মাহমুদুল হকের বিখ্যাত ব্যঙ্গাত্মক গল্প “পদ্য লেখার জোরে” বাংলা কিশোর সাহিত্যের এক অনন্য উদাহরণ। গল্পটি হাস্যরসের মোড়কে হলেও সমাজ, ক্ষমতা, বাক-স্বাধীনতা এবং শাসকদের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে তীব্র একটি ব্যঙ্গ। এই পোস্টে ৭ম শ্রেণির আনন্দপাঠের পদ্য লেখার জোরে মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
পদ্য লেখার জোরে মূলভাব
গল্প “পদ্য লেখার জোরে” এ এক বাদশাহ ছিলো নাম শমশের আলীজান, যার রাজ্যে তার নামের মতো অনেক লোক ছিল। বাদশাহ খুব গর্ব করতেন এবং সবাইকে বললেন তার নাম তিনবার উচ্চারণ করতে হবে। কিন্তু কিছু লোক মজার ছলে বাদশাহ ও তার পাত্র উজির আক্কেল আলীকে নিয়ে নানা রকম গালি-গালাজ লিখে ঘুড়িতে লাগিয়ে উড়াতে লাগলো। বাদশাহ খুব রেগে গেলেন এবং ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। কিন্তু রাজ্যের ছেলেরা গোপনে ঘুড়ি উড়ানো চালিয়ে গেল। বাদশাহ পণ্ডিতের কাছে গিয়ে ‘ঘুড়ি’ শব্দের মানে জিজ্ঞাসা করলেন। পণ্ডিত অনেক কষ্ট করে অভিধান খুঁজেও ঠিক অর্থ বের করতে পারল না এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে অর্থ আনতে উজিরকে পাঠালো। উজির সেই অনুসন্ধান করতে গিয়ে আর ফিরে আসল না। শেষমেশ রাজ্যের ছেলেরা ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে বাদশাহ ও উজিরের বিদায় নিয়ে হাস্যরসের মাধ্যমে গল্পটি শেষ হয়।
পদ্য লেখার জোরে বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১। ক. পন্ডিত সমুদ্রে পড়ে গেল কীভাবে? বর্ণনা কর। | ৩ |
খ. বাদশাহ কেন রাজ্যে ঘুড়ি তৈরি আর ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন? বুঝিয়ে লেখ। | ৭ |
ক) উত্তরঃ পণ্ডিত যখন ‘ঘুড়ি’ শব্দের অর্থ খুঁজতে অভিধান থেকে সাহায্য নিতে গেলেন, তখন সেটা অনেক বড় এবং ভারী ছিল। ছেলেরা তাকে সাহায্য করার জন্য বান্ডিলটি গড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু বান্ডিলটি এত ভারী এবং বড় ছিল যে সবাই একসময় হাল ছেড়ে দিল। বান্ডিলটি আবার আগের মতো জড়িয়ে গিয়ে এক মুহূর্তে পণ্ডিতকে ছুড়ে দিল সমুদ্রের মধ্যে। ফলে পণ্ডিত সমুদ্রে পড়ে গেলেন। তিনি বুঝিয়ে বললেন যে বিদ্যা সমুদ্রের মতো গভীর, তাই অর্থ খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়। তাই তার সমুদ্রে পড়ে যাওয়া হলো ওই কঠিন কাজের কারণ।
খ) উত্তরঃ বাদশাহ রাজ্যে ঘুড়ি তৈরি ও ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন কারণ তার রাজ্যে কিছু লোক তার বিরুদ্ধে বিদ্রূপপূর্ণ পদ্য লেখা ঘুড়িতে লাগিয়ে উড়িয়ে ছিল। এই পদ্যগুলো বাদশাহ এবং তার প্রিয় উজির আক্কেল আলীকে নিয়ে মজা করছিলো, যা বাদশাহকে খুব রেগে দিয়েছিল। তিনি মনে করলেন, এই ঘুড়িগুলো তার সম্মানহানি করছে এবং রাজ্যের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। তাই তিনি কঠোর হুকুম দিলেন, যে কেউ ঘুড়ি ওড়ানো বা তৈরি করলে তার হাত কেটে দেওয়া হবে। বাদশাহ চাইলেন যেন এমন কোনো কাজ আর না হয় এবং তার ক্ষমতা ও সম্মান অটুট থাকে। কিন্তু ছেলেরা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো চালিয়ে যায়, কারণ তারা বুঝতে পারে ঘুড়ি ওড়ানো তাদের জন্য আনন্দের উৎস। বাদশাহ এর ফলে আরো বিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এইভাবে গল্পে দেখা যায়, শাসকের কঠোর আদেশের পরও সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা এবং মজার ছলনা থেমে না, যা বাদশাহর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ২। ক. উজির আক্কেল আলী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ। | ৩ |
খ. ‘পদ্য লেখার জোরে’ গল্পে হাস্যরসের মাধ্যমে দুষ্টলোকের স্বাভাবিক পতন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার ও জয় তুলে ধরা হয়েছে- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা কর | ৭ |
ক) উত্তরঃ উজির আক্কেল আলী ছিলেন বাদশাহর খুব প্রিয় সহকারী এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তার অনেক সম্মান ছিল। তিনি বাদশাহর আদেশ পালন করতেন নিখুঁতভাবে, যেমন বাদশাহ হাঁচলে বা কাশি দিলেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করতেন। গল্পে উজির আক্কেল আলীর চরিত্র দিয়ে শাসকের প্রতি আনুগত্য এবং বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত দেখানো হয়েছে। তবে যখন বাদশাহর ওপর বিদ্রূপমূলক পদ্য লেখা ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়, তখন উজির নিজেও দুঃখ পেয়ে প্রতিবাদ করেন এবং কঠোর আইন প্রণয়নের পক্ষে ছিলেন। তার চরিত্র থেকে বোঝা যায়, সে রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিবেদিত একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি।
খ) উত্তরঃ বাদশাহ রাজ্যে ঘুড়ি তৈরি ও উড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন কারণ কিছু লোক তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর ও বিদ্রূপমূলক পদ্য লেখা ঘুড়িতে লাগিয়ে উড়িয়ে রাজ্যের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছিল। এই পদ্যগুলোতে বাদশাহ ও তার প্রিয় উজির আক্কেল আলীকে অপমান করা হচ্ছিল, যা বাদশাহর গর্বকে আহত করেছিল। তিনি মনে করলেন, এই ধরনের অবজ্ঞাসূচক কাজ রাজ্যের শৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর এবং তার ক্ষমতার অবমাননা। তাই কঠোর শাস্তি দিয়ে তিনি ঘুড়ি উড়ানো ও তৈরি নিষিদ্ধ করলেন। বাদশাহর উদ্দেশ্য ছিল তার সম্মান বজায় রাখা এবং সকলকে অনুশাসিত করা। যদিও আদেশ দেওয়া হয়, তবুও রাজ্যের ছেলেরা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুড়ি উড়ানো চালিয়ে যায়, যা বাদশাহর জন্য আরো বিরক্তির কারণ হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে গল্পে শাসকের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার কথা ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন ৩। ক. বাদশাহ সবাইকে তাঁর নামকে তিন গুণ করে উচ্চারণ করতে বললেন কেন? ব্যাখ্যা কর। | ৩ |
খ. “পদ্য লেখার জোরে” গল্পের মূলভাব লেখ। | ৭ |
ক) উত্তরঃ বাদশাহ সবাইকে তার নামকে তিন গুণ করে উচ্চারণ করতে বললেন কারণ তিনি তার ক্ষমতা ও মর্যাদা সবাই থেকে অনেক বেশি মনে করতেন। রাজ্যে তার নামের মতো অনেক মানুষের নাম ছিল, তাই তিনি চাইলেন তার নাম অন্যদের থেকে আলাদা এবং বিশেষভাবে শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা হোক। এটা তার শক্তি ও উচ্চতাকে প্রকাশ করার একটা উপায় ছিল। তিনবার নাম উচ্চারণ করলে শুনতে মনে হবে বাদশাহ অনেক বড় ও গর্বিত। এভাবেই তিনি সবাইকে তার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝাতে চাইলেন এবং তার নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা দৃঢ় করতে চেয়েছিলেন।
খ) উত্তরঃ উপরে লিখা আছে।