সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘প্রবাস বন্ধু’ আবদুর রহমানের সঙ্গে লেখকের এই অভিজ্ঞতা খুবই মজার এবং হৃদয়গ্রাহী। তার বিশালদেহ, শক্তিশালী শরীর, এবং আন্তরিক ব্যবহার গল্পটিকে রম্যভঙ্গিতে তুলে ধরে। এই পোস্টে প্রবাস বন্ধু গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
প্রবাস বন্ধু গল্পের মূলভাব
এই গল্পটি কাজী আবদুর রহমান নামের এক বিশালদেহী আফগান সহকারীকে কেন্দ্র করে লেখা। লেখক খাজামোল্লা গ্রামে বাস করছেন, যা কাবুল থেকে আড়াই মাইল দূরে। তাঁর বাসার কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে আবদুর রহমানকে, যিনি একসময় সৈন্য হিসেবে কাজ করেছেন। লেখক তাকে “সব কাজের কাজি” বলে উল্লেখ করেছেন। আবদুর রহমান লম্বায় ছয় ফুট চার ইঞ্চি, বিশালদেহী এবং শক্তিশালী, কিন্তু শান্ত স্বভাবের। আবদুর রহমান অত্যন্ত দক্ষ রাঁধুনি, এবং তিনি কাবাব, পোলাও, ফালুদা ইত্যাদি আফগান খাবার রান্না করতে পারেন। তার ব্যবহারে কোনো অহংকার নেই, বরং তিনি অত্যন্ত বিনীত। কাবুলের পরিবেশের বিষয়ে তার মন্তব্যগুলো তার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার পরিচয় দেয়। তিনি লেখককে পানশিরে আসার আমন্ত্রণ জানান, যেখানে বরফে ঢাকা পরিবেশে আরাম এবং প্রশান্তি উপভোগ করা যায়। গল্পে লেখকের বর্ণনা অত্যন্ত রম্যভঙ্গিতে আবদুর রহমানের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে। তার বিশাল আকার, দেহের গঠন এবং হাস্যকর পরিস্থিতিগুলো গল্পটিকে আরো আকর্ষণীয় করেছে।
প্রবাস বন্ধু গল্পের মূলভাব বড় করে
এই গল্পটি শুরু হয় আফগানিস্তানের খাজামোল্লা গ্রামে, যেখানে লেখক বসবাসের জন্য একটি বাড়ি পান। এই গ্রামটি কাবুল শহর থেকে আড়াই মাইল দূরে অবস্থিত। সঙ্গে সঙ্গেই লেখক একটি কাজের লোক পান, যার নাম আবদুর রহমান। স্থানীয় অধ্যক্ষ জিরা তাকে লেখকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং জানান, আবদুর রহমান খুবই কর্মঠ ও বহুমুখী কাজের মানুষ। তিনি সব ধরনের কাজ করতে পারেন—জুতো পালিশ থেকে রান্নাবান্না এবং প্রয়োজনে আরো কঠিন কাজও। এই পরিচয়ই বলে দেয়, আবদুর রহমান একজন দক্ষ এবং দায়িত্ববান কর্মী।
আবদুর রহমানের চেহারা প্রথমেই লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সে ছয় ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, তার হাত দুই হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, আর আঙুলগুলো যেন দুটো কলার ছড়ির মতো ঝুলছে। তার পা এত বড় যে তা নৌকার মতো দেখায়, আর তার কাঁধ এত চওড়া যে লেখকের মনে হয়, সে যেন গোটা আফগানিস্তান কাঁধে তুলে নিতে পারবে। তার মুখমণ্ডল বড়, বিশাল নাক এবং ফর্সা চামড়া, যার উপর উঁচুনিচু রেখার জাল যেন আফগানিস্তানের পাহাড়ি মানচিত্রের মতো ফুটে উঠেছে। তবু তার চোখ সবসময় মাটির দিকে নিবদ্ধ থাকে, যেন গুরুজনদের সামনে সরাসরি তাকানো তার জন্য বারণ। আবদুর রহমানের চোখ বিশেষভাবে লেখকের নজর কাড়ে। তার চোখের রং লেখকের কাছে চিনেমাটির পাত্রের মতো ধূসর দেখায়। প্রথমে এই বিশালদেহী মানুষটির উপস্থিতি লেখকের মনে ভয় ধরিয়ে দিলেও পরে তার আন্তরিক ব্যবহার এবং দক্ষতায় ভরসা পান। আবদুর রহমান নিজে জানান, তিনি একসময় সেনাবাহিনীর মেসের দায়িত্বে ছিলেন, যা তার কাজের প্রতি পেশাদারিত্বের আরেকটি উদাহরণ।
একদিন লেখক আবদুর রহমানকে বাজার থেকে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে পাঠান। লেখক যখন কাবুল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন, তখন দেখেন আবদুর রহমান একটি বিশাল বোঝা নিয়ে হেঁটে আসছে। এত ভারী বোঝা দেখে লেখক তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন সে মুটে ভাড়া করেনি। উত্তরে আবদুর রহমান বলে, “যে বোঝা আমি বইতে পারি না, তা আর কেউ পারবে না।” তার এই দম্ভ ভরা কথা কিন্তু বাস্তবতার প্রমাণ। রাতের খাবার হিসেবে আবদুর রহমান অসাধারণ এক ভোজের আয়োজন করে। ডাবর ভরা মাংসের কোরমা, বোম্বাই সাইজের শামী কাবাব, কোফতা পোলাও এবং আস্ত মুরগির রোস্ট দেখে লেখক অভিভূত হন। এত বিশাল আয়োজন দেখে লেখক বুঝতে পারেন, আবদুর রহমান একসঙ্গে অনেক লোকের জন্য রান্না করতে অভ্যস্ত। যদিও এত খাবার লেখক একা খেতে পারতেন না, তবুও তিনি ধীরে ধীরে সবকিছু খাওয়ার চেষ্টা করেন, আর আবদুর রহমান পাশে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল। রাতের খাবার শেষে আবদুর রহমান ফালুদা নিয়ে আসে, যা লেখক বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। এরপর সে বরফে ঢাকা আঙুর এনে একে একে বরফে ঘষে ঠান্ডা করে পরিবেশন করে। লেখক এতটাই তৃপ্ত যে, তার শরীর এতো ঠান্ডা আঙুর নিতে রাজি নয়, তবুও তিনি সেগুলো খাওয়ার ভান করেন।
পরদিন সকালে, আবদুর রহমান বাদাম ও আখরোট নিয়ে আসে, নিজেই সেগুলোর খোসা ছাড়তে শুরু করে। লেখকের খাওয়া দেখে সে অসন্তুষ্ট হয়ে বলে, “আপনি তো তেমন কিছু খাননি!” লেখক মুচকি হেসে বলেন, “তোমার মতো বিশাল শরীরের তুলনায় আমি ছোট, তাই আমার খাওয়ার পরিমাণও তো কম!” আবদুর রহমান একসময় তার গ্রামের গল্প বলতে শুরু করে, বিশেষ করে তার প্রিয় পানশির উপত্যকার। সে বর্ণনা করে কিভাবে সেখানে শীতকালে বরফ পড়ে, আর গ্রামের লোকেরা কীভাবে শীতে বসে আরাম করে কাটায়। লেখককে সেখানকার শীতের আমন্ত্রণ জানিয়ে সে খুবই উৎসাহী হলেও, লেখক সেভাবে আগ্রহ দেখান না। আবদুর রহমানের সঙ্গে লেখকের এই অভিজ্ঞতা সহজ-সরল, কিন্তু মজার। তার বিশাল দেহ, উদারতা এবং আন্তরিক ব্যবহার লেখকের মনে গভীর ছাপ ফেলে, যা গল্পের প্রতিটি মুহূর্তে ফুটে ওঠে।
প্রবাস বন্ধু গল্পের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর (MCQ)
১। গল্পের নায়ক কোথায় বাসা পেয়েছিলেন?
ক) কাবুল শহরে
খ) খাজামোল্লা গ্রামে
গ) পানশি অঞ্চলে
ঘ) কাবুল নদীর পাড়ে
উত্তরঃ খ) খাজামোল্লা গ্রামে
২। আবদুর রহমানের জাতি কী ছিল?
ক) পাঠান
খ) জিরার
গ) তাজিক
ঘ) উজবেক
উত্তরঃ খ) জিরার
৩। আবদুর রহমানের উচ্চতা কত ছিল?
ক) ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি
খ) ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি
গ) ৭ ফুট
ঘ) ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
উত্তরঃ খ) ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি
৪। আবদুর রহমান আগে কী কাজ করত?
ক) রেস্তোরাঁয় রাঁধুনি
খ) পল্টনে মেসের চার্জে
গ) কৃষক
ঘ) দর্জি
উত্তরঃ খ) পল্টনে মেসের চার্জে
৫। আবদুর রহমান কোন খাবার বানাতে পারত?
ক) পোলাও, কোরমা, কাবাব, ফালুদা
খ) বিরিয়ানি, হালিম
গ) স্যুপ, স্যান্ডউইচ
ঘ) পাস্তা, পিজা
উত্তরঃ ক) পোলাও, কোরমা, কাবাব, ফালুদা
৬। কাবুলে বরফ কোথা থেকে আনা হতো?
ক) বাজার থেকে কিনে
খ) পাগমান পাহাড়ের গর্ত থেকে
গ) বিদেশ থেকে আমদানি করে
ঘ) ফ্রিজে তৈরি করে
উত্তরঃ খ) পাগমান পাহাড়ের গর্ত থেকে
৭। গল্পের শেষে লেখক পানশি যাওয়ার কথা বলেন কেন?
ক) শীতকালীন খেলার জন্য
খ) আবদুর রহমানের বর্ণনায় মুগ্ধ হয়ে
গ) ব্যবসার জন্য
ঘ) পড়াশোনার জন্য
উত্তরঃ খ) আবদুর রহমানের বর্ণনায় মুগ্ধ হয়ে
৮। ফালুদা বানানোর জন্য কী প্রয়োজন?
ক) বরফ
খ) দুধ
গ) ঘি
ঘ) মিষ্টি সিরাপ
উত্তরঃ ক) বরফ
৯। কাবুলি চায়ের বিশেষত্ব কী?
ক) দুধ দেওয়া হয় না, ফিকে হলদে রং
খ) খুব মিষ্টি
গ) কফির মতো গাঢ়
ঘ) আদা দিয়ে বানানো
উত্তরঃ ক) দুধ দেওয়া হয় না, ফিকে হলদে রং
১০। আবদুর রহমানের জন্মস্থান কোথায়?
ক) কাবুল
খ) পানশি
গ) হেরাত
ঘ) কান্দাহার
উত্তরঃ খ) পানশি
১১। পানশির শীতকালের বর্ণনায় কী বলা হয়েছে?
ক) গরম পড়ে প্রচণ্ড
খ) বৃষ্টি হয় অবিরাম
গ) বরফ পড়ে দিনের পর দিন
ঘ) ধুলোঝড় হয়
উত্তরঃ গ) বরফ পড়ে দিনের পর দিন
১২। আবদুর রহমান কেন লেখককে বেশি খেতে বলছিল?
ক) রান্না বেশি করে ফেলেছিল
খ) কাবুলের আবহাওয়া খারাপ বলে
গ) লেখককে মোটাতাজা করতে চেয়েছিল
ঘ) তার নিজের ক্ষিদে ছিল
উত্তরঃ খ) কাবুলের আবহাওয়া খারাপ বলে
১৩। লেখক আবদুর রহমানকে কী বলেছিলেন শীতকাল নিয়ে?
ক) “আমি পানশি যাব না”
খ) “তুমি নিজে যাও”
গ) “শীত আমার পছন্দ নয়”
ঘ) “তুমি জানালার পাশে বসলে আমার রান্না কে করবে?”
উত্তরঃ ঘ) “তুমি জানালার পাশে বসলে আমার রান্না কে করবে?”
১৪। আবদুর রহমানের হাত কেমন ছিল?
ক) খুব ছোট
খ) পাতলা
গ) হাঁটু পর্যন্ত লম্বা
ঘ) মোটা
উত্তরঃ গ) হাঁটু পর্যন্ত লম্বা
১৫। আবদুর রহমানের গালের রং কেমন ছিল?
ক) ফর্সা
খ) হলদে
গ) লালচে
ঘ) কালো
উত্তরঃ গ) লালচে
১৬। লেখক কাবুলে কয়টি ‘নরদানব’ দেখেছিলেন?
ক) ১টি
খ) ২টি
গ) ৩টি
ঘ) ৪টি
উত্তরঃ খ) ২টি
১৭। আবদুর রহমানের নাক-কপালের বর্ণনা কী ছিল?
ক) সোজা
খ) চ্যাপ্টা
গ) এবড়ো-খেবড়ো
ঘ) লম্বা
উত্তরঃ গ) এবড়ো-খেবড়ো
১৮। আবদুর রহমান কীভাবে বাজার থেকে জিনিসপত্র আনত?
ক) মুটে ভাড়া করে
খ) গাধার পিঠে চাপিয়ে
গ) সমস্ত বোঝা নিজেই বহন করে
ঘ) গাড়িতে করে
উত্তরঃ গ) সমস্ত বোঝা নিজেই বহন করে
১৯। লেখক আবদুর রহমানের রান্না সম্পর্কে কী মনে করতেন?
ক) স্বাদহীন
খ) খুব ভালো, কিন্তু পরিমাণ অত্যধিক
গ) কম মসলাদার
ঘ) অখাদ্য
উত্তরঃ খ) খুব ভালো, কিন্তু পরিমাণ অত্যধিক
২০। পানশির বাতাসের বর্ণনা কী রকম?
ক) দূষিত
খ) আর্দ্র
গ) ধুলোমুক্ত, তাজা, প্রাণবন্ত
ঘ) গরম
উত্তরঃ গ) ধুলোমুক্ত, তাজা, প্রাণবন্ত
২১। আবদুর রহমান লেখককে কী খেতে দিয়েছিল ডেজার্ট হিসেবে?
ক) রসগোল্লা
খ) ফালুদা ও বরফি আঙুর
গ) পায়েস
ঘ) হালুয়া
উত্তরঃ খ) ফালুদা ও বরফি আঙুর
২২। লেখক কেন আঙুর খেতে অসুবিধা বোধ করেছিলেন?
ক) টক ছিল
খ) অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ায়
গ) বেশি মিষ্টি ছিল
ঘ) পচে গিয়েছিল
উত্তরঃ খ) অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ায়
২৩। আবদুর রহমানের কথায় পানশির মানুষ কীভাবে চলে?
ক) ঘোড়ায় চড়ে
খ) বাতাসের ওপর ভর করে উড়ে
গ) ধীরে হেঁটে
ঘ) গাধায় চড়ে
উত্তরঃ খ) বাতাসের ওপর ভর করে উড়ে
২৪। লেখক আবদুর রহমানকে কীসের জন্য ভয় পেতেন?
ক) তার অলসতা
খ) তার বিশালাকার দেহ ও শক্তি
গ) তার মিথ্যাবাদিতা
ঘ) তার রাগ
উত্তরঃ খ) তার বিশালাকার দেহ ও শক্তি