বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর (অনুধাবন)

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় স্বদেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাশাপাশি বিনয়ের সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে। কবি দেশমাতৃকাকে মা হিসেবে কল্পনা করে, তার কাছে নিজের ভুল-ভ্রান্তি, দোষ-মন্দিকে ক্ষমা চাইছেন। এই পোস্টে বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর (অনুধাবন) লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর

১।’বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মূলভাব কী?

উত্তর: ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মূল বক্তব্য হলো, কবি মধুসূদন দত্ত তার মাতৃভূমি বাংলা দেশকে নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করেন। কবি প্রবাসে থেকেও দেশমাতৃকার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশমাতৃকাকে মা হিসেবে ভাবেন এবং নিজেকে তার সন্তান হিসেবে কল্পনা করেন। কবি চায় তার সকল ভুল, দোষ দেশমাতৃকা ক্ষমা করে দিবেন, যেমন মা সন্তানকে সব ভুলের পরও ক্ষমা করেন। তার জীবনের সব সংকটের পরও, কবি চায় মায়ের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকতে।


২। কবি “মা” শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন?

উত্তর: কবি “মা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন দেশমাতৃকাকে শ্রদ্ধা জানাতে। মা একটি বিশেষ সম্পর্কের প্রতীক, যার মধ্যে অগাধ ভালোবাসা ও সহানুভূতি থাকে। কবি মনে করেন, মায়ের মতো দেশও তাকে সব দোষ ক্ষমা করবে। তিনি দেশকে নিজের মা হিসেবে ভাবেন এবং দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অগাধ। এইভাবে, কবি চায় দেশমাতৃকার কাছে মায়ের মতো ভালোবাসা ও দয়ার প্রাপ্তি।


৩। কবি কেন মনে করেন, “অমরতা” পাওয়ার যোগ্য নন?

উত্তর: কবি মনে করেন, তার মধ্যে এমন কোনো মহৎ গুণ নেই যার কারণে তিনি অমর হতে পারেন। তিনি নিজেকে একটি সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেন এবং মনে করেন, তিনি কোনো মহান কাজ করেননি যা তার অমরত্বের যোগ্যতা অর্জন করবে। তিনি নিজেকে বিনয়ী বলে মনে করেন, আর এই কারণেই তিনি অমরত্ব পাওয়ার আশা রাখেন না।


৪। কবি দেশমাতৃকার কাছে কী মিনতি করছেন?

উত্তর: কবি দেশমাতৃকার কাছে মিনতি করছেন যে, তিনি যেন দেশমাতৃকার মনে সবসময় ভালোভাবে রয়ে যান। কবি বলেন, যদি তার কোনো ভুল থাকে, তবে দেশমাতৃকা যেন সেই ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয় এবং তাকে ভালোবাসে। তিনি আরও বলেন, যদিও তার কোনো বিশেষ গুণ নেই, তবুও তিনি চান তার নাম দেশবাসীর মনে চিরকাল অমর হয়ে থাকুক। এভাবে তিনি দেশমাতৃকার কাছে ভালোবাসা ও ক্ষমা চেয়েছেন।


৫। “ফুটি যেন স্মৃতি-জলে, মানসে, মা, যথা ফলে”ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন: “স্মৃতি-জলে” কী বোঝায় এখানে? উত্তর: “স্মৃতি-জলে” বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, তার স্মৃতিগুলি যেন পরিস্কার এবং শুদ্ধ থাকে, যেন মনে কোনো মন্দ বা ভুল স্মৃতি না থাকে। কবি চান, তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, এবং দেশমাতৃকাকে উদ্দেশ্য করে তার জীবন যেন মানুষের মনের মধ্যে চিরকাল স্থায়ী হয়ে থাকে।


৬। কবি প্রবাসে থাকাকালীন কীভাবে দেশমাতৃকার স্মৃতি মনে করেন?

উত্তর: কবি প্রবাসে থাকলেও তার মন সবসময় দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদিত। তিনি যখন প্রবাসে ছিলেন, তখনও তার মনে দেশের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও মমতা ছিল। কবি জানান, প্রবাসে থাকলে তিনি দেশের স্মৃতিকে কখনো ভুলতে পারেননি। দেশমাতৃকা তার কাছে সবসময় মায়ের মতো ছিলেন, এবং প্রবাসে থেকেও তিনি তার প্রতি নিজের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।


৭। “ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “ধন্য নরকুলে” অর্থাৎ, সেই মানুষ যাকে সবাই মনে রাখবে এবং যার কার্যকলাপ মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, যে ব্যক্তি মানুষের জন্য কাজ করে এবং তাদের কল্যাণে কিছু দেয়, সে কখনও ভুলে যাওয়া যায় না। সেই ব্যক্তি সকলের মনে অমর হয়ে থাকে।


৮। কবি দেশমাতৃকার কাছে কীভাবে অমর হতে চান?

উত্তর: কবি দেশমাতৃকার কাছে অমর হতে চান পদ্মফুলের মতো, যা সুন্দর এবং পবিত্র। কবি চান, তার নাম দেশবাসীর মনে চিরকাল বেঁচে থাকুক, এবং দেশের ইতিহাসে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হোক। তিনি জানেন, তার মধ্যে কোনো মহান গুণ নেই, তবে তিনি চান দেশমাতৃকা তাকে ভালোভাবে স্মরণ করুক, যেমন পদ্মফুলের মতো তার নাম চিরকাল ধরে থাকুক।


৯। “জন্মিলে মরিতে হবে” কথার অর্থ কী?

উত্তর: কবি এই কথার মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন, জন্মের পর সবাইকে একদিন মৃত্যু বরণ করতে হয়, এটি একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। কেউ কোনোভাবে এই সত্য থেকে পালাতে পারে না, কারণ মৃত্যু আমাদের জীবনের অঙ্গ। কবি এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বলেছেন যে, মৃত্যুর পর কেউ অমর হতে পারে না, এবং আমাদের সবাইকে একদিন এই পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে।


১০। “মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে” লাইনটি কবির মায়ের প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন। কবি চায়, তার মায়ের মন যেন মধুর হয় এবং সেখানে কোনো রকম ক্ষোভ বা দুঃখের অনুভূতি না থাকে। মধুহীন মন কোনো ভালো কাজ বা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না, তাই কবি চায় দেশমাতৃকার মন সবসময় শান্ত এবং আনন্দময় থাকুক।


১১। “অমৃত-হ্রদে মক্ষিকা গলে না”ব্যাখ্যা কর।?

উত্তর: কবি “অমৃত-হ্রদে মক্ষিকা গলে না” কথাটি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে, অমৃত বা পবিত্র পরিবেশে মক্ষিকা থাকতে পারে না। মক্ষিকা অমৃত পান করতে চাইলেও, তার পাপ ও দুষণ তাকে অমৃত থেকে দূরে রাখে। এইভাবে, কবি জীবনের পবিত্রতা ও নৈতিকতা বোঝাতে চান, যেখানে কোনো নীচ আচরণ বা খারাপ মানুষ স্থান পায় না।


১২। কবি কেন “মনের মন্দিরে সদা” বলছেন?

উত্তর: কবি “মনের মন্দিরে সদা” বলছেন কারণ তিনি চান, তার মন সবসময় পবিত্র ও সৎ থাকে। “মন্দির” শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন তার অন্তরের শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে, যেখানে কোনো ধরনের মন্দ চিন্তা বা অহংকার প্রবেশ করতে পারে না। কবি চায় তার মন সবসময় সত্য, সুন্দর ও শুদ্ধতায় পূর্ণ থাকে, যাতে তিনি দেশের প্রতি তার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা বজায় রাখতে পারেন।


১৩। “তবে যদি রাখ মনে, নাহি, মা, ডরি শমনে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “শমন” শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন মৃত্যুর দেবতা হিসেবে, যারা মানুষের মৃত্যু নিয়ে কাজ করেন। কবি এখানে বলছেন, যদি তার মন শুদ্ধ থাকে, তবে তিনি মৃত্যুকে ভয় করবেন না। তিনি জানেন, মৃত্যুর সঙ্গী হওয়ার পর তার মৃত্যুর সময়ের জন্য কোনো দুঃখ বা ভয় থাকবে না, কারণ তিনি মনের দিক থেকে পরিপূর্ণ শান্তি অনুভব করবেন।


১৪। “ফুটি যেন স্মৃতি-জলে” বলতে কী বোঝাচ্ছেন?

উত্তর: কবি “ফুটি যেন স্মৃতি-জলে” বলতে চাচ্ছেন, তার কাজ এবং নাম যেন মানুষের মনে চিরকাল বেঁচে থাকে। “স্মৃতি-জলে” বলতে তিনি বোঝাচ্ছেন, তার নাম যেন মানুষের স্মৃতিতে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে এবং তারা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কবি চায়, তার জীবন ও কর্ম যেন সবার কাছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকে।


১৫। “মক্ষিকাও গলে না গো পড়িলে অমৃত-হ্রদে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: এখানে “মক্ষিকা” বলতে কবি মাছি বা ক্ষুদ্র প্রাণীকে বুঝিয়েছেন, এবং “অমৃত-হ্রদে” বলতে কবি মহা সুখ বা আনন্দের জায়গা বোঝাচ্ছেন। কবি এখানে বলছেন, যে মাছিও অমৃতের নদীতে পড়লে তা গলে যেতে পারে, অর্থাৎ যেকোনো প্রাণী বা ব্যক্তি পরিশুদ্ধ হতে পারে যদি তার মনটা শুদ্ধ থাকে। এই চরণে কবি দেশমাতৃকার শুদ্ধতা ও তার আশীর্বাদের প্রতি তার বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।


১৬। কবি কেন “শরৎ” এবং “বসন্ত” ঋতুর কথা বলেছেন?

উত্তর: কবি “শরৎ” এবং “বসন্ত” শব্দ ব্যবহার করেছেন জীবন ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বোঝাতে। শরৎ এবং বসন্ত ঋতু দুটি খুব সুন্দর, ফুলের ঋতু, যখন প্রকৃতি পূর্ণ প্রাণে ফোটে এবং সবকিছু জীবন্ত হয়ে ওঠে। কবি তার জীবনের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাকে এই ঋতুগুলির সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে সবকিছু সুন্দর এবং চিরকাল টেকে।


১৭। “প্রবাসে, দৈবের বশে” বলেছেন কেন?

উত্তর: কবি “প্রবাসে, দৈবের বশে” বলেছেন কারণ তিনি প্রবাসে রয়েছেন এবং তা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। “দৈবের বশে” বলতে তিনি বোঝাচ্ছেন, তার জীবনে যে পরিস্থিতি এসেছে, তা একেবারেই ঈশ্বরের ইচ্ছার মাধ্যমে হয়েছে। তিনি জানেন, তিনি দেশ থেকে দূরে রয়েছেন, তবে তার মন সবসময় দেশেই রয়েছে।


১৮। “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কবি এই লাইনটিতে জীবন ও মৃত্যুর প্রকৃতির কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, “জন্মিলে মরিতে হবে”, অর্থাৎ যেকোনো মানুষের জন্মের পর তাকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। তিনি জানাচ্ছেন, অমরতা একটি দূরবর্তী এবং অদ্বিতীয় ব্যাপার, এবং এটি মানুষের সাধ্যের বাইরে। কবি এখানে মৃত্যুর প্রাকৃতিক সত্যকে মেনে নিচ্ছেন।


১৯। কবি “অমৃত-হ্রদ” কথাটি দিয়ে কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: “অমৃত-হ্রদ” কথাটি কবি ব্যবহার করেছেন পবিত্রতা ও শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে। অমৃত হ্রদ একটি ধারণা, যেখানে শুধু পবিত্র আত্মা প্রবাহিত হয়। কবি এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা এবং মানুষের জীবনের শুদ্ধতা বোঝানোর জন্য।


২০। “প্রাণে, হৃদয়ে অমল” – এই লাইনটি কী বোঝায়?

উত্তর: “প্রাণে, হৃদয়ে অমল” কথাটি বোঝায় একজন মানুষের অন্তরের শুদ্ধতা এবং নিষ্কলুষতা। কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, তার অন্তর যেন সবসময় শুদ্ধ থাকে, এবং কোনো ধরনের পাপ, ক্ষোভ বা দোষ যেন সেখানে না থাকে। তিনি চান, তার হৃদয়ে দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকুক এবং কোনো অবিচার বা দুষ্টতা সেখানে প্রবেশ না করুক।


২১। কবি কেন “হেন অমরতা আমি” বলেছেন?

উত্তর: কবি “হেন অমরতা আমি” বলেছেন কারণ তিনি জানেন, তার মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ নেই যার কারণে তিনি অমর হতে পারেন। তবে, কবি তার কর্মের মাধ্যমে চায় মানুষের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিতে। তিনি মনে করেন, অমর হওয়ার জন্য একজন মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু গুণ থাকা উচিত, তবে তার মধ্যে এমন কিছু গুণ নেই। তবুও, তিনি দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে অমর হতে চান।


২২। “প্রবাসে, দৈবের বশে, জীব তারা যদি খসে”ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: এই লাইনটি কবি প্রবাসে থাকার কারণে তার জীবনের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেছেন, যদি তার জীবন একসময় শেষ হয়ে যায়, তবে সে বিষয়ে কোনো দুঃখ বা শোক তিনি করবেন না, কারণ এটি দৈবের কাজ। কবি এখানে মৃত্যুর অগ্রগতি মেনে নিতে চেয়েছেন, এবং জানাচ্ছেন যে, মৃত্যু এক অবশ্যম্ভাবী ঘটনা।


Related Posts

Leave a Comment