জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ মনে করিয়ে দেয়, আমাদের জীবনে কিভাবে যুদ্ধ, সংগ্রাম, এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ের আনন্দ মিশে আছে। মানুষের মধ্যে এই আশা আর সাহসের গল্পগুলো সত্যিই অনন্য। এই পোস্টে একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ
১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল, মঙ্গলবার।
চারদিন ধরে relentless বৃষ্টি চলছে। শনিবার রাতে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, তারপর রোববার পুরো দিনটাও কেটেছে বৃষ্টির মধ্যে। গতকাল সকালে বৃষ্টি থামলেও আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। মাঝে মাঝে রোদ দেখা দিলেও, মেঘেদের অস্থিরতা কাটেনি। আমি বসার ঘরে জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এই দুর্যোগের মেঘ আমার জীবনেও ঘনিয়ে আসছে।
সন্ধ্যার পরে করিম এসে বলল, “ফুফুজান, পাড়ার অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আপনারা কোথাও যাবেন না?”
আমি প্রশ্ন করলাম, “কোথায় যাব? বুড়ো শ্বশুরকে নিয়ে কোথায় যাওয়া সম্ভব?” কিন্তু করিমের কথায় ভয় পাওয়া যায়— বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি, মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে পালাচ্ছে।
“কী আর করা,” করিম বলল, “যা ঘটার, তা তো ঘটবে। শুনেছেন, নদীতে প্রচুর লাশ ভেসে যাচ্ছে, গুলি খেয়ে মরেছে।”
শুনে আমি শিউরে উঠলাম। “হ্যাঁ, এই কথাগুলো তো আমি প্রতিদিন শুনছি। পচা লাশের দুর্গন্ধে শহরের ঘাটগুলো অবরুদ্ধ হয়ে গেছে।”
১০ই মে, সোমবার।
কিছুদিন বাগানে যাইনি। সকালে নাশতার পরে সেখানে গিয়ে আমার হাই-ব্রিড টি-রোজের গাছগুলো দেখলাম। এ ধরনের গাছের খুব যত্ন প্রয়োজন, কিন্তু গত দুমাসে কিছুই হয়নি। বাগানে গেলেই মনে হয়, এ নেশায় কিছুক্ষণ দুঃখ-বেদনা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু এখনো মনে হয়, এই সময়ে এই সুখে থাকতে পারা এক অদ্ভুত বোধ।
১২ই মে, বুধবার।
জামীর স্কুল খুলেছে, কিন্তু সে যাচ্ছে না। আমরা সবাই আলোচনা করেছি—স্কুলে যাওয়া ঠিক নয়। দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, হানাদাররা নির্মমভাবে নির্যাতন করছে। জামী বাড়িতে পড়াশোনা করছে, ওর বন্ধুরা মিলে পড়ছে—এটা আমাদের সময় কাটানোর ভালো উপায়।
১৭ই মে, সোমবার।
রেডিওতে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে, কিন্তু সরকারের সেই প্রচারও বিশেষ ফলছে না। আজকের কাগজে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীর নামের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু জানি, তাদের মধ্যে অনেকেই বাধ্য হয়ে সই করেছেন। অনেকেই হয়তো বিবৃতিটি দেখেননি পর্যন্ত!
২৫শে মে, মঙ্গলবার।
আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী, এবং ঢাকা শহরে বেশ উৎসব চলছে। টেলিভিশনে নতুন একটি কণ্ঠস্বর শুনলাম, স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে। সবার মধ্যে গুজব উঠছে, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কার্যক্রম শুরু হয়েছে শহরে। সত্যি, কি আশ্চর্য!
৫ই সেপ্টেম্বর, রবিবার।
শরীফ এবং আমি রুমীকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করছি। সবাই বলছে, রুমীর জন্য প্রাণভিক্ষা চেয়ে মার্সি পিটিশন করতে হবে। কিন্তু শরীফ মনে করছে, এভাবে রুমীর আদর্শকে অপমান করা হবে। দুই দিন ধরে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি।
১১ই অক্টোবর, সোমবার।
শরীফ জানাল, মতিয়ুর রহমানের পরিবার করাচি থেকে ঢাকা এসেছে। তার খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গেল, পরিচিতজনদের কথা মনে পড়ছে। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।
১৬ই ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার।
আজ এক দারুণ দিন। সকাল থেকে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে, পাকিস্তানি সেনারা নাকি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। আজকের আবহাওয়া যেন স্বাধীনতার উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি কুলখানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি—এটি আনন্দের একটি মুহূর্ত, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা।
Related Posts
- কিশলয়ের জন্ম মৃত্যু গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ)- ৯ম শ্রেণির বাংলা
- পল্লী মা কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- Class 9 English Unseen Model Question 1 – ৯ম শ্রেণির ইংরেজি
- প্রবাস বন্ধু গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- অলিখিত উপাখ্যান গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্ন উত্তর ও MCQ – ৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- ৯ম শ্রেণির বাংলা ষষ্ঠ অধ্যায় PDF (চূড়ান্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি)
- অভাগীর স্বর্গ গল্পের বিষয়বস্তু বা মূলভাব সহজ ভাষায় – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- ফেরা গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা