বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রমথ চৌধুরীর “বই পড়া” প্রবন্ধটি বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য রচনা, যেখানে লেখক বই পড়ার গুরুত্ব, উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে মানসিক ও আত্মিক উন্নতির কথা বলেছেন। এই পোস্টে বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। বিদ্যার সাধনায় গুরুকে উত্তর সাধক বলা হয়েছে কেন?

উত্তরঃ বিদ্যার সাধনায় গুরুকে উত্তর সাধক বলা হয়েছে কারণ গুরু শিষ্যকে শুধু পথ দেখান, কিন্তু শিষ্যকে নিজের চেষ্টায় বিদ্যা অর্জন করতে হয়। গুরু শিষ্যের আত্মাকে জাগ্রত করেন এবং তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তিগুলোকে মুক্ত করে দেন। এরপর শিষ্য নিজের চেষ্টায় নিজের মন ও জ্ঞান গড়ে তোলে। গুরু শুধু পথপ্রদর্শক, মূল কাজ শিষ্যকেই করতে হয়।


২। বই পড়া প্রবন্ধে লেখক লাইব্রেরীকে হাসপাতালের উপরে স্থান দিয়েছেন কেন?

উত্তরঃ লেখক লাইব্রেরীকে হাসপাতালের উপরে স্থান দিয়েছেন কারণ লাইব্রেরী মানুষের মন ও আত্মাকে সুস্থ করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষা অনেক সময় ছাত্রদের মনকে দুর্বল করে দেয়, কিন্তু লাইব্রেরীতে স্বেচ্ছায় বই পড়ে মানুষ নিজের মনকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এটি মনের হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে, যা মানুষের চিন্তাশক্তি ও মননশীলতা বাড়ায়।


৩। স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে মারাত্মক বলার কারণ কী?

উত্তরঃ স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে মারাত্মক বলা হয়েছে কারণ এখানে ছাত্রদের জোর করে বিদ্যা গেলানো হয়, যা তারা ঠিকভাবে হজম করতে পারে না। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে ছাত্রদের নিজের চিন্তা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না, বরং তারা শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করে। এর ফলে তাদের মন ও আত্মা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য ক্ষতিকর।


৪। স্বশিক্ষিত বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ স্বশিক্ষিত বলতে বোঝায় নিজের চেষ্টায় ও আগ্রহে জ্ঞান অর্জন করা। এতে কোনো গুরু বা শিক্ষকের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় না। স্বশিক্ষিত ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় বই পড়ে, চিন্তা করে এবং নিজের মনকে সমৃদ্ধ করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি নিজেই নিজের শিক্ষার দায়িত্ব নেয় এবং নিজের মনের বিকাশ ঘটায়।


৫। আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উল্টো কেন বলা হয়েছে বুঝিয়ে লেখ?

উত্তরঃ আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উল্টো বলা হয়েছে কারণ এখানে ছাত্রদের জোর করে বিদ্যা গেলানো হয়, যা তারা ঠিকভাবে হজম করতে পারে না। ছাত্ররা শুধু নোট মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করে, কিন্তু তাদের চিন্তা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকরা শুধু তথ্য দেন, কিন্তু ছাত্রদের নিজের চিন্তা করার সুযোগ দেন না। এর ফলে ছাত্রদের মন ও আত্মা দুর্বল হয়ে পড়ে।


৬। সেখানে ছেলেদের বিদ্যা গেলানো হয় কোথায় বুঝিয়ে লেখ?

উত্তরঃ স্কুল-কলেজে ছেলেদের বিদ্যা গেলানো হয়। এখানে শিক্ষকরা নোট দেন এবং ছাত্ররা তা মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাশ করে। এই পদ্ধতিতে ছাত্ররা শুধু তথ্য মুখস্থ করে, কিন্তু তা নিজের মতো করে বুঝে বা চিন্তা করে না। এর ফলে তাদের মন ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না, বরং তারা শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য বিদ্যা গেলায়।


৭। আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই কেন বুঝিয়ে লেখ?

উত্তরঃ আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই কারণ আমাদের জীবনযাত্রায় বেঁচে থাকাই প্রধান লক্ষ্য। আমাদের দেশে রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য এত বেশি যে, সুন্দর জীবনযাপন করাই কঠিন। তাই আমরা শখ বা আনন্দের জন্য বই পড়ি না, বরং শিক্ষা বা পেশাগত প্রয়োজনেই বই পড়ি। আমাদের কাছে বই পড়া শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম, আনন্দের উপায় নয়।


৮। প্রমথ চৌধুরীর মতে বই পড়া কেন মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ?
উত্তর: বই পড়া মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ, কারণ এটি মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে, নিজের চিন্তা-ভাবনাকে প্রসারিত করে এবং জীবনের গভীর সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে। এটি শুধু জ্ঞান নয়, আনন্দও দেয়, যা মানুষের মন ও আত্মাকে সুস্থ রাখে। লেখক মনে করেন, বই পড়া ছাড়া মানুষের মন ও আত্মার উন্নতি সম্ভব নয়।


৯। লেখক কেন বই পড়াকে শখ হিসেবে পরামর্শ দিতে চান না?
উত্তর: লেখক বই পড়াকে শখ হিসেবে পরামর্শ দিতে চান না, কারণ তিনি মনে করেন যে মানুষ তা গ্রাহ্য করবে না। আমাদের সমাজে বই পড়াকে শখ হিসেবে দেখা হয় না, কারণ আমরা শুধু টাকা-পয়সা আর চাকরির পিছনে ছুটি। অনেকেই বই পড়াকে কুপরামর্শ মনে করেন, কারণ তারা মনে করেন যে এই সময়ে শখ করার মতো সুযোগ নেই।


১০। আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা কী?
উত্তর: লেখকের মতে আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা হলো রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য এবং সুন্দর জীবনযাপনের সংগ্রাম। আমাদের সমাজে মানুষ শুধু টাকা-পয়সা আর চাকরির পিছনে ছোটে, কিন্তু জীবনকে সুন্দর ও মহৎ করার কথা ভাবে না। লেখক বলেছেন, আমাদের জীবনযাত্রায় এত সমস্যা আছে যে, বই পড়ার মতো আনন্দের জিনিসকে আমরা গুরুত্ব দিই না।


১১। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: লেখকের মতে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো জীবনকে সুন্দর ও মহৎ করা। তিনি বলেছেন, শিক্ষা শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, বরং আমাদের মনকে বড় করা, আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি।


১২। সাহিত্যচর্চা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: লেখকের মতে সাহিত্যচর্চা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানুষের মনকে আনন্দ ও প্রাণশক্তিতে ভরিয়ে তোলে। সাহিত্য শুধু গল্প-কবিতা নয়, এটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে গভীর সত্যকে প্রকাশ করে। সাহিত্যচর্চা মানুষের মনকে সরল, সচল ও সমৃদ্ধ করে। লেখক বলেছেন, সাহিত্যচর্চা ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃতভাবে উন্নত হতে পারে না।


১৩। স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতির সমস্যা কী?
উত্তর: লেখকের মতে স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান সমস্যা হলো এখানে ছাত্রদের শুধু নোট মুখস্থ করানো হয়, কিন্তু তাদের মনের বিকাশ হয় না। তিনি এটাকে ‘গেলা-ওগলানো’ পদ্ধতি বলেছেন, যেখানে ছাত্ররা শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য পড়ে, কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের জীবনে কাজে লাগে না। লেখক বলেছেন, এই পদ্ধতিতে ছাত্রদের মনের বিকাশ হয় না, তারা শুধু তথ্য মুখস্থ করে।


১৪। লাইব্রেরির গুরুত্ব কী?
উত্তর: লেখকের মতে লাইব্রেরির গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এখানে মানুষ স্বেচ্ছায় জ্ঞান অর্জন করতে পারে। তিনি লাইব্রেরিকে ‘মনের হাসপাতাল’ বলেছেন, কারণ এটি মানুষের মনকে সুস্থ ও সমৃদ্ধ করে। লাইব্রেরিতে মানুষ নিজের ইচ্ছায় বই পড়ে, নিজের মনকে উন্নত করে। লেখক বলেছেন, স্কুল-কলেজের চেয়ে লাইব্রেরি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


১৫। লেখকের মতে বই পড়া কেন প্রয়োজন?
উত্তর: লেখকের মতে বই পড়া প্রয়োজন, কারণ এটি আমাদের মন ও আত্মাকে সুস্থ রাখে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা জ্ঞান অর্জন করি, নিজের চিন্তা-ভাবনাকে প্রসারিত করি এবং জীবনের গভীর সত্যকে উপলব্ধি করতে পারি। লেখক বলেছেন, বই পড়া ছাড়া সাহিত্যচর্চার উপায়ান্তর নেই।


১৬। শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরির গুরুত্ব কি?
উত্তর: লেখকের মতে শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি হলো মনের হাসপাতাল। তিনি বলেছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতিতে ছাত্রদের মনের বিকাশ হয় না, কিন্তু লাইব্রেরিতে মানুষ স্বেচ্ছায় জ্ঞান অর্জন করতে পারে। লাইব্রেরি মানুষের মনকে সুস্থ ও সমৃদ্ধ করে। লেখক মনে করেন, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, কারণ এটি মানুষের মন ও আত্মাকে উন্নত করে।


১৭। জাতির প্রাণশক্তি কীসের উপর নির্ভর করে?
উত্তর: লেখকের মতে জাতির প্রাণশক্তি সাহিত্যচর্চা ও আনন্দের উপর নির্ভর করে। তিনি বলেছেন, সাহিত্যচর্চা মানুষের মনকে আনন্দ ও প্রাণশক্তিতে ভরিয়ে তোলে। আনন্দের স্পর্শ ছাড়া মানুষের মন ও আত্মা সুস্থ থাকে না। লেখক মনে করেন, সাহিত্যচর্চা ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃতভাবে উন্নত হতে পারে না। জাতির প্রাণশক্তি সাহিত্যচর্চা ও আনন্দের মাধ্যমেই বৃদ্ধি পায়।


Related Posts

Leave a Comment