কুলি মজুর কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

কাজী নজরুল ইসলামের “কুলি-মজুর” কবিতাটিতে কবি শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, অবহেলা এবং তাদের অবদানের কথা বলেছেন। তিনি শ্রমজীবী মানুষদের দধীচি মুনির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা তাদের শ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সভ্যতা গড়ে তুলেছেন, কিন্তু তারা আজ অবহেলিত। এই পোস্টে কুলি মজুর কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

Image with Link Descriptive Text

কুলি মজুর কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

১। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি কাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেছেন?
উত্তর: ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম শোষিত শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। সমাজের বিত্তবান শ্রেণি শ্রমিকদের শ্রমের ওপর ভর করে বিপুল সম্পদের মালিক হলেও, শ্রমিকরা রয়ে যায় অবহেলিত ও নিপীড়িত। তারা মানবেতর জীবনযাপন করে, অথচ সভ্যতার অগ্রগতির মূল কারিগর তারাই।


২। কবি কবিতায় দধীচি মুনির কথা কেন বলেছেন?
উত্তর: দধীচি মুনি দেবতাদের কল্যাণে নিজের অস্থি দান করেছিলেন, যাতে বজ্র নির্মাণ করা যায়। কবি শ্রমিকদের ত্যাগ ও আত্মনিবেদনকে দধীচির আত্মত্যাগের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শ্রমিকরা নিজেদের রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে সভ্যতার উন্নতি ঘটালেও তারা অবহেলিত ও শোষিত।


৩। ‘কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল’– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই পঙ্ক্তিতে কবি শোষকদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। শ্রমিকরা স্বল্প মজুরির বিনিময়ে কঠোর পরিশ্রম করে, অথচ ধনী ব্যবসায়ীরা তাদের শ্রম শোষণ করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে। শ্রমের সঠিক মূল্য না দিয়ে ধনীরা বৈষম্যের পরিবেশ তৈরি করেছে।


৪। ‘অট্টালিকার প্রতি ইটে আছে লিখা’ – কি লিখা আছে?
উত্তর: এখানে কবি বলেছেন, সমাজের ধনীরা যে বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেছে, তা শ্রমিকদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ইটে শ্রমিকদের ত্যাগ ও শোষণের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। ধনীরা এটি স্বীকার না করলেও প্রকৃতি ও ইতিহাস তা জানে।


৫। ‘শুধিতে হইবে ঋণ’ – কবি কোন ঋণের কথা বলেছেন?
উত্তর: এখানে ‘ঋণ’ বলতে কবি শ্রমিকদের প্রতি সমাজের দায় ও অন্যায়ের কথা বুঝিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে শ্রমিকদের শোষণ করে সমাজ উন্নত হয়েছে, কিন্তু তাদের প্রকৃত অধিকার দেওয়া হয়নি। তাই একদিন শোষকেরা এই ঋণ শোধ করতে বাধ্য হবে, অর্থাৎ বিপ্লব আসবে।


৬। ‘হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি’ – এই শব্দগুলো কি অর্থ বহন করে?
উত্তর: কবিতায় হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রম ও কঠোর পরিশ্রমী জীবনের প্রতীক। এগুলো দ্বারা শ্রমিকরা পাহাড় কাটে, রাস্তা বানায়, ভবন নির্মাণ করে – অর্থাৎ সভ্যতা গড়ে তোলে। এটি শ্রমজীবী মানুষের কঠোর পরিশ্রমের পরিচয়।


৭। কবি কাদের ‘দেবতা’ বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: কবি কুলি-মজুরদের ‘দেবতা’ বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ তারাই পরিশ্রমের মাধ্যমে সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে। বিপরীতে, যারা শ্রমিকদের শোষণ করে, তারা মানবতার শত্রু। শ্রমিকরাই প্রকৃত দেবতা, তাই কবি তাদের বন্দনা করেছেন।


৮। ‘নব উত্থান’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘নব উত্থান’ বলতে শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও বিপ্লবের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যুগের পর যুগ তারা শোষিত হয়েছে, কিন্তু একদিন তারা নিজের অধিকার আদায় করতে রুখে দাঁড়াবে এবং সমাজে পরিবর্তন আনবে।


৯। কবিতায় ধনী শ্রেণির প্রতি কবির মনোভাব কী?
উত্তর: কবি ধনী শ্রেণিকে শোষক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা শ্রমিকদের শ্রম শোষণ করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে, অথচ শ্রমিকদের প্রতি তাদের কোনো দয়া বা সহানুভূতি নেই। কবি ধনীদের এই নিষ্ঠুরতা ও অবিচারের তীব্র নিন্দা করেছেন।


১০। কবি ‘পথের ধূলিকণা’ বলতে কি বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি বলেছেন, যদিও সমাজের উচ্চবিত্তরা শ্রমজীবীদের ত্যাগের কথা স্বীকার করে না, তবে পথের ধূলিকণা, রেলপথ, জাহাজ, অট্টালিকা – সবকিছুই জানে যে, এগুলো শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। প্রকৃতি ও ইতিহাস শ্রমিকদের ত্যাগের সাক্ষী হয়ে থাকবে।


১১। ‘রেলপথে চলে বাষ্প-শকট’ – বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে রেলপথ ও বাষ্প-শকট (রেলগাড়ি) শ্রমিকদের পরিশ্রমের প্রতীক। শ্রমিকরাই রেললাইন বসিয়েছে, রেলগাড়ি চালিয়েছে, অথচ তারা নিজেরাই দুর্দশাগ্রস্ত। যাদের শ্রমে উন্নতি, তারাই অবহেলিত।


১২। ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা’ – কিসের দেনা বাড়ছে?
উত্তর: কবি বলতে চেয়েছেন, ধনী শ্রেণি যুগ যুগ ধরে শ্রমিকদের শোষণ করে তাদের প্রতি অন্যায় করেছে। এই ঋণ ক্রমেই বাড়ছে, এবং একদিন এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিকরা একদিন জেগে উঠে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।


১৩। ‘তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি’–ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি বলতে চেয়েছেন, শ্রমিক, মজুর ও মুটেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্তদের আরামদায়ক জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা ইট, পাথর, লোহা, কাঠ দিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ করেছে, অথচ তারাই সবচেয়ে অবহেলিত ও নিপীড়িত।


১৪। ‘তারাই মানুষ, তারাই দেবতা’ – কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি শ্রমিকদের প্রকৃত মানুষ ও দেবতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কারণ তারাই পরিশ্রমের মাধ্যমে সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তুলেছে। যাদের ত্যাগে পৃথিবী এত উন্নত, তাদেরই প্রকৃত সম্মান প্রাপ্য। তাই কবি তাদের বন্দনা করেছেন এবং সমাজকে তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে বলেছেন।


১৪। ‘গাহি তাহাদেরি গান’ – কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এখানে কবি শ্রমিকদের জয়গান গাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রচলিত সমাজে সাধারণত রাজা, জমিদার, শিল্পপতি বা ক্ষমতাবানদের প্রশংসা করা হয়, কিন্তু কবি শোষিত ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের গৌরবগাথা রচনা করেছেন, কারণ তারাই প্রকৃত নায়ক।


১৫। ‘তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’ –ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি বলেছেন, যুগ যুগ ধরে শ্রমিকরা নিপীড়িত হলেও তাদের বুকের রক্ত, ঘাম ও ত্যাগের ওপর ভিত্তি করেই নতুন বিপ্লব ও পরিবর্তন আসবে। তাদের বঞ্চনার শেষ হবে, এবং তারা নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। এটি শ্রমিক শ্রেণির জাগরণ ও সাম্যের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচিত্র।


Related Posts

Leave a Comment