মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘মানুষ মুহম্মদ (স)’ প্রবন্ধটিতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের অসাধারণ দৃষ্টান্ত এবং তাঁর মানবিক গুণাবলির কথা বলা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে সৃষ্ট শোক এবং আবেগের মুহূর্তগুলি খুবই গভীর এবং চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই পোস্টে মানুষ মুহম্মদ (স) অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
মানুষ মুহম্মদ (স) অনুধাবন প্রশ্ন
১। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর পর মদিনাবাসীরা কি করেছিলেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর পর মদিনাবাসীরা গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। অনেকের মুখে কথা ফুটছিল না, কেউ কেউ পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করেন। হজরত ওমর (রা.) এতটাই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তিনি কাউকে হজরতের মৃত্যুর কথা বলতে নিষেধ করেন এবং এমনকি হুমকি দেন যে, যারা এ কথা বলবে তাদের মাথা কেটে ফেলা হবে।
২। আবুবকর (রা.) হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর পর কী বলেছিলেন?
উত্তর: হজরত আবুবকর (রা.) হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মৃত্যুর পর জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “যারা হজরতের পূজা করত, তারা জানুক তিনি মারা গিয়েছেন; আর যারা আল্লাহর উপাসক, তারা জানুক আল্লাহ অমর ও অবিনশ্বর।” তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন যে, মুহাম্মদ (স.) একজন রাসুল মাত্র, তাঁর আগেও অনেক রাসুল মারা গিয়েছেন।
৩। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর চারিত্রিক গুণাবলির বর্ণনা দাও।
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি ছিল অসাধারণ। তিনি ছিলেন সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, প্রিয়ভাষী এবং নম্র। তাঁর চেহারা ও চরিত্রের মাধুর্য মানুষকে আকর্ষণ করত। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী ছিলেন। তিনি শত্রুর প্রতি করুণাশীল ছিলেন এবং কখনও অভিশাপ দিতেন না।
৪। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর রূপ বর্ণনা করুন।
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর রূপ ছিল অপূর্ব ও মনোহর। তিনি সুদর্শন, সুউচ্চ গ্রীবা এবং কালো চোখের অধিকারী ছিলেন। তাঁর চোখের দৃষ্টি ছিল মায়াবী এবং মুখের ভাষা মধুর। তিনি দীর্ঘ নন, খর্বও নন, বরং বলিষ্ঠ ও সুগঠিত দেহের অধিকারী ছিলেন। তাঁর চেহারা ও চরিত্রের মাধুর্য মানুষকে আকর্ষণ করত এবং কাছে আসলেই মানুষ তাঁর আপনজন হয়ে যেত।
৫। শত্রুদের প্রতি হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর আচরণ কেমন ছিল?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.) শত্রুদের প্রতি অত্যন্ত করুণাশীল ও ক্ষমাশীল ছিলেন। শত্রুরা তাঁকে বারবার নির্যাতন করলেও তিনি কখনও তাদের প্রতি ক্রোধ বা ঘৃণা প্রকাশ করেননি। তিনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং তাদের জ্ঞান ও হিদায়াতের জন্য দোয়া করতেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি শত্রুদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।”
৬। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ত্যাগ ও কষ্টের জীবন কেমন ছিল?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবন ছিল ত্যাগ ও কষ্টে পরিপূর্ণ। তিনি সত্য প্রচারের জন্য অত্যাচার, নির্যাতন এবং শারীরিক কষ্ট সহ্য করেছেন। মক্কায় পৌত্তলিকদের প্রস্তরাঘাতে তিনি আহত হয়েছেন, তায়েফে শত্রুরা তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছে। তবুও তিনি কখনও হতাশ হননি বা শত্রুদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেননি। তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করেছেন এবং অনেক সময় তাঁর ঘরে অন্নের অভাব হতো।
৭। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মক্কা বিজয়ের পর কী করেছিলেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা বিজয়ের পর শত্রুদের প্রতি অত্যন্ত মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই স্বাধীন।” তিনি ন্যায়ের পথে চলেছেন এবং শত্রুদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেননি। তাঁর এই মহানুভবতা ইসলামের শিক্ষাকে আরও মহিমান্বিত করেছে।
৭। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলির বর্ণনা দাও।
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলি ছিল অসাধারণ। তিনি ছিলেন সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, নম্র এবং করুণাশীল। তিনি শত্রুদের প্রতি ক্ষমাশীল ছিলেন এবং কখনও অভিশাপ দিতেন না। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্টে সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসতেন। তাঁর চরিত্রের মাধুর্য ও মহানুভবতা মানুষকে আকৃষ্ট করত।
৮। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল সত্যের প্রচার এবং মানুষের মাঝে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া। তিনি শান্তি, ন্যায় এবং সমতার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। তিনি মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সমস্ত জীবন ছিল সত্যের সাধনায় নিবেদিত এবং তিনি এই লক্ষ্যে কোনো কষ্ট বা ত্যাগকে পরোয়া করেননি।
৯। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ক্ষমাশীলতার পরিচয় দাও।
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর ক্ষমাশীলতা ছিল অতুলনীয়। তিনি শত্রুদের প্রতি অত্যন্ত মহানুভব ছিলেন এবং কখনও তাদের প্রতি ক্রোধ বা ঘৃণা প্রকাশ করেননি। মক্কা বিজয়ের পর তিনি শত্রুদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।” তাঁর এই ক্ষমাশীলতা ইসলামের শিক্ষাকে আরও মহিমান্বিত করেছে।
১০। হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো কেমন ছিল?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যান। তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি হজরত আবুবকর (রা.)-কে নামাজের ইমামতি করার দায়িত্ব দেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ইসলামের জন্য কাজ করে গেছেন এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছেন।
১১। হজরত আবুবকর কীভাবে মুসলিমদের শান্ত করেছিলেন?
উত্তর: হজরত আবুবকর (রা.) মুসলিমদের শান্ত করার জন্য গম্ভীরভাবে বলেন, “যারা হজরতকে পূজা করত, তারা জানুক তিনি মারা গেছেন; কিন্তু যারা আল্লাহর উপাসক, তারা জানুক আল্লাহ অমর, অবিনশ্বর।” তিনি আরও বলেন, “মুহম্মদ (স.) একজন রাসুল মাত্র, তার পূর্বে অনেক রাসুল মারা গেছেন।”
১২। মুহাম্মদ (স.) মক্কায় হিজরত করলে শত্রুরা কি করেন?
উত্তর: হজরত মক্কার দিকে হিজরত করার পর নানা ধরনের অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। মক্কার শত্রুরা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল এবং বহুবার তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে। তবে, হজরত কখনোই ক্ষোভ বা বিরক্তি প্রকাশ করেননি। বরং তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন, “এদের জ্ঞান দাও, প্রভু।”
১৩। মুহাম্মদ (স.)-এর শারীরিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল?
উত্তর: হজরত (স.)-এর শারীরিক বৈশিষ্ট্য ছিল অপূর্ব এবং অসাধারণ। তিনি সুদর্শন, সুগঠিত এবং ভদ্র ছিলেন। তাঁর চোখ দুটি ছিল আয়তকৃষ্ণ এবং কালো। তাঁর মুখের ভাষণ ছিল মধুবর্ষী এবং তাঁর প্রকৃতি ছিল বিনীত। তাঁরা দীর্ঘ ছিলেন না, কিন্তু গ্রীবা ছিল সুউচ্চ এবং দেহ ছিল বলিষ্ঠ।
১৪। হজরত আবুবকর (রা.)-এর চরিত্র কেমন ছিল?
উত্তর: হজরত আবুবকর (রা.)-এর চরিত্র ছিল অত্যন্ত বিশ্বস্ত, সত্যবাদী এবং দয়ালু। তিনি কখনো নিজের বংশগৌরবের কারণে অহংকার করেননি, বরং মানুষের সাহায্যের জন্য সদা প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর চরিত্র ছিল এক চিরন্তন মাধুর্য দ্বারা পূর্ণ, যা মানুষকে আকর্ষণ করত। তাঁর অদ্বিতীয় বিচারবুদ্ধি এবং বলিষ্ঠ দেহও মানুষকে মুগ্ধ করত।
১৫। মুহাম্মদ (স.) তায়েফে ইসলাম প্রচারের কী ধরনের দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিলেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (স.) তায়েফে তাঁর প্রচারের সময় অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেখানে শত্রুরা তাঁকে রক্তাক্ত করতে, ক্ষতবিক্ষত করতে এবং পাথর ছুড়ে তাঁকে আঘাত করতে শুরু করে। এই অত্যাচারের পরও, তিনি কোনো অভিযোগ বা প্রতিশোধের কথা ভাবেননি। বরং তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।