বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পে বিলাসী জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেও মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য এক অনন্ত ত্যাগের গল্প রেখে যায়। এই গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয়, ভালোবাসা সব বাধাকে অতিক্রম করতে পারে। এই পোস্টে বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে

গল্পটির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে বিলাসী, একজন সাপুড়ের মেয়ে। বাল্যকালে অভিজাত পরিবারে বড় হওয়া মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার অনুরাগ তৈরি হয়। মৃত্যুঞ্জয়, কায়েতের ছেলে, যখন কঠিন অসুখে পড়ে এবং প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করে, তখন বিলাসী তাকে মনের টানে সেবা করে। এই সম্পর্ক সমাজের চোখে গর্হিত এবং তাদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয় গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি ভালোবাসার টানে সাপ ধরার কাজে যোগ দেয়। তার এই কাজের নেপথ্যে অভিজ্ঞতার ছাপ ও সাহস রয়েছে, যা সে পৈত্রিকসূত্রে লাভ করেছে। মৃত্যুঞ্জয়ও তার সঙ্গে সাপ ধরার কাজে যুক্ত হয়। বিলাসীর অনুরোধে সে একটি বিষাক্ত গোখরো ধরার কাজে যায়। অবশেষে সাপ ধরার সময় মৃত্যুঞ্জয়ের একটি বিষাক্ত সাপের কামড় খাওয়ার দুর্ঘটনা ঘটে। বিলাসী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, বিভিন্ন তাবিজ, মাদুলি, ও মন্ত্রের আশ্রয় নেয়। তবুও মৃত্যুঞ্জয়ের বাঁচানো সম্ভব হয় না। বিলাসীর চরিত্রের নির্ভীকতা ও প্রেমের গভীরতা এই গল্পের প্রধান উপজীব্য। গল্পটির শেষ অংশে সমাজের অবমাননাকে উপেক্ষা করে, বিলাসী নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে শেষ অব্দি আগলে রাখে। তার শক্তি ও সাহস গল্পটিকে অসামান্য করে তোলে এবং মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য তার ত্যাগ সামাজিক আদর্শের সীমানা ছাড়িয়ে যায়।

বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু বড় করে

বিলাসী আর মৃত্যুঞ্জয়—দুইজনেই একই গ্রামের বাসিন্দা। বিলাসী ছিল গ্রামের এক সাপুড়ে পরিবারের মেয়ে। আর মৃত্যুঞ্জয়, এক কায়েতের ছেলে। তার পরিবার ছিল একটু অভিজাত, তবে মৃত্যুঞ্জয় ছিল গ্রামের সবার কাছেই অসুস্থ ছেলের পরিচয়ে পরিচিত। তার ছোটবেলা থেকেই এক ধরনের রহস্যময় অসুস্থতা ছিল, আর এই কারণে সমাজের চোখে তাদের পরিবারও অনেকটা একঘরে হয়ে গিয়েছিল। বিলাসীর জীবন ছিল কঠিন, তবুও সে সাপ ধরতে একেবারে ওস্তাদ। সাপেদের সঙ্গেই তার খেলা, এবং তাদের বিষবিহীন করাই ছিল তার পরিবারের জীবিকা। মৃত্যুঞ্জয়কে সে ছোট থেকেই পছন্দ করত, তবে তাদের মধ্যে কোনো সামাজিক মিল ছিল না।

বিলাসী আর মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়। সমাজের চোখে তাদের সম্পর্ক ছিল অনুচিত, কারণ বিলাসী ছিল নিম্নবর্ণের। কিন্তু এইসব নিয়ম-কানুনকে উপেক্ষা করে তারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়। গ্রামের লোকজন তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তারা তাদের বিরুদ্ধে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সমাজ থেকে তাদের বের করে দেয়। আর তাই, গ্রাম ছেড়ে তারা নিজেদের মতো একটা জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করে। দুজনেই সাপ ধরার কাজ নিয়ে বেঁচে থাকতে শুরু করে। বিলাসী যেমন সাহসী, তেমনই মৃত্যুঞ্জয়ও ধীরে ধীরে কাজটা শেখার চেষ্টা করে। কিন্তু একদিন, সাপ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একটি বিষাক্ত গোখরো সাপ মৃত্যুঞ্জয়কে কামড়ে দেয়। বিলাসী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, বিভিন্ন ওষুধ এবং মন্ত্র পড়ে তার পাশে থাকে, কিন্তু শেষমেশ মৃত্যুঞ্জয়কে বাঁচানো যায় না। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুতে বিলাসীর জীবন একেবারে থেমে যায়। তবুও, সে তার ভালোবাসার প্রতি অটল ছিল।

বিলাসী তার জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে ছিল। সমাজের ধিক্কার আর অবজ্ঞার মুখে সে কখনও তার ভালোবাসাকে ছোট করে দেখেনি। মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য তার ত্যাগ ভালোবাসার একটা চিরন্তন উদাহরণ হয়ে রয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ অপরিচিতা গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায়

Related Posts

Leave a Comment