হুমায়ুন আজাদের ‘ফাগুন মাস’ কবিতাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ফাল্গুন মাসের সঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি একই সূত্রে গাঁথা। ১৯৫২ সালের এই মাসেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঢাকার রাজপথ বাংলার সাহসী সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। নিচে ফাগুন মাস কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
ফাগুন মাস কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। কবিতায় ফাগুন মাসকে “দস্যি মাস” বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ফাগুন মাসকে “দস্যি মাস” বলা হয়েছে কারণ এই মাসে প্রকৃতি তার সমস্ত শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়। পাথর ঠেলে ঘাস গজায়, গাছের ডাল ফেঁড়ে নতুন পাতা বের হয়, এবং প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। এই জন্য কবি ফাগুন মাসকে দস্যির সাথে তুলনা করেছেন।
২। কবিতায় পাথর ঠেলে ঘাস গজানোর মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: পাথর ঠেলে ঘাস গজানোর মাধ্যমে প্রকৃতির অদম্য শক্তিকে বোঝানো হয়েছে। এটি জীবনের সংগ্রাম এবং অস্তিত্বের প্রতীক। কবি দেখাতে চেয়েছেন যে, কঠিন বাধা ভেদ করেও জীবন জেগে ওঠে।
৩। কবিতায় “সবুজ আগুন জ্বলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: “সবুজ আগুন জ্বলে” বলতে প্রকৃতির প্রাণশক্তিকে বোঝানো হয়েছে। ফাগুন মাসে গাছপালা নতুন পাতায় ভরে ওঠে, যা সবুজের সমারোহ তৈরি করে। এই সবুজের বিস্তারকে কবি আগুনের সাথে তুলনা করেছেন, কারণ এটি প্রাণবন্ত এবং উদ্দীপক।
৪। কবিতায় ফাগুন মাসকে “দুঃখী মাস” বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ফাগুন মাসকে “দুঃখী মাস” বলা হয়েছে কারণ এই মাসে বাংলার ভাষা আন্দোলনের বেদনাদায়ক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের স্মৃতি এই মাসে ফিরে আসে। তাই এটি শোক ও বেদনার মাস।
৫। কবিতায় গোলাপ কাঁদে কেন?
উত্তর: কবিতায় গোলাপ কাঁদে কারণ এটি মানবিক বেদনা এবং শোকের প্রতীক। গোলাপের কান্না ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মৃতিকে স্মরণ করে। কবি প্রকৃতির মাধ্যমে মানুষের আবেগকে প্রকাশ করেছেন।
৬। কবিতায় মায়ের চোখে জল আসে কেন?
উত্তর: কবিতায় মায়ের চোখে জল আসে কারণ ফাগুন মাসে শহিদ পুত্রের স্মৃতি মায়ের মনে ভেসে ওঠে। ভাষা আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের মায়েরা এই মাসে তাদের সন্তানদের হারানোর বেদনা অনুভব করেন।
৭। কবিতায় বোনেরা কাঁদে কেন?
উত্তর: কবিতায় বোনেরা কাঁদে কারণ তারা হারানো ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি শোক প্রকাশ করে। ভাষা আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের বোনেরা এই মাসে তাদের ভাইদের স্মরণ করে কাঁদে।
৮। কবিতায় “দস্যু আসে রথে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: “দস্যু আসে রথে” বলতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকদের নির্মমতা বোঝানো হয়েছে। তারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিকে দমন করতে নির্যাতন ও হত্যা চালিয়েছিল। কবি তাদের দস্যু বলে অভিহিত করেছেন।
৯। কবিতায় ভাইয়েরা পথে নামে কেন?
উত্তর: কবিতায় ভাইয়েরা পথে নামে কারণ তারা শহিদদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগ্রামে অংশ নেয়। এটি বাংলার তরুণদের সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক। ভাইয়েরা শহিদদের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে।
১০। কবিতায় ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে কেন?
উত্তর: কবিতায় ফাগুন মাসে রক্ত ঝরে পড়ে কারণ এই মাসে বাংলার বীর সন্তানরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। এটি ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। রক্ত ঝরার মাধ্যমে কবি শহিদদের বীরত্ব এবং বাংলার মানুষের সংগ্রামের কথা বলেছেন।
১১। “বুকের ভেতর শহিদ মিনার ওঠে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: “বুকের ভেতর শহিদ মিনার ওঠে” বলতে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোঝানো হয়েছে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে শহিদ মিনার গড়ে ওঠে, যা তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে অমর করে রাখে। এটি বাংলার মানুষের দেশপ্রেম এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ।
১২। কবিতায় বনের গাল লাল হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: বনের গাল লাল হওয়ার কারণ ফাগুন মাসে গাছে গাছে লাল ফুল ফোটে। এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং রঙিন রূপকে প্রকাশ করে। কবি প্রকৃতির এই রূপকে জীবন্ত করে তুলেছেন। লাল রঙ প্রাণশক্তি এবং আবেগের প্রতীক।