ফেরা গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা

হাসান আজিজুল হকের ‘ফেরা’ গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধার মানস রূপান্তরের ধারাক্রম বর্ণিত হয়েছে এতে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলেফ। এই পোস্টে ফেরা গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

ফেরা গল্পের মূলভাব

“ফেরা” গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা আলেফের মানসিক পরিবর্তনের ধারা তুলে ধরা হয়েছে। আলেফ যুদ্ধ করতে গিয়ে পায়ে গুলি খায়। গুলি বের করার পর তার পায়ের কাটা-ছেঁড়া অংশ জোর করে সেলাই করে দেওয়া হয়। যদি গুলিটা আর একটু উপরে লাগত, তাহলে তার পুরো পা কেটে ফেলতে হতো। যুদ্ধ শেষে আলেফ বাড়ি ফিরে আসে। তার মা তাকে ফিরে পেয়ে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। আলেফ বাড়ি ফিরে তার স্ত্রীকেও দেখে, যে অভাবের কারণে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আলেফের স্ত্রী স্বাধীন দেশে এখন স্বপ্ন দেখে যে, তারা দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবে। তার কাছে স্বাধীনতার মানে হলো ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা। আলেফের মা আরও বেশি কিছু চান। তিনি মনে করেন, আলেফ যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে, তাই সরকারের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। সংসারের সচ্ছলতা ফেরানোর আশা তার মনে। কিন্তু আলেফের মনে তখন সহযোদ্ধা আমিনের পচা লাশের গন্ধ ভেসে আসে। আমিনও যুদ্ধে আহত হয়েছিল, তার পা কেটে ফেলার পর পুরো শরীর পচে যায়, এবং সে মারা যায়। দেশের জন্য এইভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে গ্রামগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তবে, যুদ্ধ শেষে দেশের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ভুলে যায়। যারা জীবন দিয়ে গেছেন কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছেন, তাদের যথাযথ সম্মান কেউ দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারও তাদের যথেষ্ট মর্যাদা দেয়নি। সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এ কারণে আলেফের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের মনে হতাশা এবং যন্ত্রণা বাসা বাঁধে। তারা প্রশ্ন করতে থাকে, যুদ্ধের জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করার কোনো অর্থ ছিল কি না।

ফেরা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফদের বাড়ি আগাগোড়া কীসে মোড়া ছিল?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পের আলেফদের বাড়ি আগাগোড়া কুয়াশায় মোড়া ছিল।

২। ‘ফেরা’ গল্পের আমিন কীভাবে মারা যায়?
উত্তর: যুদ্ধে আহত আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। তিন দিন পর সমস্ত শরীর পচে গিয়ে আমিন মারা যায়।

৩। ‘ফেরা’ গল্পে উল্লিখিত যুদ্ধে আহত হয়ে হাসপাতালে কে মারা যায়?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পে উল্লিখিত যুদ্ধে আহত হয়ে হাসপাতালে আমিন মারা যায়।

৪। ‘ফেরা’ গল্পে বর্ণিত যুদ্ধে কার পায়ে গুলি লেগেছিল?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পে বর্ণিত যুদ্ধে আলেফের পায়ে গুলি লেগেছিল।

৫। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ কখন বাড়িতে মায়ের কাছে পৌঁছায়?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ বাড়িতে ভোরবেলা মায়ের কাছে পৌছায়।

৬। হাসান আজিজুল হক কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

৭। ‘ফেরা’ গল্পের আমিনের বউ কোনটির মানে বুঝতে পেরেছিল?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পের আমিনের বউ ‘স্বাধীনতা’র মানে বুঝতে পেরেছিল।

৮। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফের বউ কখন আলেফদের বাড়িতে আসে?
উত্তর: আলেফের বউ শ্রাবণ মাসে আলেফদের বাড়িতে আসে।

৯। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ কী বলেছে?
উত্তর: ‘আমি যুদ্ধে গিইলাম ক্যানো?’ কথাটি ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ বলছে।

১০। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফদের গ্রামে আগুন দিয়েছে কে?
উত্তর: মিলিটারিরা আলেফদের গ্রামে আগুন দিয়েছে।

১১। ‘ফেরা’ গল্পে আলেফ এতদিন কোথায় ছিল?
উত্তর: আলেফ এতদিন নড়াইলে ছিল।

১২। ‘ফেরা’ গল্পে ‘তোর জন্যি মরিনি, তোর জন্যি বাঁচে আছি বাপ’— কে, কাকে বলছে?
উত্তর: ‘তোর জন্যি মরিনি, তোর জন্যি বাঁচে আছি বাপ’- কথাটি বলেছে আলেফের মা।

১৩। হাসান আজিজুল হক কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: হাসান আজিজুল হক ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

১৪। ‘ফেরা’ গল্পের রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পটির রচয়িতা হাসান আজিজুল হক।

১৫। ‘ফেরা’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পটি হাসান আজিজুল হক-এর ‘নামহীন গোত্রহীন’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

১৬। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিকের নাম লেখ।
উত্তর: বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

১৭। ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘আগুনপাখি’ কার রচিত গ্রন্থ?
উত্তর: ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘আগুনপাখি’— হাসান আজিজুল হক রচিত গ্রন্থ।

১৮। ‘ফেরা’ গল্পে ‘আমি মরতিছি নিজের জ্বালায়। সে কোঁয়ানে মরতিছে তার আমি কী জানি?’— কে বলেছে?
উত্তর: ‘আমি মরতিছি নিজের জ্বালায়। সে কোঁয়ানে মরতিছে তার আমি কী জানি’- কথাটি বলেছে আলেফের মা।

১৯। কারা বাড়িতে এসে আলেফের খোঁজ নেয়?
উত্তর: কতকগুলো ছ্যামড়া (ছেলে) বাড়িতে এসে আলেফের খোঁজ নেয়।

২০। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফদের বাড়ি কোথায়?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পের আলেফদের বাড়ি বেনেপুর।

২১। ‘ফেরা’ গল্পে আলেফের মায়ের সঙ্গে আলেফ কী কথা বলেছে?
উত্তর: ‘তোর জন্যি মরিনি, তোর জন্যি বাঁচে আছি বাপ’— কথাটি বলেছে আলেফের মা।

২২। ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ মায়ের কাছে কীভাবে পৌঁছায়?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ বাড়িতে ভোরবেলা মায়ের কাছে পৌছায়।

২৩। হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থের নাম লেখ।
উত্তর: হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থের নাম ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’।

২৪। ‘ফেরা’ গল্পে আলেফের বউ কখন বাড়িতে আসে?
উত্তর: আলেফের বউ শ্রাবণ মাসে আলেফদের বাড়িতে আসে।

২৫। ‘ফেরা’ গল্পের আমিন কীভাবে মারা যায়?
উত্তর: ‘ফেরা’ গল্পে যুদ্ধে আহত হয়ে আমিন মারা যায়।

ফেরা গল্পের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (MCQ)

১. হাসান আজিজুল হক কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
ক) ১৯৩৮ সালে
খ) ১৯৩৯ সালে
গ) ১৯২১ সালে
ঘ) ১৯৩৩ সালে
উত্তর: খ) ১৯৩৯ সালে

২. ‘আগুনপাখি’ রচনাটি কার লেখা?
ক) হাসান হাফিজুর রহমান
খ) মুস্তাফিজ আল হাসান
গ) হাসান আজিজুল হক
ঘ) শামসুর রাহমান
উত্তর: গ) হাসান আজিজুল হক

৩. কোন বঙ্গের মানুষের কথায় সামান্য একটু টান থাকে?
ক) পশ্চিমবঙ্গের
খ) দক্ষিণবঙ্গের
গ) পূর্ববঙ্গের
ঘ) উত্তরবঙ্গের
উত্তর: খ) দক্ষিণবঙ্গের

৪. ডান ঠ্যাংটা কেটে ফেলার কতদিন পর সমস্ত শরীর পচে গিয়ে আমিন মারা গেল?
ক) এক দিন
খ) দুই দিন
গ) তিন দিন
ঘ) চার দিন
উত্তর: গ) তিন দিন

৫. ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ কোথায় গিয়েছিল?
ক) ভারতে
খ) বাণিজ্যে
গ) নড়াইয়ে
ঘ) দিনাজপুরে
উত্তর: গ) নড়াইয়ে

৬. ‘ফেরা’ গল্পের আমিনের গ্রামের নাম কী?
ক) বেলেপুর
খ) বেলপুকুর
গ) বেনেপুর
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: গ) বেনেপুর

৭. ‘ফেরা’ গল্পের আলেফের বউ কবে ফিরে আসে?
ক) আশ্বিন মাসে
খ) শ্রাবণ মাসে
গ) ভাদ্র মাসে
ঘ) অগ্রহায়ণ মাসে
উত্তর: খ) শ্রাবণ মাসে

৮. ‘ফেরা’ গল্পের আলেফের বউ যুদ্ধকালীন সময়ে কোথায় ছিল?
ক) মলমপুর
খ) যশোহর
গ) মহিন্দ্রপুর
ঘ) মজমপুর
উত্তর: ঘ) মজমপুর

৯. হাসান আজিজুল হক কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
ক) ২০১২ সালে
খ) ২০১৮ সালে
গ) ২০২১ সালে
ঘ) ২০২২ সালে
উত্তর: গ) ২০২১ সালে

১০. হাসান আজিজুল হক-এর ‘নামহীন গোত্রহীন’ কী জাতীয় গ্রন্থ?
ক) উপন্যাস
খ) নাটক
গ) গল্পগ্রন্থ
ঘ) কাব্যনাট্য
উত্তর: গ) গল্পগ্রন্থ

Related Posts