খান মোহাম্মদ ফারাবীর “মামার বিয়ের বরযাত্রী” একটি চমৎকার হাস্যরসাত্মক ছোটগল্প, যা ভুল বোঝাবুঝি ও মজাদার পরিস্থিতির মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক ফুটে ওঠে। এই পোস্টে মামার বিয়ের বরযাত্রী গল্পের মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
মামার বিয়ের বরযাত্রী গল্পের মূলভাব
গল্পের নায়ক (ফোকলা) একজন ছাত্র, যার মেজো মামার বিয়ে ঠিক হয়। সবাই তিন দিন আগেই মামাবাড়ি চলে যাবে, কিন্তু নায়কের পরীক্ষা থাকায় সে যেতে পারে না। ছোটো মামা তাকে চালাকির একটা উপায় বলে—পরীক্ষা শেষে সরাসরি কনের বাড়ি চলে যেতে, যা ঢাকা থেকে ১২টি স্টেশন দূরে। পরীক্ষার দিন সে তাড়াহুড়ো করে ভুল করে ময়মনসিংহ লাইনের ট্রেনে উঠে পড়ে। গুনে গুনে ১২তম স্টেশনে নেমে একজন ভদ্রলোকের সাহায্যে ‘চৌধুরী বাড়ি’ নামে এক জায়গায় যায়। সেখানে সবাই তাকে জামাইয়ের আত্মীয় ভেবে আপ্যায়ন করে। তাকে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়, শিকারে নিয়ে যাওয়া হয়, এমনকি সে গাড়ির চাকা ফুটো করে ফেলে আর বন্দুক চালিয়ে বিপত্তিও ঘটায়। সে ভাবতেই থাকে, এটাই তার মামার শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু বিয়ের দিন আসল বর এসে তাকে চিনতে পারে না। তখনই সে বুঝতে পারে যে সে ভুল জায়গায় চলে এসেছে। আসল চৌধুরী বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম লাইনে, আর সে গিয়েছিল ময়মনসিংহ লাইনে। শেষে ছোটো মামা এসে তাকে উদ্ধার করে। সবাই তখন মজা পায় এই ভুলে ভরা ঘটনায়। গল্পটি মজার এবং হাস্যকর হলেও আমাদের শেখায়—তথ্য ভুল হলে ভুল জায়গায় গিয়ে পড়া খুব সহজ!
মামার বিয়ের বরযাত্রী গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
১। ক. ফোকলা মামার বিয়েতে যেতে পারবে না কেন? বর্ণনা কর। | ৩ |
খ. ফোকলার অ্যাডভেঞ্চারের বর্ণনা দাও। | ৭ |
ক) উত্তরঃ ফোকলা মামার বিয়েতে যেতে পারবে না, কারণ তার পরীক্ষার সময় চলছে। মেজো মামার বিয়ের ঠিক আগের দিনই তার শেষ পরীক্ষা। কিন্তু ওই দিন বিকেলে পরীক্ষার পর আর কোনো ট্রেন থাকে না মামাবাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য। দিনের মধ্যে সাড়ে বারোটার ও তিনটার ট্রেন থাকলেও সে সময় পরীক্ষার জন্য তার যাওয়া সম্ভব না। তাই তাকে যেতে হবে পরের দিন, মানে বিয়ের দিন সকালে। কিন্তু সেই ট্রেন মামাবাড়ি পৌঁছবে সন্ধ্যায়, তখন পর্যন্ত বরযাত্রীরা বিয়েতে রওনা হয়ে যাবে। ফলে সে আর বরযাত্রার সঙ্গে যেতে পারবে না। এ কারণে সে ভাবছে, সে বিয়েতে গেলে গিয়েও কোনো লাভ হবে না। সে বিরিয়ানি খাওয়ার সুযোগও হারাবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে বিয়েতে যেতে পারবে না।
খ) উত্তরঃ ফোকলা মামার বিয়েতে যেতে না পারায় লেখক খুবই মন খারাপ করে। কিন্তু ছোটো মামা তাকে একটি চালাকি পন্থা শেখায় যাতে সে পরীক্ষার পর সরাসরি কনের বাড়িতে গিয়ে বিয়েতে যোগ দিতে পারে। ছোটো মামা বলে, কনের বাড়ি ঢাকা থেকে ১২টি স্টেশন পর অবস্থিত, কিন্তু স্টেশনের নাম কেউ জানে না। লেখক পরীক্ষা শেষ করে সাড়ে বারোটার ট্রেনে উঠে পড়লেও ভুলবশত ময়মনসিংহ লাইনের ট্রেনে ওঠে যায়, যা আসলে ভুল দিক। ট্রেনে চড়ে সে গুনে গুনে ১২ স্টেশন যায় এবং এক জায়গায় নামেন। সেখানে এক ভদ্রলোকের সাহায্যে লেখক চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না, এটা ভুল চৌধুরী বাড়ি। সেখানে সবাই তাকে আদর-আপ্যায়ন করে এবং “জামাইয়ের ভাগনে” ধরে নেয়। লেখককে বিভিন্ন মজার সমস্যা ও বিপদে পড়তে হয়। কেউ তার মোটরগাড়ির চাকা ফুটো করে দেয়, তাকে পদ্মবিলে শিকার করাতে নিয়ে যায়, যেখানে সে বন্দুক চালানোর সময় গাড়ির ক্ষতি করে ফেলে। সবকিছু নিয়ে লেখক বিরক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সবাই তাকে বিরিয়ানি খাওয়ায়। সে ভাবতে থাকে, এটা তার মামার বিয়ে। পরে আসল বিয়ের দিনে বুঝতে পারে, সে ভুল চৌধুরী বাড়িতে এসেছিল। আসল বিয়ে ছিল অন্য লাইনে, আর ছোটো মামা এসে তাকে উদ্ধার করে। এই ভুলে সবাই মজা পায় এবং হাসাহাসি হয়।
২। ক. পদ্মবিলের বর্ণনা দাও। | ৩ |
খ. ঝোঁকের বশে কাজ করে ফোকলা কীভাবে দুর্গতিতে পড়েছে? ব্যাখ্যা কর। | ৭ |
ক) উত্তরঃ পদ্মবিলটি একটি বিশাল জলাভূমি যেখানে স্থানে স্থানে শাপলা ফুল দেখা যায়। বিলজুড়ে অসংখ্য পাখির সমাগম ঘটে – বক, পানকৌড়ি, হাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। পানির স্বচ্ছ নীল রঙ আর চারপাশের সবুজ প্রকৃতি মিলে বিলটিকে অপরূপ সৌন্দর্য দান করেছে। বিলের কিছু অংশে পদ্মফুলের সন্ধান পাওয়া গেলেও প্রধানত শাপলাই বেশি দেখা যায়। বিলের পাড়ে গাছপালা আর ঝোপঝাড়ে পাখিদের আবাসস্থল। স্থানীয় ছেলেরা এখানে প্রায়ই পিকনিক করতে আসে এবং শিকারের উদ্দেশ্যে বন্দুক নিয়ে আসে। পদ্মবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য এটিকে এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিণত করেছে।
খ) উত্তরঃ ফোকলা তার স্বভাবসিদ্ধ ঝোঁকের বশেই পদ্মবিলে শিকারে গিয়েছিল। বুলু-টুলু তাকে জোরাজুরি করে বন্দুক হাতে নিতে বাধ্য করলে, সে নিজের অজান্তেই একটি ভয়ানক ভুল করে বসে। প্রথমত, ফোকলার বন্দুক চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সে অন্যের চাপে বন্দুক হাতে নিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, বন্দুকের ট্রিগারে টিপ দেওয়ার সময় তার হাত কাঁপছিল, যা বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তৃতীয়ত, সে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি করে বসে পাশে পার্ক করা মোটরগাড়ির পিছনের চাকা ফুটো করে দেয়। এই ঘটনায় বুলু-টুলুকে অনেক কষ্ট করে স্পেয়ার চাকা লাগাতে হয়েছিল। ফোকলার এই অসতর্কতার পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করেছিল। একদিকে তার নিজের আত্মবিশ্বাসের অভাব, অন্যদিকে অন্যদের চাপে পড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। সে জানত না কীভাবে বন্দুক ব্যবহার করতে হয়, তবুও অন্যদের সামনে ‘হ্যাঁ’ বলতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। তাই ঝোঁকের বশে কাজ করে ফোকলা এভাবে দুর্গতিতে পড়েছে।
৩। ক. ফোকলা আকাশে উঠতে উঠতেই ধপ করে পড়ে গেল কীভাবে? | ৩ |
খ. চৌধুরী বাড়িতে এক দিন আগে যাওয়ার কারণে ফোকলার কী লাভ হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। | ৭ |
ক) উত্তরঃ ফোকলা যখন শুনল যে তার ছোটোমামা তাকে মামার বিয়েতে যাওয়ার জন্য একটা চমৎকার পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন সে খুবই খুশি হলো। ছোটোমামার পরামর্শ ছিল যে ফোকলা যেন সরাসরি কনের বাড়িতে চলে যায়, এতে করে তার পরীক্ষা মিস হবে না আর বিয়ের বিরিয়ানিও খাওয়া হয়ে যাবে। এই কথা শুনে ফোকলার মনে হলো সে যেন আকাশে উড়ছে, এতটাই আনন্দিত হলো সে। কিন্তু হঠাৎই ছোটোমামা বললেন যে তিনি কনের বাড়ির স্টেশনের নাম ভুলে গেছেন। এই কথা শুনে ফোকলার সব উৎসাহ এক নিমেষে উবে গেল। যেমন কেউ খুব উঁচুতে উঠতে উঠতে হঠাৎ পড়ে যায়, তেমনি ফোকলারও মনটা একদম নিচে নেমে গেল।
খ) উত্তরঃ ফোকলার এক দিন আগে চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছানোর কারণে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত কিন্তু মজার লাভ হয়েছে। প্রথমত, সে সেখানে গিয়ে খুব ভালোভাবে আপ্যায়িত হয়েছে। চৌধুরী পরিবার তাকে তাদের আত্মীয় ভেবে নিয়ে বিরিয়ানি সহ নানা সুস্বাদু খাবার খাওয়ায়, যা সে হয়তো বরযাত্রীদের সাথে গেলে ঠিকভাবে পেত না। দ্বিতীয়ত, ফোকলা সেখানে গিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। যেমন, সে বুলু-টুলুর সাথে শিকারে যায়, যদিও সেখানে গিয়ে সে গুলি করে গাড়ির চাকা ফুটো করে দেয়! এই ঘটনা তাকে একটা মজার স্মৃতি দিয়েছে। তৃতীয়ত, ফোকলা চৌধুরী বাড়ির লোকজনের সাথে মিশে গ্রামীণ জীবনের সরলতা ও আতিথেয়তা উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে। সে তাদের সাথে গল্পগুজব করে, নতুন জায়গা দেখে, যা তার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। চতুর্থত, ফোকলা একদিন আগে যাওয়ায় সে বিয়ের প্রস্তুতি এবং চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ ভালোভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছে। যদি সে ঠিক সময়ে যেত, তাহলে এত কিছু দেখার বা জানার সময় পেত না। এই এক দিন আগে যাওয়ার কারণে ফোকলা শুধু বিরিয়ানি খাওয়াই নয়, বরং একটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করল, যা তাকে সারাজীবন মনে থাকবে।
আরও পড়ুনঃ আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের মূলভাব, বর্ণনামূলক প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি