ফররুখ আহমদের ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি বৃষ্টির সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির পুনর্জীবনের এক অনবদ্য চিত্র তুলে ধরে। এই পোস্টে বৃষ্টি কবিতার ব্যাখ্যা প্রতি লাইনের – ৯ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
ফররুখ আহমদের বৃষ্টি কবিতার ব্যাখ্যা
“বৃষ্টি এলো … বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি!—পদ্মা মেঘনার / দুপাশে আবাদি গ্রামে, বৃষ্টি এলো পুবের হাওয়ায়,”
এই লাইনে কবি অনেক প্রতীক্ষার পর বৃষ্টির আগমনের বর্ণনা করছেন। পদ্মা-মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত আবাদি গ্রামগুলো খরার প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে শুষ্ক ছিল, কিন্তু অবশেষে পূর্ব দিক থেকে আসা বৃষ্টি তাদেরকে সজীব করে তুলছে। পুবের হাওয়া যেন বৃষ্টির এই বার্তাকে নিয়ে আসে।
“বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়;”
বৃষ্টির আগে আকাশ দগ্ধ, অর্থাৎ গ্রীষ্মের প্রখর রোদে আকাশ যেন আগুনে পোড়া ছিল। কিন্তু বৃষ্টি আসার সাথে সাথে চারিদিক কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেল, যা পুরো মাঠকে কাজল ছায়ায় ঢেকে দিল।
“বিদ্যুৎ-রূপসী পরি মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।”
এখানে বিদ্যুৎকে এক রূপসী পরি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যে মেঘের ওপর সওয়ার হয়ে আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদ্যুতের ঝলকানি বৃষ্টির আগমনের পূর্বাভাস দেয় এবং এই দৃশ্যটি এক মায়াবী রূপ ধারণ করে।
“দিক-দিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার / বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়,”
বৃষ্টি আসার পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের অপরূপ সৌন্দর্য দিগন্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এই সৌন্দর্য দেখে অরণ্যের কেয়া গাছও শিহরিত হয়, অর্থাৎ বর্ষার আগমনে অরণ্যের গাছপালা আনন্দে মেতে ওঠে।
“রৌদ্র-দগ্ধ ধানখেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়,”
গ্রীষ্মের তীব্র রোদে ধানখেত শুকিয়ে গিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে বৃষ্টির স্পর্শে। ধানখেতগুলো যেন বৃষ্টির সান্নিধ্য পেতে আকুল হয়ে আছে।
“নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।”
নদীগুলো গ্রীষ্মের তাপে ফেটে গিয়েছিল, তাদের পানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেখানে আবারও বন্যার পানি আসবে, যা নদীকে আবার পূর্ণ করবে এবং প্রাণবন্ত করে তুলবে।
“রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন / রুক্ষ মাঠ আসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর,”
এখানে রুক্ষ মাঠকে একটি রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ ওঠা হাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা খুবই করুণ দৃশ্য। কিন্তু বৃষ্টির সুর শুনে এই মাঠ আবারও নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পায়।
“তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন,”
বৃষ্টি আসার ফলে তৃষ্ণার্ত বন যেমন নতুন করে সজীব হয়, তেমনই তৃষিত মনও বৃষ্টির পরশে প্রাণ ফিরে পায় এবং সজীব হয়। মানুষের মনও বৃষ্টির ছোঁয়ায় খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়।
“পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর,”
এই লাইনটিতে বলা হয়েছে যে বৃষ্টির পর মন এমন এক প্রাণবন্ত অবস্থায় চলে যায় যে সে দূরত্বে অবস্থিত বন্ধুর পথও অতিক্রম করতে চায়। বর্ষা মানুষের মনের মধ্যে উদ্যম সৃষ্টি করে।
“যেখানে বিস্মৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন / সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষণ্ণ মেদুর”
শেষের এই লাইনগুলোতে কবি বলেছেন, বর্ষা সেই সব বিস্মৃত এবং নিঃসঙ্গ দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বৃষ্টির মেঘ আকাশে ভাসতে ভাসতে এক বিষণ্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি করে, যা মনের গভীর কোণকে ছুঁয়ে যায়।
Related Posts
- একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- নিমগাছ গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বাবাকে পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম
- ৯ম শ্রেণির বাংলা ষষ্ঠ অধ্যায় PDF (চূড়ান্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি)
- স্মৃতিস্তম্ভ কবিতার প্রশ্ন উত্তর -আলাউদ্দিন আল আজাদ -৯ম শ্রেণির বাংলা
- আত্মস্মৃতি গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- ৯ম শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৪ (৯ম শ্রেণির সিলেবাস ২০২৪ PDF)
- ৯ম শ্রেণির বাংলা ১ম অধ্যায় (বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করি)
- নিমগাছ গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন – ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা
- আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা