বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ গল্পটি এক দরিদ্র কিশোরীর সংগ্রামী জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে, যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মাঝে মানবিকতা ও উদারতার এক অনন্য উদাহরণ দেখা যায়। এই পোস্টে রাধারানী গল্পের বিষয়বস্তু ও প্রশ্ন উত্তর -৯ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
রাধারানী গল্পের বিষয়বস্তু
‘রাধারাণী’ গল্পে এক দরিদ্র কিশোরী রাধারাণীর জীবনসংগ্রামের মর্মস্পর্শী কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। এক সময় তার পরিবার ধনী ছিল, কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর জমিজমা ও সম্পত্তি মামলায় হেরে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। রাধারাণীর মা জীবিকা নির্বাহের জন্য শারীরিক পরিশ্রম শুরু করলেও রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এতদিনে পরিবারের অবস্থা এতটাই করুণ হয়ে পড়ে যে, রাধারাণী মায়ের পথ্যের জন্য বনফুল গাঁথা মালা বিক্রি করতে মাহেশের রথযাত্রায় যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বৃষ্টি হওয়ায় মালা বিক্রি হয় না। অন্ধকারে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরার সময়, এক দয়ালু ব্যক্তি রাধারাণীকে সহায়তা করে এবং মালার দাম দিয়ে যায়। সেই ব্যক্তি তাকে নতুন কাপড় কিনে পাঠান এবং পরে দেখা যায়, তিনি কিছু টাকা এবং একটি নোট রেখে গেছেন। নোটে তার নাম লেখা—রুক্মিণীকুমার রায়। রাধারাণী এবং তার মা অনেক খোঁজ করেও রুক্মিণীকুমার রায়ের সন্ধান পান না। তবে তার সাহায্যে রাধারাণী ও তার মায়ের জীবন কিছুটা সুরাহা পায়। গল্পে সেই অজ্ঞাতপরিচয় সহৃদয় ব্যক্তির উদারতা ও দয়ালু স্বভাব রাধারাণীর জীবনে আশার আলো হয়ে দেখা দেয়।
রাধারানী গল্পের প্রশ্ন উত্তর (কমবেশি ১৫টি শব্দে)
১। ‘রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল’ – রাধারাণী কাঁদতে কাঁদতে কোথায় ফিরছিল?
রাধারাণী বাড়ি ফিরছিল, কারণ রথের মেলা ভেসে গিয়েছিল এবং সে হতাশ হয়ে পড়েছিল।
২। ‘অন্ধকার – পথ কর্দমময়, পিচ্ছিল’ – অন্ধকারে পথ কেন বিপদজনক ছিল?
অন্ধকারে পথ কর্দমময় এবং পিচ্ছিল ছিল, যার কারণে চলাফেরা কঠিন ও বিপদজনক হয়ে পড়েছিল।
৩। ‘কিছুই দেখা যায় না’ – কী কারণে কিছু দেখা যাচ্ছিল না?
অন্ধকার এবং বৃষ্টির কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
৪। ‘রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে আছাড় খাইতেছিল’ – রাধারাণী কেন বারবার আছাড় খাচ্ছিল?
রাধারাণী অবহেলিত এবং দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তার কাদা মাটি থেকে আছাড় খাচ্ছিল।
৫। ‘অকস্মাৎ কে আসিয়া রাধারাণীর ঘাড়ের উপর পড়িল’ – কে রাধারাণীর ঘাড়ে পড়েছিল?
এটি রাধারাণীর শত্রু বা কোনো অচেনা ব্যক্তি ছিল, যে তার ঘাড়ে পড়েছিল।
৬। ‘যে ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছিল’ – রাধারাণী এই ব্যক্তিকে কীভাবে চিনেছিল?
রাধারাণী ওই ব্যক্তিকে চিনেছিল কারণ সে তার পরিচিত ছিল অথবা তার আগে ওই ব্যক্তির আচরণ সে দেখেছিল।
৭। ‘রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে বনফুল তুলিয়া মালা গাঁথিল’ – রাধারাণী কেন বনফুলের মালা গাঁথছিল?
রাধারাণী বনফুলের মালা গাঁথছিল কারণ সে গরিব ছিল এবং তার মনের অবস্থা খুবই দুঃখজনক। মালা গাঁথা তার একমাত্র উপার্জনের উপায় ছিল।
৮। ‘মনে করিল যে, এই মালা রথের হাটে বিক্রয় করিয়া দুই-একটি পয়সা পাইব’ – রাধারাণী মালা বিক্রির মাধ্যমে কী অর্জন করতে চেয়েছিল?
রাধারাণী মালা বিক্রির মাধ্যমে দু’একটি পয়সা উপার্জন করতে চেয়েছিল, যাতে তার দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।
৯। ‘বৃষ্টি দেখিয়া লোকসকল ভাঙিয়া গেল’ – বৃষ্টির কারণে কী ঘটেছিল?
বৃষ্টির কারণে রথের যাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ফলে লোকেরা ভেঙে পড়ে চলে গিয়েছিল।
১০। ‘রথের টান অর্ধেক হইতে না হইতেই বড়ো বৃষ্টি আরম্ভ হইল’ – বৃষ্টি কেন রথের টান বন্ধ করে দিল?
বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে রথের চলাচল ব্যাহত হয়েছিল এবং লোকেরা শীতে ভিজে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
১১। ‘রাধারাণী ক্ষুদ্র বুদ্ধিটুকুতে ইহা বুঝিতে পারিল’ – রাধারাণী কী বুঝতে পেরেছিল?
রাধারাণী বুঝতে পেরেছিল যে তার জীবন ও পরবর্তী পথ খুবই কঠিন, এবং তার ছোট বুদ্ধিতে সে ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিল।
১২। ‘তুমি কোথা গিয়াছিলে?’ – রাধারাণী কোথায় গিয়েছিল?
রাধারাণী রথের মেলায় গিয়েছিল, যেখানে সে মালা গাঁথছিল এবং বিক্রি করতে চেষ্টা করছিল।
১৩। ‘রাধারাণী বলিল, আমি রথ দেখিতে গিয়াছিলাম’ – রাধারাণী কেন রথ দেখিতে গিয়েছিল?
রাধারাণী রথ দেখেতে গিয়েছিল কারণ সে মেলা দেখতে এবং মালা বিক্রি করতে চেয়েছিল।
১৪। ‘বালিকা এই মালা গাঁথিয়া রথহাটে বেচিতে গিয়াছিল’ – রাধারাণী কীভাবে মালা বিক্রি করতে গিয়েছিল?
রাধারাণী মালা গাঁথা শেষে রথহাটে বিক্রি করতে গিয়েছিল, যেখানে অনেক লোক আসত।
১৫। ‘তুমি মালা বেচো তো আমি কিনি’ – পুরুষ কেন রাধারাণীর মালা কিনতে চেয়েছিল?
পুরুষ রাধারাণীর মালা কিনতে চেয়েছিল কারণ তার কাছে মালাটি সুন্দর লাগছিল এবং সে তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল।
১৬। ‘রাধারাণী আনন্দ হইল’ – রাধারাণী আনন্দিত কেন হয়েছিল?
রাধারাণী আনন্দিত হয়েছিল কারণ সে তার মালা বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে এবং কিছু টাকা পেয়েছে।
১৭। ‘তবে তিনি ফেলিয়া গিয়াছেন’ – কে ফেলিয়া গিয়েছিল?
এটি রাধারাণীর জীবনের অসাধারণ একটি মুহূর্ত ছিল, যেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ অথবা পরিস্থিতি তাকে ফেলিয়ে গিয়েছিল।
১৮। ‘তার নাম রুক্মিণীকুমার রায়’ – রুক্মিণীকুমার রায় কে ছিলেন?
রুক্মিণীকুমার রায় একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি রাধারাণীকে সাহায্য করেছিলেন এবং তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯। ‘রাধারাণী পেয়েছিল নতুন কাপড়’ – নতুন কাপড় কীভাবে রাধারাণীর কাছে পৌঁছেছিল?
নতুন কাপড় রাধারাণীর কাছে তার পরিবারের সদস্য অথবা রুক্মিণীকুমার রায়ের মাধ্যমে পৌঁছেছিল, যারা তাকে সহায়তা করেছিল।
২০। ‘পদ্মলোচন কাপড় হাতে আনিয়াছিল’ – পদ্মলোচন কী উদ্দেশ্যে কাপড় নিয়ে এসেছিল?
পদ্মলোচন কাপড় নিয়ে এসেছিল রাধারাণীকে সাহায্য করতে এবং তার জীবনকে কিছুটা সহজ করতে।
২১। ‘রাধারাণী বলিল, “ওমা! আমার কীসের কাপড়!”’ – রাধারাণী কাপড় পেয়ে কেন অবাক হয়েছিল?
রাধারাণী অবাক হয়েছিল কারণ কাপড়টি তাকে অচেনা ব্যক্তি পাঠিয়েছিল, যিনি তার দুঃখ দেখে তাকে সাহায্য করেছিলেন, আর সে এতটা সাহায্য আশা করেনি।
২২। ‘তাহার নামও নোটে লেখা আছে’ – রুক্মিণীকুমার রায়ের নাম কেন নোটে লেখা ছিল?
রুক্মিণীকুমার রায়ের নাম নোটে লেখা ছিল যাতে তার দান সম্পর্কিত কোনো সন্দেহ না হয়, এবং তিনি জানাতে চেয়েছিলেন, এটি একটি চিন্তাশীল সহায়তা।
২৩। ‘রাধারাণী ওই লোকের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল’ – রাধারাণী ওই লোকের প্রতি কৃতজ্ঞ কেন ছিল?
রাধারাণী ওই লোকের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল কারণ তিনি তাকে অন্ধকারে, বৃষ্টিতে সাহায্য করেছিলেন, নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে এবং তার মায়ের জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন।
২৪। ‘রাধারাণী মালা সমভিব্যাহারীকে দিল’ – রাধারাণী মালা কেন সেই ব্যক্তিকে দিয়েছিল?
রাধারাণী মালা দিয়েছিল কারণ সে লজ্জিত ছিল টাকা নেওয়ার ব্যাপারে, এবং লোকটির সহানুভূতি ও সাহায্যের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাইছিল।
২৫। ‘রাধারাণী বাজারে গিয়ে, তৈল আনিয়া প্রদীপ জ্বালিল’ – রাধারাণী বাজারে কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিল?
রাধারাণী বাজারে গিয়েছিল মায়ের জন্য তৈল, খাবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে, যাতে তার মা চিকিৎসা পায় এবং কিছু খেতে পারেন।
২৬। ‘সঙ্গে মালা বেচে পয়সা পেয়েছিল’ – রাধারাণী কেন মালা বেচে পয়সা পেয়েছিল?
রাধারাণী মালা বেচে পয়সা পেয়েছিল কারণ তার মায়ের চিকিৎসা এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য কিছু টাকা প্রয়োজন ছিল।
২৭। ‘বিক্রয় হয়নি, কিন্তু টাকা পেয়েছিল’ – কেন রাধারাণী মালা বিক্রি না করেও টাকা পেয়েছিল?
রাধারাণী মালা বিক্রি না করেও টাকা পেয়েছিল, কারণ একটি দানশীল ব্যক্তি তার দুঃখ শুনে তাকে সাহায্য করেছিল, টাকা দিয়েছিল।
২৮। ‘পদ্মলোচন কাপড় দিল, কিন্তু মূল্য চায়নি’ – পদ্মলোচন কেন কাপড়ের মূল্য চায়নি?
পদ্মলোচন কাপড়ের মূল্য চায়নি কারণ তিনি জানতেন রাধারাণীর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, এবং সহানুভূতির মাধ্যমে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
Related Posts
- আলোবাবু গল্পের প্রশ্ন উত্তর, বিষয়বস্তু ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- প্রভাবতী সম্ভাষণ বিষয়বস্তু, প্রশ্ন উত্তর ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু ও প্রশ্ন উত্তর -৯ম শ্রেণি
- বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর, বিষয়বস্তু ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- ভারতবাসীর আহার প্রশ্ন উত্তর, সারাংশ ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন