ব দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ ও সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সাহাবী বলতে ইসলামের প্রথম যুগে, নবী মুহাম্মদ (স.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সাথে থাকা এবং ইসলাম গ্রহণ করা ব্যক্তিদের বোঝানো হয়। সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই ইসলামের প্রচার, যুদ্ধ এবং নবীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছেন। এই পোস্টে ব দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানবো।

ব দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ

নিচে ক্রমবর্ধমানভাবে সাজানো একটি টেবিল দেওয়া হলো, যেখানে বাম পাশে একটি কলামে ক্রম লেখা হয়েছে:

ক্রমনামমূল নামঅর্থ
বশির ইবনে শা’আদবশিরসুখবর দাতা
বাহহাস ইবনে সালাবাবাহহাসশক্তিশালী বা সাহসী
বিলাল ইবনে রাবাহবিলালজল বা পানির উৎস
বুদাইল ইবনে ওয়ারকাবুদাইলছোট বা কম
বুরাইদাহ ইবনুল হুসাইববুরাইদাহছোট পাখি
বুজাইর ইবনে যুহাইরবুজাইরছোট বা নবজাতক

ব দিয়ে সাহাবীদের নামের পরিচয়

১। বশির ইবনে শা’আদ

বশির ইবনে শা’আদ ছিলেন মুহাম্মাদ (স.) এর একজন বিশেষ সাহাবী এবং বনু খাজরা গোত্রের সদস্য। তিনি প্রথম মুসলমানদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং পরে গোত্রের নেতা হিসেবে উঠে আসেন। তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো সাকিফায় আবু বকর (রা.) এর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, যেখানে নবীর উত্তরাধিকার নিয়ে বড় বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি সাফল্যের সঙ্গে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন, যা তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলীকে প্রকাশ করে।

জীবনের শুরুতেই বশির ছিলেন বনু খাজরা গোত্রের প্রথম মুসলমানদের একজন। উপযুক্ত বয়সে পৌঁছানোর পর তিনি গোত্রের দলপতি হন। বদরের যুদ্ধে তিনি সাহাবীদের মধ্যে অংশ নেন, এবং মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে ৭০টি উট ও দুটি ঘোড়া ছিল। এ কারণে বাহিনীকে হাঁটতে বা উটে চড়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল। যুদ্ধের আগে বড় আকারের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হয়নি, এবং পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা উসমান তাঁর অসুস্থ স্ত্রী রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ এর জন্য যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি।

বশিরের নেতৃত্বে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়, যা “বশির ইবনে শা’আদ আনসারির অভিযান” নামে পরিচিত। এই অভিযানটি ৭ হিজরিতে শাবান মাসে সংঘটিত হয়। শেষ পর্যন্ত, বশির আইন আত তামার যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁর সাহস এবং নেতৃত্বের কারণে বশির ইবনে শা’আদ মুসলিম ইতিহাসে একটি অনন্য স্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

২। বিলাল ইবনে রাবাহ

বিলাল ইবনে রাবাহ নবী মুহাম্মাদ (স.) এর একজন ঘনিষ্ঠ এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাঙ্গ সাহাবী। তিনি ৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং আবিসিনিয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। উমাইয়া ইবনে খালাফের ক্রীতদাস হিসেবে তিনি ইসলাম গ্রহণের পর কঠোর নির্যাতনের শিকার হন, কিন্তু আবু বকর তাঁকে মুক্ত করেন।

বিলাল ইসলাম গ্রহণকারী প্রথমদের মধ্যে ছিলেন এবং হিজরতের পর মদীনায় তিনি প্রথম আযান দেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি মুহাম্মাদের সামরিক অভিযানে অংশ নেন এবং মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা পুনরুদ্ধারের সময় তিনি কাবাঘরের উপরে উঠে আযান দেন।

মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর বিলাল আর আযান দেননি, তবে উমরের সময়ে একবার আযান দিলে সকল সাহাবা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বিলাল ৬৩০-৬৪০ এর দশকে সিরিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ৬৩ বছর। তিনি ইসলামের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে আছেন।

৩। বুরাইদাহ ইবনুল হুসাইব

বুরাইদাহ ইবনুল হুসাইব, যিনি আবু আবদিল্লাহ নামেও পরিচিত, ছিলেন বনু আসলাম গোত্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর পিতা ছিলেন হুসাইব ইবন আবদিল্লাহ, এবং তাঁর দুটি ছেলে ছিল—আবদুল্লাহ ও সুলাইমান। বুরাইদাহ ইসলাম গ্রহণ করেন হিজরতের সময়, যখন রাসূলুল্লাহ (স.) মক্কা থেকে মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তখন গামীম নামক স্থানে পৌঁছলে তিনি ও ৮০ জন সহকর্মী একসঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। বদর ও উহুদ যুদ্ধের পর, ৬ষ্ঠ হিজরিতে তিনি মদীনায় হিজরত করেন।

বুরাইদাহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ষষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত ছিলেন এবং খাইবার অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ৮ম হিজরিতে, মক্কা বিজয় অভিযানে তিনি রাসূলের একটি বাহিনীর পতাকা হাতে নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। তাবুক যুদ্ধের সময়, রাসূলুল্লাহ তাঁকে আসলাম গোত্রের কাছে পাঠান। মক্কা বিজয়ের পর, রাসূল খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের নেতৃত্বে একটি বাহিনী ইয়ামনে পাঠান, যেখানে বুরাইদাহও ছিলেন।

রাসূলুল্লাহর মৃত্যুর পর, বুরাইদাহ আবু বকরের নির্দেশে সিরিয়ার অভিযানে অংশ নেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং প্রায় ১৬৪টি হাদিস বর্ণনা করেন। বুরাইদাহ ৬৩ হিজরীতে ইয়াযীদ ইবন মুয়াবিয়ার খিলাফতকালে পারস্যের মারভে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা এবং ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য নাম।

Related Posts

Leave a Comment