আম আঁটির ভেঁপু জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

‘আম আঁটির ভেঁপু’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস পথের পাঁচালী থেকে নেওয়া একটি অংশ, যেখানে ছোট্ট অপু ও তার দিদি দুর্গার শৈশবের সরল আনন্দ, দুষ্টুমি, ও দারিদ্র্যের মধ্যেও তাদের কৌতূহল ও জীবনপ্রেম ফুটে উঠেছে। এই পোস্টে আম আঁটির ভেঁপু জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

আম আঁটির ভেঁপু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। অপু কী নিয়ে খেলছিল?
উত্তরঃ টিনের বাক্সে রাখা ছোটখাটো জিনিস নিয়ে

২। অপুর কাঠের ঘোড়ার অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তরঃ রং-ওঠা ও পুরনো

৩। দুর্গা অপুকে কী নিয়ে ডাকল?
উত্তরঃ নারকেলের মালা ও কচি আম দেখানোর জন্য

৪। দুর্গা আম কোথা থেকে পেয়েছিল?
উত্তরঃ পটলিদের বাগান থেকে

৫। অপুর পিস্তলের দাম কত ছিল?
উত্তরঃ দু’পয়সা

৬। দুর্গা অপুকে কী আনতে বলল?
উত্তরঃ তেল ও নুন

৭। অপু কীভাবে তেল আনতে রাজি হলো?
উত্তরঃ নারকেলের মালায় ঢেলে আনার শর্তে

৮। দুর্গা কেন লঙ্কা আনতে বলেনি?
উত্তরঃ কারণ লঙ্কা মা উঁচু জায়গায় রাখে, অপু নাগাল পায় না

৯। দুর্গা অপুর কথা বন্ধ করতে কী করেছিল?
উত্তরঃ চোখ টিপে ইঙ্গিত দিয়েছিল

১০। সর্বজয়া দুর্গার কাছে কী জানতে চেয়েছিল?
উত্তরঃ সে বাইরে গিয়েছিল কি না

১১। অপুর বাবা কী কাজ করতেন?
উত্তরঃ গোমস্তার কাজ

১২। অপুর বাবা কী প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ গাঁয়ে গিয়ে বসবাসের বিনিময়ে জমি পাওয়ার।

১৩। দুর্গা কোথায় বসে নিজের জমানো জিনিস দেখতে লাগল?
উত্তরঃ কাঁঠাল গাছের নিচে।

১৪। দুর্গা কী জিনিস বের করল আঁচল থেকে?
উত্তরঃ শুকনো রড়ার বিচি।

১৫। বিচিগুলো দেখে দুর্গা কী ভাবল?
উত্তরঃ কিছু অপুকে দেবে, কিছু পুতুলের বাক্সে রাখবে

১৬। অপুর বাবা কাকে তাগাদা দিতে গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ দশঘরার এক মাতবরকে

১৭। অপুর মা বাড়িতে কী রান্নার আয়োজন করছিলেন?
উত্তরঃ শসা কাটা ও আটা ভেজানো

১৮। অপুর মা দুর্গাকে কেন বকছিলেন?
উত্তরঃ সারাদিন বাইরে ঘোরা ও বাড়ির কাজে সাহায্য না করার জন্য

১৯। দুর্গা কীভাবে অপুকে শাস্তি দিয়েছিল?
উত্তরঃ হাতার পিঠে কিল মেরে

২০। অপুর বাবা নতুন জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কার সাথে পরামর্শ করতে চাইলেন?
উত্তরঃ মজুমদার মহাশয়ের সঙ্গে

২১। দুর্গার হাতে কী ছিল?
উত্তর: দুর্গার হাতে নারিকেলের মালা ছিল, যাতে কচি আম কাটা ছিল।

২১। দুর্গা অপুকে কী করতে বলল?
উত্তর: দুর্গা অপুকে তেল ও নুন আনতে বলল যাতে সে আমের কুশি জারাতে পারে।

২২। দুর্গার বয়স কত ছিল?
উত্তর: দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর ছিল।

২৩। দুর্গার চেহারা কেমন ছিল?
উত্তর: দুর্গার গড়ন পাতলা, রং একটু চাপা, হাতে কাচের চুড়ি, পরনে ময়লা কাপড় এবং চোখ ডাগর ডাগর।

২৪। দুর্গা আমের মালাটা কী করল?
উত্তর: দুর্গা আমের মালাটা খালি করে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়ে দিল।

২৫। হরিহর কী কাজ করত?
উত্তর: হরিহর গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করত।

২৬। হরিহর কী কারণে দশঘরায় গিয়েছিল?
উত্তর: হরিহর দশঘরায় তাগাদা দেওয়ার জন্য গিয়েছিল।

২৭। হরিহরকে দশঘরায় কে সম্মান দেখাল?
উত্তর: একজন মাতবর লোক হরিহরকে দণ্ডবৎ করে সম্মান দেখাল।

২৮। হরিহরকে কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর: তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে তিনি যদি তাদের গাঁয়ে উঠে আসেন, তবে জায়গা-জমি দেওয়া হবে।

২৯। দুর্গা কোথায় গিয়ে আম কুড়িয়েছিল?
উত্তর: দুর্গা পটলিদের বাগানে গিয়ে আম কুড়িয়েছিল।

৩০। দুর্গা কোথায় শুকনো রড়া ফলের বিচি জমা করেছিল?
উত্তর: দুর্গা শুকনো রড়া ফলের বিচি আঁচলের খুঁটে জমা করেছিল।

৩১। দুর্গা বিচিগুলো নিয়ে কী করল?
উত্তর: দুর্গা বিচিগুলো গুনে অপুকে দেওয়ার এবং পুতুলের বাক্সে রাখার কথা ভাবল।

৩২। দুর্গা কোথায় দাঁড়িয়ে বিচিগুলো গুনছিল?
উত্তর: দুর্গা উঠানের কাঁঠালতলায় দাঁড়িয়ে বিচিগুলো গুনছিল।

৩৩। ‘রোয়াক’ বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তরঃ ঘরের সামনের খোলা জায়গা বা বারান্দা।

৩৪। ‘চুপড়ি’ কী?
উত্তরঃ ছোটো ঝুড়ি বা ক্ষুদ্র ধামা।

৩৫। ‘নাটাফল’ কোন ফলের আরেক নাম?
উত্তরঃ করঙ্গা ফল।

৩৬। ‘খাপরার কুচি’ কী বোঝায়?
উত্তরঃ কলসি-হাঁড়ি প্রভৃতির ভাঙা অংশ বা টুকরা।

৩৭। ‘পিজরাপোলের আসামি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ খাঁচায় পড়ে থাকা অবহেলিত আসামির মতো অর্থে।

৩৮। ‘আমের কুসি’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ কচি আম।

৩৯। ‘কালমেঘ’ কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ যকৃতের রোগে উপকারী একপ্রকার তিক্ত স্বাদের গাছ।

৪০। ‘গরাদ’ কী?
উত্তরঃ জানালার শিক।

৪১। ‘ভেরেণ্ডাকচার বেড়া’ কী দিয়ে তৈরি?
উত্তরঃ এরন্ড বা রেড়ি গাছের বেড়া।

৪২। ‘রোসো রোসো’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ থাম থাম।

৪৩। ‘আমআঁটির ভেঁপু’ রচনাটি কোন উপন্যাসের অংশ?
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের অংশ।

৪৪। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ২৪ পরগনার মুরারিপুর গ্রামে।

৪৫। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন?
উত্তরঃ বনগ্রাম স্কুল।

৪৬। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোন কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তরঃ কলকাতা রিপন কলেজ।

৪৭। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মজীবনে কী পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তরঃ শিক্ষকতা।

৪৮। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর।

৪৯। “রোসো রোসো একটুখানি হাঁফ জিরোতে দাও ।” – উক্তিটি কার?
উত্তরঃ উক্তিটি অপু ও দুর্গার মা সর্বজয়ার।

৫০। হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম কী?
উত্তরঃ হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম নীলমণি রায়।

৫১। আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পটির রচয়িতা কে?
উত্তরঃ  ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পটির রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

৫২। আজকাল লক্ষ্মী কোথায় বাঁধা পড়েছে?
উত্তরঃ আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা পড়েছে।

৫৩। অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ হরিহর কাজ সেরে দুপুরের কিছু পর বাড়ি ফিরল।

৫৪। হরিহর কাজ সেরে কখন বাড়ি ফিরল?
উত্তরঃ অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে পিজরাপোলের আসামির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

৫৫।  কে গাই দুয়াতে এলো?
উত্তরঃ স্বর্ণ গোয়ালিনী গাই দোয়াতে এলো।

আম আঁটির ভেঁপু অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

১। বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না কেন?
বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর তখনই রাজি হয়নি, কারণ তাতে প্রস্তাবকারী তাকে খুব অভাবী ও উপবাসী মনে করতে পারে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে মাসে আট টাকা পায়। এতে তাদের চারজনের সংসার ভালোভাবে চলে না। ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো খাবার ও কাপড় দিতে পারে না। সে দশঘরায় টাকা তাগাদা দিতে গেলে এক মাতব্বর ধরনের লোক তাকে ব্রাহ্মণ হিসেবে মন্ত্র দিতে ও সেখানেই থাকতে বলে। কিন্তু হরিহর সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয় না, কারণ সে নিজের দারিদ্র্য ও কষ্ট সবাইকে জানাতে চায়নি।

২। দশঘরার লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি কেন?
নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে হরিহর সশঘরার লোকটির প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে, কিন্তু যে সামান্য টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। চারপাশে তার অনেক দেনা। এমন সময় দশঘরার এক লোক তাকে ব্রাহ্মণ হিসেবে মন্ত্র দিতে ও সেখানে গিয়ে থাকতে বলে। কিন্তু হরিহর সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়নি, কারণ এতে তার ব্রাহ্মণ হিসেবে সম্মান নষ্ট হতো এবং লোকটি তার দারিদ্র্য জেনে যেত। তাছাড়া পাওনাদাররাও টাকা চাইত, না পেলে যেতে দিত না।

৩। সর্বজয়ার কথা বন্ধ হবার উপক্রম হলো কেন? বুঝিয়ে লেখ।
স্বামী হরিহরের মুখে দশঘরার এক অবস্থাপন্ন লোকের প্রস্তাব শুনে আগ্রহে স্ত্রী সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে এবং নানা বাড়িতে পূজা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালাত। ব্রাহ্মণ হওয়ায় দশঘরার এক ধনী সদগোপ তাকে তাদের গ্রামে গিয়ে থাকতে বলে। তারা বসতবাড়ি ও ধানের জমিও দিতে চায়। হরিহর এই কথা স্ত্রী সর্বজয়াকে বললে, সে এতটাই খুশি হয় যে কথা বলতে বলতে প্রায় থেমে যায়।

৪। “তুই তো একটা হাবা ছেলে”- এ কথা বলার কারণ বুঝিয়ে লেখ।
‘তুই তো একটা হাবা ছেলে’ এ কথাটি স্নেহমিশ্রিত তিরষ্কারে সাবধান করার জন্য ছোট ভাই অপুকে দুর্গা বলে।
দুর্গা অন্যের বাগান থেকে কচি আম বা আমের ভুসি কুড়িয়ে আনে। মায়ের ভয়ে সে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ভাই অপুকে ডাকে এবং তাকে লবণ ও তেল আনতে বলে। মেঝেতে তেল পড়লে মা বকবে, তাই দুর্গা অপুকে সাবধানে তেল ঢালতে বলে। ভাইকে সাবধান করার জন্যই দুর্গা এই কথাটি বলে।

৫। ‘আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই।’- সর্বজয়ার এ কথার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর
‘আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই।’- সর্বজয়ার এ কথা বলার কারণ হলো দারিদ্র্য।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়া এক দরিদ্র পরিবারের বউ। স্বামী হরিহরের আয় খুব কম। দুই সন্তান নিয়ে তারা কষ্টে দিন কাটায়। অনেক সময় অভাবে তারা ধার করে, কিন্তু তা শোধ করতে পারে না। তখন চারদিক থেকে পাওনাদারেরা চাপ দেয়। এই অবস্থায় সর্বজয়া খুব অসহায় বোধ করে, তাই ক্ষোভ আর অভিমানে সে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।

৬। তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব।”- এ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
“তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব।”- এ কথাটি হরিহর তার স্ত্রী সর্বজয়াকে বলেছিল।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহর রায়বাড়িতে মাসে আট টাকা বেতনে চাকরি করে সংসার চালায়। অভাবের কারণে সে ছেলে-মেয়ে অপু আর দুর্গার ভালোভাবে যত্ন নিতে পারে না। সংসার চালাতে গিয়ে স্ত্রী সর্বজয়া পরিচিতদের কাছ থেকে ধার নেয়, কিন্তু শোধ করতে না পারায় কথাও শুনতে হয়। এই টানাপোড়েনের সংসারে হরিহর দিশেহারা হয়ে পড়ে। একদিন দশঘরায় তাগাদা দিতে গিয়ে এক মাতব্বর সদগোপ তাকে তাদের গ্রামে ব্রাহ্মণ হয়ে মন্ত্র দেওয়ার ও সেখানে বসবাসের প্রস্তাব দেয়। হরিহর সঙ্গে সঙ্গে রাজি না হয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রী সর্বজয়ার সঙ্গে আলোচনা করে এবং স্বভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।

৭। হরিহর রায়ের বাড়ির অবস্থা কেমন?
হরিহর রায়ের বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ।
হরিহর দুর্গা ও অপুর বাবা। সে গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে। মাসে আট টাকা বেতন পায়, তাও নিয়মিত হাতে আসে না। তাই হরিহরের বাড়ি অনেক দিন ধরে মেরামত করা হয়নি। বাড়ির সামনের রোয়াক ভেঙে গেছে, দেয়ালের ফাটলে আগাছা গজিয়েছে। দরজা-জানালার কপাটও ভেঙে গেছে, সেগুলো নারিকেলের দাড়ি দিয়ে গরাদের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।

৮। আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
“আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা” বলতে চাষার ঘরে অন্নের অভাব না থাকাকে বোঝানো হয়েছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহর রায়বাড়িতে মাসে আট টাকা বেতনে চাকরি করে সংসার চালায়। অভাবের কারণে ছেলে-মেয়ে অপু-দুর্গার ঠিকমতো যত্ন নিতে পারে না। ভদ্রলোকদের এমন অভাব থাকলেও চাষাদের তেমন কষ্ট হয় না। তারা ফসল ফলায়, তাদের গোলায় সারা বছরের জন্য ধান মজুদ থাকে। তাই তাদের ঘরে খাবারের বিশেষ অভাব হয় না। অন্নের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীকে ধরা হয়। এখানে চাষাদের ঘরে ‘লক্ষ্মী বাঁধা’ বলতে খাবারের অভাব না থাকা, অর্থাৎ খাবারের মজুদ থাকার কথাই বোঝানো হয়েছে।

৯। হাবা একটা কোথাকার- যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে!’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
অপু মুখ ফসকে আম খাওয়ার কথা মায়ের সামনে বলে ফেলায় দুর্গা অপুকে হাবা একটা কোথাকার কথাটি বলেছিল।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে কুড়িয়ে আনা কাঁচা আম দুর্গা অপুকে খেতে দিয়েছিল। মা যেন বিষয়টি না জানেন, তাই তারা সাবধান ছিল। কারণ মা জানলে দুর্গাকে বকবেন। কিন্তু চাল ভাজা খেতে গিয়ে দাঁতে টক লাগায় অপু ভুল করে মায়ের সামনে আম খাওয়ার কথা বলে ফেলে। এই কারণেই দুর্গা অপুকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।

১০। ‘আমার কাপড় যে বাসি’- অপু এ কথা কেন বলেছিল?
প্রশ্নোক্ত কথাটি অপু বলেছিল তার দিদি দুর্গাকে, কারণ তার মা বিভিন্ন সংস্কারে বিশ্বাস করে এবং এর একটি হলো বাসি কাপড়ে তেলের ভাঁড় ছোঁয়া নিষেধ।
সেকালের গ্রামীণ হিন্দু সমাজে অনেক আচার-সংস্কার মানা হতো। সকালে স্নান না করে আগের দিনের কাপড় পরা থাকলে তাকে বাসি কাপড় বলা হতো, আর এতে কোনো কিছুতে হাত দেওয়া নিষেধ ছিল। দুর্গা কচি আম কেটে তেল-লবণ মাখিয়ে খাবে বলে অপুকে তা এনে দিতে বলে। কিন্তু অপু তখনও বাসি কাপড় পরা ছিল, তাই ঘরের তেল-লবণ ছুঁতে পারবে না। মা জানলে শাস্তি দেবে। তাই অপু নিজের অক্ষমতা বোঝাতে দুর্গাকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।

১১। হরিহর সদগোপদের প্রস্তাবে তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হলো না কেন?
নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে এবং আত্মসম্মানবোধের কারণে হরিহর সদগোপের প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক রাজি হয়নি।

‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামের নিম্ন আয়ের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যাগুলো জীবন্তভাবে ফুটে উঠেছে। হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে মাসে মাত্র আট টাকা পায়। এতে তাদের চারজনের সংসার ঠিকমতো চলে না। ছেলে-মেয়েকে তারা যথাযথ খাবার ও পোশাক দিতে পারে না। একবার হরিহর দশঘরায় তাগাদার জন্য গেলে সেখানে একজন সদগোপ তার ব্রাহ্মণ হিসেবে মন্ত্র দিতে এবং গ্রামে বসবাস করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হরিহর সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়নি, কারণ এতে তার দীনহীন অবস্থা প্রকাশ পেয়ে যেতে পারত।

১২। মায়ের ডাক দুর্গার কানে গেলেও উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই কেন?
মায়ের ডাকে দুর্গার উত্তর না দিতে পারার কারণ- তার মুখভর্তি জারানো আমের চাকলা ছিল।
দুর্গা পটলিদের বাগান থেকে আম কুড়িয়ে নিয়ে তার ছোট ভাই অপুকে সঙ্গে নিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিল। কারণ তাদের মা সর্বজয়া যদি দেখতেন, তবে রাগ হতো। খাওয়া শেষ না হতেই হঠাৎ মায়ের ডাক আসে। তখন দুর্গা বাকি আম তাড়াতাড়ি মুখে পুরল। মা কয়েকবার ডাকলেও মুখে আম থাকায় সে ভয়ে কোনো উত্তর দিতে পারল না, কারণ উত্তর দিলে আম খাওয়ার বিষয়টি মায়ের কাছে ফাঁস হয়ে যেত।

১৩। সত্য কথা প্রচার করিতে সাহসী না হইয়া অপু দিদির দিকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে চাহিল’- ব্যাখ্যা কর।
বড় বোন দুর্গা তাকে শাস্তি দিতে পারে ভেবে সত্য কথা প্রচার করতে সাহসী না হয়ে অপু দিদির দিকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে চাইল।
প্রকৃতির মাঝে ছুটে বেড়ানো স্বাধীন কিশোরী দুর্গা পটলিদের বাগান থেকে কিছু কাঁচা আম কুড়িয়ে আনে। সে ছোট ভাই অপুকে সঙ্গে নিয়ে আমগুলো তেল-নুন মেখে খায়। তারা ভয় পায়, কারণ মা যদি দেখেন তবে রেগে যেতে পারেন। দুর্গার সতর্কতার পরও অপু অসাবধান হয়ে যায় এবং মা সর্বজয়ার কাছে ধরা পড়ে। দুর্গা চোখ টিপে ইশারা করলে অপু কথার অর্ধেকই বলতে পারে না। যখন মা প্রশ্ন করে, “আম কোথায় পেলি?”, তখন অপু সত্যি বলতে সাহস পান না এবং দিদির দিকে প্রশ্নমুখী দৃষ্টিতে তাকায়।

১৪। ‘একটুখানি কুটোগাছটা দু খানা করা নেই।’ সর্বজয়া একথা বলেছেন কেন?
মায়ের কোনো কাজে সাহায্য না করায় মা দুর্গাকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত উত্তিটি করেন।
অপু ও দুর্গা দুই ভাই-বোন। তারা খুবই চঞ্চল ও দুষ্টু শিশু। সবসময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে হাসি-খুশিতে দিন কাটায়। গ্রামের ঝোপঝাড়ে তারা সারাদিন ছোটাছুটি করে। অভাবের সংসারে ফলমূল সংগ্রহ করে খায়। মায়ের বারণ সত্ত্বেও তারা পাড়া-প্রতিপাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। মা কোনও কাজে তাদের সাহায্য পায় না। তাই মা সর্বজয়া দুর্গার ওপর বিরক্ত হয়ে প্রশ্নটি করেন।

Related Posts

Leave a Comment