“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদবধ-কাব্য” থেকে নেয়া। এই পোস্টে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব
“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদবধ-কাব্য” এর ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেওয়া। এখানে মেঘনাদ, রাবণের পুত্র, বিভীষণের প্রতি হতাশ ও ক্রুদ্ধ হয়ে কথা বলেন। মেঘনাদ জানাচ্ছেন, লক্ষ্মণ, যিনি রামচন্দ্রের ভাই, নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেছেন। তিনি বিভীষণকে অভিযোগ করেন যে, এটি সঠিক কাজ নয় এবং প্রশ্ন করেন কিভাবে বিভীষণ তাঁর মাতৃভূমির রক্ষক হতে পারেন যখন তাঁর শত্রুরা এমন অত্যাচার করছে। মেঘনাদ বিভীষণকে বোঝাতে চান যে রামচন্দ্র বা লক্ষ্মণকে কখনো শ্রদ্ধা করবেন না; বরং রাবণ এবং তাঁর পরিবারের মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মেঘনাদ বিভীষণকে বলেন যে তিনি ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে কেন রামের দিকে ঝুঁকছেন, যখন তিনি নিজের জাতি ও দেশপ্রেমের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। বিভীষণ জানান, তিনি রামের দাস এবং কিছু করতে পারবেন না, কিন্তু মেঘনাদ এতে রেগে যান। এই দ্বন্দ্বে মেঘনাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও রাক্ষসদের মধ্যে সংঘাত প্রকাশ পায়, যেখানে তিনি আত্মপরিচয় ও জাতির সংহতির গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেন।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার ব্যাখ্যা
নিচে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন দেয়া হলঃ
“এতক্ষণে”- অরিন্দম কহিলা বিষাদে
- মেঘনাদ হতাশ হয়ে বলে, এতক্ষণ পর এই পরিস্থিতি বুঝতে পারলাম।
“জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল রক্ষঃপুরে!”
- তিনি জানতে পারছেন যে লক্ষ্মণ রাক্ষসদের শহরে প্রবেশ করেছে।
“হায়, তাত, উচিত কি তব এ কাজ, নিকষা সতী তোমার জননী, সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ?”
- তিনি প্রশ্ন করেন, এ কি সঠিক কাজ? এইভাবে আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
“শূলিশম্ভুনিভ কুম্ভকর্ণ?”
- এখানে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু উল্লেখ করা হচ্ছে, যেন রাক্ষসদের আরও দুর্বল অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়।
“নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?”
- তিনি বিভীষণের কাছে প্রশ্ন করেন, তিনি কেন এই মুহূর্তে রামকে সাহায্য করছেন?
“চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?”
- মেঘনাদ বিভীষণের দিকে রাগান্বিত হয়ে বলেন, তিনি যদি রাজার কাছে গিয়ে রামকে সাহায্য করেন, তাহলে আমাদের জাতির মান কিভাবে থাকবে?
“কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি পিতৃতুল্য।”
- তবে তিনি বিভীষণকে গালি দিচ্ছেন না, বরং তাকে গুরু ও পিতৃস্বরূপ মনে করছেন।
“ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে, পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে।”
- মেঘনাদ বলছেন, তাকে অস্ত্র নিতে দিতে হবে যাতে তিনি রামের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন।
“লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।”
- তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, আজ তিনি লঙ্কার কলঙ্ক দূর করবেন।
“উত্তরিলা বিভীষণ, ‘বৃথা এ সাধনা, ধীমান্!’”
- বিভীষণ উত্তর দেন যে, এটি একটি অকার্যকর প্রচেষ্টা।
“রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে অনুরোধ?”
- বিভীষণ জানান, তিনি রামের দাস, তাই তিনি তাঁর বিপক্ষে কাজ করতে পারবেন না।
“উত্তরিলা কাতরে রাবণি; – ‘হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে।”
- মেঘনাদ বিভীষণের কথা শুনে বিরক্ত হন এবং বলে যে, বিভীষণের কথা শুনতে তিনি মরতে চান।
“রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!”
- তিনি বিভীষণকে জিজ্ঞেস করেন, কিভাবে তিনি রামের দাস হতে পারেন?
“স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে; পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি ধূলায়?”
- এখানে তিনি বিধির প্রতি আক্রমণ করছেন, যেন বিধি সঠিকভাবে কাজ করছে না।
“হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে কে তুমি?”
- মেঘনাদ বিভীষণকে মনে করিয়ে দেন, তিনি একজন রাক্ষস এবং তাঁর পরিচয় ভুলে গেছেন।
“জনম তব কোন মহাকুলে?”
- তিনি বিভীষণের জন্মের কুল ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করেন।
“কে বা সে অধম রাম?”
- তিনি রামকে অপমান করে জিজ্ঞেস করেন, রাম আসলে কি?
“স্বচ্ছ সরোবরে করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে;”
- মেঘনাদ রামের সৌন্দর্যকে নস্যাৎ করতে চান।
“যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে, শৈবালদলের ধাম?”
- তিনি বলেন, রাম কি কখনও নিচু অবস্থায় যেতে পারে?
“মৃগেন্দ্র কেশরী, কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে মিত্রভাবে?”
- তিনি বীরদের কাছে শান্তির কথা তুলে ধরছেন।
“অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি, অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।”
- তিনি বিভীষণকে অজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করেন।
“ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?”
- এখানে লক্ষ্মণের যোদ্ধা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
“কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা?”
- মেঘনাদ বিদ্রুপ করে প্রশ্ন করছেন, এটি কি ধরনের যোদ্ধা হওয়া?
“নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে এ কথা!”
- তিনি বলেন, লঙ্কার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা হাস্যকর।
“ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া এখনি!”
- মেঘনাদ বিভীষণকে সরে যেতে বলছেন।
“দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ, রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের!”
- তিনি বলেছেন, তিনি যুদ্ধের দৃশ্য দেখেছেন।
“কী দেখি ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?”
- মেঘনাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, কেন তিনি দুর্বল হতে পারেন?
“নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগভে পশিল দম্ভী;”
- তিনি নিজেদের শক্তি নিয়ে কথা বলছেন।
“আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।”
- তিনি বিভীষণকে বলছেন, নীচ মানুষদের শাস্তি দিতে।
“তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী!”
- মেঘনাদ বিভীষণের জন্মের প্রতি আক্রমণ করছেন।
“হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে ভ্রমে দুরাচার দৈত্য?”
- মেঘনাদ রাম ও লক্ষ্মণকে অপমান করছেন।
“প্রফুল্ল কমলে কীটবাস?”
- তিনি বিভীষণকে কটাক্ষ করে বলছেন, তিনি কি এই দুরবস্থায় থেকেছেন?
“কহ তাত, সহিব কেমনে হেন অপমান আমি, ভ্রাতৃ-পুত্র তব?”
- মেঘনাদ বিভীষণের কাছে প্রশ্ন করছেন, কীভাবে তিনি এই অপমান সহ্য করবেন?
“তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”
- মেঘনাদ বিভীষণের কাছে জানতে চাইছেন, তিনি কেন রামের সাহায্য করছেন?
“মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশিরঃ ফণী,”
- বিভীষণ নম্র হয়ে তার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন।
“মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী রাবণ-অনুজ,”
- বিভীষণ শঙ্কিত হয়ে বলছেন যে, তিনি দোষী নন।
“নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে তুমি!”
- বিভীষণ মেঘনাদের দোষী না হওয়ার কথা জানান।
“নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা এ কনক-লঙ্কা রাজা,”
- বিভীষণ জানাচ্ছেন, লঙ্কা রাজা তার নিজের দোষে ধ্বংস হচ্ছে।
“বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী;”
- তিনি বলেন, লঙ্কা পাপময় হয়ে গেছে।
“প্রলয়ে যেমতি বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!”
- তিনি রামচন্দ্রের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন।
“রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী তেঁই আমি।”
- তিনি রামের আশ্রয় নিচ্ছেন, আর তা নিয়ে গর্বিত।
“পরদোষে কে চাহে মজিতে?”
- তিনি বলেন, অন্যের দোষে কেন তিনি মারা যাবেন?
“রুষিলা বাসবত্রাস।”
- এখানে মেঘনাদ বিভীষণের কথা শুনে রেগে যান।
“গম্ভীরে যেমতি নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্ৰ কোপি,”
- তিনি বিভীষণের ধর্মভীরুতাকে অবজ্ঞা করেন।
“কহিলা বীরেন্দ্র বলী,—‘ধর্মপথগামী, হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে তুমি;”
- মেঘনাদ বিভীষণের বীরত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
“কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি, জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি?”
- তিনি জিজ্ঞেস করেন, বিভীষণ কি ধর্ম পালন করছেন?
“শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি পরজন, গুণহীন স্বজন,”
- তিনি ধর্মগ্রন্থের একটি শিক্ষার কথা তুলে ধরেন।
“তথাপি নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!”
- তিনি বলেন, একজন নিকৃষ্ট মানুষও শ্রেষ্ঠ।
“এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?”
- মেঘনাদ জানতে চান, বিভীষণ এ শিক্ষা কোথায় শিখেছেন।
“কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা!”
- তিনি বলেন, বিভীষণকে কিছুই লাভ হচ্ছে না।
“হেন সহবাসে, হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?”
- তিনি বিভীষণের মানবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
“গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।”
- তিনি বলেন, দুর্বলতার ফলে মানুষ কীভাবে বিপথগামী হয়।
Related Posts
- রেইনকোট গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- অপরিচিতা গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা ও সারমর্ম- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা