কামিনী রায়ের “সুখ” কবিতাটি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক এবং জীবনবোধের গভীরতা প্রকাশ করে। কবিতাটিতে কবি মানবজীবনের লক্ষ্য, সুখের সন্ধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। কবির মতে, পরার্থপরতা এবং অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই প্রকৃত সুখের পথ। এই পোস্টে সুখ কবিতার প্রশ্ন উত্তর (অনুধাবন) লিখে দিলাম।
সুখ কবিতার প্রশ্ন উত্তর
১। কবি কেন মনে করেন, জীবন শুধুই দুঃখময় নয়?
কবি মনে করেন না যে জীবন শুধুই দুঃখময় কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবনের লক্ষ্য শুধু কাঁদা নয়। তিনি বলেছেন, মানুষের জন্য উচ্চ লক্ষ্য এবং সুখের সম্ভাবনা আছে। কবির মতে, সংগ্রাম এবং ত্যাগের মাধ্যমেই সুখ অর্জিত হয়। জীবন শুধু দুঃখ নিয়ে নয়, বরং সংগ্রাম এবং সাফল্যের মাধ্যমেই সুখ পাওয়া যায়।
২। কবি সংসারকে কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
কবি সংসারকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সংসার হলো একটি সমর-অঙ্গন, যেখানে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়। এই সংগ্রামে জয়ী হলে সুখ অর্জন করা যায়। কবির মতে, সংসারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই মানুষ প্রকৃত সুখ পেতে পারে।
৩। কবি সুখ অর্জনের জন্য কী করতে বলেছেন?
কবি সুখ অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, সংসার একটি যুদ্ধক্ষেত্র, এবং এই যুদ্ধে জয়ী হলে সুখ অর্জন করা যায়। কবির মতে, বীরের মতো সংগ্রাম করে সুখ জয় করা সম্ভব। তিনি মানুষকে সাহসী হয়ে সংগ্রাম করতে উৎসাহিত করেছেন।
৪। ‘নাই কিরে সুখ?’ বাক্যটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘নাই কিরে সুখ?’ এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি জীবনের সেই মুহূর্তগুলোকে চিহ্নিত করছেন যখন মানুষ মনে করে জীবনে সুখের অস্তিত্ব নেই। এখানে কবি মানুষের অসন্তুষ্টি, দুঃখ এবং কষ্টের অনুভূতিকে তুলে ধরেছেন। যেখানে কবি জীবনের গভীরতা ও সুখের অজানা দিককে সন্ধান করতে চেয়েছেন।
৫। কবি সুখের প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর: কবি বলেছেন, সুখ শুধু সুখের পেছনে ছোটা নয়, বরং এটি জীবনের একটি অন্তর্নিহিত লক্ষ্য। সুখ অর্জন করতে হলে জীবনের যাতনা, সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মধ্যে দিয়েই তা আসবে। সুখ কোনো বাহ্যিক বস্তু নয়, এটি একটি অন্তর্নিহিত অনুভূতি যা জীবনসংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
৬। ‘বল ছিন্ন বীণে, বল উচ্চৈঃস্বরে’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই পঙক্তি দিয়ে কবি জীবনের সংগ্রামের এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির কথা বলেছেন। ‘বল ছিন্ন বীণে’ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের জীবনে কখনো কখনো সব কিছু ভেঙে যায়, কিন্তু তবুও ‘বল উচ্চৈঃস্বরে’—এখানে উল্লিখিত উচ্চস্বরে আওয়াজের মাধ্যমে কবি আশা এবং শক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি জীবনের অন্ধকারে আলো দেখানোর চেষ্টা।
৭। সুখের সত্যিকারের রূপ কেমন?
উত্তর: কবি বলেছেন, সুখ কোনও বাহ্যিক বিষয় নয়, এটি অন্তর্নিহিত একটি অনুভূতি যা সমাজের কল্যাণে নিজের অবদান রাখার মাধ্যমে পাওয়া যায়। কবি মনে করেন, সুখ অর্জন করতে হলে অন্যের জন্য ত্যাগ এবং সহানুভূতির মনোভাব থাকতে হবে। এটি সমাজের সাথে একাত্ম হয়ে, তাদের ভালো থাকার জন্য কাজ করার মধ্যেই সঠিকভাবে পাওয়া যায়।
৮। ‘যে জিনিবে সুখ লভিবে সে-ই’—এটি কী বোঝায়?
উত্তর: এই চরণে কবি বলেছেন যে, শুধুমাত্র সেই মানুষই সুখ লাভ করতে পারে, যে ব্যক্তি জীবনের সংগ্রামে অংশ নেয় এবং প্রতিটি কাজ করে সঠিকভাবে। সুখ অর্জন করতে হলে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, সেই মানুষই সফল এবং সুখী যিনি নিজের কর্তব্য পালন করে জীবনের লক্ষ্য সাধন করেন।
৯। ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই পঙক্তিতে কবি বলেছেন, যখন একজন মানুষ অন্যের স্বার্থে নিজের সব কিছু দিয়ে দেয়, তখন তাকে জীবনের প্রকৃত সুখের অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি মানুষের ত্যাগ এবং দানের মাধ্যমে অর্জিত সুখের কথা বলে, যা অন্যের জন্য কাজ করার মধ্যেই নিহিত।
১০। কবি সুখের জন্য কাকে দায়ী করেছেন?
উত্তর: কবি সুখের জন্য মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিকে দায়ী করেছেন। সুখ কোনো একক বিষয় নয়, এটি সমষ্টিগত এবং মানুষের মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সুখ অর্জন করতে হলে সমাজের সকলের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
১১। ‘পরের কারণে মরণেও সুখ’—এর অর্থ কী?
উত্তর: কবি এখানে বলছেন যে, মানুষের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা, এমনকি মৃত্যুর পরেও সুখের অনুভূতি লাভ করা সম্ভব। যখন মানুষ অন্যের কল্যাণে জীবন দান করে, তখন সে প্রকৃত সুখের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এর মাধ্যমে কবি আত্মত্যাগের মহত্বকে তুলে ধরেছেন।
১২। ‘যতই কাঁদিবে, যতই ভাবিবে ততই বাড়িবে হৃদয় ভার’—কেন?
উত্তর: এই পঙক্তি দিয়ে কবি বলছেন যে, যখন মানুষ কেবল নিজের কষ্টের কথা ভাববে, তখন তার মন ভারাক্রান্ত হবে এবং সুখের অনুভূতি দুর্বল হয়ে যাবে। সুখ পেতে হলে, মানুষকে নিজের চিন্তা ও দুঃখের বাইরে গিয়ে অন্যদের সুখের কথা ভাবতে হবে।
১৩। কবি সুখকে কীভাবে দেখিয়েছেন?
উত্তর: কবি সুখকে একটি সামাজিক এবং মানবিক বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সুখ কোনও একক অনুভূতি নয়, বরং এটি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। সুখকে প্রকৃত অর্থে পেতে হলে, জীবনের সংগ্রাম ও পরিশ্রমের মধ্যে থাকতে হয়।
১৪। ‘সকলের তরে সকলে আমরা’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি এই চরণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এটি সমাজে মিলেমিশে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানায়, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যের কল্যাণের জন্য কাজ করবে এবং সমষ্টিগতভাবে সুখ অর্জন করবে।
১৫। ‘মানুষ সামাজিক জীব’—কেন?
উত্তর: এই পঙক্তি দিয়ে কবি বলেছেন যে, মানুষের স্বাভাবিক অবস্থান হল সমাজে বসবাস করা। মানুষ একা থাকতে পারে না, তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সমাজের মধ্যে একে অপরের সাহায্য ছাড়া সুখ অর্জন অসম্ভব। তাই একে অপরের সুখের জন্য কাজ করাই প্রকৃত সুখের পথ।
১৬। ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই চরণে কবি বলেছেন, কেউই পৃথিবীতে একা থাকতে পারে না, অন্যদের সাহায্য ছাড়া কেউ জীবনে এগিয়ে যেতে পারে না। পৃথিবীতে সবাই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং মানুষের প্রকৃত সুখ অন্যের কল্যাণে কাজ করাতেই নিহিত।
১৭। কবি সুখের জন্য কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
উত্তর: কবি মনে করেন, সুখ অর্জন করতে হলে, মানুষকে সর্বপ্রথম নিজের কর্তব্য এবং দায়িত্ব অনুভব করতে হবে। পাশাপাশি, অন্যদের সুখের জন্য কাজ করার মধ্যে প্রকৃত সুখ নিহিত। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সহানুভূতির মাধ্যমেই সুখ পাওয়া সম্ভব।
১৮। ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই বাক্যটি মানুষকে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এটি আত্মত্যাগ এবং পরস্পরের সাহায্যের মাধ্যমে সুখ অর্জন করার দর্শন প্রকাশ করে।
Related Posts
- জন্মভূমি কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর (MCQ)
- ডিজিটাল প্রযুক্তি ৭ম শ্রেণি সেশন ৩ (সবগুলো ছকের সমাধান)
- কোকিল গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (MCQ) – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- যোগাযোগে নিয়ম মানি প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- নোলক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – ৭ম শ্রেণি