সুফিয়া কামালের “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি কেবল প্রকৃতি এবং মানব মনের সম্পর্ককে তুলে ধরে না, বরং কবির অন্তরের দুঃখ ও বিষাদের একটি শক্তিশালী প্রকাশ ঘটায়। এই পোস্টে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব
“তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশ পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বসন্ত-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে কবি মনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না । এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহ দাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৯৩২) কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণ্ণতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাকে ঘিরে করে আছে এই বিষাদময় শূন্যতার সুর। তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা।
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায়
সুফিয়া কামালের “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি প্রকৃতি এবং মানুষের অনুভূতির মধ্যে সম্পর্ককে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। এখানে কবি দেখছেন, বসন্ত এসে গেছে, কিন্তু তাঁর মনে কোনো আনন্দ নেই। কবির সঙ্গে এক স্নিগ্ধ চোখের কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, কবি এখন এক গভীর শোকে আচ্ছন্ন।
কবির স্নিগ্ধ চোখটি কবিকে প্রশ্ন করে, কেন তিনি বসন্তের আনন্দে নীরব। কবি তখন ভাবেন, চারপাশের ফুল-ফল ও সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন আনন্দিত নন। এর পিছনে আছে তাঁর ব্যক্তিগত শোক। ১৯৩২ সালে তাঁর প্রিয় বন্ধু এবং সাহিত্য সঙ্গী স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যু, যা তাঁর জীবনে এক বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। এই শূন্যতা কবির মনে এতটাই ছাপ ফেলেছে যে, প্রকৃতির রূপ-রস কিছুতেই তাঁকে স্পর্শ করতে পারছে না।
স্নিগ্ধ চোখ আবার কবির কাছে জানতে চান, কেন তিনি বসন্তের গান গাইছেন না। কবি জানান, যদিও বসন্ত এসেছে, কিন্তু তাঁর মনে যেন কিছু নেই। বসন্তের সবকিছু, ফুলের গন্ধ, পুষ্পের রঙ—এগুলো এখন অর্থহীন মনে হচ্ছে। কবির মনে এক অন্ধকার নেমে এসেছে, যা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ভাঁজ করে রেখেছে।কবির এই দুঃখের ভাবনা প্রকৃতির উল্লাসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। কবি যখন স্নিগ্ধ চোখের সাথে কথা বলেন, তখন তিনি যেন এক অভিজ্ঞান ভোগ করছেন। বসন্তের সৌন্দর্য তাঁকে সারা জীবনের আনন্দ ফিরিয়ে দিতে পারছে না। সব কিছু এলেও, কবি মনে করেন, তাঁর অনুভূতি এক শূন্যতায় বন্দী হয়ে গেছে।
কবিতার শেষে কবি উপলব্ধি করেন যে, যদিও প্রকৃতি তার রূপে, রঙে এবং গন্ধে ভরা, তবুও তিনি সেই আনন্দ অনুভব করতে পারছেন না। এভাবেই কবি তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে যুক্ত করেছেন।
Related Posts
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বোর্ড পরীক্ষায় আসা)
- Paragraph The Wonders of The Internet (বাংলা অর্থসহ)
- বায়ান্নর দিনগুলো জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
- আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সাম্যবাদী কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি (MCQ)
- আমার পথ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- Compare and Contrast Essay: Human Brain and Artificial Intelligence (AI)