ফাগুন মাস কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

হুমায়ুন আজাদের ‘ফাগুন মাস’ কবিতায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ফাল্গুন মাসের সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি একই সূত্রে গাঁথা। কেননা এ মাসেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঢাকার রাজপথ বাংলার সাহসী সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল । এই পোস্টে ফাগুন মাস কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

ফাগুন মাস কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
আলোকচিত্রটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক. ‘ফাগুন মাস’ কবিতার প্রথম চরণে ফাগুনকে কী বলা হয়েছে?

খ. ফাগুন মাসে কেন দুঃখী গোলাপ ফোটে? বুঝিয়ে লেখ।

গ. চিত্রকর্মটিতে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার বিষয়গত মিল দেখাও।

ঘ. “চিত্রকর্মটি ‘ফাগুন মাস’ কবিতার ভাবকে ধারণ করেছে।”-বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ

ক. ‘ফাগুন মাস’ কবিতার প্রথম চরণে ফাগুনকে ভীষণ দস্যি মাস বলা হয়েছে।

খ. ফাগুন মাস ভাষাশহিদদের স্মৃতিবিজড়িত বলে এ মাসে দুঃখী গোলাপ ফোটে।

‘ফাগুন মাস’ কবিতায় কবি শোক আর বেদনার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। এই মাসে আমরা ভাষাশহিদদের কথা ভেবে দুঃখ পাই এবং তাঁদের জন্য মমতা অনুভব করি। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের একদিকে দুঃখী করে তোলে, আবার অন্যদিকে সাহসীও করে তোলে। আমাদের সবার মনের ভেতরে গোলাপ ফুলের মতো ছোট ছোট শহিদ মিনার গড়ে ওঠে। এই অনুভূতি বোঝাতে গিয়ে কবি বলেছেন, “ফাগুন মাসে দুঃখী গোলাপ ফোটে।”

গ. চিত্রকর্মটিতে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার বিষয়গত মিল রয়েছে অর্থাৎ এখানে ভাষা আন্দোলন ও ভাষার জন্য আত্মত্যাগের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
উদ্দীপকের ছবিটি আমাদের ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ছবিতে বাংলা বর্ণমালা দেখা যায়, যা বাঙালির বড় গর্ব। ‘ফাগুন মাস’ কবিতায় কবি বলেছেন, কেন ফাগুন মাস আমাদের মনে সব সময় থাকবে। ১৯৫২ সালের ফাগুন মাসের ৮ তারিখে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলন হয় এবং অনেকেই শহিদ হন। মাতৃভাষার জন্য এই আত্মত্যাগ কবিতার শেষের দিকে তুলে ধরা হয়েছে। এসব দিক দেখে বলা যায়, ছবিটি ও ‘ফাগুন মাস’ কবিতাটি ভাষা আন্দোলন ও আত্মত্যাগের কথা একসঙ্গে মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. “চিত্রকর্মটি ‘ফাগুন মাস’ কবিতার ভাবকে ধারণ করেছে।”-বক্তব্যটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

বীর বাঙালি জাতি তাদের প্রিয় ভাষার শত্রুদের খুব সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করেছিল। এদেশের সাহসী সন্তানরা ভাষার জন্য যে জীবন দিয়েছে, তা তুলনাহীন। তাঁদের আত্মত্যাগ আর সাহস থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঙালি জাতি অনেক আন্দোলনে জয়ী হয়েছে।
‘ফাগুন মাস’ কবিতায় বলা হয়েছে, বাংলা মায়ের সাহসী সন্তানেরা জীবনের ভয় না করে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তাই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাঁরা জীবন দিতে পেরেছিলেন। এই আত্মত্যাগের কথা শুনে শিশুদের মাঝেও আত্মত্যাগের মতো ভালো গুণ জাগবে।
উদ্দীপকের ছবিটি দেখে শিশুরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইবে এবং এই ইতিহাসকে ভালোবাসবে। এই ইতিহাস বাঙালির গর্ব। তাই ছবিটি ভাষার জন্য আত্মত্যাগের গল্প ও ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নে যেটা বলা হয়েছে, তা যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
বন্ধুদের নিয়ে বাগানে পায়চারি করছিল শাওন। হঠাৎ তারা লক্ষ করল গাছের ডালপালায় সবুজ পাতা পল্লবিত হয়ে উঠেছে। আমের মুকুলে গুঞ্জন করছে মৌমাছি। পাতার আড়ালে শোনা যাচ্ছে কোকিলের মায়াবী কণ্ঠ। তখন সবাই বুঝতে পারল প্রকৃতিতে ধ্বনিত হচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা।

ক. ‘ফাগুন মাস’ কবিতার রচয়িতা কে?

খ. ‘ফাগুন মাসে সবুজ আগুন জ্বলে’- সবুজের আগুন বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন তা বর্ণনা কর।

গ. উদ্দীপকের দৃশ্যপটটি ‘ফাগুন মাস’ করিতার কোন অংশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার মূলভাব পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. ফাগুন মাস’ কবিতার রচয়িতা হুমায়ুন আজাদ।

খ. ফাগুন মাসে গাছে গাছে সবুজ রঙের নতুন পাতা গজায়। এই সবুজের সমারোহকেই ‘সবুজের আগুন’ বলা হয়েছে। বসন্ত ঋতুর প্রথম মাস হলো ফাগুন বা ফাল্গুন। এই মাসে গাছের ডালে ডালে নতুন সবুজ পাতা গজায়। সবুজ পাতার মাঝে মাঝে লাল রঙের অনেক ফুল ফোটে। ‘সবুজের আগুন’ বলার মাধ্যমে কবি বসন্তের সবুজে ভরা প্রকৃতিকেই বোঝাতে চেয়েছেন।

গ. উদ্দীপকের দৃশ্যপটটি ‘ফাগুন মাস’ কবিতার প্রথম অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। আলাদা আলাদা ঋতুতে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। এই রূপ দেখেই অনেক সময় বোঝা যায় কোন ঋতু চলছে।
উদ্দীপকে শাওন ও তার বন্ধুরা বসন্ত ঋতুর রূপ দেখেছে। তারা গাছের সবুজ পাতা, ফুলের গন্ধ, মৌমাছির গুনগুন শব্দ, আর কোকিলের ডাক দেখে বুঝতে পারে বসন্ত এসেছে। ‘ফাগুন মাস’ কবিতাতেও ঠিক এইভাবে বসন্তের আসার কথা বলা হয়েছে। কবি গাছপালার সবুজ রঙকে কল্পনা করেছেন সবুজ আগুন বলে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের দৃশ্য আর ‘ফাগুন মাস’ কবিতার প্রথম অংশের প্রকৃতির বর্ণনা এক রকম।

ঘ. উদ্দীপকে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার মূলভাব পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি- মন্তব্যটি যথার্থ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ওই দিন ছিল ফাল্গুন মাসের ৮ তারিখ। ভাষাশহিদদের সাহস আর আত্মত্যাগের কথা মনে করেই আজও প্রতিটি ফাল্গুন মাস যেন এক নতুন ভাব নিয়ে আসে। উদ্দীপকে শাওন ও তার বন্ধুরা দেখে, বাগানে গাছের ডালে নতুন পাতা গজিয়েছে, চারদিকে মুকুলের গন্ধ ছড়াচ্ছে, কোকিল মিষ্টি করে ডাকছে। মনে হয়, প্রকৃতি সব পুরনো কষ্ট ধুয়ে নতুন করে সেজে উঠেছে। বসন্তের আগমন যেন প্রকৃতিতে ঘটা করে জানানো হচ্ছে। ‘ফাগুন মাস’ কবিতায় বলা হয়েছে, ভাষাশহিদদের রক্তই যেন কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে। ভাষা আন্দোলনে সাহসী মানুষরা অংশ নিয়ে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করেছিল। তারা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল।

উদ্দীপকে ফাগুন মাসে প্রকৃতির পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। আর কবিতায় বলা হয়েছে মাতৃভাষার জন্য শহিদ হওয়া, ভাষা অর্জনের গৌরব, একুশের চেতনা, শোক আর বেদনার কথা—যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, প্রশ্নে যেভাবে মন্তব্য করা হয়েছে, তা যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩।
এ ভাষারই মান রাখিতে
হয় যদি বা জীবন দিতে
কোটি ভাইয়ের রক্ত দিয়ে পুরাবে এর মনের আশা।

ক. ‘লাল নীল দীপাবলি’ হুমায়ুন আজাদের কোন ধরনের রচনা?

খ. ফাগুন মাসে মায়ের চোখে জল আসে কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘ফাগুন মাস’ কবিতার আলোকে বাঙালির আত্মদানের স্বরূপ, বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪।
একুশে নিহিত মাতৃভাষাকে লালনের নিরাপত্তা,
একুশে নিহিত অনুভূতি আর আমাদের জাতিসত্তা।
একুশ রেখেছে বাংলা ভাষাকে
সুন্দর পরিপূর্ণ,
একুশে রেখেছে আমাদের যত
চেতনাকে অক্ষুণ্ণ।

ক. হুমায়ুন আজাদ কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?

খ. “ফাগুন তার আগুন দেয় জ্বেলে।”- ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে?

ঘ. “একুশে ফেব্রুয়ারিই বাঙালির জীবনে সাহসের উৎস”- উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার এটিই মূল বিষয়। মন্তব্যটি বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫।
সালাম সালাম হাজার সালাম
শহিদ ভাইয়ের স্মরণে
আমার এ গান রেখে যেতে চাই
তাঁদের স্মৃতির চরণে

ক. পাথর ঠেলে কী মাথা উঁচায়?

খ. “ফাগুন মাসে সবুজ আগুন জ্বলে”- ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকটিতে প্রকাশ পেয়েছে ভাষাশহিদদের প্রতি বাঙালির কৃতজ্ঞতা”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
ভিড়ের মধ্যে ক্ষুদে টোকাই লখাকে ঠিকই দেখা যাচ্ছে। তাকে চিনতে কষ্ট হয় না। সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে চলছে-আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? কিন্তু তার গলা দিয়ে কথা তো ফোটে না, শুধু শব্দ হয় আঁ আঁ আঁ।

ক. কেমন ডাল ফেড়ে সবুজ পাতা বেড়ে ওঠে?

খ. “কান্নারা সব ডুকরে ওঠে মনে।”- কবি কেন এ কথাটি বলেছেন?

গ. উদ্দীপকের টোকাই লখার মাঝে ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফাগুন মাস’ করিতার আংশিক ভাবের ধারক।” মন্তব্যটি সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
সাভারে গিয়েছ স্মৃতিসৌধের পাশে তিরিশ লক্ষ শহিদের স্মৃতি ভাসে।
সেখানে সাহসী বীর যোদ্ধার দন্ড তাঁদের রক্তে এই সৌধের স্তম্ভ।
ইতিহাসে তাঁরা হৃদয়ে সমুজ্জ্বল
তোমরা সেখানে শ্রদ্ধায় উচ্ছল।

ক. ‘লাল নীল দীপাবলি’ গ্রন্থের লেখক কে?

খ. ফাগুন মাসে বনে গোলাপ কাঁদে কেন?

গ. উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ এবং ‘ফাগুন মাস’ কবিতার শহিদ মিনার দুটিই বাঙালি জাতির কাছে সমান মর্যাদার।”- মন্তব্যটি। বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো
একুশে ফেব্রুয়ারি আজো জালিমের কারাগারে
মরে বীর ছেলে বীর-নারী
আমার শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে
মাঠে ঘাটে বাঁকে

ক. কবি কোন মাসকে ভীষণ দস্যি বলেছেন?

খ. “ফাগুন মাসে বোনেরা ওঠে কেঁদে।”- ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকটি ‘ফাগুন মাস’ কবিতার কোন বিষয়টির ইঙ্গিত দেয়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “বিষয়গত সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব ‘ফাগুন মাস’ কবিতার মূলভাবের সঙ্গে একাত্ম নয়।”- মূল্যায়ন কর।

নিচে উত্তরসহ ফাগুন মাস কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

ফাগুন মাস কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

Related Posts

Leave a Comment