নদীর স্বপ্ন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

বুদ্ধদেব বসুর ‌‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় কানাই তার ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে মাঝির সঙ্গে নদীপথে ঘুরতে চায়। সে মাঝিকে ডাকছে, সিকি-আনি দিচ্ছে, অনুরোধ করছে যেন তাদের নৌকায় তুলে নেয়। এই পোস্টে ৮ম শ্রেণির নদীর স্বপ্ন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখে দিলাম।

নদীর স্বপ্ন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
নিশু, লিজা, শ্যামা, মিথিয়া, পিয়া বড়দের দৃষ্টি এড়িয়ে সাগরদিঘি পাড়ে মিলিত হয়েছে। বাড়ি থেকে চাল, ডাল, ডিম, মসলা- সবকিছু নিয়ে এসেছে। জমিয়ে পিকনিক হবে। রান্নার ধুম লেগেছে। রান্না শেষ হতেই নিশুর দেখাদেখি সবাই দিঘির জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দাপাদাপি যেন শেষ হতেই চায় না। শেষে পিয়ার চেঁচামেচিতে সবাই এসে কলাপাতায় পাত পেড়ে খেতে বসল। খাবার মুখে দিয়েই এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। নুন- নুন দেওয়া হয় নি যে। আবার এক দফা হেসে নিয়ে সবাই গপাগপ খিচুড়ি খেতে শুরু করল। খুব ক্ষুধা পেয়েছে যে!

ক. দুপুরের রোদে জল কেমন করে বয়ে চলে?

খ. নৌকা-ভ্রমণের বিনিময়ে কানাই মাঝিকে আনি বা পয়সা দিতে চেয়েছিল কেন?- ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের সাথে কবিতার কী অমিল লক্ষ করা যায়-আলোচনা কর।

ঘ. বিষয়বস্তু ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও কবিতাটি কিশোর মনের আবেগ প্রকাশের দিক থেকে অভিন্ন- বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. নদীর স্বপ্ন কবিতায় এই প্রশ্নের উত্তর নেই।

খ. কানাই তার ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে মাঝির নৌকায় করে ঘুরতে চেয়েছিল। এজন্য সে মাঝিকে রাজি করাতে এক সিকি ও দুই আনি দিতে চায়। এটি ছিল তার ছোট্ট উপহার বা বিনিময়মূল্য। কানাই জানত মাঝি যদি টাকা পায়, তাহলে তাদের নৌকায় তুলতে রাজি হতে পারে।

গ. উদ্দীপকে কিশোরীরা বাস্তব জীবনে পিকনিকে যায়, নিজেরা রান্না করে, খায়, খেলে ও মজা করে। এখানে দিঘির জলে নামা, খিচুড়ি রান্না ও খাওয়া – সবই বাস্তব ও সম্ভব ঘটনা। কিন্তু কবিতায় বলা হয়েছে কানাই ও ছোকানুর কল্পনার নৌকা-ভ্রমণের গল্প। তারা মাঝিকে এক টাকায় ভাড়া দেয়, ইলিশ মাছ কিনে রান্না করে, তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে যা বাস্তব জীবনে ঘটার সম্ভাবনা কম। কবিতায় নদী, পালতোলা নৌকা, গল্প-গান, রান্না সব কিছু স্বপ্ন আর কল্পনার জগতে ঘটে। উদ্দীপকের কিশোরীরা নিজের হাতে কাজ করে আনন্দ পায়, কিন্তু কবিতায় সব ঘটছে ঘুমের মধ্যে — অর্থাৎ স্বপ্নের মতো। কবিতার মধ্যে বাস্তবতা নেই, বরং শিশুদের মনের রঙিন ভাবনার প্রতিফলন আছে। অন্যদিকে উদ্দীপক একেবারে বাস্তব জীবনের ঘটনাকে তুলে ধরেছে। এই জন্যই বলা যায়, কবিতা আর উদ্দীপকের মধ্যে প্রধান অমিল হলো – কবিতা কল্পনাপ্রধান, আর উদ্দীপক বাস্তবভিত্তিক।

ঘ. উদ্দীপক ও কবিতার গল্প আলাদা হলেও দুটিতেই কিশোর মন ও তার অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকে কিশোরীরা মজা করে পিকনিক করছে, নিজেরা রান্না করছে, খেলাধুলা করছে এ সবই বাস্তব ও জীবন্ত অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে কবিতায় কানাই তার ছোট বোন ছোকানুকে নিয়ে মাঝির নৌকায় ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে, নদী ঘুরে বেড়ায়, রান্না করে ও আনন্দ করে যা কল্পনায় তৈরি এক জগৎ।

দুটোতেই দেখা যায়, ছোটদের স্বাধীনভাবে কিছু করবার আনন্দ, নিষিদ্ধ কাজের রোমাঞ্চ এবং নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর মজা। তারা বড়দের না জানিয়ে নিজস্ব দুনিয়ায় হারিয়ে যায়। বাস্তব বা স্বপ্ন, দুটি ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে খুশি, হাসি, কল্পনা আর মুক্তির আনন্দ কাজ করে। এই অনুভবগুলিই কিশোর মনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তাই বলা যায়, বিষয়বস্তু আলাদা হলেও, কিশোরদের কল্পনা, স্বাধীনতা, আনন্দ আর উচ্ছ্বাস প্রকাশের দিক থেকে উদ্দীপক ও কবিতা একে অপরের সঙ্গে মিল রেখে চলে। দুটিই কিশোর মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের পরিচয় বহন করে।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। [জে. এস. সি. পরীক্ষা বরিশাল বোর্ড ২০১৭]
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
‘দিঘির ধারে ঐ যে কীসের আলো।’
এমন সময় হা রেরেরেরেরে
ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে পালকি ছেড়ে
কাঁপছে থরোথরো আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে
‘আমি আছি, ভয় কেন মা করো?’

ক. কানাই মাঝিকে কখন গল্প বলতে বলেছিল?

খ. কানাই বাবার বকুনি একাই মাথা পেতে নিতে চেয়েছিল কেন?

গ. উদ্দীপকের বক্তা ও ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার কানাইয়ের মধ্যকার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার আংশিক ভাব প্রতিফলিত হয়েছে- যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখ।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। [জে. এস. সি. পরীক্ষা দিনাজপুর বোর্ড ২০১৭]
নিশু ও মিশু দুই ভাই। রাতে শোবার সময় তারা বাবার কাছে বায়না ধরেছে লাল, নীল রঙের ঘুড়ি কিনে আকাশে উড়াবে। এক সময় তারা ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুমের ঘোরে তারা স্বপ্ন দেখে, তাদের লাল, নীল রঙের ঘুড়িগুলো আকাশে উড়ছে।

ক. ছোকানুর কাছে কয়টি আনি ছিল?

খ. ‘একা নেবো মাথা পেতে’- এখানে কী মাথা পেতে নেবার কথা বলা হয়েছে? বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি অপেক্ষা ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার ব্যাপ্তি অধিক- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। [জে. এস. সি. পরীক্ষা রাজশাহী বোর্ড ২০১৫]
মনে কর যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে।
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।

ক. খাওয়ার পর মাঝি কোন রঙের পাল তোলে?

খ. যত দোষ সব আমরা- না, আমি একা নেবো মাথা পেতে।-ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের কিশোরটির সাথে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার বালকটির যে সাদৃশ্য আছে তা তুলে ধর।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করে না।”-উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। [জে. এস. সি. পরীক্ষা রাজশাহী বোর্ড ২০১৬]
বনলতার মেলা দেখার খুবই শখ। সে তার চাচার কাছে বায়না ধরে। মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। চাচা যাতে তাকে নিয়ে যায় সে জন্য চাচাকে পীড়াপীড়ি করে। সে বলে, বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়েছে এবং তার কাছে টাকা আছে। তাই দিয়ে তারা নাগরদোলায় চড়বে, বাঁশি কিনবে, মিষ্টি খাবে। সে তার চাচাকে আরও বলে- রাতে চাঁদের আলোয় মেলা দেখার মজাই আলাদা।

ক. কানাইয়ের বোনের নাম কী?

খ. ছোকানু কীভাবে রান্নার কারসাজি দেখাবে?

গ. বনলতার কল্পনার সাথে কানাইয়ের কল্পনার বৈসাদৃশ্য কী? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “চাঁদের আলোয় মেলা দেখার মজাই আলাদা” – ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। [জে. এস. সি. পরীক্ষা কুমিল্লা বোর্ড ২০১৫]
রাতুল শহরের স্কুলে পড়ে। ঈদের ছুটিতে সে পরিবারের সবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে সে চাচাত ভাই-বোনের সঙ্গে নৌকায় করে ঘুরতে বের হয়। সে নৌকায় চড়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, শাপলা তোলাসহ আরও নানা রকমের আনন্দ করে। সারাদিনের আনন্দ-ভ্রমণ শেষে সে বিকেলে ঘরে ফিরে আসে।

ক. রান্নার কারসাজি কে দেখাবে?

খ. রূপোলি নদীর রুপোলি ইলিশ বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপক ও ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা কোথায়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “রাতুলের আনন্দানুভূতি কানাইয়ের স্বপ্নের সম্পূর্ণ প্রতিফলন।”- মন্তব্যটির সাথে তুমি কি একমত? যুক্তিসহ লেখ।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

ক. ছোকানুর ভাইয়ের নাম কী?

খ. কানাই কেন মাঝিকে ভালো বলেছে? বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার সাদৃশ্য ঘটেছে কোন দিক দিয়ে?

ঘ. “ভাবের মিল থাকলেও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট আলাদা”-উদ্দীপক ও ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতা অবলম্বনে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮।
ট্রেন দেখার শখ সজীবের বহুদিনের। বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে অনেক দিনই সজীব ট্রেনের শব্দ শুনতে পেয়েছে। কিন্তু দেখা হয়নি। একদিন সেই শখ পূরণের সময় এলো। গ্রীষ্মের ছুটিতে সজীব ট্রেনে চড়ে যাবে মামার বাড়ি। যথারীতি মা-বাবার সঙ্গে ট্রেনে উঠল। সজীব। প্রথমে একটু ভয় পেলেও ট্রেন চলতে শুরু করলে সজীবের খুবই আনন্দ হলো। সজীব দেখতে পেল অসংখ্য গাছপালা, ঘরবাড়ি, মাঠ দ্রুত অতিক্রম করে ট্রেন এগিয়ে চলছে। মাঝে মাঝে ট্রেনটি থামছে, তখন অনেক মানুষ নামছে আবার ট্রেনে উঠছে। তারপর ট্রেনটি আবার চলতে শুরু করে। বড় হয়ে সজীব অনেকবারই ট্রেনে চড়েছে, কিন্তু প্রথম ট্রেনে চড়ার স্মৃতি সজীব কোনোদিনই ভুলতে পারেনি।

ক. কার বকুনি মাঝিকে খেতে হবে না?

খ. এই ফাঁকে মোরে- আর ছোকানুরে- নৌকোয় নাও তুলে।-কোন ফাঁকে? ব্যাখ্যা কর।

গ. ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতার সঙ্গে উদ্দীপকের কী পার্থক্য রয়েছে, তা চিহ্নিত কর।

ঘ. “নদীর স্বপ্ন’ কবিতা ও উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে শৈশবের সোনালি স্বপ্ন।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

নিচে উত্তরসহ নদীর স্বপ্ন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

নদীর স্বপ্ন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

Related Posts

Leave a Comment