জসীমউদ্দীনের “আসমানি” কবিতা, যা গ্রামীণ জীবনের দারিদ্র্য, কষ্ট এবং সহজ-সরল মানুষের জীবনযাত্রাকে চিত্রিত করে। কবিতাটিতে আসমানি নামের একটি মেয়ের জীবন সংগ্রাম এবং তার পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা ফুটে উঠেছে। এই পোস্টে আসমানি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
আসমানি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। আসমানির বাড়ির বর্ণনা দাও।
উত্তর: আসমানির বাড়ি খুবই জরাজীর্ণ এবং ভঙ্গুর। তাদের ঘরের ছাউনি ভেন্না পাতার তৈরি, যা খুবই নড়বড়ে। সামান্য বৃষ্টি বা হাওয়াতেই ঘরটি নড়তে থাকে এবং পানি গড়িয়ে পড়ে। এই বাড়িতে আসমানি ও তার পরিবার বছরভর বাস করে, কিন্তু তাদের জীবনযাত্রা খুবই কষ্টকর।
২। আসমানির খাওয়ার অবস্থা কেমন?
উত্তর: আসমানির খাওয়ার অবস্থা খুবই খারাপ। তার পেট ভরে খাবার নেই, এবং সে প্রায়ই অনাহারে থাকে। কবিতায় বলা হয়েছে যে সে কদিন ধরে ঠিকমতো খায়নি। এই অনাহার ও অপুষ্টির কারণে আসমানির শরীর খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।
৩। আসমানির শরীরের কি হয়েছে?
উত্তর: আসমানির শরীর খুবই দুর্বল এবং কঙ্কালসার। তার বুকের হাড় জিরজিরে, যা তার অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের চিত্র তুলে ধরে। তার শরীরে কোনো শক্তি নেই, এবং সে রোগে ভুগছে। তার পেট পিলে রোগে ফুলে গেছে, এবং তার নিত্য জ্বর হয়।
৪। আসমানির হাসি কেমন?
উত্তর: আসমানির হাসি খুবই মিষ্টি, যা কবি “হাসির প্রদীপ-রাশি” বলে বর্ণনা করেছেন। তার হাসি যেন আলো ছড়ায়, এবং তা তার মুখমণ্ডলকে উজ্জ্বল করে তোলে। কিন্তু দারিদ্র্য ও অভাব সেই হাসিকে নিভিয়ে দিয়েছে। তার জীবনের কষ্ট ও সংগ্রাম তাকে হাসতে দেয়নি।
৫। ‘বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এখানে কবি আসমানির বাড়ির অসহায় অবস্থা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, বাড়িটি পাখির বাসার মতো, যেখানে ভেন্না পাতার ছানি দিয়ে তৈরি বাড়ি। অর্থাৎ, বাড়িটি অত্যন্ত ক্ষীণ ও অস্থির, একটুখানি বৃষ্টিতে পানি গড়িয়ে পড়ে, ঘর নড়বড় করে ওঠে।
৬। আসমানির পরনের কাপড়ের বর্ণনা দাও।
উত্তর: আসমানির পরনের কাপড় খুবই জীর্ণ এবং ছেঁড়া। তার কাপড়ে শতেক তালি লাগানো, যা তার দারিদ্র্যের চিত্রকে স্পষ্ট করে তোলে। তার কাপড়গুলো এতই নোংরা এবং ছেঁড়া যে তা তার সোনালি শরীরকে উপহাস করে।
৭। আসমানির চোখ দেখতে কেমন?
উত্তর: আসমানির চোখ ভোমর-কালো, যা খুবই সুন্দর। কিন্তু তার চোখে কোনো কৌতুক বা হাসি নেই। তার চোখে শুধুই অশ্রু ভরা, যা তার দুঃখ ও কষ্টের প্রতীক। তার চোখ দিয়ে অশ্রু রাশি রাশি পড়ে, যা তার জীবনের কষ্টকে ফুটিয়ে তোলে।
৮। আসমানির গলার সুর কেমন?
উত্তর: আসমানির গলার সুর বাঁশির মতো মিষ্টি। তার কণ্ঠস্বর খুবই সুরেলা এবং মধুর। কিন্তু দারিদ্র্য ও কষ্টের কারণে সে গান গাইতে পারে না। তার জীবনের সংগ্রাম ও অভাব তাকে গান গাওয়ার সুযোগ দেয়নি।
৯। আসমানির বাড়ির পাশে কী আছে?
উত্তর: আসমানির বাড়ির পাশে একটি পদ্ম-পুকুর আছে। এই পুকুরে পদ্ম ফুল ভাসে, যা খুবই সুন্দর। কিন্তু এই পুকুরের জলই তাদের জন্য ম্যালেরিয়া ও রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুকুরের জল দূষিত এবং এতে ব্যাঙের ছানা, শ্যাওলা-পানা এবং ম্যালেরিয়ার মশক রয়েছে।
১০। ‘মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই চরণে কবি আসমানির মুখের হাসি সম্পর্কে বলেছেন। আসমানির মুখ থেকে হাসি যেমন প্রদীপের আলো ছড়ায়, তেমনই তার মুখের হাসি আনন্দময় এবং উজ্জ্বল। কিন্তু এই হাসি তার অভাবের পেছনে লুকিয়ে থাকে।
১১। আসমানিদের পদ্ম-পুকুর দেখতে কেমন?
উত্তর: পদ্ম-পুকুরে পদ্ম ফুল ভাসে, যা খুবই সুন্দর। কিন্তু পুকুরের জল খুবই দূষিত এবং অস্বাস্থ্যকর। এতে ব্যাঙের ছানা, শ্যাওলা-পানা এবং ম্যালেরিয়ার মশক রয়েছে। এই পুকুরের জলই আসমানি ও তার পরিবারের রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়, যা তাদের অসুস্থ করে তোলে।
১২। ম্যালেরিয়ার মশক কী করে?
উত্তর: ম্যালেরিয়ার মশক পদ্ম-পুকুরের জলে বিষ গুলে। এই মশক ম্যালেরিয়া রোগের কারণ, যা আসমানি ও তার পরিবারের সদস্যদের অসুস্থ করে তোলে। ম্যালেরিয়া একটি মারাত্মক রোগ, যা জ্বর ও দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
১৩। আসমানির পেটের অবস্থা কেমন?
উত্তর: আসমানির পেট পিলে রোগে ফুলে গেছে। পিলে রোগ হলো প্লীহা রোগ, যাতে পেট ফুলে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই রোগ তার অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের ফল। তার পেট ফুলে যাওয়ার কারণে সে আরও অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে।
১৪। আসমানির চিকিৎসা করাতে পারেনা কেন?
উত্তর: আসমানির চিকিৎসার জন্য বৈদ্য ডাকা হয়, কিন্তু ওষুধ কেনার পয়সা নেই। তার পরিবার এতই দরিদ্র যে তারা চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারে না। এই কারণে আসমানির রোগের চিকিৎসা ঠিকমতো হয় না, এবং তার স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়।
১৫। বৈদ্য কে? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বৈদ্য হলো গ্রাম্য চিকিৎসক বা কবিরাজ। গ্রামীণ অঞ্চলে বৈদ্যরাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করে। তারা প্রাচীন পদ্ধতিতে রোগের চিকিৎসা করে। কিন্তু আসমানির পরিবারের পয়সা না থাকায় বৈদ্যর চিকিৎসাও তার জন্য সহজলভ্য নয়।
১৬। আসমানি কবিতার মূলভাব কী?
উত্তর: কবিতাটির মূলভাব হলো দারিদ্র্য ও অভাবের মধ্যে জীবন সংগ্রাম। এটি গ্রামীণ জীবনের কষ্ট ও দুঃখ-দুর্দশাকে চিত্রিত করে। কবিতাটি পাঠকের মনে দারিদ্র্য ও অভাবের প্রতি গভীর সহানুভূতি সৃষ্টি করে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়।
১৭। আসমানির জীবন সংগ্রাম কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: আসমানির জীবন সংগ্রাম তার দারিদ্র্য, অভাব, রোগ ও কষ্টের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। তার জীবনযাত্রা খুবই কষ্টকর, কিন্তু তার মধ্যে একটি মিষ্টি হাসি ও সুরেলা কণ্ঠস্বর রয়েছে, যা তার মানবিক আবেদনকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
১৮। আসমানির হাসি কেন নিভে গেছে?
উত্তর: আসমানির হাসি তার অভাব, দুঃখ এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে অন্ধকার হয়ে গেছে। হাসির প্রদীপ যেমন আলো ছড়ায়, তার হাসি সেই আলো ছড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। অভাবের কারণে তার মুখে হাসি আসলেও সেটা গভীর দুঃখের আড়ালে চাপা পড়ে যায়।
১৯। আসমানির গান গাওয়ার সুযোগ হয়নি কেন?
উত্তর: আসমানির গান গাওয়ার সুযোগ হয়নি কারণ তার জীবন সংগ্রাম ও দারিদ্র্য তাকে তা করতে দেয়নি। তার কণ্ঠস্বর বাঁশির মতো মিষ্টি, কিন্তু সে গান গাইতে পারে না। তার জীবনের কষ্ট ও অভাব তাকে গান গাওয়ার সুযোগ দেয়নি।