একুশের গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে। পুলিশ গুলি চালায়, কয়েকজন ছাত্র শহিদ হন। সেই ভয়াবহ দিনের আবহেই লেখা এই গল্প ‘একুশের গল্প’। এই পোস্টে একুশের গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

একুশের গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘একুশের গল্প’ এর লেখক কে?
উত্তর: জহির রায়হান।

২। ‘একুশের গল্প’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: জহির রায়হানের গল্প সমগ্র (১৯৭৯) থেকে।

৩। জহির রায়হান কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৯৩৫ সালের ১৯শে আগস্ট।

৪। জহির রায়হানের জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর: ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে।

৫। জহির রায়হানের প্রকৃত নাম কী?
উত্তর: মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ।

৬। জহির রায়হান কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

৭। জহির রায়হান কোন সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর: ১৯৫৮ সালে।

৮। জহির রায়হান কবে নিখোঁজ হন?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি।

৯। তপুর মাথায় গুলিটা কোথায় লেগেছিল?
উত্তর: কপালের মাঝখানে।

১০। তপু কার হাতে মারা যায়?
উত্তর: মিলিটারিদের গুলিতে।

১১। তপু কত বছর পর ফিরে আসে?
উত্তর: চার বছর পর।

১২। তপুর স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: রেণু।

১৩। রেণু পরে কী করে?
উত্তর: অন্য এক জায়গায় বিয়ে করে।

১৪। তপু কী পড়তো?
উত্তর: মেডিকেল কলেজে।

১৫। তপু জন্মসূত্রে কী দোষে ভুগছিল?
উত্তর: জন্মখোঁড়া ছিল (এক পা ছোট ছিল)।

১৬। ‘স্কেলিটন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: কঙ্কাল।

১৭। ‘স্কাল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মাথার খুলি।

১৮। তপুর বন্ধুরা কারা ছিল?
উত্তর: গল্পের “আমি” এবং রাহাত।

১৯। তপু কী পেশায় যেতে চাইত এক সময়?
উত্তর: মিলিটারিতে।

২০। তপু প্রতিদিন বন্ধুদের কী করে জাগাতো?
উত্তর: লেপ টেনে উঠিয়ে দিয়ে।

২১। তপুর স্বপ্ন কী ছিল?
উত্তর: গ্রামে গিয়ে সাধারণ একটি ঘর ও ডিসপেনসারি করা।

২২। গল্পের শুরুতেই লেখক কী নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: তপুকে আবার ফিরে পাওয়ায়।

২৩। তপুর মৃত্যুর পর কে তার জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিল?
উত্তর: রেণু।

২৪। তপুর মুখে কেমন হাসি থাকতো?
উত্তর: এক ঝলক হাসি, আঠার মতো লেগে থাকতো।

২৫। ‘তন্দ্রা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ঘুমের ঝোঁক বা ঘুমঘুম ভাব।

২৬। তপু যখন ফিরে আসে, তখন সবাই কেমন অনুভব করে?
উত্তর: আতঙ্কিত ও বিস্মিত।

২৭। গল্পে “স্কাল” শব্দটি কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: খুলি।

২৮। তপুর গুলিবিদ্ধ দেহ কে নিয়ে যায়?
উত্তর: দুজন মিলিটারি।

২৯। তপুর কপালের গর্ত কী বোঝায়?
উত্তর: গুলির চিহ্ন।

৩০। গল্পের শেষে ‘স্কাল’-এর মাধ্যমে কী বোঝা যায়?
উত্তর: তপুর দেহাবশেষ তাদের কাছেই ছিল।

৩১। রাহাত স্কাল দেখে কী বলে?
উত্তর: তপু।

৩২। গল্পটি কোন আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত?
উত্তর: ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)।

৩৩। ‘উদ্বিগ্ন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, উৎকণ্ঠিত বা ব্যাকুল।

৩৪। প্রশ্ন: রাহাতের চরিত্র কেমন?
উত্তর: বন্ধুবৎসল ও আবেগপ্রবণ।

৩৫। তপু সকালে কী বানাতো?
উত্তর: চা।

৩৬। গল্পে “তপু না মরে আমি মরলেই ভালো হতো”— কে বলে?
উত্তর: রাহাত।

৩৭। “আমরা ছিলাম তিনজন”— এই তিনজন কারা?
উত্তর: আমি (বর্ণনাকারী), তপু ও রাহাত।

৩৮। গল্পের প্রধান চরিত্র কে?
উত্তর: তপু

৩৯। তপুর মৃত্যু কোথায় হয়?
উত্তর: হাইকোর্টের মোড়ে মিছিলের সময়

৪০। তপুর মৃত্যুর কারণ কী?
উত্তর: পুলিশের গুলিবিদ্ধ হওয়া

৪১। তপুর শারীরিক বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উত্তর: বাঁ পা ডান পা থেকে ২ ইঞ্চি ছোট ছিল

৪২। তপুর অস্থি কীভাবে ফিরে আসে?
উত্তর: নতুন রুমমেটের স্কেলিটনে তার অস্থি চিহ্নিত হয়

৪৩। তপুর স্কালের বিশেষ চিহ্ন কী ছিল?
উত্তর: কপালে গুলির গর্ত

৪৪। মিছিলের সময় তপুর হাতে কী ছিল?
উত্তর: “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” লেখা প্ল্যাকার্ড

৪৫। ‘ওস্তাদ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: গুরু বা শিক্ষকের মতো জ্ঞানদাতা।

৪৬। মিছিলটি কোথায় যাচ্ছিল?
উত্তর: কার্জন হলের দিকে

৪৭। ভাষা আন্দোলনের বছর কত?
উত্তর: ১৯৫২

৪৮। রাহাত ও বর্ণনাকারী মিছিল থেকে কোথায় পালায়?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে

৪৯। রাহাত তপুর অস্থি চেনে কীভাবে?
উত্তর: কপালের গর্ত ও পায়ের হাড় দেখে

৫০। গল্পে “বুড়িগঙ্গা” কোথায় উল্লেখ আছে?
উত্তর: তপুর সাথে বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গে

৫১। তপুর মা কীভাবে কাঁদেন?
উত্তর: হোস্টেলে গড়াগড়ি দিয়ে

৫২। নতুন রুমমেট কী পড়ছিল?
উত্তর: এনাটমি বই

৫৩। তপুর বিছানা খালি থাকার সময় বর্ণনাকারীর কী মনে হতো?
উত্তর: কেউ তাকে ডাকছে বলে

৫৪। রেণু তপুর জন্য কী আনত?
উত্তর: ডালমুট

৫৫। মিছিলের আগে রেণু তপুর কী বলে?
উত্তর: “বাড়ি চলো, পাগল নাকি?”

৫৬। তপুর মৃত্যুর সময় রাহাত কী বলে?
উত্তর: “তপু!” আর্তনাদ করে

৫৭। তপুর জুতোর বিশেষত্ব কী ছিল?
উত্তর: বাঁ জুতোর হিল উঁচু করা

৫৮। গল্পের শেষে রাহাতের কী অবস্থা হয়?
উত্তর: সে কাঁপতে থাকে ও কথা বলতে পারে না

৫৯। তপুর সিটে কে নতুন আসে?
উত্তর: একটি হাসিখুশি ছেলে

৬০। তপুর অস্থি কোথায় রাখা ছিল?
উত্তর: ঝুড়িতে

৬১। তপুর মৃত্যুর পর তার জিনিসপত্র কী হয়?
উত্তর: রেণু নিয়ে যায়

৬২। ‘এনাটমি’ কোন বিষয়ের একটি শাখা?
উত্তর: জীববিজ্ঞানের।

৬৩। ‘বার্নার্ডশ’ কে ছিলেন?
উত্তর: একজন আইরিশ নাট্যকার ও সমালোচক।

৬৪। ‘Anatomy’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
উত্তর: ইংরেজি ভাষা থেকে।

একুশের গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। তপু ফিরে আসায় সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল কেন?
তপু ছিল ভাষা আন্দোলনের একজন শহীদ। সে হাইকোর্টের মোড়ে মিলিটারির গুলিতে মারা গিয়েছিল। অনেকেই নিজের চোখে তার মৃত্যুদৃশ্য দেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন সে ফিরে আসে আগের মতোই। তার মুখে সেই পুরোনো হাসি, আচরণও একই রকম। এ ঘটনা সকলের জন্য বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক ছিল। তাই সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, কারণ মৃত কেউ ফিরে আসতে পারে না।


২। “তুমিও চলো না আমাদের সাথে।” – কে কাকে কোথায় যেতে বলেছিল? ব্যাখ্যা কর।
এই কথাটি তপু বলেছিল লেখককে। ঘটনাটি ঘটে যখন সবাই মিলে শহীদ মিনারে যাচ্ছে ফুল দিতে। তপু তখন হঠাৎ এসে লেখককে এই কথা বলে। যেন সে এখনও জীবিত এবং আগের দিনের মতোই প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে। লেখক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলতে পারে না। এই সংলাপটি বোঝায় যে তপু আজও জীবিত থাকে বন্ধুদের মনে ও প্রতিবাদের চেতনায়। তার আত্মত্যাগ ভুলে যাওয়া যায় না।


৩। “ও এলে আমরা চাঁদা তুলে চা আর মিষ্টি এনে খেতাম।” – ব্যাখ্যা কর।
এই বাক্যে “ও” বলতে তপুকে বোঝানো হয়েছে। তপু যখন জীবিত ছিল, তখন সে বন্ধুদের প্রাণকেন্দ্র ছিল। তার উপস্থিতি মানেই ছিল উৎসবের মতো আনন্দ। বন্ধুরা মিলে চাঁদা তুলে মজা করতো, চা-মিষ্টি খেত। সেই দিনগুলোর স্মৃতি লেখকের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। এই বাক্যটি সেই বন্ধুত্ব ও আনন্দের দিনগুলোর স্মরণ। তপু ছিল এক প্রাণবন্ত বন্ধুর প্রতীক।


৪। “সমুদ্রগভীর জনতা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে।” – ব্যাখ্যা কর।
এই বাক্যটি একটি কাব্যিক রূপকে প্রকাশ করে। এখানে “সমুদ্রগভীর জনতা” বলতে বিপুল সংখ্যক মানুষের মিছিল বোঝানো হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য। তারা যেন এক বিশাল সমুদ্রের মতো দৃঢ় ও গভীর মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের ধীর চলা এক শক্তিশালী প্রতিবাদের প্রতীক। এই বাক্যটি আন্দোলনের গভীরতা ও আবেগকে তুলে ধরে।


৫। তপুর মা আর বউকে কোন খবর জানানোর জন্য রাহাতকে পাঠানো হয়? বুঝিয়ে দাও।
তপু যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়, তখন সে মারা যায়। ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটে লেখক ও রাহাতের। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তপুর মা এবং রেণুকে (তপুর স্ত্রী) খবর দিতে হবে। রাহাতকে দায়িত্ব দেওয়া হয় খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কারণ এটি একটি বড় দুঃসংবাদ, যা দ্রুত জানানো প্রয়োজন ছিল। তপুর পরিবারের জন্য এটি ছিল এক বিশাল শোকের ঘটনা। তাই এই দায়িত্বটি রাহাতকে দেওয়া হয়, কারণ সে তপুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।


৬। “রাহাত বলল, ওর মা মারা গেছে।” – কার মা মারা গেছে? ব্যাখ্যা কর।
এই উক্তিতে “ওর মা” বলতে তপুর মাকে বোঝানো হয়েছে। তপু ছিল ভাষা আন্দোলনের শহীদ। সে গুলিতে নিহত হয় এবং পরে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। মায়ের পক্ষে এ শোক সহ্য করা সম্ভব হয়নি। সে ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে এবং কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়। রাহাত লেখককে সেই খবর দেয়। এই মৃত্যু বোঝায় একজন মা তার সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে নিজেও প্রাণ হারান।


৭। ‘একুশের গল্প’ নামক ছোটগল্পে রাহাত মুখ বাঁকাল কেন? ব্যাখ্যা কর।
রাহাত মুখ বাঁকায় লেখকের এক মন্তব্যে। লেখক বলে, “তপুরে ঠিক ওর মতো দেখাচ্ছিল।” তখন রাহাত মুখ বাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেয়, লেখক যা বলছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক। কারণ, তপু তো মারা গেছে—তার মতো কাউকে দেখাও অস্বাভাবিক ও ভীতিকর। রাহাত হয়তো লেখকের অনুভূতিকে তুচ্ছ ভেবে বিরক্তও হয়। সে বিশ্বাস করে না মৃত কেউ ফিরে আসতে পারে। তাই সে মুখ বাঁকায়, অবিশ্বাস ও কটাক্ষ প্রকাশ করতে।


৮। “সে কি! এর মধ্যে বিয়ে করে ফেলল মেয়েটা?” – উক্তিটির ব্যাখ্যা দাও।
এই উক্তিটি বলা হয় তপুর স্ত্রীর বিষয়ে। তপু শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী রেণু বিয়ে করে ফেলে। লেখক বা তার বন্ধুরা এই খবর শুনে বিস্মিত হয়ে ওঠে। তাদের কাছে মনে হয়, রেণু এত তাড়াতাড়ি কীভাবে বিয়ে করতে পারে। তারা ভাবেন, একজন শহীদের স্ত্রী হয়ে সে কেমন করে অন্য কাউকে গ্রহণ করল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সমাজ ও জীবনের চাপে অনেক সময় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই উক্তি মানুষের আবেগ ও বাস্তবতার সংঘাতকে তুলে ধরে।


৯। “এককালে মিলিটারিতে যাবার শখ ছিল ওর।” – কার মিলিটারিতে যাওয়ার শখ ছিল? ব্যাখ্যা কর।
এই বাক্যে “ওর” বলতে তপুকে বোঝানো হয়েছে। তপুর ছোটবেলায় মিলিটারি হওয়া বা সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে মিলিটারির পোশাক, শৃঙ্খলা, ও সাহসিকতার প্রতি আগ্রহী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে বাঙালির ভাষা ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে যোগ দেয়। যে মিলিটারিতে যেতে চাইত, সেই মিলিটারির গুলিতে সে মারা যায়। এই ঘটনার মধ্যে এক ভয়ংকর ট্র্যাজেডি লুকিয়ে আছে। একটি স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে এক জীবন শহীদ হয়ে যায়।


১০। “আমি তখন বিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম।” – কে কখন দাঁড়িয়ে ছিল? বুঝিয়ে দাও।
এই উক্তিটি লেখক বলেছেন। ঘটনাটি ঘটে যখন হঠাৎ তপুকে ফিরে আসতে দেখে লেখক। সে এতটাই অবাক হয়ে যায় যে কিছুই বুঝতে পারে না। তার মনে প্রশ্ন জাগে, তপু কি সত্যিই ফিরে এসেছে? সে না পারছে কথা বলতে, না পারছে নড়তে। পুরোপুরি বিস্মিত ও হতবাক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই বাক্যটি লেখকের মানসিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রকাশ করে।


১১। ‘একুশের গল্প’ নামক ছোটগল্পে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ঘটনা কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গল্পটিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে খুব জীবন্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভাষার অধিকারের জন্য ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে মিছিল করছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিল: “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। এই সময় পুলিশ গুলি চালিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তপু সহ আরও অনেকে গুলিতে শহীদ হয়। গল্পে এই ঘটনার মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা, মানুষের সাহস আর আত্মত্যাগ প্রতিফলিত হয়েছে।


১২। তপুর সহপাঠীদের সঙ্গে রেণু কোনো কথা বলেনি কেন?
রেণু তপুর স্ত্রী ছিল এবং তপুর মৃত্যুর পর সে মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। সে হয়তো তপুর স্মৃতি মনে করে কষ্ট পেত বলে কথা বলেনি। আবার হয়তো সে তপুর বন্ধুদের কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থায় ছিল না। সে হয়তো বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে এই হারানোর যন্ত্রণাকে ভাষা দেবে। তার এই নিরবতা ছিল এক ধরনের গভীর শোকপ্রকাশ। তাই সে তপুর সহপাঠীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।


১৩। রাহাতরা কীভাবে বুঝল যে, রুমের কঙ্কালটিই তপুর?
তপুর রুমে পড়ে থাকা কঙ্কাল দেখে রাহাতরা প্রথমে সন্দেহ করে। তারা সেখানে তপুর ব্যবহৃত কিছু জিনিস খুঁজে পায়, যেমন জামা, ব্যাগ ইত্যাদি। এছাড়া ঘরটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এবং কেউ তাতে আসেনি। চারপাশের প্রমাণ দেখে তারা নিশ্চিত হয় যে কঙ্কালটি তপুরই। এই দৃশ্য দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। তারা বুঝে নেয় যে তপু একুশে ফেব্রুয়ারির দিন গুলিতে মারা গিয়ে সেখানেই পড়ে ছিল।


১৪। অনন্তকাল ধরে তপু কেমন পথে চলতে চেয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
তপু এমন এক পথে চলতে চেয়েছিল যেখানে সত্য, ন্যায় ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সে চেয়েছিল, মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা হোক এবং বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হোক। সে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিল। তার চিন্তা ছিল দেশের উন্নয়ন ও মানুষের অধিকারের পক্ষে কাজ করা। সে চেয়েছিল এমন একটি পথ যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। তাই সে নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে অংশ নেয়।


১৫। “ওকে চেনাই যায় না।” — কেন চেনা যায় না? ব্যাখ্যা কর।
এই কথাটি বলা হয় যখন তপুর কঙ্কাল পাওয়া যায়। কঙ্কালটি অনেক দিন ধরে পড়ে ছিল, তাই শরীর পচে হাড়ে পরিণত হয়েছিল। তপুর চেহারার কোনো চিহ্ন তখন আর অবশিষ্ট ছিল না। তার জামাকাপড় বা ব্যবহৃত জিনিস ছাড়া তাকে চেনা সম্ভব ছিল না। বন্ধুরা মর্মাহত হয়ে বলে, “ওকে চেনাই যায় না”। এই উক্তি তার করুণ মৃত্যুর চিহ্ন বহন করে।


Related Posts

Leave a Comment