সুকুমার রায়ের “শ্রাবণে” কবিতাটিতে শ্রাবণ মাসের অবিরাম বৃষ্টির ধারা এবং প্রকৃতির পরিবর্তনকে চিত্রিত করা হয়েছে। বৃষ্টির ধারা সারাদিন সারারাত ধরে অবিরাম পড়ছে, যা যেন অফুরান নামতা বা গুণ করার ধারাবাহিক তালিকার মতো। এই পোস্টে শ্রাবণে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
শ্রাবণে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির ধারা কেমন?
উত্তর: বৃষ্টির ধারা সারাদিন সারারাত ধরে অবিরাম পড়ছে। এটি যেন কোনো শেষ নেই এমন একটি ধারা, যা প্রকৃতিকে সজীব করে তুলেছে। বৃষ্টির এই ধারা কবিতায় “অফুরান নামতা” ও “ধারাপাত” এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
২। বৃষ্টির ধারাকে কবি কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
উত্তর: বৃষ্টির ধারাকে কবি “অফুরান নামতা” ও “ধারাপাত” এর সাথে তুলনা করা করেছেন। নামতা হলো গুণ করার ধারাবাহিক তালিকা, আর ধারাপাত হলো অঙ্ক শেখার প্রাথমিক বই। বৃষ্টির ধারার অবিরাম পতন যেন শিশুদের নামতা পড়ার শব্দের মতো।
৩। শ্রাবণ মাসে আকাশের অবস্থা কেমন থাকে?
উত্তর: আকাশ মেঘে ঢাকা এবং চারিদিকে ধোঁয়ামাখা আবহাওয়া। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির একটি সাধারণ চিত্র। আকাশের এই অবস্থা বৃষ্টির ধারাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। কবিতায় আকাশের এই মেঘাচ্ছন্ন দৃশ্য খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪। শ্রাবণে গাছপালার অবস্থা কেমন?
উত্তর: গাছপালা বৃষ্টির মধ্যে স্নান করছে এবং তাতে তাদের নতুন জীবন আসছে। বৃষ্টির পানি গাছপালার শরীরে প্রবাহিত হয়ে তাদের তাজা ও প্রাণবন্ত করে তোলে। এটি গাছপালার জন্য একটি জীবনদায়ী সময়। বৃষ্টির ফলে গাছপালাগুলি সবুজ এবং জীবন্ত হয়ে ওঠে।
৫। শ্রাবণে নদীনালার অবস্থা কেমন?
উত্তর: বৃষ্টির কারণে নদী ও নালা পূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা ভরে গিয়ে শক্তি এবং প্রাণ ফিরে পায়। জলাশয়ের মধ্যে পানি বেড়ে যায় এবং নদীজল প্রবাহিত হতে থাকে। এই সময়ে প্রকৃতি তার পূর্ণতা লাভ করে।
৬। শ্রাবণ মাসকে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: শ্রাবণ মাসকে “উন্মাদ শ্রাবণ” বলা হয়েছে। শ্রাবণ মাসে অবিরাম বৃষ্টি হয়, যা যেন উন্মত্ত বা পাগলাটে। এই বৃষ্টির ধারা প্রকৃতিকে সজীব করে তুলেছে। কবিতায় শ্রাবণ মাসের এই উন্মত্ত বৃষ্টির ধারা খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৭। শ্রাবণ মাসে দশদিকের অবস্থা কেমন?
উত্তর: দশদিক জলময় এবং টলমল করছে। বৃষ্টির জলে সবকিছু ভরে গেছে এবং প্রকৃতি যেন নতুন জীবন পেয়েছে। এই দৃশ্য কবিতায় খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দশদিকের এই জলময় অবস্থা শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৮। প্রকৃতি কিভাবে গান গাইছে?
উত্তর: প্রকৃতি অবিরাম একই গান গাইছে: “ঢালো জল, ঢালো জল”। এই গান শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির ধারাকে বোঝায়, যা যেন প্রকৃতির একটি সঙ্গীত। কবিতায় প্রকৃতির এই গান খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৯। শ্রাবণে গ্রীষ্মের তাপ কী হয়েছে?
উত্তর: গ্রীষ্মের তাপ ধুয়ে গেছে। বৃষ্টির জলে গ্রীষ্মের তাপ ও কষ্ট ধুয়ে গেছে এবং প্রকৃতি যেন নতুন জীবন পেয়েছে। এই দৃশ্য কবিতায় খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গ্রীষ্মের তাপের এই অবসান শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির বর্ণনা করে।
১০। “জর্জর গ্রীষ্মের” বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: “জর্জর গ্রীষ্মের” বলতে গ্রীষ্মের তাপ ও কষ্ট বোঝায়। বৃষ্টির জলে গ্রীষ্মের তাপ ধুয়ে গেছে এবং প্রকৃতি যেন নতুন জীবন পেয়েছে। গ্রীষ্মের তাপের এই অবসান শ্রাবণে কবিতায় জর্জর গ্রীষ্ম শব্দ দিয়ে কবি বুঝিয়েছেন।
১১। কবিতায় পৃথিবীর আশা, ভয়, সুখ ও দুঃখ কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: পৃথিবীর আশা, ভয়, সুখ ও দুঃখ নিঃঝুম ধুকধুক শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এই শব্দ কবিতায় খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা যেন প্রকৃতির একটি গভীর আবেগ। এই শব্দ শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে।
১২। “নামতায় বাদলের ধারাপাত” বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: এখানে “নামতা” শব্দটি গুণ করার তালিকা বোঝায় এবং “ধারাপাত” হলো বৃষ্টির অবিরাম প্রবাহ। কবি বৃষ্টির ধারাকে শিশুদের নামতা পড়ার মতো একটানা এবং অবিরাম দেখেছেন। বৃষ্টি যেমন একটানা ঝরে চলে, তেমনি নামতার মতো বৃষ্টির পতনও কখনো থামে না।
১৩। বৃষ্টির কারনে প্রকৃতিতে কেমন হয়ে ওঠে?
উত্তর: বৃষ্টির কারণে প্রকৃতি নতুন জীবন পায়। গাছপালা স্নান করে এবং নদী ভর্তি হয়ে ওঠে। বৃষ্টি সমস্ত কষ্ট ধুয়ে ফেলে এবং প্রকৃতিকে শান্ত ও সজীব করে তোলে। প্রকৃতির অবস্থা পাল্টে যায়, এটি এক ধরনের পুনর্জীবন দেয়।
১৪। “ধোঁয়ামাখা চারিধার” কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: বৃষ্টির কারণে আকাশ এবং চারপাশ মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। মেঘের কারণে চারপাশে কিছুটা ধোঁয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়ামাখা পরিবেশ বৃষ্টির আগমনের চিহ্ন হিসেবে বলা হয়েছে। এটি প্রকৃতির অদ্ভুত চিত্র তৈরি করে।
১৫। “পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম্ বারিধার” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “পৃথিবীর ছাত” বলতে পৃথিবীকে একটি বিশাল ছাতার মতো মনে করা হয়েছে। বৃষ্টি যখন পড়তে থাকে, তখন পৃথিবী একটি ছাতার মতো হয়ে যায় এবং বৃষ্টির ধারা পৃথিবীকে ভিজিয়ে দেয়। “ঝমাঝম্” শব্দটি বৃষ্টির ভারী শব্দ বোঝায়, যা পৃথিবীতে পড়ছে।
১৬। “উৎসব ঘনঘোর উন্মাদ শ্রাবণ”- বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি উৎসবের মতো আনন্দময় এবং উন্মাদ হয়ে ওঠে। কবি বৃষ্টির সময়টিকে উৎসবের মতো রোমাঞ্চকর ও উদ্দীপ্ত দেখেছেন। এটি প্রকৃতির মাঝে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই সময় প্রকৃতি যেন এক নতুন উৎসবে মেতে ওঠে।