একটি সুখী গাছের গল্প মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

শেল সিলভারস্টাইনের ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ গল্পটি আমাদের শেখায় গাছ আমাদের জীবনে কততা গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টে ষষ্ঠ শ্রেণির আনন্দপাঠের একটি সুখী গাছের গল্প মূলভাব ও বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

একটি সুখী গাছের গল্প মূলভাব

একটি আমগাছ ছিল যা এক ছোট ছেলেকে খুব ভালোবাসত। ছেলেটি গাছে চড়ে আম খেতো, ডাল ধরে দোল খেতো আর লুকোচুরি খেলত। ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ত। ছেলেটিও গাছটাকে খুব ভালোবাসত। সময়ের সঙ্গে ছেলেটি বড় হতে থাকল। একদিন সে গাছের কাছে এসে বলল তার টাকা দরকার, গাছ তাকে আম খাওয়ার পরামর্শ দিল। ছেলেটি আম পেড়ে নিয়ে চলে গেল। পরে ছেলেটি আবার আসল, এবার বাড়ি বানানোর জন্য ডালপালা চাইল। গাছ তার ডালপালা দিল। ছেলেটি খুশি হয়ে চলে গেল। অনেকদিন পর ছেলেটি আবার এল, এবার নৌকা বানানোর জন্য গাছের কাণ্ড চাইল। গাছ কাণ্ড কেটে দিল। ছেলেটি নৌকা বানিয়ে দূরে চলে গেল। আবার অনেকদিন পর ছেলেটি এল, তখন গাছের কাছে আর কিছু ছিল না, শুধু বুড়ি গুঁড়ি। ছেলেটি ক্লান্ত ছিল, তাই গাছের গায়ে বসে বিশ্রাম নিল। গাছ খুব খুশি হলো কারণ ছেলেটি তার সঙ্গে এসেছে আর আরাম করছে। এভাবেই গাছ তার ভালোবাসা দিয়ে ছেলেটিকে সুখী করল।

একটি সুখী গাছের গল্প বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১। ক. আমগাছটি সুখী ছিল কেন?
খ. ‘মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে নিতেই জানে, প্রতিদান দিতে জানে না।’- ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ অবলম্বনে ব্যাখ্যা কর।

ক) উত্তরঃ আমগাছটি খুব ভালোবাসা ছিল ছোট ছেলেটির প্রতি। ছেলেটি তার ডালে দোল খেতো, আম খেতো, লুকোচুরি খেলত এবং গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিত। গাছ ছেলেটির খুশিতে সুখী হতো। ছেলেটি বড় হতে থাকলেও মাঝে মাঝে ফিরে এসে গাছের উপকার নিত। গাছ তার যত শক্তি ও উপহার দিয়ে ছেলেটিকে সাহায্য করতো। গাছ নিজেকে খুশি মনে করতো কারণ সে ছেলেটির সুখে আনন্দ পেত। গাছের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ ছিল, সে শুধু দিত আর কিছু চায়নি। ছেলেটি গাছকে ভালোবেসে সবসময় তার সঙ্গে সময় কাটাত। এই ভালোবাসা ও স্নেহের জন্য গাছটি সুখী ছিল। গাছ মানুষের জন্য সব সময় নিজেকে উৎসর্গ করেছিল।

খ) উত্তরঃ ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ আমাদের শেখায় যে মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে অনেক কিছু নেয়, কিন্তু তার সঠিক মূল্যায়ন বা প্রতিদান দিতে খুব কম মানুষই জানে। গাছ ছেলেটিকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে সাহায্য করল। সে ছেলেটিকে ছায়া দিল, আম দিল, ডালপালা দিল, কাণ্ড দিল, যেন ছেলেটির সব চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু ছেলেটি যখন বড় হলো, তখন শুধু নেয় আর দেয় না। সে গাছ থেকে তার প্রয়োজন মতো জিনিস নিয়ে নিল—আম, ডালপালা, কাণ্ড—কিন্তু গাছকে আর কোনো কিছু দিতে পারেনি। এমনকি যখন গাছ কিছুই দিতে পারেনি, তখনও ছেলেটি শুধু বসে বিশ্রাম নিল। গল্পটি দেখায়, প্রকৃতির প্রতি মানুষের লোভ ও অবহেলা কেমন হতে পারে। মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য ও উপকারিতা নিয়ে ভালোবাসা বা যত্ন না দেখিয়ে শুধু নিজের স্বার্থ হাসিল করে। গাছ সেও ভুল করেনি, সে সব সময় ছেলেটির সুখের জন্য তার সব কিছু দিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে গল্পটি বলে দেয় প্রকৃতির সঠিক সম্মান ও যত্ন করা জরুরি। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্বশীলতা না থাকলে, একদিন আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবো। তাই মানুষের উচিত প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা দেখানো এবং তার যত্ন নেওয়া।


প্রশ্ন ২। ক. আমগাছটি মন খারাপ করে থাকে কেন?
খ. আধুনিক সভ্যতা গড়ে তুলতে গিয়ে প্রকৃতি ধ্বংস করে মানুষ নিজেকে নিঃস্ব ও অসহায় করে ফেলেছে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।

ক) উত্তরঃ আমগাছটি মন খারাপ করত কারণ ছেলেটি অনেকদিন ধরে তার কাছে আসত না। ছেলেটি বড় হয়ে গাছের উপকার নেওয়ার পর গাছের কোনো অংশ আর অবশিষ্ট ছিল না। ছেলেটি যখন আসে, তখন গাছের কাছে দেয়ার মতো আর কিছু থাকে না। গাছ শুধু বুড়ি গুঁড়ি হয়ে পড়ে থাকে। ছেলেটি এখন ক্লান্ত, আর গাছের কাণ্ড বা ডাল ধরে দোল খাওয়ার শক্তি নেই তার। গাছ খুব কষ্ট পায় কারণ সে ছেলেটিকে আর সাহায্য করতে পারে না। গাছ তার বন্ধুকে সুখী করতে পারার জন্য মন খারাপ করে। ছেলেটির জন্য কিছু দিতে না পারার দুঃখে গাছের মন খারাপ। গাছ ভালোবাসা দিয়ে ছেলেটিকে সুখী করতে চেয়েছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সব শেষ হয়ে গেল। এই কারণেই গাছ মন খারাপ করে।

খ) উত্তরঃ আধুনিক সভ্যতা গড়ে তুলতে গিয়ে মানুষ অনেক বড় বড় কাঠামো ও যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে। এই কাজের জন্য প্রাকৃতিক বন, গাছপালা ও পরিবেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে বাড়ি, সড়ক, এবং কারখানা বানানোর জন্য। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। গাছপালা ও জীবজন্তু হারিয়েছে তাদের বাসস্থান। নদী-নালা দূষিত হয়েছে এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। মানুষ উন্নতির নামে প্রকৃতিকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে, যার কারণে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে মানুষ নিজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিষ্কার পানি, শুদ্ধ বাতাস ও সুস্থ পরিবেশ হারাচ্ছে। ফলে মানুষ নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে, জীবনযাত্রা কঠিন হচ্ছে। আধুনিকতার এই উন্নয়ন অনেক সময় মানুষের জীবনকে আরও নিঃস্ব ও অসহায় করে তুলছে। প্রকৃতির ক্ষতি ছাড়াই যদি উন্নয়ন করা যেতো, তাহলে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকত। কিন্তু বর্তমানে মানুষ প্রকৃতির থেকে নেয় বেশি, দেয় কম। তাই আমাদের উচিত প্রকৃতির প্রতি যত্ন নেওয়া ও ধ্বংস রোধ করা, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও ভালো জীবনযাপন করতে পারে।


প্রশ্ন ৩। ক. গাছে ওঠার চেয়ে বেশি জরুরি কোন কাজ আছে ছেলেটির?
খ. প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষ নিজেকে পরোপকারে বিলিয়ে দেওয়ার মহত্তম শিক্ষা কীভাবে গ্রহণ করতে পারে? আলোচনা কর।

ক) উত্তরঃ ছেলেটির জীবনে গাছে ওঠার বয়স শেষ হয়ে গেছে। সে এখন বড় হয়ে গেছে, তাই তার জীবনযাত্রার জন্য নতুন প্রয়োজন হলো। ছেলেটি বলেছে, তার কাছে টাকা, বাড়ি, পরিবার ও নিরাপত্তা দরকার। সে গাছে ওঠার বদলে নিজের জন্য ঘর বানাতে চায়। ছেলেটি বড় হয়ে দায়িত্বশীল হয়েছে, তাই খেলাধুলার সময় কমে এসেছে। তার এখন সংসার চালানো, সন্তান পালনের মতো কাজ আছে। তাই গাছে ওঠার বদলে সে বাড়ি বানানোর কাজে মনোযোগ দেয়। ছেলেটির জন্য আর গাছের ডালে দোল খাওয়া বা আম খাওয়া সম্ভব নয়। জীবনের এই নতুন দায়িত্ব ও প্রয়োজন তার জন্য বেশি জরুরি। তাই সে গাছে ওঠার পরিবর্তে অন্য কাজকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

খ) উত্তরঃ প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষ অনেক কিছু পায়—শুদ্ধ বাতাস, পানি, খাবার, বন, পশুপাখি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রকৃতি আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রকৃতিকে সম্মান করা ও যত্ন নেওয়া জরুরি। মানুষের উচিত প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তার প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া। প্রকৃতির যত্ন নিলে তা আমাদের সবার উপকারে আসে। আমরা পরিবেশ রক্ষা করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভালো জীবন নিশ্চিত করতে পারি। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও যত্ন আমাদের মনুষ্যত্বের পরিচয়। এই শিক্ষা আমরা ছোট থেকেই পেতে পারি—গাছ লাগানো, পানি বাঁচানো, প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে। সমাজে সবাই যদি প্রকৃতির প্রতি দায়শীল হয়, তাহলে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে। প্রকৃতির সেবা করাটা নিজেকে ও সমাজকে সেবা করা। এতে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মজবুত হয় এবং আমরা সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারি। তাই প্রকৃতির প্রতি করুণা ও যত্নই প্রকৃতির কাছ থেকে মহত্তম শিক্ষা।


Related Posts

Leave a Comment