শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রচিত এক অনন্য কবিতা। কবিতাটির প্রতিটি পংক্তিতে স্বাধীনতার জন্য জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম, অমানবিক হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং মুক্তির জন্য মানুষের অসীম আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে। এই পোস্টে তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। শামসুর রাহমান কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৯২৯ সালের ২৩শে অক্টোবর।
২। কোথায় শামসুর রাহমান জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ঢাকা শহরে।
৩। কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উত্তর: নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে।
৪। শামসুর রাহমান কোথা থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন?
উত্তর: ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে।
৫। শামসুর রাহমান কোথা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন?
উত্তর: ঢাকা কলেজ থেকে।
৬। কোন সালে শামসুর রাহমান ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন?
উত্তর: ১৯৪৭ সালে।
৭। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শামসুর রাহমান স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
৮। শামসুর রাহমানের প্রধান পেশা কী ছিল?
উত্তর: সাংবাদিকতা।
৯। কোন শ্রেণির জীবনের চিত্র শামসুর রাহমানের কবিতায় উঠে এসেছে?
উত্তর: মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের।
১০। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: বন্দী শিবির থেকে।
১১। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি কোন সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন থেকে।
১২। ‘রৌদ্র করোটিতে’ কার লেখা কাব্যগ্রন্থ?
উত্তর: শামসুর রাহমানের।
১৩। শামসুর রাহমান কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট।
১৪। শামসুর রাহমানের কবিতায় কোন বৈশিষ্ট্য সার্থকভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: শামসুর রাহমানের কবিতায় অতি আধুনিক কাব্যধারার বৈশিষ্ট্য সার্থকভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
১৫। তোমাকে পাওয়ার জন্যে কে আহ্বান জানাচ্ছেন?
উত্তর: কবি স্বাধীনতাকে আহ্বান জানাচ্ছেন।
১৬। কোন নদীর নাম এসেছে রক্তগঙ্গা হিসেবে?
উত্তর: গঙ্গা নদীর নাম এসেছে রক্তগঙ্গা রূপে।
১৭। ‘খাণ্ডবদাহন’ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: যুদ্ধকালীন ধ্বংসযজ্ঞ বোঝানো হয়েছে।
১৮। কোন নারীর কপাল ভাঙল?
উত্তর: সাকিনা বিবির।
১৯। হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর কেন মুছে গেল?
উত্তর: তার স্বামী শহিদ হওয়ায় সে বিধবা হয়েছে।
২০। ‘জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক’ কার প্রতীক?
উত্তর: পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর।
২১। ট্যাঙ্ক কিভাবে শহরে এসেছিল?
উত্তর: দানবের মতো চিৎকার করতে করতে শহরে প্রবেশ করছিল।
২২। রিকয়েললেস রাইফেল ও মেশিনগান কী?
উত্তর: যুদ্ধের ভয়ংকর অস্ত্র।
২৩। ‘খই ফোটাল’ উপমাটি কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: অস্ত্রের গুলির শব্দ বোঝাতে।
২৪। গ্রামের পর গ্রাম কী হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর: ছাই বা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল।
২৫। একটা কুকুর কী করছিল ভগ্নস্তূপে?
উত্তর: আর্তনাদ করছিল।
২৬। একটি শিশু কী করছিল পিতা-মাতার লাশের উপর?
উত্তর: হামাগুড়ি দিচ্ছিল।
২৭। কতবার প্রশ্ন করা হয়েছে রক্তগঙ্গায় ভাসার কথা?
উত্তর: দু’বার।
২৮। ‘থুথুড়ে এক বুড়ো’ কোথায় বসেছিলেন?
উদাস দাওয়ায়।
২৯। বুড়োর চোখের নিচে কী ছিল?
উত্তর: অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক।
৩০। মোল্লাবাড়ির বিধবা কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল?
উত্তর: নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ধ ঘরের পাশে।
৩১। কোন কিশোরী পথের ধারে বসে ছিল?
উত্তর: একজন হাড্ডিসার অনাথ কিশোরী।
৩২। জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক কীভাবে এলো?
উত্তর: জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক দানবের মতো চিৎকার করতে করতে এলো।
৩৩। অধীর আগ্রহে সবাই বসে আছে কীসের প্রতীক্ষায়?
উত্তর: অধীর আগ্রহে সবাই বসে আছে স্বাধীনতার প্রতীক্ষায়।
৩৪। হরিদাসীর কী মুছে গিয়েছিল?
উত্তর: হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গিয়েছিল।
৩৫। নতুন নিশান উড়িয়ে কে আসবে?
উত্তর: নতুন নিশান উড়িয়ে স্বাধীনতা আসবে।
৩৬। শূন্য থালা হাতে পথের ধারে কে বসে ছিল?
উত্তর: শূন্য থালা হাতে পথের ধারে হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী বসে ছিল।
৩৭। হাড্ডিসার অনাথ কিশোরীর হাতে কি ছিল?
উত্তর: একটি শূন্য থালা।
৩৮। সগীর আলী কে ছিলেন?
উত্তর: শাহবাজপুরের এক জোয়ান কৃষক।
৩৯। কার ফুসফুস এখন পোকার দখলে?
উত্তর: ঢাকার রিকশাওয়ালা রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন পোকার দখলে।
৪০। জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক কীসের মতো চিৎকার করল?
উত্তর: জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক দানবের মতো চিৎকার করল।
৪১। ছাত্রাবাস আর বস্তি কেন উজাড় হলো?
উত্তর: স্বাধীনতা আসবে বলে ছাত্রাবাস আর বস্তি উজাড় হলো।
৪২। অবুঝ শিশু কোথায় হামাগুড়ি দেয়?
উত্তর: অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দেয় পিতা-মাতার লাশের ওপর।
৪৩। কেষ্ট দাস কে?
উত্তর: জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোক।
৪৪। মতলব মিয়া কে?
উত্তর: মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি।
৪৫। মতলব মিয়া কখন গাজী গাজী বলে নৌকা চালায়?
উত্তর: মতলব মিয়া উদ্দাম ঝড়ের সময় গাজী গাজী বলে নৌকা চালায়।।
৪৬। রুস্তম শেখের পেশা কী ছিল?
উত্তর: রিকশাওয়ালা।
৪৭। রুস্তম শেখের ফুসফুসের অবস্থা কী?
উত্তর: এখন পোকার দখলে, অর্থাৎ তিনি মৃত।
৪৮। জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোক কে?
উত্তর: জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোক কেষ্ট দাস।
৪৯। একজন তেজি তরুণ কী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?
উত্তর: রাইফেল কাঁধে।
৫০। সবাই কিসের জন্য প্রতীক্ষা করছে?
উত্তর: স্বাধীনতার জন্য।
৫১। কোন ঘোষণার ধ্বনি কবিতায় এসেছে?
উত্তর: জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।
৫২। দানবের মতো চিৎকার করতে করতে কী এসেছিল?
উত্তর: দানবের মতো চিৎকার করতে করতে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এসেছিল।
৫৩। হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কেন?
উত্তর: স্বাধীনতার যুদ্ধে হরিদাসীর স্বামী মারা যাওয়ায় হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল।
৫৪। বাংলার কোথায় নতুন নিশান উড়ছে?
উত্তর: দিগ্বিদিক বাংলায়।
৫৫। স্বাধীনতাকে কিসের মধ্যে দিয়ে ডাক দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ঘোষণা, দামামা ও নিশান উড়িয়ে।
৫৬। কবিতায় কোন প্রাণী আর্তনাদ করেছে?
উত্তর: একটি কুকুর।
৫৭। কবিতাটিতে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট রয়েছে?
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
৫৮। ঢাকার রিকশাওয়ালার নাম কী?
উত্তর: ঢাকার রিকশাওয়ালার নাম রুস্তম শেখ।
৫৯। শহরের বুকে কী এলো?
উত্তর: শহরের বুকে ট্যাঙ্ক এলো।
৬০। স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য আমরা কোথায় ভেসেছি?
উত্তর: স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য আমরা রক্তগঙ্গায় ভেসেছি।
৬১। মোল্লাবাড়ির বিধবা কী ধরে দাঁড়িয়ে আছে?
উত্তর: মোল্লাবাড়ির বিধবা দগ্ধ ঘরের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
৬২। ‘দামামা’ কী?
উত্তর: ‘দামামা’ হলো জোরালো শব্দ সৃষ্টিকারী এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
৬৩। ‘বাস্তুভিটা’ অর্থ কী?
উত্তর: যে ভূমির উপর পুরুষানুক্রমে বাসগৃহ নির্মিত বা প্রতিষ্ঠিত।
৬৪। ‘খান্ডবদাহন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘খান্ডবদাহন’ শব্দের অর্থ হলো ভীষণ অগ্নিকাণ্ড।
৬৫। খাণ্ডবদাহন কী বোঝায়?
উত্তর: মহাভারতের এক অরণ্য, যা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল; এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৬৬। ‘সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর’ কথাটির মানে কী?
উত্তর: হরিদাসীর স্বামী শহিদ হয়েছেন, তাই তাকে সিঁদুর মুছে ফেলতে হয়েছে।
৬৭। ‘যত্রতত্র’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: যেখানে-সেখানে বা সব জায়গায়।
৬৮। কেন ছাত্রাবাস ও বস্তি উজাড় হয়েছিল?
উত্তর: কারণ সেগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রতিরোধ আন্দোলনের কেন্দ্র।
৬৯। কাদের দ্বারা গণহত্যা চালানো হয়?
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা।
৭০। হানাদার বাহিনী কী ধ্বংস করতে চেয়েছিল?
উত্তর: বাঙালি জাতি ও তাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
৭১। ‘তুমি আসবে বলে’ বাক্যে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর: স্বাধীনতাকে।
৭২। মুক্তিযুদ্ধে কত মাসব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছিল?
উত্তর: নয় মাস।
৭৩। ‘থুথুড়ে এক বুড়ো’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধকে।
৭৪। ‘রুস্তম শেখ’ কে ছিলেন?
উত্তর: একজন রিকশাওয়ালা যিনি যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন।
৭৫। ‘তার ফুসফুস এখন পোকার দখলে’ কথাটির মানে কী?
উত্তর: তিনি মৃত, তাঁর দেহ পোকায় আক্রান্ত।
৭৬। সনাতন ধর্মে সিঁদুর পরার রীতি কোন অবস্থায় পালিত হয়?
উত্তর: স্বামীর জীবিত অবস্থায়, অর্থাৎ সধবারা সিঁদুর পরেন।
৭৭। স্বামীর মৃত্যুর পর নারীর সিঁথির সিঁদুরের কী হয়?
উত্তর: তা মুছে ফেলা হয়।
৭৮। হানাদার বাহিনী শহর ও গ্রামে কী করেছিল?
উত্তর: তারা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছিল।
৭৯। স্বাধীনতা কীভাবে অর্জিত হয়েছে?
উত্তর: অপরিসীম আত্মত্যাগের মাধ্যমে।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা অনুধাবন প্রশ্ন
১। ‘সাবিনা বিবির কপাল ভাঙল’ একথার মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সাবিনা বিবির কপাল ভাঙল’ বলতে মুক্তিযুদ্ধে তার সর্বস্ব হারানোর বেদনাকে বোঝানো হয়েছে।
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, যে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির ত্যাগের কথা বলেছেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা অনেক বাঙালিকে মেরে রক্তের স্রোত বইয়ে দেয়। স্বাধীনতার জন্য সাবিনা বিবির মতো অনেক নারী ঘর, সম্পদ ও সম্মান সবকিছু হারান। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ংকর অত্যাচারে তারা নিঃস্ব ও বিপদে পড়েন।
২। হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর বিধবা হওয়ার বিষয়টি বোঝাতে বলা হয়েছে সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল।
হিন্দু রমণীরা বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরে। ধর্মীয় বিশ্বাসে, স্বামীর হাতে পরানো এই সিঁদুর স্বামী মারা গেলে মুছে ফেলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর স্বামী মারা যান, তাই তাকে সিঁদুর মুছতে হয়। এই ঘটনাই প্রশ্নোক্ত চরণে বোঝানো হয়েছে।
৩। ‘সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর’ চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর বিধবা হওয়ার বিষয়টি বোঝাতে বলা হয়েছে ‘সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল’।
হিন্দু রমণীরা বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী স্বামীর হাতে পরানো এই সিঁদুর স্বামী মারা গেলে মুছে ফেলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর স্বামী শহীদ হন, তাই তাকে সিঁদুর মুছতে হয়। এই ঘটনাই প্রশ্নোক্ত চরণে বোঝানো হয়েছে।
৪। শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নির্মমতা ও ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক ব্যবহার করত। শহরে গর্জন করে আসা এই ট্যাঙ্ককে কবি দানবের চিৎকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ট্যাঙ্ক দিয়ে তারা বাংলার মানুষ ও জনপদ ধ্বংস করেছে। রূপকথায় যেমন দৈত্য-দানব সবকিছু নষ্ট করে, ঠিক তেমনই এই ট্যাঙ্ক যেখানে গেছে, সেখানেই মানবতা ধ্বংস হয়েছে।
৫। জলপাই রঙের ট্যাঙ্ককে দানবের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো দানবের মতো ক্ষিপ্রতায় শহরে প্রবেশ করেছিল বলে কবি তাদের দানব বলে অভিহিত করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী দানবের মতো আচরণ করে সাঁজোয়া যান নিয়ে শহরে প্রবেশ করত। তারা ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছুড়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করত, মানবতার কোনো মূল্য দিত না। ট্যাঙ্ক দিয়ে তাদের এই নৃশংস কাজ দেখেই কবি সেগুলোকে দানব বলেছেন।
৬। ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- পঙক্তিটির দ্বারা বহু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানি সেনারা পুরো বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তাই তারা গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছিল। কিন্তু তাতেও বাঙালির মনোবল ভাঙেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
৭। ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ংকর তাণ্ডবে ছাত্রাবাস ও বস্তি উজাড় হলো।
যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর বীভৎস তাণ্ডব চালায়। সেই আক্রমণ থেকে ছাত্রদের ছাত্রাবাস ও গরিব মানুষের বস্তিও রেহাই পায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে আক্রমণ করে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের সমস্ত বাসস্থান পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
৮। ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য পঙক্তিটি দ্বারা বহু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ফলে তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও বাঙালিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
৯। ‘ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ এবং এর বিরুদ্ধে এক প্রাকৃতিক প্রতিবাদের কথাই প্রশ্নোক্ত উক্তিতে প্রকাশিত।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা দেশে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা একের পর এক জনপদ ধ্বংস করে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে এবং সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই নৃশংসতার প্রতিবাদ হিসেবে কবি একটি কুকুরের একটানা চিৎকারের কথা বলেছেন, যে ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে যেন প্রাকৃতিক প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
১০। ‘তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: জীবন অপরাহ্ণে পৌছানো থুথুড়ে বুড়োর চোখে স্বাধীনতার স্বপ্নবীজকে তুলে ধরতেই কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি করেছেন।
অপরাহ্ণ হলো দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়, যখন সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে যায় আর রোদ কমে আসে। তাই কবি স্বাধীনতার জন্য বয়সের শেষ পর্যায়ে পৌঁছানো এক বৃদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অপরাহ্ণের ম্লান রোদের সাথে তুলনা করেছেন।
১১। মোল্লাবাড়ির বিধবা দগ্ধ ঘরের নড়বড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
উত্তর: স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্যে মোল্লাবাড়ির বিধবা নড়বড়ে পুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এই দেশের সব মানুষের স্বপ্ন। পাক হানাদাররা হিন্দু-মুসলমান সবাইকে একইভাবে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। তাদের হাত থেকে মোল্লাবাড়িও রক্ষা পায়নি। তাই দগ্ধ ঘরের ভাঙা খুঁটি ধরে স্বাধীনতার ডাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোল্লাবাড়ির বউ।
১২। অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে বসে আছে কেন?
উত্তর: যুদ্ধে আপনজনহারা অনাথ, নিঃস্ব কিশোরী একটু খাবারের আশায় শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনেক শিশু-কিশোর মা-বাবা ও আত্মীয়কে হারিয়ে অনাথ ও নিঃস্ব হয়। কবিতায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও দুঃখের ছবি ফুটাতে কবি এক হাড্ডিসার অনাথ কিশোরীর কথা বলেছেন। স্বজনহারা ও ক্ষুধার্ত সেই মেয়েটি একটু খাবারের আশায় শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে।
১৩। ‘রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন পোকার দখলে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘যার ফুসফুস এখন পোকার দখলে’ চরণটি দ্বারা স্বাধীনতার জন্য রুস্তম শেখের মতো সাধারণ মানুষদের উপর অত্যাচারের দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।
রুস্তম শেখ ছিলেন একজন সাধারণ রিকশাচালক। কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে ছাড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তার মৃত্যু হয়। মাটির নিচে এখন তার ফুসফুসে পোকা বাস করছে। আসলে, স্বাধীনতার জন্য রুস্তম শেখের মতো সাধারণ মানুষকেও প্রাণ দিতে হয়েছে—এটাই বোঝাতে এই কথাগুলো বলা হয়েছে।
১৪। ‘একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’ বলতে কবি বাংলাদেশের স্বাধীন রূপে আবির্ভূত হওয়াকে বুঝিয়েছেন।
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি মুক্তিযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের ছবি দেখিয়েছেন। অনেক আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা এই দেশ পেয়েছি। এই আত্মত্যাগগুলোই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নতুন জন্ম ঘটিয়েছে। কবি এই কথাই বলতে চেয়েছেন যে, একটি নতুন পৃথিবী তৈরি হতে চলেছে।
১৫। ‘ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে’ বলতে স্বাধীনতার ধ্বনি বাঙালির হৃদয়ে ছড়িয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
ধ্বনি যখন কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থেকে ফিরে এসে আবার সেই স্থানে পৌঁছায়, তাকে প্রতিধ্বনি বলা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের মানুষ মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তখন সবাই ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি বারবার উচ্চারণ করত, যা দেশের মুক্তিকামী মানুষদের উত্সাহিত ও সাহস যোগাত।
১৬। ‘তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা’—কবির এই দৃঢ় উচ্চারণের কারণ বুঝিয়ে লেখো?
উত্তর: স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ, দৃঢ়তা ও আশাবাদের স্বরূপ লক্ষ করে কবি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা’।
স্বাধীনতার জন্য এই দেশের লাখো বাঙালি প্রাণ দান করেছে। অনেক নারী স্বামীকে হারিয়েছে, অনেকের সম্মান লুপ্ত হয়েছে। অনেক সন্তান অনাথ হয়েছে, অনেক মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। তবুও বাংলার মানুষ কখনো স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে সরে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে সবার চোখে ছিল স্বাধীনতার জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষা। মানুষের এত বড় ত্যাগ ও আশা দেখে কবি স্বাধীনতার আসা নিশ্চিত বিশ্বাস করেন।