বিলাতের প্রকৃতি মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

‘বিলাতের প্রকৃতি’ মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ভ্রমণ-কাহিনির অংশ যা লন্ডনের বৃষ্টি, প্রকৃতি ও ঋতুগুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করে। এই পোস্টে বিলাতের প্রকৃতি মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

বিলাতের প্রকৃতি মূলভাব

‘বিলাতের প্রকৃতি’ গল্পে লেখক মুহম্মদ আবদুল হাই লন্ডনের বৃষ্টি-ভেজা সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের প্রকৃতির নানা রূপকে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে লন্ডনের ধোঁয়াযুক্ত ও মেঘে ঢাকা আকাশ দেখেন। মনে পড়ে যায় তার দেশের রাজশাহী যেখানে আষাঢ়ের কালো মেঘ ও বর্ষার রোল গান বাতাসে মিশে থাকে। লেখক মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির মিষ্টতা তুলে ধরেন। ইংল্যান্ডের ঋতুগুলো, বিশেষ করে বসন্তকালের অনন্য রূপ এবং লন্ডনের পার্কগুলোতে বিভিন্ন রঙের ফুলের সৌন্দর্য তিনি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলেন। রিজেন্ট পার্কের গোলাপ বাগান, লাইলাক ফুল, টিউলিপ, ডেইজি, ক্রোকাসের মতো ফুলের বৈচিত্র্যের কথা বলেন। ইংল্যান্ডের মাঠের সবুজে ও শহরের পার্কের প্রাণবন্ত পরিবেশে তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ পায়। লেখক ক্যামব্রিজের গ্রাম ও মাঠের ছবিও বর্ণনা করেছেন যেখানে নানা ধরনের শস্য ও ঘাসের ছায়া পড়ে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়েছে। শেষাংশে তিনি ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকাল এবং সেখানকার মানুষের পার্কে আগমন ও রোদ পোহানোর অভিজ্ঞতা জানান। পুরো গল্পে দেশের প্রকৃতি ও বিদেশের প্রকৃতির তুলনা করে তাঁর অনুভূতির মাধুর্য প্রকাশ পেয়েছে।

বিলাতের প্রকৃতি বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১। ক. লেখক মনে মনে আট হাজার মাইল দূরে ফিরে যাওয়ার কারণ কী?
খ. “প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও মুগ্ধতা সহজাত প্রবৃত্তি।”-‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনি অবলম্বনে আলোচনা কর।

ক) উত্তরঃ লেখক লন্ডনের বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশ দেখে মনে মনে তাঁর দেশের রাজশাহীর বাসায় ফিরে যান। কারণ রাজশাহীর আষাঢ়ের মেঘগুলো লন্ডনের মেঘের মতোই কালো ও ঘন, আর সেখানকার বর্ষার রোল গান বাতাসে ভেসে এসে মনকে এক মধুর শীতলতা দেয়। এই স্মৃতিচারণে তিনি মায়ের কথা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমির মিষ্টতা অনুভব করেন। তাই বিদেশের শীতল আবহাওয়া ও ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ তাকে তার দেশ ও প্রিয় মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই জন্যই তিনি আট হাজার মাইল দূরে, নিজের দেশকে মনে করেন।

খ) উত্তরঃ ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে লেখক প্রকৃতির নানা রূপ দেখে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তিনি লন্ডনের পার্ক, বাগান ও গাছপালার সৌন্দর্য যেমন রিজেন্ট পার্কের গোলাপবাগান, লাইলাক ফুল, টিউলিপ, ডেইজি ও ক্রোকাস ফুলের বর্ণনা দিয়ে বোঝাতে চান, প্রকৃতি মানুষের মনকে কতো আনন্দ দেয়। লেখক দেখেছেন কীভাবে ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গাছপালা ও ফুলের রঙ ও গন্ধও বদলায়। ছোটো ছোটো গাছের পাতার অঙ্কুর থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল গাছপালা—সবকিছুই প্রকৃতির জীবন্ত ছবি। মানুষের হৃদয়ে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মগত; এটা সহজাত প্রবৃত্তি। প্রকৃতি যত সুন্দর ও প্রাণবন্ত, মানুষের মন তত বেশি শান্তি ও আনন্দ পায়। তাই লেখক বিদেশেও প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং বাংলার সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে এর তুলনা করেন। গল্প থেকে বুঝা যায়, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও মুগ্ধতা মানুষের অন্তরের গভীর থেকে আসে, যা যেখানেই হোক, মানুষের সাথে থেকে যায়।


প্রশ্ন ২। ক. ইংল্যান্ডের বসন্তকাল ভিন্ন ধরনের কেন?
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে লন্ডনের সেরা পার্কের বর্ণনা দাও।

ক) উত্তরঃ ইংল্যান্ডের বসন্তকাল অন্যান্য জায়গার থেকে ভিন্ন কারণ এখানে বসন্ত খুব দ্রুত বদলে যায়। মার্চ মাস শেষ হতেই গাছগুলোতে পাতার মুকুল ফুটতে শুরু করে এবং প্রতিদিনই পাতার সংখ্যা ও রঙ বৃদ্ধি পায়। সকালে ও সন্ধ্যায় গাছের রূপ ভিন্ন মনে হয়। চারপাশে প্রকৃতির সবুজ আর রঙিন ফুল যেন আগুন লেগে গেছে। ছোটো গাছেও ফল থাকে, আর বড় গাছগুলো ফুলে ভরে যায়। সবুজের এই নানারঙা রূপ, ফুলের সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির পরিবর্তন দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়। ইংল্যান্ডের বসন্তের এই দ্রুত পরিবর্তন এবং নানাবিধ রং-গন্ধ এটিকে অন্য সব জায়গার থেকে আলাদা করে তোলে।

খ) উত্তরঃ লন্ডনের সেরা পার্ক হলো রিজেন্ট পার্ক, যা লেখকের বাসা থেকে মাত্র তিন মিনিটের পথ। এই পার্ক প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর এবং বিশেষ করে গোলাপবাগানের জন্য বিশ্বখ্যাত। রানি মেরির নামে নামকরণকৃত এই বাগানে জুন ও জুলাই মাসে বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুটে ওঠে। বাগানের গোলাপগুলো এত সুন্দর ও মনোহর যে, তাদের দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। সাদা, লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি রঙের গোলাপ একসঙ্গে ফুটে থাকে, যা খুবই আনন্দদায়ক দৃশ্য তৈরি করে। রিজেন্ট পার্কের বাতাসে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে যা খুব মোহনীয়। এখানে বসন্ত ও গ্রীষ্মের বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে, যেমন এপ্রিল মাসে বেগুনি ও আসমানি রঙের লাইলাক ফুল এবং মে মাসে টিউলিপ, উইলো ও ডেইজি ফুল। পার্কের ফুলগুলো মানুষের মনকে শান্তি দেয় ও আনন্দে ভরে তোলে।


প্রশ্ন ৩। ক. সব প্রকৃতিই সুন্দর হলেও মাতৃভূমির মতো নয় কেন?
খ. ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনির মূলভাব আলোচনা কর।

ক) উত্তরঃ সব প্রকৃতিই সুন্দর হলেও মাতৃভূমির প্রকৃতি যেমন মিষ্টি ও মনোমুগ্ধকর তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। মাতৃভূমির সাথে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসা গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে। মা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমির ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেয়, যা অন্য কোনো স্থানের প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের ঋতু-ছয় ঋতুর পরিবর্তন, বিশেষ করে বর্ষার গম্ভীর মেঘ আর মাটির গন্ধ আমাদেরকে সব সময় মাতৃভূমির স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই অন্য দেশের প্রকৃতি যত সুন্দরই হোক, মাতৃভূমির মতো মিষ্টি, পরিচিত ও প্রাণবন্ত হয় না।

খ) উত্তরঃ ‘বিলাতের প্রকৃতি’ ভ্রমণকাহিনিতে লেখক মুহম্মদ আবদুল হাই বিদেশের প্রকৃতির নানান রূপ ও সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজের দেশের প্রকৃতির মধুর স্মৃতিকে মিলিয়ে দেখিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ইংল্যান্ডের পার্ক, বাগান এবং ফুলগুলো মানুষের মনকে আনন্দ ও শান্তি দেয়। বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তনের সাথে গাছপালা ও ফুলের রঙ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের বদল তাঁর চোখে যেন এক মনোমুগ্ধকর খেলা। লেখক প্রকৃতির প্রতি মানুষের সহজাত ভালোবাসা ও মুগ্ধতা তুলে ধরেছেন। ভিন্ন দেশের প্রকৃতি দেখেও তিনি মাতৃভূমির প্রকৃতির মাধুর্য ভুলতে পারেননি। এছাড়া, ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ঋতুর পরিবর্তনের প্রতি মানুষের অনুভূতিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। মূলত এই ভ্রমণকাহিনির মূলভাব হলো—প্রকৃতির স্নিগ্ধ ও নানাবিধ রূপ মানুষের মনকে শান্তি দেয় এবং ভালোবাসার অনুভূতি জাগায়, তবুও মাতৃভূমির প্রকৃতির মাধুর্য অন্য কোথাও মেলা দায়। তাই প্রকৃতি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসাকে আরও গভীর করে।


Related Posts

Leave a Comment