তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোতাকাহিনী গল্পটি আমাদের শিক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে। এখানে শিক্ষার নামে যে সমস্ত বাহ্যিক আয়োজন করা হয়েছিল – দামী সোনার খাঁচা, পর্বতপ্রমাণ পুথি, পণ্ডিতদের বাহাদুরি, রক্ষণাবেক্ষণের লোকবল ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার্থীর অবস্থা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। নিচে তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

তোতা কাহিনী গল্পের মূলভাব

একটি মুক্তচেতা পাখি গান গেয়ে, উড়ে বেড়িয়ে আর লাফিয়ে প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করত, কিন্তু রাজদরবারের নিয়মকানুন সে জানত না। রাজা তাকে অশিক্ষিত ও অকর্মণ্য ভেবে মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন পাখিটাকে শিক্ষা দিতে। পণ্ডিতেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে খড়ের বাসায় বিদ্যা ধরে না, তাই সোনার খাঁচা তৈরি করতে হবে। স্বর্ণকাররা দামি খাঁচা বানালে সবাই তা দেখতে ভিড় জমাল, কিন্তু পাখির কথা কেউ ভাবল না। পণ্ডিতেরা বইয়ের পর্বত তৈরি করলেন, লিপিকরেরা বই কপি করে বিত্তবান হল, কিন্তু পাখির মুখে জোর করে বই ঠেসে দেওয়া ছাড়া কোনো প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হল না। নিন্দুকরা যখন প্রশ্ন তুলল যে খাঁচার চাকচিক্য বাড়লেও পাখির কোনো উন্নতি হচ্ছে না, রাজা তাদের দমন করলেন। পাখির স্বাভাবিক আচরণকে ‘অশিষ্ট’ আখ্যা দিয়ে তার ডানা কেটে লোহার শিকল পরানো হল। শেষে পাখিটি নিঃশব্দে মারা গেল, কিন্তু রাজদরবার দাবি করল তার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকৃতির বুকে বসন্ত এল, গাছে গাছে নতুন কিশলয় গজাল, কিন্তু সেই সোনার খাঁচায় শুধু বইয়ের পাতার খসখস শব্দ শোনা গেল – মুক্ত পাখির গান চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল, আর কেউ তাকে উড়তে দেখল না।

তোতা কাহিনী গল্পের বিষয়বস্তু (সহজ ভাষায়)

১.
একটি পাখি ছিল। সে ছিল অজ্ঞ। সে গান গাইত, কিন্তু শাস্ত্র পড়ত না। লাফাত, উড়ত, কিন্তু শিষ্টাচার বা নিয়মকানুন কিছুই জানত না।
রাজা বললেন, “এমন পাখি তো কোনো কাজে লাগে না। অথচ বনের ফল খেয়ে রাজ্যের বাজারে ফলের দাম কমিয়ে দেয়।”
মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, “পাখিটাকে শিক্ষা দাও।”
২.
পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল রাজার ভাগ্নেদের উপর। পণ্ডিতেরা বসে অনেক আলোচনা করলেন। প্রশ্ন উঠল—এই প্রাণীর অজ্ঞতার কারণ কী? সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, সাধারণ খড়কুটো দিয়ে পাখি যে বাসা বাঁধে, তাতে বিদ্যা ধরে না। তাই প্রথমেই প্রয়োজন একটি ভালো খাঁচা তৈরি করা। রাজপণ্ডিতেরা দক্ষিণা পেয়ে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরলেন।
৩.
স্বর্ণকার সোনার খাঁচা বানাতে বসল। খাঁচাটি এত সুন্দর হল যে, দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় জমাল। কেউ বলল, “এটাই তো শিক্ষার আসল রূপ!” কেউ বলল, “শিক্ষা যদি না-ও হয়, খাঁচাটি তো অসাধারণ! পাখির কী ভাগ্য!”
স্বর্ণকার প্রচুর পুরস্কার পেল এবং খুশি হয়ে বাড়ি চলে গেল।
পণ্ডিত পাখিটাকে শিক্ষা দিতে বসলেন। নস্যি নিয়ে বললেন, “এ তো সাধারণ পড়াশোনা নয়, অনেক বই লাগবে।”
ভাগ্নে তখন পুঁথিলেখকদের ডাকলেন। তারা বই কপি করতে লাগল, আর সেই কপিরও কপি করে বইয়ের পর্বত গড়ে তুলল। সবাই দেখে বলল, “বাহ! এখন আর বিদ্যা ধরে না!”
লিপিকরেরা পুরস্কার পেয়ে বলদে করে বই বোঝাই করে বাড়ি ফিরল। তাদের সংসারে আর অভাব রইল না।
দামি খাঁচাটির দেখভালের জন্য ভাগ্নেদের সতর্কতা দেখে সবাই বলল, “পাখির উন্নতি হচ্ছে!”
অনেক লোক নিয়োগ করা হল, আর তাদের তদারকির জন্য আরও লোক নিয়োগ করা হল। তারা মাসে মাসে বেতন পেয়ে সিন্দুক ভরে তুলল। তারা আর তাদের আত্মীয়রা সুখে বসবাস করতে লাগল।
৪.
সংসারে অনেক কিছুরই অভাব আছে, কিন্তু নিন্দুকের অভাব নেই। তারা বলল, “খাঁচার উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু পাখিটার কী হল?”
এই কথা রাজার কানে গেল। তিনি ভাগ্নেকে ডেকে বললেন, “ভাগ্নে, এ কী শুনছি?”
ভাগ্নে বলল, “মহারাজ, সত্য জানতে চাইলে স্বর্ণকার, পণ্ডিত, লিপিকর, আর যারা খাঁচার রক্ষণাবেক্ষণ করে—সবাইকে ডাকুন। নিন্দুকরা খেতে না পেয়েই মিথ্যা কথা বলে।”
রাজা উত্তর শুনে বুঝতে পারলেন, এবং ভাগ্নের গলায় সোনার হার পরিয়ে দিলেন।
৫.
শিক্ষার প্রক্রিয়া কত জোরেশোরে চলছে, তা দেখতে রাজা নিজেই শিক্ষালয়ে এলেন।
দরজার কাছে শাঁখ, ঢাক, ঢোল, তুরি, ভেরি—নানা বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। পণ্ডিতেরা মন্ত্র পড়তে লাগলেন। কারিগর, লেখক, তদারককারী—সবাই জয়ধ্বনি দিল।
ভাগ্নে বলল, “মহারাজ, দেখুন তো কেমন চলছে!”
রাজা বললেন, “অসাধারণ! শব্দ তো কম নয়!”
ভাগ্নে বলল, “শুধু শব্দ নয়, এর পেছনে অর্থও কম নয়!”
রাজা খুশি হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, এমন সময় ঝোপের আড়াল থেকে একজন নিন্দুক চেঁচিয়ে বলল, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখেছেন কি?”
রাজার চমক লাগল। বললেন, “ওই যে! পাখিটাকে তো দেখাই হয়নি!”
ফিরে এসে পণ্ডিতকে বললেন, “পাখিটাকে কীভাবে শেখাচ্ছ, তা দেখতে চাই।”
দেখা হল। রাজা খুব খুশি। পাখির শিক্ষাপদ্ধতি এত বড় যে, পাখিটাই চোখে পড়ে না। মনে হয়, পাখি না দেখলেও চলে। খাঁচায় দানা-পানি নেই, শুধু বই থেকে পাতা ছিঁড়ে পাখির মুখে ঠেসে দেওয়া হচ্ছে। গান বন্ধ, চিৎকারের জায়গাও নেই। দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়।
রাজা এবার হাতিতে চড়ার সময় কানমলা-সর্দারকে বললেন, নিন্দুকটাকে ভালো করে কান মলে দিতে।
৬.
পাখিটি দিনে দিনে মরার মতো হয়ে গেল। অভিভাবকেরা বলল, “এখন ঠিক হচ্ছে।” কিন্তু সকালের আলো দেখলেই পাখিটি বেঁকে বসত, ডানা ঝাপটাত। এমনকি, কখনো কখনো তার রোগা ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটার চেষ্টা করত।
কোতোয়াল বলল, “এ কী বেয়াদবি!”
তখন কামার এসে লোহার শিকল বানাল, পাখির ডানা কেটে দিল।
রাজার আত্মীয়েরা বলল, “এ রাজ্যের পাখিরা শুধু বোকাই নয়, অকৃতজ্ঞও!”
পণ্ডিতেরা কলম আর ছুরি নিয়ে এমন শিক্ষা দিল যে, পাখিটা একদম গুডবয় হয়ে গেল।
কামারের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠল, কোতোয়াল পুরস্কার পেল।
৭.
পাখিটি মরে গেল। কেউ তাকে আগে থেকে দেখেনি। নিন্দুক বলল, “পাখি মরে গেছে!”
ভাগ্নেকে ডেকে রাজা বললেন, “ভাগ্নে, এ কী শুনছি?”
ভাগ্নে বলল, “মহারাজ, পাখির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে।”
রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “এখনও কি লাফায়?”
ভাগ্নে বলল, “না।”
“উড়ে?”
“না।”
“গান গায়?”
“না।”
“দানা চাইলে চেঁচায়?”
“না।”
রাজা বললেন, “একবার পাখিটাকে আনো তো, দেখি।”
পাখি আনা হল। সঙ্গে কোতোয়াল, পাইক, ঘোড়সওয়ার—সবাই এল।
রাজা পাখিটাকে টিপে দেখলেন, সে নড়ল না, শব্দ করল না। শুধু তার পেটে বইয়ের শুকনো পাতা খসখস শব্দ করছিল।
বাইরে বসন্তের হাওয়ায় গাছের নতুন পাতাগুলি দুলছিল, কিন্তু পাখির গান আর কেউ শুনতে পেল না।

তোতা কাহিনী গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১। ক. রাজা কাকে এবং কেন পাখিটাকে শিক্ষা দিতে বললেন? ব্যাখ্যা কর। 
খ. ‘তোতা-কাহিনি’ গল্পের পাখিটার অবিদ্যা দূর করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তার বিবরণ দাও।

ক) উত্তরঃ রাজা মন্ত্রীকে পাখিটাকে শিক্ষা দিতে বললেন কারণ পাখিটি তার দরবারের নিয়মকানুন মানত না। এটি বনের ফল খেয়ে বেঁচে থাকত, রাজ্যের ফলের বাজারে লোকসান ঘটাত। পাখিটি মুক্তভাবে গান গাইত, লাফাত, উড়ত—কিন্তু রাজার কাছে এগুলো ছিল অশিষ্ট ও অশিক্ষিতের আচরণ। রাজা চেয়েছিলেন পাখিটি শিষ্টাচার শিখুক, নিয়ম মেনে চলুক, যাতে তা রাজ্যের কাজে লাগে। তিনি মনে করেছিলেন, শিক্ষা দিলে পাখিটি আর বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না এবং রাজদরবারের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু রাজা বুঝতে পারেননি যে প্রকৃতির মুক্ত পাখিকে জোর করে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা ভুল ছিল।

খ) উত্তরঃ পাখিটাকে “শিক্ষিত” করার জন্য প্রথমে পণ্ডিতেরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তার সাধারণ খড়ের বাসা বিদ্যার অনুপযুক্ত। তাই তারা একটি দামি সোনার খাঁচা বানানোর ব্যবস্থা করে। স্বর্ণকাররা খাঁচা তৈরি করলে সবাই তার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়, কিন্তু পাখির প্রকৃত শিক্ষার দিকে কেউ নজর দেয় না। এরপর পণ্ডিতেরা প্রচুর বই জোগাড় করে পাখির মুখে ঠেসে দেওয়া শুরু করে, যেন তাকে জ্ঞানী বানানো যায়। পাখির স্বাভাবিক গান বা ডাককে তারা অশিক্ষার লক্ষণ ভেবে দমন করে। যখন পাখিটি খাঁচার শিক কাটার চেষ্টা করে বা মুক্ত হতে চায়, তখন তাকে শাস্তি দেওয়া হয়—লোহার শিকল পরানো হয়, এমনকি তার ডানা কেটে দেওয়া হয়। নিন্দুকরা যখন বলে যে খাঁচার উন্নতি হলেও পাখির কোনো উন্নতি হচ্ছে না, তখন রাজা তাদের দমন করেন এবং ভাগ্নেকে পুরস্কৃত করেন। শেষ পর্যন্ত পাখিটি নীরবে মারা যায়, কিন্তু রাজদরবার দাবি করে যে তার “শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে”। এই সব পদক্ষেপ আসলে পাখিটাকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার বদলে তাকে ধ্বংস করেছিল, কারণ প্রকৃতির মুক্ত সত্তাকে জোর করে বন্দী করে শাসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।


প্রশ্ন ২। ক. নিন্দুক রাজাকে কী বলেছিল? ব্যাখ্যা কর।
খ. ‘তোতা-কাহিনি’ গল্পে “খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে; কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক) উত্তরঃ নিন্দুক রাজাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিল, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি?” এই সরল প্রশ্নের মাধ্যমে নিন্দুক প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছিল। যখন সবাই খাঁচার বাহ্যিক সৌন্দর্য আর শিক্ষার আয়োজনে মগ্ন ছিল, নিন্দুক একটিমাত্র প্রশ্ন করে বুঝিয়ে দিল যে আসল উদ্দেশ্য – পাখিটাকে শিক্ষিত করা – সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। রাজা নিজেও এই প্রশ্ন শুনে হুঁশ ফিরে পেয়েছিলেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রকৃত শিক্ষার চেয়ে বাহ্যিক আড়ম্বরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিন্দুকের এই প্রশ্ন ছিল সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচনকারী।

খ) উত্তরঃ এই মন্তব্যটি গল্পের মূল বার্তাকে স্পষ্ট করে – সমাজে প্রায়শই প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে যায় বাহ্যিক আড়ম্বরে। খাঁচার উন্নতি বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে শিক্ষার নামে করা সমস্ত বাহ্যিক আয়োজন: দামি সোনার খাঁচা, অসংখ্য পুথি, পণ্ডিতদের বাহাদুরি, রক্ষণাবেক্ষণের বাহারি ব্যবস্থা। কিন্তু পাখির অবস্থা কেউ বিবেচনা করেনি – তার স্বাধীনচেতা প্রকৃতি, গান গাওয়ার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, উড়ে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষা সবই উপেক্ষিত হয়েছে। এটি আমাদের সমাজের সেই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি যেখানে স্কুলের ভবন, ইউনিফর্ম, পরীক্ষার ফলাফলের সংখ্যা গুরুত্ব পায় কিন্তু শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ, সৃজনশীলতা ও স্বাধীনচিন্তার অবকাশ থাকে না। গল্পে পাখির শেষপর্যন্ত মৃত্যু এই ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতাকে নির্দেশ করে – খাঁচা যতই দামি হোক, তাতে বন্দী পাখির জীবনীশক্তি নিঃশেষ হলে সেই সমস্ত আয়োজনের কোনো অর্থ থাকে না। প্রকৃত শিক্ষা হলো মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন বিকাশের সুযোগ দেওয়া, না যে শুধু নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে জ্ঞানকে শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ করে তোলা।


প্রশ্ন ৩। ক. রাজা কানমলা-সর্দারকে কী হুকুম দিলেন, কেন? ব্যাখ্যা কর। 
খ. ‘তোতা-কাহিনি’ গল্পে পাখিটাকে শিক্ষাদানের আয়োজনে শিক্ষার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা বুঝিয়ে দাও

ক) উত্তরঃ রাজা কানমলা-সর্দারকে আদেশ দিলেন নিন্দুকের কান মলিয়ে দিতে, কারণ সেই ব্যক্তি সত্য কথা বলেছিল যে পাখিটাকে কেউ দেখছে না। রাজা চাচ্ছিলেন সবাই যেন শিক্ষার বাহ্যিক আড়ম্বর দেখে মুগ্ধ হয়, কিন্তু নিন্দুক সেই ভণ্ডামি উন্মোচন করে দিয়েছিল। সত্য গোপন করতে রাজা নিন্দুককে শাস্তি দিলেন, যা প্রমাণ করে ক্ষমতাবানরা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। এই আদেশ থেকে বোঝা যায়, রাজা প্রকৃত শিক্ষার চেয়ে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

খ) উত্তরঃ এই গল্পে শিক্ষাদানের নামে যে কৃত্রিম ব্যবস্থা ফুটে উঠেছে তা আসলে প্রকৃত শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমত, শিক্ষার পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছিল একটি বিলাসবহুল সোনার খাঁচা, যা শিক্ষার পরিবেশ নয়, বরং বন্দীদশার প্রতীক। দ্বিতীয়ত, পণ্ডিতেরা পাখির মুখে জোর করে বই ঠেসে দিয়েছিলেন, যা মুখস্তবিদ্যা বা গলাধঃকরণ শিক্ষার সমতুল্য। তৃতীয়ত, পাখির স্বাভাবিক গান ও ডাককে দমন করা হয়েছিল, অর্থাৎ সৃজনশীলতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। চতুর্থত, যখন পাখি মুক্তির চেষ্টা করল, তাকে শারীরিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল – ডানা কেটে লোহার শিকল পরানো হয়েছিল, যা শিক্ষার নামে নিষ্ঠুরতার পরিচয়। সবশেষে, পাখির মৃত্যুকে “শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে” বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সেই দিককে নির্দেশ করে যেখানে সার্টিফিকেটই মুখ্য, শিক্ষার্থীর বিকাশ গৌণ। এই সমস্ত আয়োজন দেখিয়ে দেয় যে প্রকৃত শিক্ষা হলো মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন বিকাশের সুযোগ দেওয়া, না যে নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তির মাধ্যমে মৌলিক প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করা।


আরও পড়ুনঃ জিদ গল্পের মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর – আনন্দপাঠ ৭ম শ্রেণি

Related Posts

Leave a Comment