গরবিনী মা জননী অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

সিকান্দার আবু জাফরের “গরবিনী মা-জননী” কবিতায় বাংলাকে মা-জননীরূপে কল্পনা করা হয়েছে, যিনি পুণ্যবতী, ভাগ্যবতী এবং তার সন্তানদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছেন। এই পোস্টে গরবিনী মা জননী অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

গরবিনী মা জননী অনুধাবন প্রশ্ন

১। কবিতায় বাঙালি মা-জননী কীভাবে চিত্রিত হয়েছে?

‘মা’ এখানে দেশের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে, যার কোমলতা, শক্তি এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে সন্তানদের জন্ম দেয় এবং তাদের সাহসী সংগ্রামে প্রেরণা দেয়। মা শুধু স্নেহের প্রতীক নয়, দেশের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা এবং সংগ্রামের জন্যও মা প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস।


২। কবি কেন মা-কে ‘গরবিনী’ বলেছেন?

কবি মা-কে ‘গরবিনী’ বলেছেন কারণ মা সেই ব্যক্তি যিনি একে অপরের জন্য কষ্ট সহ্য করেন, আত্মত্যাগ করেন এবং সন্তানের জন্য জীবনের সর্বোচ্চ মূল্য দেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মা গর্বিত এবং শক্তিশালী।


৩। কবিতায় শ্রমজীবী ও কৃষিজীবীদের ভূমিকা বলা হয়েছে?

কবিতায় শ্রমজীবী ও কৃষিজীবীদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশাজীবী জনগণের কথা বলা হয়েছে, যারা মা-জননীর রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। দেশের শোষিত, বঞ্চিত মানুষরা বাঙালি মায়ের সন্তান হিসেবে প্রতিটি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। তারা রক্ত দিয়ে দেশ রক্ষা করেছে।


৪। কবিতায় “মরণ-মারের দণ্ড” বলতে কী বোঝায়?

‘মরণ-মারের দণ্ড’ কথার মাধ্যমে কবি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেশের স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, তা প্রকাশ করেছেন। এখানে মৃত্যু, অত্যাচার এবং সংগ্রামের জন্য প্রাপ্ত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।


৫। বাঙালি মায়ের জন্য সন্তানেরা কি করেছে?

কবিতায় সন্তানের কর্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে, যারা মায়ের জন্য, দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছে। সন্তানেরা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করেছে মায়ের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা রক্ষা করা। তারা যেকোনো অবস্থায় মায়ের নামে লড়াই করেছে, কখনো জেল, কখনো ফাঁসি, এমনকি মৃত্যুও গ্রহন করেছে।


৬। দেশের প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?

কবিতায় দেশের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা অত্যন্ত গভীরভাবে প্রকাশ পায়। সন্তানেরা শুধু দেশকে ভালোবাসে না, দেশের জন্য নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত। ‘পাগল ছেলে’ শব্দে তারা অবিকল বাঙালি জনগণের সংগ্রামী মনোভাবকেই বোঝাতে চেয়েছেন। মায়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং দেশের স্বাধীনতা এই কবিতার মূল বার্তা।


৭। ‘কার ছেলেরা নিত্য হাজার মরণ-মারের দণ্ড গোনে’ব্যাখ্যা কর।

এই বাক্যে কবি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলছেন যারা প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দেশের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। এই ‘মরণ-মারের দণ্ড’ তাঁদের জীবনের অবস্থা এবং সংগ্রামের ভয়াবহতা তুলে ধরছে।


৮। মায়ের ভূমিকাকে কবি কীভাবে দেখিয়েছেন?

কবি মায়ের ভূমিকাকে অনেকটাই মূল চরিত্র হিসেবে দেখেছেন। মা শুধু সন্তানদের বেড়ে ওঠা, শিক্ষা বা উন্নতির জন্য নয়, মায়ের দায়িত্ব হলো তার সন্তানদের দেশপ্রেম, সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করা। মায়ের প্রশ্রয়ে, সাহসে ও শক্তিতে সন্তানরা নিজের আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকে। এই মা-জননী হলেন দেশের শক্তির প্রতীক।


৯। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

কবিতায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়ভাবে চিত্রিত হয়েছে। প্রকৃতি যেমন বাংলার প্রাণ, তেমনি দেশের সংস্কৃতির ভিতও রচিত হয়েছে এই প্রকৃতির মধ্যে। কৃষক, শ্রমিক, শিল্পী, ও শ্রমজীবী মানুষদের সংগ্রাম প্রকৃতির মধ্যে, মাটির সাথে একাত্ম হয়ে ঘর সংসার করছে।


১০। কবিতায় ‘মা উপড়ে ফ্যালে’ শব্দটি কি বোঝায়?

‘মা উপড়ে ফ্যালে’ শব্দটির মাধ্যমে কবি মায়ের ওপর আঘাত এবং সন্তানের ভয়ের অনুভূতিকে তুলে ধরেছেন। মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে মা-জননীকে স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে সাহায্য করতে হয়েছিল। মায়ের ওপর আঘাত আসা, তার বুকের ওপর সন্তানের প্রাণের ঝুঁকি নেওয়া, এই বিষয়গুলোই উঠে এসেছে।


১১। ‘বুলেট ফাঁসির শাসন-কারা’ শব্দের অর্থ কী বোঝায়?

‘বুলেট ফাঁসির শাসন-কারা’ শব্দবন্ধে পাকিস্তানি শাসনের সময়ের অত্যাচার ও নিপীড়নকে চিত্রিত করা হয়েছে। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর অত্যাচার, গুলি করে হত্যার কথা তুলে ধরে। কবি এখানে তার পবিত্র মাতৃভূমির মুক্তির জন্য আত্মত্যাগী জনগণের ত্যাগকে স্মরণ করেছেন।


১২। কবিতায় ‘পুণ্যবতী’ শব্দটির ব্যবহার কী বোঝায়?

‘পুণ্যবতী’ শব্দটি মা বা দেশমাতৃকাকে অর্থাৎ সেই মাকে বোঝায় যিনি পুণ্যের জন্য, নিজের আত্মত্যাগের জন্য গর্বিত। মা শুধু সন্তান জন্ম দেন না, তিনি সন্তানদের শিখিয়ে দেন সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের পথ। এখানে, ‘পুণ্যবতী’ মা দেশমাতৃকার গর্বিত অবস্থান প্রকাশ করছে।


১৩। কবিতায় ‘মা’ কীভাবে সন্তানকে সাহসী করে?

কবিতায় ‘মা’ একদিকে সন্তানের জন্য স্নেহের আঁচল, অন্যদিকে দেশের মুক্তির জন্য সংগ্রামরত সন্তানদের জন্য শক্তির উৎস। তিনি সন্তানদের সাহস এবং শক্তি জোগান যাতে তারা অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। মা তাদের দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে উৎসাহিত করেন।


১৪। ‘কার চোখে মা নদীর কাজল’ব্যাখ্যা কর।

‘কার চোখে মা নদীর কাজল’ বাক্যে কবি মা বা দেশমাতৃকার সৌন্দর্য এবং গভীরতাকে তুলে ধরেছেন। নদীর কাজল, যা অন্ধকার ও মায়ার প্রতীক, মায়ের চোখের মতই রয়েছে গভীরতর। এই গভীরতা, সৌন্দর্য ও শান্তি মাকে বিশেষ করে তুলে ধরে।


১৫। ‘রক্তে-ধোওয়া সরোজিনী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

‘রক্তে-ধোওয়া সরোজিনী’ বাক্যে কবি বাঙালির সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জনে তাদের ত্যাগ, বিশেষ করে তাদের রক্তের বিসর্জন তুলে ধরেছেন। সরোজিনী এখানে বাংলাদেশের মাতৃভূমির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যিনি সংগ্রামে রক্তাক্ত হয়ে গেছেন।


১৬। কবির মতে, মা কেন ‘ভাগ্যবতী’?

কবি মা-কে ‘ভাগ্যবতী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কারণ তিনি সন্তানদের জন্ম দিয়ে দেশমাতৃকার জন্য নিরন্তর সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। দেশমাতৃকার সন্তানরা মায়ের আশীর্বাদে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে, যা মাকে বিশেষ ভাগ্যবান এবং গর্বিত করে।


১৭। ‘জন্মভূমি বাঙলারে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

‘জন্মভূমি বাঙলারে’ বাক্যে বাংলাদেশের ভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি, সংগ্রাম এবং কষ্টের সাথে ভূমির সম্পর্ক গভীর। এটি বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে উঠে দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে প্রকাশ করে।


১৮। কবিতায় ‘পুন্যবতী’ শব্দটি কেন বলা হয়েছে?

‘পুন্যবতী’ শব্দটি মাকে বা দেশমাতৃকাকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছে, যারা নিজ সন্তানের জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেন। তিনি মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধ, তার আদর্শ ও সংগ্রামের জন্য যাঁর আত্মত্যাগ আমাদের উজ্জীবিত করে।


১৯। কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী আত্মত্যাগ কীভাবে ফুটে উঠেছে?

কবিতায় বাঙালি সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ এবং দেশের জন্য সংগ্রাম সবসময় প্রতিভাত হয়েছে। তারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজের সুখ, শান্তি ত্যাগ করে দেশের জন্য সংগ্রাম করে। এভাবেই তারা দেশমাতৃকাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আত্মনিবেদন করেছে।


২০। ‘দুর্ভাগিনী কার মেয়েরা কান্নাফুলের নকশা বোনে’ব্যাখ্যা কর।

এখানে, ‘দুর্ভাগিনী মেয়েরা’ কথাটি তাদের কষ্টের চিত্র তুলে ধরেছে, যারা অত্যাচার, শোষণ ও যুদ্ধের শিকার হয়েছে। তাঁদের কান্না এবং দুঃখের প্রতিফলন হিসেবে ‘কান্নাফুলের নকশা বোনে’ বলা হয়েছে।


২১। কবিতায় ‘মা’ ও ‘দেশমাতৃকা’র সম্পর্ক কেমন?

‘মা’ এবং ‘দেশমাতৃকা’ একে অপরের সমার্থক। মাকে তিনি দেশমাতৃকার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যিনি সন্তানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেন, এবং সন্তানেরা মাকে রক্ষা করতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেয়।


২২। কবি দেশকে কীভাবে দেখেছেন?

কবি দেশকে একটি শক্তিশালী, গর্বিত এবং সংগ্রামী প্রাণ হিসেবে দেখেছেন, যে দেশের জন্য তার সন্তানরা প্রাণ দিচ্ছে। দেশটিকে তিনি মায়ের মতই শক্তিশালী ও পরিপূর্ণ দেখেছেন।


Related Posts

Leave a Comment