মুহম্মদ শহীদুল্লাহর “পল্লিসাহিত্য” প্রবন্ধটি বাংলার গ্রামীণ সাহিত্য-সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ ও তার অবহেলিত অবস্থাকে কেন্দ্র করে লেখা। আধুনিক শিক্ষা ও নাগরিক জীবনের প্রভাবে তা বিলুপ্তির পথে। তিনি এগুলিকে সংরক্ষণের জন্য জরুরি পদক্ষেপের ডাক দেন। এই পোস্টে পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের রচয়িতা কে?
উত্তর: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্।
২। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধটি প্রথম কোথায় পাঠ করা হয়?
উত্তর: পূর্ব ময়মনসিংহ সাহিত্য সম্মিলনীর একাদশ অধিবেশনে।
৩। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধটি প্রথম কখন পাঠ করা হয়?
উত্তর: ১৯৩৮ সালে।
৪। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১০ই জুলাই ১৮৮৫ সালে।
৫। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার পেয়ারা গ্রামে।
৬। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কোন বিষয়ে অনার্স করেন?
উত্তর: সংস্কৃতে অনার্স।
৭। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কোথা থেকে অনার্স পাস করেন?
উত্তর: কলকাতা সিটি কলেজ থেকে।
৮। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন?
উত্তর: সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৯। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্যারিস থেকে কোন দুটি ডিগ্রি অর্জন করেন?
উত্তর: ভাষাতত্ত্বে ডিপ্লোমা এবং ডি. লিট. ডিগ্রি।
১০। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কোন পত্রিকা সম্পাদনা করেন?
উত্তর: শিশু পত্রিকা ‘আঙুর’।
১১। ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ গ্রন্থটি কার সম্পাদিত?
উত্তর: মুহম্মদ শহীদুল্লাহর।
১২। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৩ই জুলাই ১৯৬৯ সালে।
১৩। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মৃত্যুবরণ করেন কোথায়?
উত্তর: ঢাকায়।
১৪। দীনেশচন্দ্র সেন কী সংগ্রহ করেছিলেন?
উত্তর: ময়মনসিংহ গীতিকা।
১৫। রোমাঁ রোলাঁ কোন চরিত্রে মুগ্ধ হয়েছিলেন?
উত্তর: মদিনা বিবি।
১৬। মনসুর বয়াতি কে ছিলেন?
উত্তর: একজন পল্লিকবি।
১৭। ‘কলগান’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ শ্রুতিমধুর ধ্বনি।
১৮। ‘পরতে পরতে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ স্তরে স্তরে।
১৯। দীনেশচন্দ্র সেন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরী গ্রামে।
২০। দীনেশচন্দ্র সেন কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে।
২১। ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে কে বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের মর্যাদা তুলে ধরেন?
উত্তরঃ দীনেশচন্দ্র সেন।
২২। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ কে সংগ্রহ করেন?
উত্তরঃ চন্দ্রকুমার দে। (দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায়)
২৩। পল্লির রূপকথা কিসের সঙ্গে তুলনীয়?
উত্তর: আরব্য উপন্যাসের গল্পের সঙ্গে।
২৪। আধুনিক শিক্ষার ফলে কী হারিয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: পল্লির রূপকথা ও উপকথা।
২৫। এখনকার মা কী ধরনের গল্প বলেন?
উত্তর: বিদেশি গল্প বা অনুবাদিত কাহিনি।
২৬। পল্লির রূপকথা কোন গবেষণার উপকরণ?
উত্তর: প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের।
২৭। কোন দুটি দেশে এইরকম Folklore Society আছে?
উত্তর: ইউরোপ ও আমেরিকা।
২৮। দক্ষিণারঞ্জনের কোন বইগুলোর কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ ও ‘ঠাকুরদার থলে’।
২৯। রাক্ষসের বাংলা বুলি কী?
উত্তর: হাঁউ, মাঁউ, খাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ।
৩০। Shakespeare-এর রাক্ষসের বুলি কী?
উত্তর: Fi, Fie, foh, fun! smell the blood of a British man.
৩১। প্রবাদ বাক্য কী?
উত্তর: জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আসা ছোটো ছোটো বাণী।
৩২। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৩। দীনেশচন্দ্র সেনের একটি মৌলিক গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ রামায়ণী কথা।
৩৪। দীনেশচন্দ্র সেন কবে পরলোকগমন করেন?
উত্তরঃ ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে।
৩৫। রোমাঁ রোলাঁ কোন দেশের সাহিত্যিক?
উত্তরঃ ফ্রান্সের।
৩৬। রোমাঁ রোলাঁ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ২৯শে জানুয়ারি ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে।
৩৭। ‘জাঁ ক্রিস্তফ’ কার লেখা উপন্যাস?
উত্তরঃ রোমাঁ রোলাঁ।
৩৮। ‘জাঁ ক্রিস্তফ’ উপন্যাসের জন্য রোমাঁ রোলাঁ কোন পুরস্কার পান?
উত্তরঃ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।
৩৯। খনার বচন কী?
উত্তর: প্রাচীন বাংলার কৃষিভিত্তিক বচন বা উপদেশ।
৪০। কলা রুয়ে না কেটো পাত, অর্থ কী?
উত্তর: ধৈর্য ধরলে তার ফল পাওয়া যায়।
৪১। “পিড়েয় বসে পেঁড়োর খবর” প্রবাদে কী বোঝায়?
উত্তর: পাওয়ার জায়গায় বসেই তার খবর পাওয়া যায়।
৪২। ছড়া কারা কাটে?
উত্তর: ছেলেমেয়েরা।
৪৩। একটি ছড়ার উদাহরণ দাও।
উত্তর: রোদ হচ্ছে, পানি হচ্ছে, খেঁকশিয়ালীর বিয়ে হচ্ছে।
৪৪। ঘুমপাড়ানী গান কে গায়?
উত্তর: মা।
৪৪। রোমাঁ রোলাঁ কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তরঃ ৩০শে ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে।
৪৫। ‘দেওয়ানা-মদিনা’র নায়িকার নাম কী?
উত্তরঃ মদিনা বিবি।
৪৬। ‘দেওয়ানা-মদিনা’ কোন গীতিকার অন্তর্ভুক্ত?
উত্তরঃ মৈমনসিংহ গীতিকা।
৪৭। মনসুর বয়াতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ‘দেওয়ানা-মদিনা’ লোকগাথার প্রখ্যাত কবি।
৪৯। ‘আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ কোন দেশের গল্প?
উত্তরঃ আরব্য উপন্যাসের।
৫০। আলাউদ্দিন কেমন পরিবারের ছেলে ছিল?
উত্তরঃ গরিব এক দুঃখিনী মায়ের একমাত্র ছেলে।
৫১। প্রদীপ ঘষলে কী হতো?
উত্তরঃ এক মহাশক্তিধর দৈত্য এসে হাজির হতো।
৫২। দৈত্য কী করত?
উত্তরঃ আলাউদ্দিনের আদেশ অনুযায়ী অলৌকিক কাজ করত।
৫৩। ‘আলিবাবা ও চল্লিশ দস্যু’ কোন দেশের গল্প?
উত্তরঃ আরব্য উপন্যাসের।
৫৪। আলিবাবা কী পেশার মানুষ ছিল?
উত্তরঃ কাঠুরে।
৫৫। আলিবাবা কোথায় গুপ্তধনের সন্ধান পায়?
উত্তরঃ পাহাড়ের গুহায়।
৫৬। আলিবাবার বাঁদির নাম কী?
উত্তরঃ মর্জিনা।
৫৭। দস্যুরা কীভাবে আলিবাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়?
উত্তরঃ আতিথ্য গ্রহণ করে।
৫৮। আলিবাবা কিভাবে দস্যুদের পরাস্ত করে?
উত্তরঃ মর্জিনার সহায়তায়।
৫৯। ফুটবল, ব্যাটবল না থাকলে কী খেলা ছিল জনপ্রিয়?
উত্তর: কপাটি খেলা।
৬০। “মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে”—এটি কোন ধরনের গান?
উত্তর: পল্লিগান।
৬১। শহুরে গান কাদের জন্য উপযুক্ত নয়?
উত্তর: পল্লির মানুষের জন্য।
৬২। পল্লির মানুষের কথা সাহিত্যে কেন উঠে আসে না?
উত্তর: কারণ লেখকেরা তা নিয়ে মাথা ঘামান না।
৬৩। কবিগুরু কোন সাহিত্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন?
উত্তর: নাগরিক সাহিত্য।
৬৪। গেঁয়ো সাহিত্যের ঘর তুলতে কী দরকার?
উত্তর: পল্লির সাহিত্যিক ও রচয়িতা।
৬৫। ইউরোপে কী ধরনের সাহিত্য জনপ্রিয় হচ্ছে?
উত্তর: Proletariat সাহিত্য।
৬৬। পল্লিসাহিত্য এখন কাদের মধ্যে বেঁচে আছে?
উত্তর: সেকেলে পাড়াগাঁয়ের কিছু মানুষের মধ্যে।
৬৭। আগে পল্লিসাহিত্য কে উপভোগ করত?
উত্তর: দাঁড়ি-মাঝি থেকে গৃহবধূ পর্যন্ত সবাই।
৬৮। পল্লিসাহিত্যকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে।
৬৯। পল্লিসাহিত্য কী?
উত্তর: গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য, যেমন গান, গাথা, ছড়া, রূপকথা, প্রবাদ ইত্যাদি।
৭০। ড. দীনেশচন্দ্র সেন কী সংগ্রহ করে পল্লিসাহিত্যের গুরুত্ব প্রমাণ করেন?
উত্তর: মৈমনসিংহ গীতিকা।
৭১। ময়মনসিংহ গীতিকার কোন গাথা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে?
উত্তর: মদিনা বিবির গান
৭২। পল্লির রূপকথাগুলোর উদাহরণ দাও।
উত্তর: রাখালের পিঠা গাছ, রাক্ষসপুরীর রাজকন্যা, পঙ্খিরাজ ঘোড়া।
৭৩। আরব্য উপন্যাসের গল্পের চেয়ে পল্লির রূপকথার মূল্য কেমন?
উত্তর: সমান বা বেশি মূল্যবান।
৭৪। পল্লির রূপকথা কোথায় কোথায় প্রচলিত?
উত্তর: সিংহল, সুমাত্রা, যাভা, কম্বোডিয়া, এমনকি ইউরোপের ওয়েলসেও।
৭৫। Folklore Society-এর কাজ কী?
উত্তর: বিশ্বের উপকথা সংগ্রহ ও তুলনামূলক গবেষণা করা।
৭৬। “দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই”—এটি কী ধরনের বাক্য?
উত্তর: প্রবাদ বাক্য।
৭৭। খনার বচনের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: “কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।”
৭৮। “পিড়েয় বসে পেঁড়োর খবর”—এ প্রবাদটি কোন ঐতিহাসিক সময়ের ইঙ্গিত দেয়?
উত্তর: পৌণ্ড্রবর্ধনে রাজধানী থাকার সময়।
৭৯। ডাকের বচন কী?
উত্তর: গ্রামীণ জ্যোতিষশাস্ত্র ও কৃষি সংক্রান্ত লোকজ উক্তি।
৮০। পল্লির শিশুরা বৃষ্টি এলে কোন ছড়া বলে?
উত্তর: “রোদ হচ্ছে, পানি হচ্ছে, খেঁকশিয়ালীর বিয়ে হচ্ছে।”
৮১। ঘুমপাড়ানি গান কী?
উত্তর: মায়েরা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময় গাওয়া লালন গীত।
৮২। Proletariat সাহিত্য কী?
উত্তর: শ্রমজীবী মানুষের জীবনভিত্তিক সাহিত্য (ইউরোপ-আমেরিকায় জনপ্রিয়)।
৮৩। পল্লিসাহিত্য রক্ষার জন্য শহীদুল্লাহ কী প্রস্তাব করেন?
উত্তর: স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে সংগ্রহ ও প্রকাশ করা।
৮৪। “ঠাকুরমার ঝুলি” বা “ঠাকুরদার থলে” কার রচনা?
উত্তর: দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার।
৮৫। পল্লিকবি কারা?
উত্তর: মনসুর বয়াতির মতো গ্রাম্য কবি যারা লোকগাথা রচনা করেন।
৮৬। “মনসুর বয়াতি” কে?
উত্তর: একজন পল্লিকবি যার মতো অসংখ্য অখ্যাত কবি গ্রামে ছড়িয়ে আছেন।
৮৭। “কপাটি খেলা” কী?
উত্তর: বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা, যার সঙ্গে বাঁধা ছড়া জড়িত।
৮৮। Lamb’s Tales from Shakespeare কী?
উত্তরঃ শেক্সপিয়ারের নাটকের সহজ ভাষায় রূপান্তরিত সংস্করণ।
৮৯। কে Lamb’s Tales from Shakespeare লেখেন?
উত্তরঃ চার্লস ল্যাম্ব।
৯০। প্রত্নতাত্ত্বিক কাকে বলে?
উত্তরঃ যিনি প্রাচীন লিপি, মুদ্রা বা ভগ্নাবশেষ থেকে তথ্য নির্ণয় করেন।
৯১। Folklore Society কী কাজ করে?
উত্তরঃ লোকসাহিত্য সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজ করে।
৯২। ‘ফোকলোর’ কথাটির উদ্ভাবক কে?
উত্তরঃ উইলিয়াম থমস।
৯৩। Folklore Society কোথায় গঠিত হয়?
উত্তরঃ লন্ডনে।
৯৪। নৃতত্ত্ব কী?
উত্তরঃ মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞান।
৯৫। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের জন্ম কবে?
উত্তরঃ ১২৮৪ বঙ্গাব্দে।
৯৬। দক্ষিণারঞ্জন কোন বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন?
উত্তরঃ ঠাকুরমার ঝুলি।
৯৭। প্রবাদবাক্য কী?
উত্তরঃ লোকমুখে প্রচলিত বিশ্বাসযোগ্য কথা।
৯৮। খনা কে ছিলেন?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের নারীজ্যোতিষী।
৯৯। ‘বালাম’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ বইয়ের খণ্ড।
১০০। ‘ভূয়োদর্শন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ প্রচুর দেখা ও শোনার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা।
পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
১। “আজ দুঃখে দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।” কেন? ব্যাখ্যা কর।
এই কথায় লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের প্রাচীন পল্লিসাহিত্য এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিক সভ্যতা আর শহুরে জীবনের প্রভাবে লোকেরা পল্লির ঐতিহ্য ভুলে যাচ্ছে। গান, ছড়া, গল্প, প্রবাদ—এসব হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। ফলে মানুষের মন থেকে সরল আনন্দ, সংস্কৃতির প্রাণশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। আগে মানুষ যা শুনে ও গেয়ে আনন্দ পেত, এখন তা আর নেই। এ কারণেই লেখক বলেছেন, “আজ দুঃখে দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।”
২। লোকে ছড়া ভুলে যাচ্ছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
লোকে ছড়া ভুলে যাচ্ছে কারণ আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি শিশুদের অন্যদিকে আকৃষ্ট করছে। আগে শিশুরা মায়ের মুখে ছড়া শুনে ঘুমোত, এখন তারা মোবাইল আর টিভির দুনিয়ায় ঢুকে গেছে। ছড়া বলার ও শোনার সংস্কৃতি ঘরে আর নেই। অনেক মা-ও এখন ছড়া শেখে না বা শোনায় না। ফলে ছড়ার জায়গা দখল করেছে বিদেশি কার্টুন ও গেম। এসব কারণেই ছড়া এখন বিলুপ্তির পথে।
৩। পল্লিগানগুলোকে অমূল্য রত্নবিশেষ বলা বুঝিয়ে লেখ।
পল্লিগান হলো গ্রামের মানুষের জীবনের কথা, আবেগ, দুঃখ-কষ্ট আর আনন্দের প্রতিচ্ছবি। এই গানগুলোতে প্রকৃতি, প্রেম, শ্রম ও জীবনের গভীর সত্য লুকিয়ে থাকে। সেগুলো সরল ভাষায় বলা হলেও তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শহরের কৃত্রিমতার পাশে এই গানগুলো একেবারে সজীব ও খাঁটি। এগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের মুখে মুখে চলেছে। তাই এগুলোকে “অমূল্য রত্নবিশেষ” বলা হয়েছে।
৪। “পল্লিসাহিত্যে হিন্দু-মুসলমান সকল সন্তানেরই সমান অধিকার”— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
এই কথার অর্থ হলো, পল্লিসাহিত্য শুধু কোনো বিশেষ ধর্ম বা জাতির সম্পদ নয়। এটি বাংলার সকল মানুষের ঐতিহ্য। হিন্দু-মুসলমান সবাই এই সাহিত্য সৃষ্টি করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং উপভোগ করেছে। পল্লিগান, ছড়া, প্রবাদ—এসবের মধ্যে কোনো ধর্মীয় বিভেদ নেই। সবাই মিলে একসঙ্গে এই সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই এতে সবার সমান অধিকার রয়েছে।
৫। “নচেৎ এ সকল কেবলি ভুয়া, কেবলি ফক্কিকার”— লেখক একথা কেন বলেছেন?
লেখক বলতে চেয়েছেন, আমরা যদি শুধু মুখে বলি পল্লিসাহিত্য মূল্যবান, অথচ সংরক্ষণ না করি, তবে সেই দাবি মিথ্যে হবে। পল্লিসাহিত্যের গুরুত্ব বোঝা মানেই তা সংরক্ষণ ও চর্চা করা। তা না হলে এসব কথা কেবল লোক দেখানো হবে। লেখকের মতে, কাজ না করলে কেবল প্রশংসা করায় কোনো মানে নেই। তখন এসব শুধু বাহারি বুলি বা ফাঁকা কথায় পরিণত হবে। তাই তিনি একে “ভুয়া” ও “ফক্কিকার” বলেছেন।
৬। ছড়া সাহিত্যকে সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
ছড়া সহজ ভাষায় লেখা হয়, ছন্দে বাঁধা হয় এবং শুনতে মজার। শিশুরা যেমন ছড়া শুনে খুশি হয়, তেমনি বড়রাও ছড়ার মাধ্যমে জীবনের সত্য সহজভাবে বোঝে। ছড়ায় কৌতুক, শিক্ষা আর মিষ্টতা একসঙ্গে থাকে। ছড়া মুখে মুখে চলে, তাই এটি জীবন্ত। এটি আনন্দ দেয়, আবেগ জাগায় ও ভাষা শেখায়। এজন্য একে সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস বলা হয়।
৭। “পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর”— প্রবাদটি প্রাচীন ইতিহাসের কোন গোপন কথা স্মরণ করিয়ে দেয়?
এই প্রবাদটি পল্লিসাহিত্যে ব্যবহৃত একটি বিখ্যাত প্রবাদবাক্য। এটি মনে করিয়ে দেয় সেই সময়ের কথা, যখন পাওয়া ছিল প্রাচীন বঙ্গদেশের রাজধানী। সেই যুগে পেঁড়ো ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা পাওয়া অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত ছিল। প্রবাদটি বোঝায়, কোনো বিষয়ে খুব কাছ থেকে না জেনে বিচার করা। এটি বাংলার প্রাচীন ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ঝলক দেয়। এইভাবে পল্লিসাহিত্যের মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক তথ্যও রয়ে গেছে।
৮। পল্লিসাহিত্যের উপকরণের দৃষ্টান্ত দাও।
পল্লিসাহিত্যে রয়েছে বহু উপকরণ যা গ্রামীণ জীবনের প্রতিফলন। যেমন: উপকথা, ছড়া, প্রবাদবাক্য, খনার বচন, পল্লিগান (ভাটিয়ালি, জারি, মারফতি), রাখালের গান ইত্যাদি। এগুলো সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত, বই-পুস্তকে লেখা নয়। ছেলেবেলার গল্প, ঘুমপাড়ানী গান, খেলার বাঁধা বুলি—all এগুলো সাহিত্যিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই উপকরণগুলোর মাধ্যমে পল্লির সংস্কৃতি ও জীবনের বাস্তব রূপ ফুটে ওঠে। তাই এগুলো সাহিত্য-সংগ্রহে সংরক্ষণ করা দরকার।
৯। নাগরিক সাহিত্যের উপাদানের দৃষ্টান্ত দাও।
নাগরিক সাহিত্যে মূলত শহরের জীবনধারা উঠে আসে। যেমন: রাজা-রাজড়ার গল্প, বাবু-বিবির প্রেম কাহিনি, মোটরগাড়ির বর্ণনা, বিজলি বাতির আলো, থিয়েটার বা সিনেমার ঘটনা, চায়ের দোকানের আড্ডা ইত্যাদি। এই সাহিত্য শহুরে মানুষদের জীবনযাত্রা ও মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়। এ ধরনের সাহিত্য আধুনিক জীবন, প্রযুক্তি ও শহরের কৃত্রিমতাকে তুলে ধরে। তবে এতে পল্লির মানুষের জীবন ও সংগ্রামের জায়গা প্রায় নেই। তাই শহুরে সাহিত্য পল্লির প্রকৃত রূপ তুলে ধরতে পারে না।
১০। “পল্লিসাহিত্য সম্পদের মধ্যে এই গানগুলি অমূল্য রত্নবিশেষ”— ব্যাখ্যা কর।
লেখক এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, পল্লিগানগুলো শুধু গান নয়, এগুলোতে লুকিয়ে আছে প্রেম, আনন্দ, দুঃখ, দর্শন ও শিক্ষা। যেমন ভাটিয়ালি, জারি, মারফতি, রাখালি গান শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, তা সমাজ ও সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল। এই গানগুলো পল্লির মানুষদের জীবনের প্রতিচ্ছবি বহন করে। শহরের গান যত আধুনিক হোক না কেন, পল্লিগানের প্রাণস্পর্শী আবেদন তুলনাহীন। তাই এই গানগুলোকে লেখক “অমূল্য রত্নবিশেষ” বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলো সংরক্ষণ করা খুব জরুরি।
১১। সময় ও রুচির পরিবর্তনে কী ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে— ব্যাখ্যা কর।
লেখক মনে করেন, সময় ও রুচির পরিবর্তনের কারণে বাংলার প্রাচীন পল্লিসাহিত্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ছড়া, উপকথা, পল্লিগান, প্রবাদবাক্য, খেলাধুলার বুলি—এসব আর আগের মতো জনপ্রিয় নয়। আধুনিক শিক্ষায় বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা এগুলোর সঙ্গে পরিচিত নয়। তারা এখন আরব্য রূপকথা বা ইংরেজি অনুবাদিত গল্প বেশি পড়ে। ফলে পল্লির নিজস্ব সাহিত্য-ভাণ্ডার অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। এটি লেখকের জন্য গভীর দুঃখের বিষয়, কারণ ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে জাতির শিকড় দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ নিরীহ বাঙালি প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর