সম্পর্কে অনুচ্ছেদ (সহজ ভাষায় সকল ক্লাসের জন্য)
- সময়ের প্রয়োজনে জহির রায়হান প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- ডিজিটাল প্রযুক্তি ৬ষ্ঠ শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান (সবগুলো ছক)
- বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যবহার প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণি ডিজিটাল প্রযুক্তি
- একদিন ভোরবেলা গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ) – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- রবীন্দ্রনাথ হায়াৎ মামুদ প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- The Frog and The Ox Class 7 English Chapter 4 Solution (বাংলা অর্থসহ)
- জীবন ও জীবিকা ৮ম শ্রেণি ২য় অধ্যায় (দক্ষতা উন্নয়নের জানালা)
- চিঠি বিলি কবিতার মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ)- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা