‘নেকলেস’ গল্পটি আমাদের শেখায়, কখনও বাইরের চাকচিক্য আর অন্যের জীবনের প্রতি হিংসা বা আকাঙ্ক্ষা আমাদের নিজের সুখের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই পোস্টে নেকলেস গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায় লিখে দিলাম।
Table of Contents
নেকলেস গল্পের মূলভাব
এটি মাতিলদা নামের এক সুন্দরী তরুণীর গল্প, যিনি গরিব কেরানির মেয়ে হয়েও ধনী ও বিলাসী জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি তার সাধারণ জীবন ও স্বামী নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। একদিন তিনি শিক্ষামন্ত্রীর এক অভিজাত নাচের দাওয়াত পান। সেখানে সুন্দরভাবে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি নতুন একটি গাউন কেনেন এবং তার ধনী বান্ধবীর কাছ থেকে একটি ঝলমলে হীরার হার ধার নিয়ে যান। নাচের সন্ধ্যায় তিনি সকলের নজর কাড়েন এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় অতিথি হয়ে ওঠেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে তিনি বুঝতে পারেন যে সেই দামি হারটি তার গলায় নেই। হারটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বান্ধবীকে হার ফেরত দিতে তিনি ও তার স্বামী একটি হুবহু একই রকম হার ক্রয় করেন, যার মূল্য দাঁড়ায় চল্লিশ হাজার ফ্রাঁ। এই টাকা জোগাড় করতে তাদের সব সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে হয় এবং প্রচুর টাকা ধার করতে হয়। এই ঋণ শোধ করতে তাদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। তারা দাসী বিদায় দেন, ছোট একটি অন্ধকার ফ্ল্যাটে উঠেন এবং দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাতে শুরু করেন। মাতিলদাকে নিজেই রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বাজার করার মতো সব কাজ করতে হয়। দশ বছর ধরে এই কঠোর সংগ্রাম ও ত্যাগের পর তারা শেষ পর্যন্ত সব ঋণ শোধ করতে সক্ষম হন। এরপর একদিন মাতিলদা আবার তার সেই ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করেন এবং তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা বলেন। তখন বান্ধবী তাকে একটি মর্মান্তিক সত্য জানান, যে হারটি মাতিলদা ধার নিয়েছিলেন সেটি আসলে নকল ছিল এবং তার আসল দাম ছিল মাত্র পাঁচশ ফ্রাঁ। মাতিলদার জীবনের সমস্ত কষ্ট ও ত্যাগ বৃথা হয়ে যায় শুধুমাত্র একটি নকল জিনিসের জন্য।
নেকলেস গল্পের মূলভাব বড় করে
এক সুন্দরী মেয়ে, যার নাম মাতিলদা। সে যেমন রূপবতী, তেমনই দরিদ্র এক কেরানির ঘরে তার জন্ম। তার মনটা ছিল দামি জিনিস, জমকালো পার্টি আর উচ্চ সমাজের মানুষের মর্যাদা পাওয়ার জন্য লালায়িত। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তাকে বিয়ে করতে হয়েছিল তারই মত এক সামান্য সরকারি কেরানিকে, এবং খুব সাধারণ, নিস্তেজ একটা জীবন যাপন করতে হচ্ছিল। বাড়ির পুরনো আসবাব, মলিন দেয়াল দেখে তার মন ভারি হতো। সে ভাবত, “আমার তো এর চেয়ে ভালো জীবন পাওয়ারই কথা ছিল!”
একদিন তার স্বামী আনল এক সুখবর। শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে এক জমকালো নাচের পার্টির আমন্ত্রণপত্র। স্বামী ভেবেছিল বউ খুব খুশি হবে। কিন্তু মাতিলদার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল রাগ আর হতাশা। “কী পরব আমি? আমার তো কিছুই নেই!” শেষ পর্যন্ত স্বামী তাকে একটা নতুন গাউন কেনার টাকা দিল। কিন্তু মাতিলদার চিন্তা আরো দূরে – “গাউন হলে কী হবে? গলায় তো কোন দামি গহনা নেই!” তাই সে তার এক ধনী বান্ধবীর কাছ থেকে চমকপ্রদ এক হীরার হার ধার করে আনল।
সেই পার্টির রাতটা ছিল মাতিলদার জীবনের সেরা রাত। সে ছিল সবার মধ্যমণি, রানীর মতো সৌন্দর্য আর সম্মান পেল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিল, শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত তার দিকে নজর দিয়েছিলেন। সে স্বপ্ন দেখছিল যে অবশেষে তার সেই কাঙ্ক্ষিত জীবন শুরু হল।
কিন্তু দুঃস্বপ্ন শুরু হয় ঘরে ফেরার পথে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে খেয়ালই করেনি যে গলার সেই দুর্মূল্য হারটি হারিয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে যখন টের পেল, তখন পৃথিবীটাই তার কাছে অন্ধকার হয়ে গেল। সে আর তার স্বামী রাস্তা, গাড়ি, সব জায়গায় খুঁজেও পেল না।
এখান থেকে তাদের বাস্তব জীবনের ট্র্যাজেডি শুরু। হারটি ফেরত দিতে হবে বান্ধবীকে। কিন্তু সেটা তো আর আসল হার নয়! তারা কোনো উপায় না দেখে, নিজেদের সমস্ত জমানো টাকা আর প্রচুর ধার করে, বন্ধুর হারটির হুবহু একটা নকল (তাদের ধারণায় “অসল”) হার কিনে ফেরত দিল। এর দাম পড়ল অকল্পনীয় – চল্লিশ হাজার ফ্রাঁ।
এই ঋণের বোঝা তাদের জীবন উল্টে দিল। ভালো ফ্ল্যাট ছাড়তে হলো, চাকরানীকে বিদায় দিতে হলো। মাতিলদা, যে কিনা শুধু সৌন্দর্য আর সামাজিকতা নিয়েই ভাবত, তাকে এখন নিজ হাতে মেঝে ঘষতে, বাজার করতে, ময়লা কাপড় কাঁচতে হলো। তার স্বামীও রাত জেগে জেগে বাড়তি কাজ করে টাকা রোজগার করল। চকচকে নখ, কোমল হাত আর দামি পোশাকের বদলে এখন ছিল রুক্ষ হাত আর মলিন কাপড়। এভাবে দশটা বছর কেটে গেল শুধু ঋণ শোধ করার মধ্যে।
দশ বছর পর, যখন সব ঋণ শেষ, একদিন হঠাৎ রাস্তায় তার সেই ধনী বান্ধবীকে দেখা। বান্ধবী তখনও আগের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ, সুন্দর। নিজের সব কষ্টের কথা, হার কেনার গল্প মাতিলদা তাকে খুলে বলল। গর্বও করল যে সে তার দায়িত্ব পালন করেছে।
বান্ধবীর জবাব শুনে মাতিলদার দুনিয়াটাই যেন থমকে গেল। বান্ধবী বলল, “ওহ, আমার ভালোবাসা! কেন এত কষ্ট নিয়েছিলে? আমি তোমায় যে হারটা দিয়েছিলাম, সেটা তো নকল ছিল! তার দাম পাঁচশ ফ্রাঁও হয়নি।”
মূল কথাঃ এই গল্পটা আমাদের শেখায় যে, অনেক সময় আমরা যা চাই বা অন্যরা যা দেখায়, তার পিছনে সত্যিকারের মূল্য কতটা, তা বোঝা খুব জরুরি। মাতিলদা তার সুখের পুরো একটা জীবন, তার যৌবন ও সৌন্দর্য, এক টুকরো নকল পাথরের জন্য বিলিয়ে দিল, কারণ সে বাইরের চাকচিক্যকে সত্যিকারের মূল্যবান ভেবে নিয়েছিল। গল্পটির শিক্ষা হলো – নিজের যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং বস্তুগত জিনিসের চেয়ে প্রকৃত সুখের মূল্য বোঝা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ
রেইনকোট গল্পের মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা