লীলা মজুমদারের ‘পাখি’ গল্পটিতে পাখিটির সেরে ওঠার প্রতিটি ধাপ থেকে কুমু নিজেও সুস্থ হবার প্রেরণা পায়। পাখিটির প্রতি দুজন কিশোর-কিশোরীর অকৃত্রিম মমত্ববোধ ও সমবেদনা গল্পটিকে এক অনন্য মাত্রায় উন্নীত করেছে। এই পোস্টে পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন] সহপাঠীদের সাথে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি বিড়াল ছানার করুণ ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায় শ্রেয়সী। হঠাৎ দেখে রাস্তার পাশে একটি গর্তে একটি বিড়াল ছানা আটকে আছে। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে শ্রেয়সী সেটিকে পরিষ্কার করে কোলে তুলে নেয়। বাড়িতে ফেরার পর শ্রেয়সীর সেবা-যত্নে বিড়াল ছানাটি যেন প্রাণ ফিরে পেল। খুব অল্প সময়ে সে তাদের পরিবারেরই একজন হয়ে উঠল। কিন্তু ওর ভাই সুজা তাকে সহ্য করতে পারত না, প্রায়ই মারধর করত। একদিন শ্রেয়সী স্কুল থেকে ফিরে বিড়াল ছানাটিকে আর খুঁজে পেল না। ক. হাঁসরা গিয়ে কোথায় নামল? খ. কুমু-লাটুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না কেন? গ. শ্রেয়সীর মাধ্যমে ‘পাখি’ গল্পের কোন বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘সুজার মানসিকতা কুমু বা লাটুর মতো হলে বিড়াল ছানাটিকে হারাতে হতো না শ্রেয়সীর।’- বিশ্লেষণ কর। |
উত্তরঃ
ক. হাঁসরা গিয়ে বিলের ওপর নামল।
খ. কুমু-লাটুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না কারণ পাখিটি ক্রমাগত উড়তে লাগল। কুমু আর লাটুর যত্ন আর নিজের চেষ্টায় পাখিটা আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠেছে। যে পাখায় গুলি লেগেছিল, সেটা এখন ঠিক হয়ে গেছে। এখন পাখিটা উড়তে পারে, তবে খুব ভালোভাবে নয়।
একদিন যখন বুনো হাঁসেরা উড়তে শুরু করল, তখন পাখিটাও অনেক উঁচু পর্যন্ত উড়ে গেল। কিন্তু পরে আবার নেমে এলো। তখন হাঁসেরাও নিচে নেমে এল। সারারাত বিশ্রাম নেওয়ার পর, পরদিন সকালে হাঁসেরা আবার আকাশে উড়ল। তখন পাখিটাও তাদের সঙ্গে উড়তে লাগল। যদিও সে একটু পেছনে ছিল, কিন্তু কুমু আর লাটুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না যে সে এখন যেভাবে উড়ছে, তাতে শিগগিরই সবাইকে ধরে ফেলবে।
গ. শ্রেয়সীর মাধ্যমে ‘পাখি’ গল্পের প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মমত্ববোধ মানুষের একটি বিশেষ গুণ, যা পশু-পাখির প্রতিও প্রকাশ পায়। এই গুণের কারণেই মানুষ পশু-পাখি পোষে এবং অসহায় প্রাণীদের সেবা করে ভালো করে তোলে।’পাখি’ গল্পে কুমু ও লাটুর মধ্যে পাখির প্রতি এই মমত্ববোধ দেখা যায়। তারা একটি আহত বুনো হাঁসকে ভালো করে তোলার জন্য সেবা-যত্ন করে। তাদের সহযোগিতায় পাখিটি সব বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। এই প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ দেখা যায় উদ্দীপকের শ্রেয়সীর মাঝেও। সে গর্তে পড়ে থাকা একটি ছোট বিড়াল ছানাকে তুলে এনে পরিষ্কার করে কোলে নেয়। তারপর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার যত্ন নেয়। এই যত্নেই বিড়ালটি নতুন জীবন পায় এবং খুব অল্প সময়েই সে শ্রেয়সীদের পরিবারের একজন হয়ে যায়।
ঘ. “সুজার মানসিকতা কুমু বা লাটুর মতো হলে বিড়াল ছানাটিকে হারাতে হতো না শ্রেয়সীর”- মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে শ্রেয়সীর ভাই সুজা এমনই একজন নিষ্ঠুর মানুষ। তার বোন শ্রেয়সী পশু-পাখিকে ভালোবাসলেও সুজা তা একদমই পছন্দ করে না। তাই শ্রেয়সী যে বিড়াল ছানাটি রাস্তায় থেকে তুলে এনেছিল, সুজা সেটিকে মারধর করে। এই কারণে বিড়াল ছানাটি তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
অন্যদিকে ‘পাখি’ গল্পে কুমু ও লাটু দুইজনই পশু-পাখিকে ভালোবাসে। তারা একটি আহত বুনো হাঁসকে ভালো করে তোলার জন্য অনেক যত্ন করে।পশু-পাখিও আদর-ভালোবাসা বোঝে। তারা যেখানে ভালোবাসা পায়, সেখান থেকে যেতে চায় না। কিন্তু সুজা পশু-পাখিকে ভালোবাসে না, তাই শ্রেয়সীর বিড়াল ছানাটি হারিয়ে যায়। যদি সে কুমু-লাটুর মতো মমতা দেখাত, তাহলে বিড়াল ছানাটি তাদের কাছেই থাকত।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। ছোট পাখি দোয়েল। দেশের সব জায়গায় দেখা যায় এদের। ঝোপে ঝাড়ে, গাছের কোটরে, দালানের ফাঁকে-ফোকরে থাকে। দোয়েলের মতো মিষ্টি গান গাইতে পারে খুব কম পাখি। নরম সুরে শিস দেয়। সাদা-কালোয় সাজানো তার পালকের পোশাক। ডানার উপরে চওড়া দাগ টানা। এর লেজ বেশ লম্বা। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। ক. আঁচড়ে-পাঁচড়ে শব্দটির অর্থ কী? খ. “সমস্ত শরীরটা থরথর করে কাঁপছে।”- কার শরীর, কেন কাঁপছে? গ. উদ্দীপকটি ‘পাখি’ গল্পের কোন বিষয়টিকে প্রতীকায়িত করে? ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটিই ‘পাখি’ গল্পের একমাত্র বিষয় নয়। তোমার মতামত দাও। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। প্রতিবছর বিশ্বের নানা স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি শীতের শুরুতে চলে আসে আমাদের দেশে। শীতের শেষে এরা আবার চলে যায় নিজ গন্তব্যে। এসব পাখিকে অতিথিপরায়ণ বাঙালি নাম দিয়েছে অতিথি পাখি। ছুটি বা অবসর কাটাতে নয়, জীবন বাঁচাতে এরা এসে হাজির হয় আামাদের দেশে। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ শীতকাল এলেই নির্মমভাবে শিকার করে এসব অতিথি পাখি। মূলত অর্থের লোভে তারা এমন করে। ক. কোনো কোনো অতিথি পাখি কোন অবধি উড়ে যায়? খ. উত্তরের দেশ থেকে পাখিরা উড়ে আসে কেন? গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘পাখি’ গল্পে প্রকাশ পেয়েছে? ঘ. “উদ্দীপকটি ‘পাখি’ গল্পের সামগ্রিক পরিচয় নয়।”- বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। গৌতম বুদ্ধ যখন ছোট ছিলেন তখন একবার এক ডানাভাঙা পাখিকে কত শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন। সবাই বলত, তার দয়ার শরীর। তাঁর বন্ধুবান্ধব কপিলাবস্তুর অভিজাত বংশের ছেলেদের মতো তীরধনুক নিয়ে অবলা পশু-পাখিদের প্রাণ বধ করে। এসবে তিনি কোনো আনন্দ পেতেন না। এসব করাকে তিনি। আদৌ পুরুষোচিত কাজ মনে করতেন না। বলতেন, এ যেন ছোট ভাইটির দুঃখ-যন্ত্রণায় আনন্দিত হওয়া। তিনি জানতেন কাউকে। তীরে বিঁধলে কেমন যন্ত্রণা হয়। ক. কার শরীরটা থরথর করে কাঁপছিল? খ. পাখিটা কুমুর ছুড়ে দেওয়া বিস্কুটের দিকে ফিরেও তাকাল না কেন? বুঝিয়ে বল। গ. উদ্দীপক এবং ‘পাখি’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধর। ঘ. ‘পাখি’ গল্পের সব বিষয় উদ্দীপকে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসেনি।-মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। পরদিন সকালে বাইরে এসেই দেখি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আমার সেই কালকের অতিথি। বললাম, কাল তোকে খেতে নেমন্তন্ন করলাম, এলিনে কেন? জবাবে সে মুখপানে চেয়ে তেমনি ল্যাজ নাড়তে লাগল। বললাম, আজ তুই খেয়ে যাবি, না খেযে যাসনে বুঝলি? প্রত্যুত্তরে সে শুধু ঘন ঘন ল্যাজ নাড়লে- অর্থ বোধ হয় এই যে, সত্যি বলছো তো? রাত্রে চাকর এসে জানালে সেই কুকুরটা এসে আজ বাইরের বারান্দার নিচে উঠানে বসে আছে। বামুনঠাকুরকে ডেকে বলে দিলাম, ও আমার অতিথি, ওকে পেট ভরে খেতে দিও। ক. আন্দামান কী? খ. লাটু কীভাবে পাখিটিকে বাঁচাল? গ. উদ্দীপকে ‘পাখি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ঘ. উদ্দীপকের অতিথি এবং ‘পাখি’ গল্পের পাখিটি কি একই পরিস্থিতির শিকার? তোমার মতামত ব্যক্ত কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। একবার প্রবল জ্বরে রুহির বাম হাতটি অবশ হয়ে যায়। তারপর থেকে রুহি কেমন বিষণ্ণ ও আনমনা হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওর মা-বাবা ওকে নিয়ে বেড়াতে গেলে সেখানে গিয়ে। কুড়িয়ে পাওয়া আহত এক বিড়ালকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। সুস্থ হয়ে ওঠা বিড়ালটির আদুরে স্পর্শে রুবির বিষণ্ণ মানসিক অবস্থাটিও ক্রমশ ভালো হতে থাকে। ক. ‘পাখি’ গল্পটি কোন গল্প-সংকলন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে? খ. গুলিবিদ্ধ ছাইরঙা বুনো হাঁসটির বর্ণনা দাও। গ. উদ্দীপকটির সাথে গল্পটির কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ আলোচনা কর। ঘ. “উদ্দীপকের রুহি ও গল্পের কুমু উভয়েরই সুস্থ হয়ে ওঠার প্রেরণা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। জাকির প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান তার খুব প্রিয়। গাছ, ফুল, লতাপাতা, পাখি যেন তার চিরকালের প্রিয়তম বন্ধু। শীতের সকালের সূর্যের সোনাঝরা রোদ যখন গাছের ওপর পড়ে তখন দেখতে পায় রৌদ্রোজ্জ্বল হাসি। আবার প্রবল ঝড় যখন লন্ডভন্ড করে দেয় চারদিক তখন গাছের আর্তনাদ তাকে ব্যথিত করে। ক. ‘বিঘত’ শব্দের অর্থ কী? খ. শীতকালে অতিথি পাখিরা এদেশে উড়ে আসে কেন? গ. উদ্দীপকের জাকিরের সাথে ‘পাখি’ গল্পে বর্ণিত কুমু ও লিটুর মানসিকতার মিল দেখাও। ঘ. “উদ্দীপক ও ‘পাখি’ গল্পের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মূলভাব একসূত্রে গাঁথা।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় গণিত আর ইংরেজিতে খারাপ করেছিল রিফা। মার অসুস্থতা, বাড়িতে ঝামেলা- সব মিলিয়ে আসলে পড়ালেখাটা সেভাবে হয়ে ওঠেনি। প্রথমে প্রচণ্ড মন খারাপ হয়েছিল। হঠাৎ তার মনে হলো পাশের বাড়ির জুথির কথা, এত দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও সে দিব্যি ক্লাসের প্রথম স্থানটি দখল করে আছে। জুথি যদি পারে, তবে সে-ও পারবে। এই মনোবল নিয়ে সে পড়া শুরু করে এবং পরবর্তীতে ভালো ফল করে। ক. কুমুর সহপাঠীদের নাম কী? খ. কুমু কীভাবে আবার নতুন করে হাঁটতে শিখল?- বুঝিয়ে দাও। গ. ‘পাখি’ গল্পের সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নিরূপণ কর। ঘ. “ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রতিকূলতাকে জয় করে রিফা পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে।”- ‘পাখি’ গল্পের আলোকে যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর। |
নিচে উত্তরসহ পাখি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।