ঝিঙে ফুল কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

কাজী নজরুল ইসলামের “ঝিঙে ফুল” কবিতাটি প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মাটির প্রতি ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে রচিত একটি মর্মস্পর্শী কবিতা। কবিতাটিতে ঝিঙে ফুলের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মাটির টানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই পোস্টে ঝিঙে ফুল কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

ঝিঙে ফুল কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

১। ‘ঝিঙে ফুল’ কবিতায় প্রকৃতির কোন চিত্র ফুটে উঠেছে?

উত্তর: কবিতায় গ্রামের প্রকৃতির এক সুন্দর ছবি ফুটে উঠেছে। সবুজ পাতার মাঝে ঝিঙে ফুল দোল খাচ্ছে, ফিরোজা রঙের ফিঙে পাখি ওড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যায় ঝিঙে ফুল ফুটে ওঠে, মরা মাচানেও প্রাণ আসে। প্রকৃতি যেন সজীব হয়ে ওঠে।


২। ঝিঙে ফুল দেখতে কেমন?

উত্তর: ঝিঙে ফুল ছোট, হলুদ রঙের, আর দেখতে অনেক সুন্দর। কবিতায় একে ‘ঢলঢল স্বর্ণে’ বলা হয়েছে, অর্থাৎ এটি ঝলমলে সোনার মতো উজ্জ্বল। এটি পাতার মাঝে দুলে দুলে হাওয়ার সঙ্গে নাচে। সূর্যের আলো পড়লে এর রঙ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।


৩। ‘সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: এখানে কবি এক সুন্দর সবুজ প্রকৃতির কথা বলেছেন। সেই প্রকৃতিতে ফিরোজা রঙের ফিঙে পাখির দল ওড়ে বেড়ায়। ফিঙে পাখি সাধারণত ছোট হয়, আর দ্রুত উড়ে বেড়ায়। সবুজ পাতার মধ্যে এদের নীলচে ফিরোজা রঙ অনেক সুন্দর লাগে।


৪। ঝিঙে ফুল কোথায় ফোটে?

উত্তর: ঝিঙে ফুল লতাগাছে ফোটে, যা সাধারণত মাচায় বেড়ে ওঠে। কবিতায় বলা হয়েছে, এটি ‘মরা মাচানের দেশ’ অর্থাৎ শুকিয়ে যাওয়া লতার মাচায় ফোটে। ঝিঙে ফুল ফোটার কারণে সেই মাচা আবার প্রাণ ফিরে পায়।


৫। কবিতায় সন্ধ্যার সময় উল্লেখ করা হয়েছে কেন?

উত্তর: সন্ধ্যা হল দিনের এক সুন্দর সময়, যখন প্রকৃতি ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যায়। কবিতায় বলা হয়েছে, ঝিঙে ফুল সন্ধ্যার সময় ফুটে ওঠে, যা প্রকৃতির এক আশ্চর্য পরিবর্তন। তখন পাখিরা নীড়ে ফেরে, আর চারপাশে এক স্নিগ্ধ শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কবি এই সময়টাকে ফুলের ফোটার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।


৬। ‘পউষের বেলাশেষ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘পউষের বেলাশেষ’ মানে পৌষ মাসের শেষ বিকেল বা সূর্যাস্তের সময়। পৌষ মাস সাধারণত শীতের শেষ সময়, যখন প্রকৃতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। তখন সূর্যের আলো একটু নরম হয়ে আসে, আর প্রকৃতির মধ্যে এক সোনালি আভা দেখা যায়। ঝিঙে ফুল তখন জাফরানি রঙের হয়ে ওঠে, যা এই সময়ের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।


৭। ঝিঙে ফুল কোন রঙের বেশ পরে?

উত্তর: ঝিঙে ফুল ‘জাফরানি’ বা হলুদ-কমলা রঙের হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার সময় যখন সূর্যের আলো পড়ে, তখন এটি আরও উজ্জ্বল লাগে। কবি এই রঙের মাধ্যমে প্রকৃতির মিষ্টি ও স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন।


৮। কবিতায় ‘মরা মাচানের দেশ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘মরা মাচানের দেশ’ বলতে বোঝানো হয়েছে শুকিয়ে যাওয়া লতার মাচা, যেখানে নতুন কোনো সবুজ পাতা নেই। কিন্তু ঝিঙে ফুল ফোটার কারণে সেই মাচা আবার সুন্দর হয়ে ওঠে। এটি প্রকৃতির এক নতুন জীবনের প্রতীক।


৯। কবিতায় প্রকৃতি ও শিশুর মধ্যে কী সম্পর্ক দেখানো হয়েছে?

উত্তর: কবিতায় প্রকৃতিকে শিশুর মতো কোমল ও মায়াময়ভাবে দেখানো হয়েছে। ঝিঙে ফুলকে যেমন প্রকৃতি আগলে রাখে, ঠিক তেমনই মা তার শিশুকে আগলে রাখে। শিশুদের ঘুমানোর কথা বলা হয়েছে, যা প্রকৃতির শান্তির সঙ্গে মিলে যায়।


১০। ‘শ্যামলী মায়ের কোলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: এখানে ‘শ্যামলী মা’ বলতে সবুজ প্রকৃতিকে বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতি যেন এক মায়ের মতো, যে তার সৃষ্টিকে আগলে রাখে। ঝিঙে ফুল প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠে, যেমন শিশু মায়ের কোলে বড় হয়।


১১। ‘ঝিঙে ফুল’ কবিতায় প্রকৃতির কোন কোন উপাদান উঠে এসেছে?

উত্তর: কবিতায় অনেক প্রকৃতির উপাদান উঠে এসেছে, যেমন সবুজ পাতা, ফিরোজা রঙের ফিঙে পাখি, ঝিঙে ফুল, সন্ধ্যার আকাশ, পৌষ মাসের বিকেল, প্রজাপতি ও তারা। কবি প্রকৃতিকে এক সুন্দর ও সজীব রূপে উপস্থাপন করেছেন।


১২। ‘ঝিঙে ফুল’ কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনের কী মিল আছে?

উত্তর: ঝিঙে ফুল যেমন লতার গায়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি মানুষও তার পরিবার ও সমাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। ফুল যেমন সন্ধ্যায় ফোটে, মানুষের জীবনেও একটা সময় আসে যখন সে পরিপূর্ণতা পায়। আবার, ফুল যেমন মাটির সঙ্গে থাকতে চায়, তেমন মানুষও তার শেকড়ের প্রতি টান অনুভব করে।


১৩। কবিতায় ‘পাতার দেশের পাখি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: এখানে ‘পাতার দেশের পাখি’ বলতে সবুজ পাতার মধ্যে থাকা ফিঙে পাখিকে বোঝানো হয়েছে। কবি এই পাখিকে ফিরোজা রঙের বলে বর্ণনা করেছেন, যা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে। ঝিঙে ফুলের বোঁটায় বাঁধা হৃদয়ের মতো, এই পাখিও প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।


১৪। কবিতায় ‘আলুথালু’ শব্দটি কী বোঝায়?

উত্তর: ‘আলুথালু’ শব্দের অর্থ এলোমেলো বা অগোছালো। কবিতায় এই শব্দটি দিয়ে দুপুরের তীব্র রোদে ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রোদে ক্লান্ত প্রকৃতিতে যেন এক ধরনের স্থিরতা চলে আসে, যেখানে সব কিছু একটু এলোমেলো মনে হয়।


১৫। ‘প্রজাপতি ডেকে যায়’—বাক্যে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: এখানে প্রজাপতিকে যেন একটি প্রাণবন্ত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যে ঝিঙে ফুলকে আহ্বান জানাচ্ছে। প্রজাপতি বলছে, ‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়’, অর্থাৎ ফুলকে যেন অন্য কোথাও যেতে বলছে। এটি প্রকৃতির প্রাণবন্ত পরিবেশ ও ফুলের প্রতি প্রজাপতির আকর্ষণকে প্রকাশ করছে।


১৬। কবিতায় ‘আসমানে তারা চায়’— বাক্যটি কী বোঝায়?

উত্তর: এখানে ‘আসমানে তারা চায়’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, আকাশের তারাগুলো যেন ঝিঙে ফুলকে তাদের সঙ্গে নেবার জন্য ডাকছে। কিন্তু ঝিঙে ফুল মাটির সঙ্গেই থাকতে চায়, তাই সে এই আহ্বানে সাড়া দেয় না।


১৭। ঝিঙে ফুল অলকায় যেতে চায় না কেন?

উত্তর: অলকা হলো স্বর্গের এক জায়গা, যেখানে দেবতারা থাকেন। কিন্তু ঝিঙে ফুল বলে, সে মাটিতেই ভালো থাকে। কবিতায় অলকার উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে এক ধরণের বিলাসিতা বা স্বর্গীয় জীবনযাত্রা, যা ঝিঙে ফুল প্রত্যাখ্যান করে। ঝিঙে ফুল তার সরল জীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে থাকার আনন্দকে স্বর্গীয় সম্পদের চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করে।


Related Posts

Leave a Comment