বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়ের ‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পে অপু ও দুর্গার মাধ্যমে ছোট্ট গ্রামের জীবনের এক টুকরো সরল ছবি ফুটে উঠেছে। মা সর্বজয়া ছিলেন পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু, আর হরিহরের ছিল পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তার ভার। এই পোস্টে আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব সংক্ষেপে
গল্পের মূল চরিত্র অপু ও তার দিদি দুর্গা। গল্পের ঘটনাটি হরিহরের পরিবারের মধ্যে, যারা গ্রামের এক কোণে থাকে। হরিহর গ্রামের বাইরে কাজ করেন, আর সর্বজয়া, অর্থাৎ মা, ঘরের সব কাজ সামলান। অপু ছোট ছেলে, আপন মনে খেলতে ভালোবাসে। তার খেলনা বলতে আছে একটা ভাঙা টিনের বাক্স, ভেঁপু-বাঁশি, কিছু কড়ি, আর কাঠের ঘোড়া। গল্পের শুরুতে অপু আপন মনে তার এই জিনিসগুলো নিয়ে খেলছিল। হঠাৎ করে তার দিদি দুর্গা তাকে ডাক দেয়। দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর, সে একটু দুষ্টু আর খাওয়ার ব্যাপারে লোভী। সে পটলিদের বাগান থেকে কিছু আম কুড়িয়ে এনেছে, আর সেগুলো মাখিয়ে খেতে চায়। দুর্গা অপুকে বলে তেল আর নুন এনে দিতে, যাতে আমের কুশি মাখিয়ে খাওয়া যায়। অপু প্রথমে রাজি না হলেও পরে দিদির কথায় সে তেল আর নুন এনে দেয়। ওদিকে, তাদের মা সর্বজয়া ঘাট থেকে ফিরেছে। মা দুর্গাকে ডাকছিল, কিন্তু দুর্গা তখন আম খাচ্ছে, তাই উত্তর দিতে দেরি হয়। তারা দুজনে তাড়াহুড়া করে আম খেয়ে ফেলে, কারণ মা টের পেলে বকাঝকা করবে। পরে দুর্গা মা’র কাছে ফিরে আসে, আর মা জিজ্ঞাসা করে কোথায় ছিল। দুর্গা মিথ্যা বলে, বলে সে কাঁঠালতলায় ছিল। গল্পের শেষে হরিহর বাড়ি ফিরে আসে। সর্বজয়া তাকে বলছে তাদের আর্থিক কষ্টের কথা। হরিহর বলছে গ্রামের লোকজন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সহজ নয়। এদিকে দুর্গা খেলার জন্য বাইরে চলে যায়, আর অপু ঘুমিয়ে পড়ে। এই গল্পের মাধ্যমে দুই ভাই-বোনের শৈশবের সরলতা, মায়ের কষ্ট, আর বাবার দারিদ্র্য নিয়ে চলা সংগ্রাম ফুটে উঠেছে।
আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাব বড় করে
সকালবেলা। হালকা রোদ উঠেছে, সময়টা হয়তো আটটা কিংবা নয়টা হবে। হরিহরের পুত্র অপু আপন মনে বাড়ির রোয়াকে বসে খেলছিল। তার ছোট্ট একটি টিনের বাক্স আছে, যার ডালা ভাঙা। বাক্সের ভিতরে ছিল তার অমূল্য সম্পদ—একটা কাঠের ঘোড়া, একটি টিনের ভেঁপু-বাঁশি, কিছু কড়ি, একটি পিস্তল, আর কয়েকটি শুকনো নাটা ফল। এই জিনিসগুলো নিয়েই অপু সারাক্ষণ মগ্ন থাকত। তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল কাঠের ঘোড়া, যদিও সেটা পুরনো আর রঙ ওঠা। অপু মেঝেতে খেলনা ঢেলে দিয়ে গঙ্গা-যমুনা খেলছিল। একসময় কাঠের ঘোড়া আর বাঁশির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে খাপরার কুচি নিয়ে খেলায় মন দিল। খাপরা ছুঁড়ে ছুঁড়ে মনে মনে দেখছিল, গঙ্গা-যমুনার খেলার ঘর ঠিক হচ্ছে কিনা। এমন সময় তার দিদি দুর্গা উঠানের কাঁঠালতলা থেকে ডাক দিল, “অপু, ও অপু!”
দুর্গা দশ-এগারো বছরের মেয়ে। গায়ের রং চাপা, চুল রুক্ষ, তবে বড় বড় চোখের মিষ্টি চেহারা। দুর্গা অপুকে ডাকল, “শোন, একটু তেল আর নুন নিয়ে আয়, আমগুলো জারাবো।” অপু দিদির কথায় খুশি হলেও একটু দ্বিধায় পড়ল, “তেলের ভাঁড় ছুঁলে মা মারবে তো! মা যদি টের পায়?” দুর্গা হাসল, “আরে তুই যা, মা এখনো ঘাট থেকে আসে নি। তাড়াতাড়ি করে আয়, আর সাবধানে যেন তেল না পড়ে।” অপু ভয়ে ভয়ে ঘরে গিয়ে তেল আর নুন নিয়ে আসল। দুর্গা আমগুলো নিয়ে তেল-নুন মাখিয়ে দিল এবং দুজনেই খেতে শুরু করল। তারা জানে, মা সর্বজয়া যদি টের পায়, তবে রক্ষা নেই। কিন্তু সেই মুহূর্তে সেই ভয়টাই মুছে গেল, কারণ গোপনে খাওয়ার আনন্দটাই ছিল অনেক বেশি।
ঠিক তখনই খিড়কির দোর খুলে মায়ের ডাক শোনা গেল, “দুগ্গা, ও দুগ্গা!” দুর্গা আর অপু তাড়াতাড়ি আমগুলো গিলে ফেলে মুখ মুছে ফেলল, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু তাদের মধ্যে একরকম দুষ্টুমি মেশানো আনন্দের হাসি ছিল, যেন তারা অনেক বড় কাজ করে ফেলেছে। মা সর্বজয়া তাদের চোখে ছোট্ট ছোট্ট শাসন আর বড় দায়িত্বের প্রতীক। অপু মাকে বলল, “মা, খিদে পেয়েছে!” সর্বজয়া একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন, “রোজই তো তোমাদের খিদে লাগে, একটুখানি অপেক্ষা কর!”
মা রান্নাঘরে শসা কাটছিলেন আর অপু আর দুর্গা নিজেদের ছোট ছোট দুষ্টুমিতে মত্ত ছিল। দুর্গা আবার পটলিদের বাগান থেকে নতুন করে আম কুড়িয়ে এনে অপুকে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের জীবনটা খুব ছোট, খুব সরল, কিন্তু সেই ছোট্ট দুনিয়াটাই তাদের জন্য ছিল অমূল্য। দিন শেষে হরিহর, অপু এবং দুর্গা—সবাই একত্রে ঘরে ফিরল। হরিহর ক্লান্ত, কিন্তু তার মুখে ছিল সন্তুষ্টির হাসি। মা সর্বজয়া তাদের সবার দিকে চেয়ে হাসলেন, যদিও তার চোখে চিন্তার ছাপ ছিল। অপু আর দুর্গার এই ছোট্ট জীবনে প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন ঘটত, যেখানে ছোট ছোট আনন্দ, দুষ্টুমি, আর মায়ের শাসন মিলে একটা সুন্দর দুনিয়া তৈরি করেছিল। সেই ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিল।
Related Posts
- বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বাবাকে পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম
- বাংলা ভাষা সংকট ও সম্ভাবনা মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- মানুষ কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন
- বৃষ্টি কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- অলিখিত উপাখ্যান গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- মানুষ কবিতার মূলভাব ও প্রশ্ন উত্তর-১০ম শ্রেণির বাংলা
- আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার ব্যাখ্যা প্রতিটি লাইনের
- Natures Tapestry Class 9 English Chapter 2 Answer (বাংলা অর্থসহ)
- ৯ম শ্রেণির বাংলা ষষ্ঠ অধ্যায় PDF (চূড়ান্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি)
- কবর কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা