‘অতিথি’ গল্পটি মহাকবি হোমারের ‘অডিসি’ মহাকাব্যের একটি দীর্ঘ কাহিনির অংশ। কাব্য থেকে মূলভাব গ্রহণ
করে এটি গদ্যরূপ দিয়েছেন লেখক। এই পোস্টে হোমারের অতিথি গল্পের মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন- ষষ্ঠ শ্রেণির আনন্দপাঠ লিখে দিলাম।
Table of Contents
হোমারের অতিথি গল্পের মূলভাব
অডিসিয়ুস অনেক কষ্টে সমুদ্র পেরিয়ে এক অজানা নগরে পৌঁছান। রাতে শহরে ঢুকে একজন মিষ্টভাষী মেয়ের সাহায্যে রাজবাড়ির পথ খুঁজে পান। মেয়েটি তাঁকে পথ দেখাতে রাজি হলেও পরামর্শ দেয়, তিনি যেন চুপচাপ থাকেন—কারণ বিদেশিদের তারা ভালোভাবে নেয় না। রাজপ্রাসাদের চমৎকার দৃশ্য, ফলের বাগান, ঝরনা, সোনার দরজা ও রূপার কাঠামো দেখে অডিসিয়ুস মুগ্ধ হন। রাজবাড়িতে ঢুকে তিনি সরাসরি রানির কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। সবাই বিস্মিত হলেও এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁকে সম্মান জানানোর কথা বলেন। রাজা আলসিনৌস অডিসিয়ুসকে সম্মানের সঙ্গে বসতে দেন ও খাবার দেন। রাতের বৈঠকে রাজা ও রানি তাঁর পরিচয় জানতে চান। অডিসিয়ুস জানায়, সে কেলিপসোর দ্বীপে সাত বছর বন্দি ছিল এবং কীভাবে ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে এখানে এসেছে। রাজকন্যা তাঁকে জামাকাপড় ও সাহায্য করেছিল। অডিসিয়ুস রাজকন্যার সরাসরি রাজপ্রাসাদে না নিয়ে আসার ব্যাখ্যা দেন, আর রাজাও বিষয়টি হাসিমুখে মেনে নেন। রাজা প্রতিশ্রুতি দেন, পরদিন সকালে তাঁকে নিরাপদে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। অডিসিয়ুস আশ্বস্ত হন ও অবশেষে বহুদিন পর নিশ্চিন্ত ঘুমে চোখ বন্ধ করেন।
হোমারের অতিথি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১। ক. অডিসিয়ুস দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন কেন? ব্যাখ্যা কর। | ৩ |
খ. আলসিনৌসের রাজপ্রাসাদের পরিবেশের বর্ণনা দাও। | ৭ |
ক) উত্তরঃ অডিসিয়ুস দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন কারণ তিনি এক অজানা দেশে এসেছিলেন, যেখানে তাঁর পরিচিত কেউ ছিল না। তখন ছিল রাত, চারপাশ অন্ধকার, কোথাও নিরাপত্তা ছিল না। তিনি জানতেন না, এখানকার মানুষ তাঁকে বন্ধু ভাববে না শত্রু ভাববে। আগন্তুক হিসেবে তাঁর মনে সবসময় ভয় কাজ করছিল। তিনি কাউকে চিনতেন না, কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, সেটাও জানতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল রাজপ্রাসাদে যাওয়া, কিন্তু পথও জানতেন না। তাছাড়া, দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রপথে যন্ত্রণাভোগ করার ফলে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত ছিলেন। তার ওপর বিদেশিদের নিয়ে এ নগরের মানুষের মনোভাব ভালো নয়—এই কথাও তিনি মেয়েটির মুখে শুনেছিলেন। তাই তাঁর মনে আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়।
খ) উত্তরঃ আলসিনৌসের রাজপ্রাসাদ ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও সমৃদ্ধ পরিবেশে তৈরি। রাজপ্রাসাদে ঢোকার পথের দুই পাশে ছিল সারি সারি ফলের গাছ—ডালিম, আপেল, নাশপাতি, ডুমুর, জলপাই ইত্যাদি। এই গাছগুলো সবসময়ই ফুল ও ফল দিত, কোনো ঋতুতে ফসলের অভাব হতো না। আঙুরলতা গাছে থোকা থোকা আঙুর ঝুলে থাকত, আর তরকারির ক্ষেত ছিল সবুজ ও পরিপাটি। প্রাসাদের আশেপাশে ছিল দুটি ঝরনা—একটি মাঠের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত, আরেকটি রাজবাড়ির সামনে এসে থেমেছে বিশ্রামে। রাজপ্রাসাদের দরজাগুলো ছিল সোনার তৈরি এবং কাঠামো ছিল রূপার। দরজার হাতলগুলোও ছিল সোনার। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে রূপা ও সোনার তৈরি কুকুর মূর্তি, যারা পাহারার মতো দাঁড়িয়ে ছিল। দেয়ালের পাশে ছিল উঁচু উঁচু আসন, যেগুলো ছিল দামি কাপড়ে মোড়া। জন্য। রাজপ্রাসাদের ভিতরকার পরিবেশ ছিল রাজকীয়, শান্ত, সুশৃঙ্খল ও আতিথেয়তায় ভরপুর। অতিথিদের জন্য সুস্বাদু খাবার, সুন্দর আসন ও ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা ছিল।
প্রশ্ন ২। ক. কোন ঘটনায় সবাই থ-মেরে যায়? বর্ণনা কর। | ৩ |
খ. “অডিসিয়ুস একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।” উক্তিটি ‘অতিথি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। | ৭ |
ক) উত্তরঃ অডিসিয়ুস রাজপ্রাসাদে ঢুকে সরাসরি রানির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। তিনি রানির হাত ধরে সাহায্য চান, যা ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। অতিথি সাধারণত রাজা বা সভার অনুমতি নিয়ে কথা বলে, কিন্তু অডিসিয়ুস কাউকে কিছু না বলেই সোজা রানির সামনে গিয়ে নিজের কষ্টের কথা বলতে শুরু করেন। এই আচরণে রাজসভায় উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন সাহসী ও সরাসরি আচরণে কেউই কোনো কথা বলতে পারছিল না। তাই কারো মুখে কথা ওঠে না, কেউ কিছু বোঝার আগেই অডিসিয়ুস নিজের বক্তব্য শেষ করে মেঝেতে বসে পড়েন। এই অপ্রত্যাশিত সাহসিকতাই রাজা, রানি এবং সভাসদদের থ-মেরে যেতে বাধ্য করে।
খ) উত্তরঃ ‘অতিথি’ গল্পে অডিসিয়ুসের আচরণ ও বক্তব্যে তাঁর দেশপ্রেমের পরিচয় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি সমুদ্রযাত্রায় একের পর এক বিপদের সম্মুখীন হয়েও বেঁচে ছিলেন শুধু নিজের মাতৃভূমিতে ফেরার আশায়। দেবী কেলিপসো তাঁকে অমরত্ব ও সুখের প্রলোভন দিলেও তিনি রাজি হননি, কারণ তিনি নিজের দেশ ও আপনজনদের ভুলতে পারেননি। সাত বছর বন্দি থেকেও তাঁর মন পড়ে ছিল নিজের জন্মভূমিতে। তিনি বলেন, “আমার কেবল একটি ইচ্ছাই বেঁচে আছে—দেশের মাটিতে, আপনজনের মাঝখানে যেন আমি মরতে পারি।” এটি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকেরই কথা। তিনি জানতেন না দেশে ফিরতে পারবেন কিনা, তবুও সেই উদ্দেশ্যে যাত্রা বন্ধ করেননি। তিনি বিপদের ভয় করেননি, বরং আশায় বুক বেঁধে পথ চলেছেন। তাই বলা যায়, অডিসিয়ুস কেবল একজন বীরই নন, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকও।
প্রশ্ন ৩। ক. অডিসিয়ুসের বুক আশায় ভরে ওঠে কেন? | ৩ |
খ. রাজা আলসিনৌসের মহানুভবতার দিকগুলো তুলে ধর। | ৭ |
ক) উত্তরঃ রাজা আলসিনৌস অডিসিয়ুসকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তিনি চাইলে পরদিনই তাঁকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। রাজা প্রতিশ্রুতি দেন, দক্ষ নাবিকেরা তাঁকে জাহাজে করে নিরাপদে পৌঁছে দেবে তাঁর নিজ দেশে। এমনকি তাঁর দেশ যত দূরেই হোক না কেন, তাঁরা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। এতদিন ধরে অডিসিয়ুস শুধু দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখে এসেছেন। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। রাজা ও রানি খুব আন্তরিকভাবে তাঁর দুঃখ বুঝেছেন এবং তাঁকে সাহায্য করতে চাচ্ছেন। রাজপ্রাসাদে অতিথির মতো সম্মান, ভালো খাবার, আরামদায়ক ঘুমের ব্যবস্থা সবই তাঁকে আশা ও আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
খ) উত্তরঃ রাজা আলসিনৌস একজন খুব দয়ালু ও মহানুভব শাসক ছিলেন। তিনি অডিসিয়ুসকে অতিথি হিসেবে সম্মান জানাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। প্রথমেই তিনি তাকে মেঝেতে বসতে না দিয়ে সোনার আসনে বসতে দেন, যা ছিল অত্যন্ত মর্যাদার। তাঁর হাত দিয়ে অতিথিকে উঠিয়ে বসানো ছিল বিনয়ের পরিচয়। তিনি অডিসিয়ুসের জন্য খাবার ও আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করান। রাজা এবং রানি তার সব সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দেন। রাজা স্পষ্ট বলেন, যতই দূরে তাঁর দেশ হোক না কেন, তিনি নিরাপদে অডিসিয়ুসকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজা তার দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা দেখান। তিনি অতিথির প্রতি সম্মান ও করুণা প্রদর্শন করেন এবং তাকে রাজ্যের একজন গর্বিত অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেন। এই সব গুণগুলোই রাজা আলসিনৌসকে একজন মহান এবং সদয় শাসক হিসেবে তুলে ধরে।
Related Posts
- কোষ পরিভ্রমণ সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বই সমাধান ৩য় অধ্যায়
- ফাগুন মাস কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর (MCQ)
- ৭ম শ্রেণির গণিত ২য় অধ্যায় সমাধান (অজানা রাশির সূচক, গুণ ও তাদের প্রয়োগ)
- NCTB Class 6 Book 2024-ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২০২৪ (মাধ্যমিক ও দাখিল)
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৮ম শ্রেণির ১ম অধ্যায় (সবগুলো ছকের সমাধান)