স্বার্থপরতা ও ভোগবিলাস মানুষের ভালো গুণগুলো নষ্ট করে দেয়। যে শুধু নিজের সুখের কথা ভাবে, সে জীবনের আসল অর্থ কখনো বুঝতে পারে না। এই পোস্টে ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাব সম্প্রসারণ লিখে দিলাম।
ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাব সম্প্রসারণ
ভাব-সম্প্রসারণঃ ত্যাগ ছাড়া ভোগের কোনো সার্থকতা নেই, কারণ শুধু নিজের সুখের পিছে ছুটলে মানুষ স্বার্থপর হয়ে ওঠে। ভোগের ইচ্ছা কখনোই শেষ হয় না – একটা ইচ্ছা পূরণ হলেই নতুন ইচ্ছা জন্ম নেয়, যা আমাদের কখনোই প্রকৃত সুখ দিতে পারে না। কিন্তু যখন আমরা অন্যের জন্য কিছু ত্যাগ করি, তখন আমাদের মনে এক গভীর শান্তি ও তৃপ্তি আসে। যেমন একজন মা সন্তানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেন, তার এই ত্যাগই মাতৃত্বকে এত মহান করে তোলে। ছাত্ররা জ্ঞানার্জনের জন্য রাত জেগে পড়াশোনা করে, এটাও এক ধরনের ত্যাগ। দেশপ্রেমিকরা মাতৃভূমির জন্য প্রাণ পর্যন্ত দেন, তাদের এই ত্যাগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “জীবন ত্যাগের জন্য, দানের জন্য” – কারণ ত্যাগই মানুষকে প্রকৃত সুখ দিতে পারে। যারা শুধু নেয় কিন্তু দেয় না, তাদের জীবন কখনোই পূর্ণতা পায় না। পৃথিবীর সব মহামানবই ত্যাগের মাধ্যমেই অমর হয়ে আছেন। ভোগবিলাসীরা কিছুদিনের জন্য বিলাসিতা করতে পারে, কিন্তু ত্যাগী মানুষেরাই সত্যিকারের সম্মান অর্জন করেন। সমাজে যারা গরিবদের সাহায্য করেন, অসুস্থদের সেবা করেন, তারাও ত্যাগের মাধ্যমেই জীবনের সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পান। প্রকৃতপক্ষে, ত্যাগই মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে এবং জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা এখানেই নিহিত।
ভাব সম্প্রসারণ ভোগে নয় ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ
ভাব-সম্প্রসারণঃ জীবনে প্রকৃত সুখ পেতে হলে ত্যাগ শিখতে হবে, কারণ ভোগের আনন্দ কখনোই স্থায়ী হয় না। আমরা যখন শুধু নিজের কথা ভাবি, নিজের সুখের জন্য ছুটে বেড়াই, তখন আসলে হৃদয়ে একটা শূন্যতা থেকে যায়। ভোগের ইচ্ছা কখনো শেষ হয় না – নতুন জিনিস পেলেই আরও নতুন জিনিস চাই, এই চক্র কখনো থামে না। কিন্তু যখন আমরা অন্যের জন্য কিছু ত্যাগ করি, তখন মনে এক অদ্ভুত শান্তি আসে। যেমন মা-বাবা সন্তানের জন্য সব ত্যাগ করেন, ডাক্তার রোগীর জন্য রাত জাগেন, শিক্ষক ছাত্রের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন – এসব ত্যাগেই তাদের জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। ইতিহাসে যারা সত্যিকারের বড় মানুষ হয়েছেন, তারা সবাই ত্যাগের পথ বেছে নিয়েছেন। ভোগবিলাসী মানুষদের কেউ মনে রাখে না, কিন্তু ত্যাগী মানুষদের সবাই শ্রদ্ধা করে। আমাদের চারপাশে ছোট ছোট ত্যাগেরও অনেক মূল্য আছে – যেমন বাসে বৃদ্ধ লোককে সিট দেওয়া, গরিবকে খাবার খাওয়ানো, বন্ধুর বিপদে পাশে দাঁড়ানো। এসব কাজ করলে মনে যে সুখ আসে, তা কোটি টাকার ভোগেও পাওয়া যায় না। ত্যাগ আমাদের স্বার্থপরতা দূর করে, হৃদয়কে প্রশস্ত করে। প্রকৃতপক্ষে, যে মানুষ যত বেশি ত্যাগ করতে পারে, সে তত বেশি সুখী হতে পারে। ভোগ আমাদের অস্থির আর অশান্ত করে, কিন্তু ত্যাগ শান্তি আনে। তাই বলা যায়, জীবনকে সুন্দর করতে হলে ভোগের পথ ছেড়ে ত্যাগের পথে হাঁটতে হবে। আসল সুখ লুকিয়ে আছে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোতে, নিজের সুখ ভাগ করে নেওয়াতে। ত্যাগই মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে, ভোগ কেবল আমাদের স্বার্থপর আর খুশখুশে করে তোলে। শেষ পর্যন্ত, যারা ত্যাগ করতে জানে, তারাই জীবনের আসল স্বাদ পায়।