মিনু গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

বনফুলের “মিনু” গল্পে অনাথ, বোবা, এবং কিছুটা বধির মিনুর কল্পনার দুনিয়া, তার একাকীত্ব, এবং স্বপ্নময় দৃষ্টিভঙ্গি গল্পটিকে অসাধারণভাবে জীবন্ত করে তুলেছে। শিশুসুলভ সরলতায় সে কিভাবে দৈনন্দিন কাজকেও এক নতুন রঙে রাঙিয়ে নেয়, তার প্রতিটি অনুভূতিই যেন চিত্রের মতো ফুটে উঠেছে। এই পোস্টে মিনু গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

মিনু গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন

১। মিনু কীভাবে অন্যদের কথা বুঝত?
উত্তরঃ মিনু ঠোঁটনড়া ও মুখের ভাব দেখে মানুষের কথা বুঝতে পারত। এছাড়া তার কল্পনাশক্তি খুব শক্তিশালী ছিল, যা দিয়ে সে নিজের এক নতুন রঙিন জগৎ বানিয়ে নিয়েছিল।


২। মিনু শুকতারাকে কী মনে করত?
উত্তরঃ মিনু শুকতারাকে তার সই বা বন্ধুর মতো মনে করত। সে ভাবত, শুকতারা তার মতোই সকালে উঠে কাজ শুরু করছে, হয়তো তার কোনো পিসেমশাইয়ের বাড়িতে উনুন ধরানোর জন্য।


৩। মিনু কেন কয়লাকে শত্রু ভাবত?
উত্তরঃ মিনুকে প্রতিদিন কয়লা ভাঙতে হতো, যা ছিল খুব কষ্টকর কাজ। তাই সে কয়লাকে শত্রু ভাবত। কয়লা ভাঙার সময় তার হাতুড়িকে সে ‘গদাই’ আর পাথরটাকে ‘শানু’ বলে ডাকত।


৪। মিনু রান্নাঘরের জিনিসগুলোর সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করত কেন?
উত্তরঃ কারণ তার বাস্তব জীবনে কোনো বন্ধু ছিল না, তাই বাসনপত্রগুলোকেই সে বন্ধু মনে করত। যেমন, ঘটির নাম দিয়েছিল ‘পুটি’, চারটি গেলাসের নাম রেখেছিল ‘হারু, বারু, তারু, কারু’। কিন্তু মিটসেফকে সে শত্রু ভাবত, কারণ এটা খাবার গপগপ করে খেয়ে ফেলত।


৫। কাঁঠাল গাছের শুকনো ডালটা মিনুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন?
উত্তরঃ ছোটবেলায় তার মাসিমা বলেছিল, তার বাবা বিদেশে গেছে এবং বড় হলে সে ফিরে আসবে। একদিন সে দেখেছিল, পাশের বাড়ির টুনুর বাবা বিদেশ থেকে ফিরে এল, আর ঠিক তখনই ওই শুকনো ডালে একটা হলুদ পাখি বসে ছিল। তখন থেকেই তার বিশ্বাস জন্মায়, ওই ডালে যখন আবার হলুদ পাখি বসবে, তখন তার বাবাও ফিরে আসবে।


৬। জ্বর আসার পরও মিনু কী করল?
উত্তরঃ সে কাউকে কিছু জানায়নি এবং প্রতিদিনের মতো কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু শরীর খারাপ লাগায় সে শুয়ে পড়ে। জ্বরের ঘোরেই সে মনে করে, তার একটা দরকারি কাজ করা হয়নি—কাঁঠাল গাছের শুকনো ডালটায় হলুদ পাখি এসেছে কি না, সেটা দেখা।


৭। ‘মিনু’ গল্পটি আমাদের কী শেখায়?
উত্তরঃ গল্পটি আমাদের শেখায়, শিশুরা কল্পনার জগতে বাঁচতে ভালোবাসে, বিশেষ করে যখন বাস্তব জীবন তাদের প্রতি নিষ্ঠুর হয়। মিনুর মতো অনাথ শিশুরা অনেক কষ্ট করে বেঁচে থাকে, কিন্তু তাদের মনে আশার আলো থাকে, যা তাদের কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও টিকে থাকতে সাহায্য করে।


৮। মিনু কীভাবে কাজ শিখেছিল?
উত্তরঃ ছোট থেকেই মিনুকে অনেক কাজ করতে হতো, তাই ধীরে ধীরে সবকিছু শিখে গিয়েছিল। রান্নাঘরের কাজ থেকে শুরু করে কয়লা ভাঙা, বাসন মাজা—সবই সে পারত। কেউ তাকে ভালোভাবে শেখায়নি, কিন্তু সে নিজেই দেখে দেখে শিখে নিয়েছিল।


৯। মিনুর চোখের জগৎ কেন আলাদা ছিল?
উত্তরঃ মিনু পুরোপুরি শুনতে পেত না এবং কথা বলতে পারত না, তাই সে দৃষ্টির মাধ্যমে সবকিছু বুঝত। সে কল্পনার জগতে বসবাস করত, যেখানে শুকতারা ছিল তার সই, কয়লা ছিল তার শত্রু, আর রান্নাঘরের জিনিসগুলো ছিল তার বন্ধু। তার এই বিশেষ অনুভূতিই তার জগৎকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছিল।


১০। উনুনের আগুনকে মিনু কী মনে করত?
উত্তরঃ মিনুর চোখে উনুন ছিল এক ভয়ংকর রাক্ষসী, যে কয়লা আর ঘুঁটের তরকারি খায়। আগুন জ্বললে সে ভাবত, রাক্ষসী তার খাবার খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছে। তার কল্পনার জগতে সবকিছুরই একটা জীবন ছিল, যা বাস্তব দুনিয়া থেকে অনেক আলাদা ছিল।


১১। মিটসেফের নাম ‘গপগপা’ কেন রেখেছিল মিনু?
উত্তরঃ মিটসেফ সব খাবার নিজের ভেতরে রেখে দিত, কেউ সহজে খেতে পারত না। তাই মিনু এর নাম দিয়েছিল ‘গপগপা’, কারণ এটা সব খাবার গপগপ করে গিলে ফেলে। সে মাঝে মাঝে তালার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হতো আর মনে মনে বলত, “সব কিছু একাই খেয়ে বসে আছে!”


১২। মিনু কীভাবে জানত তার বাবা ফিরে আসবে?
উত্তরঃ একদিন সে দেখেছিল, পাশের বাড়ির টুনুর বাবা বিদেশ থেকে ফিরল, আর ঠিক সেই সময় কাঁঠাল গাছের শুকনো ডালে একটা হলুদ পাখি বসেছিল। তখন থেকেই তার মনে বিশ্বাস জন্মায়, যেদিন আবার সেই ডালে হলুদ পাখি বসবে, সেদিনই তার বাবা ফিরে আসবে।


১৩। মিনু জ্বর আসার পরও কেন ছাদে উঠল?
উত্তরঃ জ্বরের ঘোরে শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে হলো, সে তো আজ তার ‘দরকারি কাজটা’ করেনি—মানে, হলুদ পাখিটাকে দেখেনি! তাই শরীর খারাপ থাকলেও ধীরে ধীরে উঠে ছাদে গেল, কারণ তার মনে হচ্ছিল, আজ হয়তো তার বাবা আসবে।


১৪। গল্পের শেষে মিনু কী দেখে অবাক হয়?
উত্তরঃ মিনু দেখে, কাঁঠাল গাছের শুকনো ডালে সত্যিই একটা হলুদ পাখি বসে আছে! এতদিন সে শুধু কল্পনা করত, কিন্তু এবার সত্যিই পাখিটাকে দেখে তার বিশ্বাস হয়ে গেল—তার বাবা ফিরে এসেছে! তাই সে আর দেরি না করে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল।


১৫। মিনুর চরিত্র থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
উত্তরঃ মিনু আমাদের শেখায়, জীবন যতই কঠিন হোক, কল্পনা আর বিশ্বাসের জোরে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। দারিদ্র্য আর একাকিত্বের মধ্যেও সে নিজের জন্য এক সুন্দর জগৎ তৈরি করেছিল, যেখানে আশা আর অনুভূতির দাম ছিল বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি।


Related Posts

Leave a Comment